তারা মাংস দিয়ে বানানো
লিখেছেন – টেরি বিসন।
রুপান্তরঃ মুরাদুল ইসলাম
১৯৯০ সালে ওমনি ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হওয়া এই গল্পটি নেবুলা এওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয়েছিল।
ফেব্রুয়ারী ১২ , ১৯৪২ সালে জন্ম নেয়া টেরি বিসন একজন আমেরিকান বিখ্যাত ফ্যান্টাসি এবং সায়েন্স ফিকশন লেখক। সায়েন্স ফিকশনের বিখ্যাত নেবুলা এবং হুগো পুরস্কার জিতেছেন তিনি তার গল্পের জন্য। তার এই গল্প “দে আর মেইড আউট অফ মিট” এর একটি ফিল্ম এডাপ্টেশন সিয়াটল সায়েন্স ফিকশন মিউজিয়ামের ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০০৬ – এ গ্র্যান্ড প্রাইজ জিতে নেয়।
ওয়েবসাইটঃ www.terrybisson.com
————————————————————————–
“তারা মাংস দিয়ে বানানো।”
“-মাংস?”
“হ্যা। মাংস দিয়ে।”
“– মাংস?”
“অবশ্যই। কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। পুরো গ্রহের বিভিন্ন জায়গা থেকে আমরা স্যাম্পল সংগ্রহ করেছি, আমাদের রেকন ভেসেলে নিয়ে গিয়েছি। তারপর এদের পরীক্ষা করে দেখেছি। তারা সর্বাংশে মাংস।”
“-অসম্ভব! তাহলে রেডিও সিগনাল, অন্য নক্ষত্রে পাঠানো সংকেত এগুলো কি?”
“তারা কথাবার্তার জন্য রেডিও ব্যবহার করে। কিন্তু সিগনাল গুলো তাদের মধ্য থেকে আসে না। মেশিনের মধ্য থেকে আসে।”
“-তাহলে এই মেশিনগুলো তৈরী করেছে কারা? তাদের সাথেই আমরা যোগাযোগ করতে চাই।”
“তারাই মেশিনগুলো বানিয়েছে। আমি তোমাকে এটাই বলতে চেষ্টা করছি যে মাংসগুলো মেশিন বানিয়েছে।”
“-হাস্যকর! মাংস কীভাবে মেশিন বানাবে? তুমি আমাকে সংবেদী মাংসে বিশ্বাস করতে বলছ।”
“আমি তোমাকে কিছুই বিশ্বাস করতে বলছি না। যা সত্য তাই বলছি। ওই সেক্টরে এই প্রজাতিই একমাত্র সংবেদনক্ষমতাযুক্ত এবং তারা মাংস দিয়ে তৈরী।”
“– ওকে। তারা হয়ত অরেফোলাই এর মত। চেনো তো? কার্বন বেজড ইন্টিলিজেন্স যা একসময় মাংস পর্যায়ের ভেতর দিয়ে যায়।”
“না। তারা মাংস হয়ে জন্মায়, মাংস হয়ে মরে। আমরা তাদের জীবনের বিভিন্ন পর্যায় নিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছি। তাদের জীবনের ব্যাপ্তি বেশ দীর্ঘ না। তোমার কি কোন ধারনা আছে মাংসের লাইফ স্প্যান বিষয়ে?”
“- উদ্ভট সব কথাবার্তা! ঠিক আছে, তারা হয়ত ওয়েড্ডেলেইদের মত। মাংসের মাথা কিন্তু ভেতরে ইলেক্ট্রন প্লাজমা ব্রেন।”
“না। আমরা তা চিন্তা করেছিলাম যেহেতু ওয়েড্ডেলেইদের মত মাংসের মাথা তাদেরও আছে।কিন্তু আমি তোমাকে আগেই বলেছি আমরা তাদের নিয়ে রীতিমত তদন্ত করে দেখেছি। এরা পুরোটাই মাংস দিয়ে বানানো।”
“– ব্রেন নেই?”
“আছে। কিন্তু তাও মাংস দিয়ে বানানো। আমি তোমাকে এতক্ষণ ধরে এটাই বলতে চাচ্ছি।”
“– তাহলে…তাদের কোন অংশ চিন্তার কাজটা করে?”
“তুমি আমার কথা বুঝতে পারছ না। আমার কথা তুমি না বুঝেই উড়িয়ে দিচ্ছ। ব্রেণ চিন্তার কাজ করে। ব্রেণ মানে সেই মাংস।”
“– চিন্তাকরা মাংস? তুমি আমাকে এতে বিশ্বাস করতে বলছ!”
“হ্যা। চিন্তাকরা মাংস, সচেতন মাংস, ভালোবাসাযুক্ত মাংস, স্বপ্নদেখা মাংস। মানে মাংসই সব। তুমি কি বুঝতে পারছ? নাকী আমি আবার প্রথম থেকে বুঝানো শুরু করব?”
“– ও মাই গড! তুমি তাহলে সিরিয়াস। তারা মাংস দিয়ে বানানো।”
“ধন্যবাদ। শেষ পর্যন্ত বুঝতে পারলে। তারা আসলেই মাংস দিয়ে বানানো। এবং কয়েকশ বছর ধরে আমাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে যাচ্ছে।”
“-তাহলে এই মাংসের মনে কি আছে?”
“তারা প্রথমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে চায়। তারপর ধারনা করি, তারা মহাবিশ্ব পর্যবেক্ষণ, অন্য সেন্টিনেন্সের সাথে যোগাযোগ, আইডিয়া এবং তথ্য আদান প্রদান ইত্যাদি সাধারন বিষয়াদিতে আগ্রহী।”
“– আমাদের মাংসের সাথে কথা বলতে হবে!”
“এটাই তাদের মেসেজ। “হ্যালো, এখানে কেউ আছো, কেউ বাড়িতে আছো” এইসব আর কি।”
“– তারা তাহলে কথা বলে! শব্দ, বাক্য, আইডিয়া, কনসেপ্ট এসব ব্যবহার করে তো?”
“হ্যা করে। তবে সবই ওই মাংস দিয়ে।“
“– একটু আগে তুমি না বললে তারা রেডিও ব্যবহার করে?”
“কিন্তু এই রেডিওর ভিতরে কি থাকে বলে মনে করো? এই মাংসেরই শব্দ। মাংস ঝাপটালে বা একটার সাথে আরেকটা জোরে নাড়ালে শব্দ হয়। তারা এরকম শব্দ করেই কথা বলে। এমনকী তারা তাদের মাংসের ভিতর নিয়ন্ত্রিত ভাবে বাতাস নিয়ে গানও গাইতে পারে।”
“– মাই গড! গান গাওয়া মাংস! অবিশ্বাস্য। তুমি কি করতে বলছ?”
“অফিশিয়ালি না আন অফিশিয়ালি?”
“– দুটোই বলো।”
“অফিশিয়ালি আমরা যোগাযোগ করতে এবং তাদের স্বাগত জানাতে বাধ্য। কিন্তু আন অফিশিয়ালি আমার উপদেশ হল, আমাদের উচিত সমস্ত রেকর্ড মুছে দিয়ে পুরো বিষয়টাকে বেমালুম ভুলে যাওয়া।”
“– আমি আশা করেছিলাম তুমি এমনটাই বলবে।”
“এটা কঠোর হয়ে যায়, কিন্তু সবকিছুরই একটা সীমাবদ্ধতা আছে। আমরা কি আসলে মাংসের সাথে যোগাযোগ করতে চাই?”
“– আমি তোমার সাথে পুরোপুরি একমত। আমাদের কি বলারই বা আছে? আমরা কি বলব, “হ্যালো মাংস, কেমন আছো? কীরকম চলছে?” এগুলোতে কি কাজ হবে? আমরা এখানে কয়টি গ্রহ নিয়ে কাজ করছি যেন?”
“একটাই। তারা বিশেষ ধরনের মাংসের কন্টেইনারে করে অন্য গ্রহে ভ্রমণ করতে পারে। কিন্তু এর মধ্যে বাস করতে পারে না। মাংস হওয়ার কারনে তারা শুধু সি স্পেস ভ্রমণ করতে পারে। এজন্য তারা আলোর গতির চেয়ে বেশি দ্রুত যেতে পারে না। ফলশ্রুতিতে যোগাযোগের সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসে। খুবই ক্ষীণ।”
“– তাহলে আমরা এখন এমন ভাব করব যে মহাবিশ্বে কেউ বাড়িতে নেই।”
“ঠিক তাই।”
“– নিষ্ঠুর! কিন্তু তুমি নিজের মুখেই বলেছ, কেইবা মাংসের সাথে যোগাযোগ করতে চায়! কিন্তু এই যারা আমাদের রেকন ভেসেলে আছে, মানে যেগুলোকে নিয়ে তুমি তদন্ত করেছ। তুমি কী নিশ্চিত এরা কিছু মনে রাখবে না?”
“যদি মনে রাখে তাহলে তারা উন্মাদ বলে বিবেচিত হবে। আমরা তাদের মাথায় প্রবেশ করেছিলাম এবং মাংসকে মসৃন করে দিয়েছি। আমরা এখন তাদের কাছে শুধুই একটা স্বপ্ন মাত্র।”
“– মাংসের কাছে স্বপ্ন! কি বিস্ময়কর সতি কথা! আ্মাদের মাংসের কাছে স্বপ্ন হয়ে থাকাই উচিত।”
“এবং আমরা এই পুরো সেক্টর খালি বলে চিহ্নিত করব।”
“– ঠিক। অফিশিয়ালি এবং আন অফিশিয়ালি, তোমার সাথে একমত। যাক, মামলা ডিশমিশ! আর কেউ আছে? গ্যালাক্সির অন্য কোন প্রান্ত থেকে?”
“হ্যা। লাজুক প্রকৃতির কিন্তু মায়াবী হাইড্রোজেন কোর ক্লাস্টার ইন্টিলিজেন্স জি৪৪৪ জোনের ক্লাস নাইন স্টার থেকে। দুই গ্যালাক্টিক রোটেশন আগে এদের সাথে যোগাযোগ হয়েছিল। আবার তারা বন্ধুত্বপূর্ণ হতে চাচ্ছে।”
“– তারা সবসময় ফিরে আসে।”
“আসবে না কেন? চিন্তা করে দেখ কি অসহ্য, কি অবর্ননীয় নিষ্প্রাণ হত মহাবিশ্ব যদি কেউ একা হতো চিরতরে…”
মূল ইংরেজি গল্পঃ দে আর মেড আউট অব মিট।
It is a Bengali translation of Terry Bisson’s famous Sci-fi story “They’re made out of meat.”