চাকরি পাওয়া জনিত সমস্যাটার মাত্রা নানা ধরণের।
এক, যে চাকরি চাইতেছেন তার স্কিল নাই।
দুই, যে স্কিল আছে তার চাকরি নাই।
তিন, যেখানে চাকরি করতে চাইতেছেন, ওই লোকেশনে চাকরিটা নাই।
চার, স্কিল আছে, কিন্তু গাইডলাইন নাই।
পাঁচ, সবই আছে, কিন্তু রাইট মাইন্ডসেট নাই।
ছয়, ……
এবং এইভাবে লম্বা তালিকা করা যায়।
ধরে নেই যদি আপনি সাধারণ মানুষ, খুব পাওয়ারফুল বা খুব প্রতিভাধর বা সমাজের খুব সুবিধাভোগী অংশের কেউ না, তাহলে আপনার জন্য চাকরি পাওয়ার জার্নিটা কঠিনই। কারণ আপনি যখন রিজেক্ট হবেন, তখন নিজের ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ জাগবে। পৃথিবীর নেগেটিভ ফোর্স হইল সন্দেহ, পজেটিভ ফোর্স বিশ্বাস। বাকিসব পজেটিভিটি বা নেগেটিভিটি এদেরই নানারূপ।
যখন আপনার বিশ্বাস টলে যাবে, নিজের উপর সন্দেহ আসবে, তখন কাজটা করা আরো কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
এইজন্য একটা মাইন্ডসেট খুব জরুরী। মনে রাখবেন, চাকরিতে আপনার যে বিচার হইতেছে, এটা মানুষ হিশাবে আপনার সামগ্রিক দক্ষতা বা আপনি কেমন মানুষ টোটালি, এই বিচার না। এই বিচার করার অধিকার আপনি ওদের দেন নাই, ওদেরও ওই দায়িত্ব নাই, ক্ষমতাও নাই। তারা কেবল দেখতেছে তাদের ওই কাজটার জন্য আপনি তাদের ক্রাইটেরিয়ায় যোগ্য কি না।
এই বিচার করতে গিয়া তারা তাদের কোম্পানির ভেতরের নানা বিষয়, তাদের পছন্দ, বায়াস ইত্যাদি দ্বারা প্রভাবিত হবে, এবং তা স্বাভাবিক।
সুতরাং, কোন চাকরির ক্ষেত্রে রিজেকশনরে পার্সোনালি নেয়ার তেমন কোন লজিক আসলে নাই। যেটা নিতে পারেন, কোন স্কিল আপনার ছিল না, বা অন্য কোন দূর্বলতা ছিল কি না উপস্থাপনে বা নিজের কাজে, সেই বিষয়ে ইনসাইট।
ইন্টার্ভিউ প্রসেসের এই অল্প সময়ে, অল্প তথ্যে সামগ্রিক বিচার সম্ভব না। সামগ্রিক বিচার একরকম হইত স্কুলে থাকতে, বাৎসরিক, আর দ্বিতীয়টা কোথায় হবে তা তো আপনারা জানেনই, ধর্মমতে রোজ কিয়ামতের দিন, ওইখানে কঠিন হিশাব হবে সামগ্রিক, চাকরি বিচার এইরকম না।
আরেকটা জিনিশ বলি, এসিমেট্রিক রিটার্ন জিনিশটা বুইঝেন। যেমন ধরেন, একটা জব আপনার সামনে আসলো। আপনি দেখলেন দশটা স্কিল তারা দিছে, এর মধ্যে চাইরটা আছে আপনার। এখন আপনি কি এপ্লাই করবেন?
যদি, ভালোমত এপ্লাই করেন, ও আপনার যে চারটা স্কিল আছে ঐগুলাই তাদের মেইন টার্গেট থাকে, ও আপনারে তারা লাইক করে ফেলে, আপনি জবটা পেয়ে যাইতে পারেন। এটা পজেটিভ দিক।
আর নেগেটিভ দিক, তারা একবার এপ্লিকেশন দেখে আর দেখবেই না, বা এটিএস সফটওয়ার সিভি আগেই ফিল্টার করে ফেলবে। এক্ষেত্রে আপনার লস হইল এপ্লিকেশন করার টাইমটা, আর কোন লস নাই।
অর্থাৎ, এইখানে লাভ হইলে বড় হবে, লস হইল তা ছোট। এটা এসিমেট্রিক রিটার্ন। ইনভেস্টমেন্টে এই ধরণের সুযোগ হইল সেরা সুযোগ।
আমি বলি না, আপনি ধুমাইয়া সব জবে এপ্লাই করেন। সময়ের দাম আছে। এপ্লাই করেন যেগুলাতে স্কিল মিলে। কিন্তু সব মিলতে হবে এমন ভাবনায় থাইকেন না।
যদি দেখেন, বেশীরভাগ মিলছে, বা মেজরগুলা মিলছে, এবং জবের বিষয়টাতে আপনে প্যাশনেট, তাহলে এপ্লাই করেন। সিরিয়াসলিই করেন, সময় নিয়া। মানুষ হায়ার করতে স্কিলই শুধু দেখে না, প্যাশন দেখে। মানে কাজটা করতে আপনার ইচ্ছা আছে কি না। অনেক স্কিল আছে কিন্তু করার ইচ্ছা নাই এমন লোকদের কেউ নিতে চাইবে না।
আরেকটা পয়েন্ট, নিজের উইক টাইদের কাজে লাগান। আমাদের স্ট্রং টাই থাকে সামাজিক, ক্লোজ বন্ধুবান্ধব আত্মীয়। এরা আমাদের প্রায় সম পর্যায়ে থাকে প্রায়শই। ফলে, আমরা যা জানি, তারাও মোটামোটি সেইরকমই জানে। নেটওয়ার্ক প্রায় সেইম থাকে।
অন্যদিকে, আরেক ধরণের টাই থাকে আমাদের, স্বল্প পরিচিত লোকজন, বন্ধুবান্ধব, ইত্যাদি। এরা হয়ত ভিন্ন জায়গায় থাকে, ভিন্ন নেটওয়ার্কে থাকে। আপনে জব খুঁজতেছেন তা এদের জানাইলে ভালো রেজাল্ট আসতে পারে। কারণ তাদের পরিচিতদের মধ্যে কেউ হায়ার করতেছে, এমন হতে পারে।
এবং যদি কাউরে আপনি বলেন জব খুঁজতেছেন, নিজের স্কিল কী তা জানাইয়েন। আমার ফেসবুকের একজন বেশ কয়েকমাস আগে আমারে বলছিলেন তিনি গ্রাফিক ডিজাইন করেন, কোন জব টব থাকলে দিতে। আমি পরে একদিন একটা জব পাইয়া তারে লিংক দেই। উনি অবাক হইলেন, জিজ্ঞেস করলেন, ভাই আপনে মনে রাখলেন ক্যামনে আমার কথা?
আমারো তখন মনে হইল, মনে রাখলাম কীভাবে! আরও কেউ কেউ তো এইরকম দিছেন, তাদের কথা মনে নাই।
তখন আমি তার আগের মেসেজ চেক করলাম। তিনি ওইখানে তার কাজের স্যাম্পল দিয়া রাখছিলেন। ওইগুলা আমি দেখছিলাম। ফলে মাথায় রইয়া গেছে আমার লিস্টে একজন গ্রাফিক ডিজাইনার আছে যে ইনবক্সে তার কাজ দিছিল।
এবং এরপর তিনি কোন এক পোস্টে কমেন্ট করছিলেন, তখন নাম দেখেই ওই জিনিশটা আবার মনে পড়ল, ও তারে জবের লিংকটা দিতে পারি।
তিনি যদি খালি মেসেজ দিয়া বলতেন হয়ত মনে থাকত না। বা মেসেজ দিয়াই শেষ, কোন ইন্টারেকশন থাকত না তার দিক থেকে, তাও মনে থাকতো না। কারণ সবারই ব্যক্তিগত কাজ, ব্যস্ততা থাকে। আপনার চাকরি পাওয়ার ব্যাপারটা আপনার সমস্যা। এটারে ঔন করে নিজেই এর দায়িত্ব নিতে হবে।
এইখানে নেটওয়ার্কের প্রসঙ্গ আসে। নেটওয়ার্ক কি তেল দেয়া, ও সহমত ভাই বলা? ভুয়া। এইরকম করলে নেটওয়ার্কে আপনি দূর্বল এবং অগুরুত্বপূর্ণ থাকবেন।
নেটওয়ার্কিং এর মূল কথা, যে নেটওয়ার্কে আছেন সেখানে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠা। সেইজন্য নেটওয়ার্কে ভ্যালু এড করে যেতে হবে। যাতে নেটওয়ার্কের পাওয়ারফুল নডেরা বুঝতে পারে আপনার গুরুত্ব আছে।
যে সেক্টরে কাজ খুজতেছেন, সেই জায়গার একটা বা কয়েকটা কাজের জিনিশ শিখেন। আপনার সার্টিফিকেট কী আছে না আছে, তার চাইতে গুরুত্বপূর্ণ জিনিশ আপনি কাজ করতে পারেন কি না।
এক্সেল শিখেন। এক্সেল শিখতে দুই সপ্তাহও লাগবে না যদি টাইম দেন। কিন্তু এটা লাইফে কাজে লাগবে।
জানার আগ্রহ রাখেন। নলেজ হইল পাওয়ার। নলেজ আপনার ক্যাপিটাল হিশাবে কাজ করবে।
স্কিলের ক্ষেত্রে প্রথমে আপনার ইন্ড্রাস্ট্রি সম্পর্কিত একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিশ গভীর ভাবে শিখেন। এরপর নানা জিনিশ শিখেন চারপাশে। অনেক কিছু অল্প অল্প শেখার চাইতে একটা গভীর শেখার পরে চারপাশে নানা কিছু অল্প অল্প শিখলে আপনি শেখায় ও কাজে এক্সপার্ট হয়ে উঠতে পারবেন সহজে।
–
নভেম্বর ১৬, ২০২২