আমেরিকার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তখন অবিবাহিত কন্ডোলিজা রাইজ। প্রেসিডেন্ট বুশ। ডিনার পার্টিতে বক্তব্য দিতে গিয়ে রাইজ বললেন, আমি যখন বলছিলাম আমার হাজবেন্ডকে…
পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, আমি যখন বলছিলাম প্রেসিডেন্ট বুশকে…
এই কথার ভুল নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। রাইজের মুখ দিয়ে কি বেরিয়ে গেল তার গহন মনের ফ্যান্টাসি? যেখানে তিনি প্রেসিডেন্টকে হাজবেন্ড রূপে কল্পনা করেন।
একবার বিএনপির এক জনসভায় খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতেই তৎকালীন ২০ দলীয় জোটের নেতা শফিউল আলম প্রধান ভাষণে বলেছিলেন, তিলকওয়ালি নেত্রী খালেদা জিয়াকে ক্ষমতায় দেখতে তিনি চান না। বলাবাহুল্য, তিনি শেখ হাসিনা বলতে গিয়ে খালেদা জিয়ার নাম বলে ফেলেছিলেন।
এই কথার ভুল, একটা বলতে গিয়ে আরেকটা বের হয়ে যাবার যে সমস্যা, সাইকএনালিস্ট সিগমুন্ড ফ্রয়েড এর ব্যাখ্যায় এটা হলো অসচেতন মনের মধ্যে লুক্কায়িত চিন্তা, ডেজায়ার, যা হুট করে বেরিয়ে যায়।
এবং ফ্রয়েডের চিন্তার মূল ভিত্তি যেহেতু ছিল সেক্স, তাই অন্য সব তত্ত্বের মত ফ্রয়েডিয়ান স্লিপেও সেক্সের অংশ আছে।
যেমন কেউ দোকানে গিয়ে বলল, আমাকে সেক্স প্যাকেট চিপস দেন।
সিক্স বলতে চাইছিল, বলছে সেক্স। ফ্রয়েডিয়ানরা বলবেন, তার ভেতরের সেক্সুয়াল ডেজায়ারই প্রকাশ পেয়েছে এখানে।
কারো বয়ফ্রেন্ডের নাম জন। সে “জন এদিকে এসো” বলতে গিয়ে বলে ফেলল, “ডেভিড এদিকে এসো”। ডেভিড তার এক্স বয়ফ্রেন্ডের নাম। ফ্রয়েডিয়ানরা এই ভুলের ব্যাখ্যায় বললেন, ওই ব্যক্তির অসচেতন মনের চিন্তার তার এক্স বয়ফ্রেন্ড ডেভিড রয়ে গেছে।
ফ্রয়েডের অন্য সব তত্ত্ব যেমন ঠিক প্রমাণিত হয় নি তেমনি ফ্রয়েডিয়ান স্লিপের স্বপক্ষেও কোন প্রমাণ বিজ্ঞানীরা পান নি।
তারা যা পেয়েছেন তা হচ্ছে, মানুষের এই একটা বলতে গিয়ে আরেকটা বলা তার গহন মনের ডেজায়ার না, বরং মানুষের ব্রেইন কীভাবে ভাষাকে প্রসেস করে, সেই জিনিশ বুঝার ক্ষেত্র হতে পারে।
এক পরীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, মানুষকে শাদা ভল্লুক নিয়ে চিন্তা করতে মানা করা হলে, সে বেশি শাদা ভল্লুক নিয়ে চিন্তা করে।
সে শাদা ভল্লুক নিয়ে চিন্তা না করতে চায়, কিন্তু এই না করতে চাওয়াই আবার তাকে শাদা ভল্লুক মনে করায়। এখানেই আয়রনি।
লিঙ্গুইস্টরা বিস্তর ফ্রয়েডিয়ান স্লিপ নিয়ে গবেষণা করে দেখেছেন, ভুল হওয়া শব্দগুলির মধ্যে মিল থাকে। ভাওয়েলে বা উচ্চারণে। আমার ধারণা অর্থের ধরণের মিলও একটা গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার এখানে।
সম্প্রতি রাজশাহীর বাগমারায় একজন আওয়ামীলীগ নেতা দোয়ার সময় বঙ্গবন্ধুর খুনিদের জন্য জাহান্নাম কামনা করতে গিয়ে জান্নাত কামনা করে ফেলেছেন।
এই ভিডিও ভাইরাল হয়। এবং পৌর আওয়ামীলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদককে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে আওয়ামীলীগ থেকে।
দোয়াকারী জানিয়েছেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে ভুলবশত এই ভুল হয়েছে।
এই নেতার শাস্তি হলো ফ্রয়েডিয়ান স্লিপের জন্য। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ফ্রয়েডিয়ান স্লিপের জন্য কি কাউকে শাস্তি দেয়া যায়? যেখানে আমাদের কাছে এ পর্যন্ত যুক্তি ও বিজ্ঞান নির্ভর যা প্রমাণাদি আছে, তা বলে না যে এই ব্যক্তি তার মনের গভীরে ওই ইচ্ছা পোষণ করতেন।
এখানে আমি ধরে নিচ্ছি দল হিসেবে আওয়ামীলীগ বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সত্যি সত্যি জান্নাত কামনা করা লোককে বহিষ্কার করতেই পারে।
জান্নাত ও জাহান্নাম দুইটাই জা(আ) দিয়ে শুরু, ন্না(আ)ও আছে মাঝে। প্রায় একইধরনের সাউন্ড করে। এবং পরস্পর বিপরীত শব্দ।
জান্নাতের পুরা ভাবগত অর্থের জন্য জাহান্নাম শব্দ লাগে।
এই লেখার শুরুতে শফিউল আলম প্রধানের ফ্রয়েডিয়ান স্লিপ সংযুক্ত করেছি, সেখানে তিনি শেখ হাসিনা বলতে খালেদা জিয়া বলেছেন। এই শব্দ দুটিতে সাউন্ডে মিল নেই লাগে, যদিও আছে খা(আ) লে দা(আ), হা(আ) সি না(আ), কিন্তু অর্থ বা ভাবগত মিল বেশি। খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা দুইজন পরস্পর বিরোধী দলের শক্তিশালী নেতা।
জান্নাত জাহান্নাম শব্দের মতোই তাদের অর্থ এবং ভাবগত মিল।
আওয়ামীলীগের রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর পৌর এলাকার অংশ যে, তাদের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদককে এই ভুলের জন্য স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করল, তাদের এই পদক্ষেপ ফ্রয়েডিয়ান। তারা কি ধরেই নিয়েছে এই ভুল, যদিও ভুল, তথাপি উক্ত ব্যক্তির মনের বাসনা প্রকাশ করেছে?
এমন ধরলে তা ঠিক নয়। সাউন্ডের ও ভাবের মিলের কারণে এটি হয়েছে।
এইরকম ফ্রয়েডিয়ান অনুমান নির্ভর শাস্তি প্রদান দলের সর্বত্র প্রচারিত হলে, বা পরবর্তীতে দেশের বিচার আচারে চালু হয়ে গেলে অকল্পনীয় ভয়ংকর এক অবস্থা তৈরি হবে।