উম্বের্তো একো ও আমার কমেডি চিন্তার সূত্রপাত
উম্বের্তো একো একজন দার্শনিক, লেখক ও জ্ঞাণী ব্যক্তি ছিলেন। বিচিত্র বিষয়ে ছিল তার আগ্রহ। তার লাইব্রেরীতে প্রচুর বইয়ের সংগ্রহ ছিল নানা বিষয়ের। লাইব্রেরীতে আমাদের অনেক বই থাকে সংগ্রহে, যার অনেকই পড়া হয় না। লাইব্রেরীতে বইয়ের সংখ্যা দেখলে লোকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি এই সবগুলা বই পড়েছেন?
তাদের চোখে বিস্ময় বা কিছু একটা থাকে। সেই কিছু একটাকে ধরা যাক “দেখো কতো ফালতু সময় নষ্ট করে লোকে” এমন ভাব। জ্যাক দেরিদাকে নিয়ে একটি ডকুমেন্টারী ফিল্ম আছে। সেটাতেও তার লাইব্রেরীতে একটা অংশ দেখানো হয়। ওখানে তাকে একজন জিজ্ঞেস করেন, আপনি কি এইসব বই পড়েছেন? দেরিদা উত্তরে না বলেন।
সংগ্রহের সব বই-ই ধরে ধরে পড়তে হবে এমন নয়। যত বই আপনি পড়বেন, সাথে সাথে আরো নানা বিষয়ে আগ্রহের তৈরী হবে। আরো বই সংগৃহীত হবে ও না পড়া বইয়ের সংখ্যা বাড়তে থাকবে। কিন্তু এই লাইব্রেরীতে থাকা না-পড়া বইগুলোর একটা নাম দিয়েছেন দার্শনিক নাসিম তালেব। এন্টিলাইব্রেরী। লাইব্রেরীতে বইয়ের যে সংগ্রহ তা একটি রিসার্চ টুল। অনেক সময় বিভিন্ন প্রয়োজনে আমাদের কোন বইয়ের দরকার হতে পারে, এজন্য আমরা অনেক বই লাইব্রেরীতে জমিয়ে রাখি। যারা লাইব্রেরীর এই দিকটা মাথায় রাখবেন তাদের কাছে মনে হবে না সংগ্রহের সব বই পড়তেই হবে অথবা কারো সংগ্রহ দেখলে এই প্রশ্ন আসবে না।
একো’র কথায় প্রাথমিকভাবে তার এন্টিলাইব্রেরীর কথাই মাথায় আসে। একো তার জীবনে কমেডি নিয়ে অনেক চিন্তা করে গেছেন। কমেডি কী বা মানুষ হাসে কেন অথবা হাস্যরসের দর্শন কী?
তিনি এই বছর (’১৬) ফেব্রুয়ারী মাসের ষোল তারিখে মারা যান। সেইসময় প্যারিস রিভিউতে প্রকাশ হওয়া স্বাক্ষাতকারে কমেডি নিয়ে তার চিন্তার বিষয়টা জানতে পারি। তার বিখ্যাত উপন্যাস দ্য নেইম অব দ্য রোজেও কমেডির ব্যাপারটি এসেছে। ওখানে তিনি দেখাতে চেয়েছেন অথরিটি চায় না মানুষ হাসুক। এজন্য এরিস্টটলের হাস্যরসের দর্শন বিষয়ক একটি বই তারা লুকিয়ে রাখে, সবার সামনে এটি প্রকাশিত হোক তা অথরিটি চায় না।
দ্য নেইম অব দ্য রোজ নিয়ে ফিল্ম হয়েছে। শন কনারি অভিনীত এই ফিল্ম বিষয়ে লিখেছিলাম।
স্বাক্ষাতকারে একো বলেছিলেন, মানুষই একমাত্র প্রাণী যে জানে সে মারা যাবে। এর সাথে মানুষের হাস্যরসের একটা সম্পর্ক আছে এমন তার সন্দেহ হয়। হয়ত ঐ নিগুঢ় সত্যের বিপরীতে মানুষের বিদ্রোহ তার হাস্যরস।
যাইহোক, এই স্বাক্ষাতকার পড়ার পর থেকে মানুষের হাস্যরসের কারণ বিষয়ে আমার আগ্রহ জন্মে। এই নিয়ে কিছু পড়ালেখা শুরু করি।
মানুষই একমাত্র প্রাণী যে জানে সে মারা যাবে। এর সাথে হয়ত তার হাস্যরসের সম্পর্ক আছে। – উম্বের্তো একো। Share on X
কমেডি বা হিউমারের তিন তত্ত্ব
[star_list]
- প্রথম তত্ত্ব অনুযায়ী, মানুষ তারে নিয়েই হাসে যার থেকে সে নিজেকে সুপিরিয়র মনে করে।
- দ্বিতীয় তত্ত্ব অনুযায়ী, একধরনের মানসিক রিলিফের জন্য হাস্যরসে যুক্ত হয়।
- তৃতীয় তত্ত্ব অনুযায়ী, আমরা যা আশা করি বা যেভাবে আশা করি তার ব্যতিক্রম হাস্যরসের উদ্রেক করে।
[/star_list]
প্রথম তত্ত্বের একটি উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ফেইসবুকে হিরো আলম নামের একজন অভিনেতাকে নিয়ে মানুষের হাসাহাসি। তাকে নিজের চাইতে ইনফিরিয়র, নিজেরে সুপিরিয়র মনে করে তার কর্মকান্ড দেখলে হাসির উদ্রেক হবে।
তৃতীয় তত্ত্বের উদাহরণে বলা যায়, আমরা দেখছি একটা লোক রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ কলার খোসায় পা দিয়ে পড়ে গেল। তখন হাসি আসতে পারে। অথবা এরকম অনেক কৌতুক আছে। এক জিনিসের আশা তৈরী করে শেষদিকে সম্পূর্ন ভিন্ন আরেক জিনিস দিয়ে হাস্যরস তৈরী করা হয় এসব ক্ষেত্রে।
এসব নিয়ে অনেক বিস্তারিত কাজ আছে। প্লেটো, এরিস্টটল, থমাস হবস, সোরেন কীর্কেগার্ড, সিগমুন্ড ফ্রয়েড সহ বড় বড় দার্শনিকদের মতের উপর ভিত্তি করে ধারণা তৈরীর চেষ্টা করা হয়েছে। কোনটাই তেমন সম্পূর্ন নয়। অর্থাৎ, হাস্যরসের কারণ এখনো সঠিক জানা যায় নি।
হিউমার বা হাস্যরসের তিন তত্ত্ব। Share on X
গোপাল ভাঁড় এবং বাঙ্গালীর হাসির গল্প
অল্প বিস্তর হাস্যরসের দর্শন পড়ালেখা করে ইচ্ছা হলো বাঙালীর হাসি সম্পর্কে জানার। এর জন্য গোপাল ভাঁড়ের গল্প আর পল্লিকবি জসীম উদদীনের সম্পাদিত বাঙ্গালীর হাসির গল্পের শরণাপন্ন হই। দুই বইতে যেসব গল্প সন্নিবেশিত আছে তা দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলে হাসির গল্প হিশেবে পরিচিত।
সেইসব পড়তে পড়তে যা মনে হলো, ঐসব গল্পে বুদ্ধির খেলাকেই বেশী প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। বুদ্ধি দিয়া হাস্যরস তৈরীর চেষ্টা, অন্যকে জব্দ করা ইত্যাদিই বাঙালীর হাস্যরসের গল্পের এক প্রধান বৈশিষ্ট। এগুলো এমন যে, পড়ে লোকে হো হো করে হাসবে তা নয়। পড়া শেষে হাসির ভাব আসতে পারে। গোপাল ভাঁড়ে আরো দেখা যায় সে তার বুদ্ধি দিয়ে অথরিটিকে (মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র) জব্দ করে, অথরিটির অন্যায়ের প্রতিবাদও সে করে তার মতো করে।
যাইহোক, বাঙ্গালীর হাসি এবং জগতের বাকী তাবত লোকদের হাস্যরসের ধরণ ও কারণ সম্পর্কে তেমন কিছু জানতে পেরেছি বলে মনে হয় না। আরো সময় ও পরিশ্রম প্রয়োজন।
আয়নাবাজি চলচ্চিত্র
অনেকদিন পরে বাংলাদেশী একটি ফিল্ম আলোচনায় আসতে সক্ষম হয়েছে। এমন সময়ে যখন বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রিতে চোখ পড়েছে মাড়োয়ারী ব্যবশায়ীদের। কলকাতার সাথে যৌথ প্রযোজনার বাণিজ্যিক ফিল্ম হচ্ছে নিয়মিতভাবে।
এই অবস্থায় নিরঙ্কুশ বাংলাদেশী একটা ফিল্মের আলোচনার আশাটা উৎসাহব্যঞ্জক।
বাংলাদেশে ভালো ফিল্ম হয়। অজ্ঞাতনামা নামে একটা ভালো ফিল্ম হয়েছে শুনেছি। তৌকির আহমেদ পরিচালনা করেছেন। তা দেখার সুযোগ হয় নি। ঐ ফিল্ম এমন হাইপও তৈরী করতে পারে নি।
ফিল্মের মধ্যে যদি খালি “আর্ট ফিল্মের” বিষয়াদি থাকে তবে সাধারণ দর্শকেরা তা গ্রহণ করতে পারবে না। যেমন, কলকাতার অবানিজ্যিক ধারার ফিল্ম যেগুলো হয়, তা শহর কলকাতার বাইরে চলে না; এমন মত দিতে দেখেছি ওখানকার এক চিত্রনাট্যকারকে। [নাম পেলে ভট্টাচার্য্য, এনটিভি বিডিতে প্রকাশিত স্বাক্ষাতকার।]
আয়নাবাজি কলকাতার ঐ ফিল্মগুলো থেকে আলাদা। গল্প ভালোই। অভিনয় ভালো লেগেছে। প্রধান অভিনেতা, চঞ্চল চৌধুরী ভালো অভিনেতা। সিসিমপুরে হোক বা নাটকে বা ফিল্মে; কোথাও তার অভিনয় খারাপ লাগে নাই কখনো। নতুন অভিনেত্রী দেখতে সুন্দর, অভিনয়ও ভালো। সব মিলিয়ে এন্টারটেইনিং ফিল্ম। বাংলাদেশে আধুনিক ক্রাইম থ্রিলার ফিল্ম সেভাবে হয় নাই এখনো, তাই এটাকে আধুনিক ক্রাইম থ্রিলার ধারায় এক বড় পদক্ষেপ ধরা যেতে পারে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ভালো মানের ক্রাইম থ্রিলার আমরা পেতে পারি। মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের একটি থ্রিলার উপন্যাস আছে, ‘১৯৫২ঃ নিছক কোন সংখ্যা নয়’ নাম। তা দিয়ে এন্টারটেইনিং থ্রিলার মুভি হতে পারে।
অনেকে বাজে একটি অভিযোগ করছেন, কোরিয়ার একটি ফিল্ম থেকে নাকী পুরো কাহিনী ক্যারেক্টার নেয়া হয়েছে। তা মিথ্যা। এবং যদি ভবিষ্যতে তা হয়ও; মানে কোরিয়ার বা অন্য বিদেশী ফিল্ম থেকে ক্যারেক্টার, কাহিনী নিয়ে যদি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এন্টারটেইনিং ফিল্ম বানানো যায় তা বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রির জন্য ভালো। কলকাতা অনুসরণ না করে ঐসব অনুসরন করা অনেক বেটার।
আয়নাবাজি ও ডিজিটাল মার্কেটিং
ডিজিটাল মার্কেটিং তথা ওয়েব দুনিয়ায় বিজ্ঞাপন কৌশল একটি দারুণ জিনিশ। দেশে যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে নিজের পন্য বা সেবা মানুষের সামনে নিতে চান তাদের ডিজিটাল মার্কেটিংকে গুরুত্ব দিতে হবে।
আয়নাবাজির ব্যাপারটা আমার ভালো লাগছে। তারা যেসব দর্শক টার্গেট করেছে এদের কাছে যেতে পারছে। ঐসব দর্শকদের বুঝাতে পারছে “আমরা আমরাই তো”।
আয়নাবাজির হাইপের কেন্দ্রে ছিল সিনেমা বিষয়ক বাংলাদেশের একটি বড় ফেইসবুক গ্রুপ। সেই গ্রুপে অনেক অনেক সদস্য আছেন যারা আন্তরিকভাবে চান বাংলাদেশের সিনেমার উন্নতি হোক। একটা ভালো সিনেমা বানিয়ে কেউ যদি এই গ্রুপে গিয়ে বলে, “আমি এই সিনেমা বানাইলাম, এই দেখেন ট্রেলার”; দর্শকেরা তাকে গ্রহণ করবে আগ্রহ সহকারে।
এই দর্শকদের দূরে দূরে থাকলে তারা যতটা যুক্ত হবে ফিল্মের প্রচারনায় বা দেখায়, কাছে আসলে আরো বেশী হবে। আয়নাবাজি কাছে আসতে পারছে।
সাইকোলজির প্রফেসরেরা একটা পরীক্ষা করছিলেন। তাদের একজন একটা বীচে গিয়ে বসলেন। তার পাশে বিশজন লোক ছিল। তারা বসে আছে। ভদ্রলোক তার পাঁচ ফুট দূরে একটা রেডিও রাখলেন। এর কয়েক মিনিট পরে তিনি উঠে গেলেন। তখন আরেক প্রফেসর চোরের ভান ধরে এসে রেডিও নিয়ে দিলেন দৌড়। যারা ঐখানে বসে ছিল এর মাঝে চারজন উঠে তারে ধাওয়া করলো।
একই পরীক্ষা তারা অন্যভাবে করেন। দ্বিতীয়বারে আরেক জায়গায় আরেকজন প্রফেসর এইভাবে একই সংখ্যক লোকের পাশে গিয়া বসেন রেডিও নিয়ে। তারপরে কয়েক মিনিট পরে রেডিও রেখে তিনি উঠে যান। যাওয়ার আগে তিনি লোকদের বলে যান , ‘আপনারা আমার জিনিসগুলা একটু দেইখেন, আমি আসতেছি।’
এইবার যখন দ্বিতীয় প্রফেসর চোরের ভান ধরে রেডিও নিয়ে দৌড় দিলেন, তখন উনিশ জন লোক ধাওয়া করলেন তারে!
মানুষের প্রকৃতি এই, তারে দায়িত্ব দিতে হয়। তাইলে সে সহায়তা করবে। দেখেন আয়নাবাজির পাইরেসির প্রতিবাদ ক্যামনে করতেছে লোকে। সাধারন লোকে। অথবা ক্যামনে আইএমডিবিতে স্বেচ্ছায় ভোট দিচ্ছে (এজন্যই লি কুয়ান বলেছিলেন আধুনিক যুগে গণতন্ত্রের চাইতে জনসংখ্যা বেশী গুরুত্বপূর্ন।)। এটার কারণ হলো আয়নাবাজি এই দর্শকদের বুঝাইতে পারছেন এটা আপনাদেরও ফিল্ম। বলিউডের ফিল্মেরা বিভিন্নভাবে এসব নিয়মিত করে থাকে। সম্প্রতি রাকেশ রোশন তার ফিল্ম কাবিল নিয়ে করে যাচ্ছেন, ঋত্বিক রোশনের অটোগ্রাফসহ পোস্টার বিলানোর মাধ্যমে। ওইখানে যারে দেয়া হচ্ছে তার নামও মেনশন করা হচ্ছে। এতে ভক্তরা খুশি হয়ে তা শেয়ার দিচ্ছেন। আশা করি তাও সফল হবে। আমিও এই লেখায় যুক্ত করার জন্য একটা ট্রাই নিলাম ঋত্বিকের ফেইসবুক পেইজে নক করে।
‘কাছে আসা’ মার্কেটিং এর আরো সুবিধা কী?
মানুষ কোন কাজরে বিচার করে ওই কাজের সাথে যুক্ত মানুষরে সে লাইক করে না হেইট করে তার উপর ভিত্তি করে। কেউ যদি কাউরে লাইক করে তখন তার কোন কাজরেও সে সাধারণত লাইক করবে। সবার কাজেই ভুল ভ্রান্তি থাকে। যারা আপনারে আমারে লাইক করে, আমাদের ভুল ভ্রান্তি তাদের চোখে তেমন পড়বে না। পড়লেও তারা এটাকে খুব আমলে নিবে না।
আবার কেউ যখন আপনারে আমারে ঘৃণা করবে তখন আপনার আমার কাজরেও সে ঘৃণা করবে। কাজের মধ্যে খুঁজে ভুল করবে। ভালো দিক তার নজরে পড়বে না।
ফলে “কাছে আসা” মার্কেটিং এর সুবিধাটা হলো, আপনি যাদের কাছে আসলেন তারা আপনার ভুল ভ্রান্তি না দেখে ভালোটা বেশী দেখবে।
এ ব্যাপারে ড্যানিশ দার্শনিক সোরেন কীর্কেগার্ড (মে ৫, ১৮১৩- নভে ১১, ১৮৫৫) লিখে গেছেন তার জার্নালে। তিনি লিখেছেন, ‘কিছু লোক ব্যাক্তি আক্রমণ-হাসাহাসি করে কিছু অর্জন করতে চায়। যেসব জায়গায় অনেকে আলাপ আলোচনা করে থাকেন ওইসব জায়গায় আমি যখন যাই, প্রাই দেখেছি কেউ কেউ অযাচিতভাবে আমাকে নিয়ে হাসাহাসি বা আক্রমনের চেষ্টা করে। কিন্তু এদের সম্পর্কে যখন আমি সামান্য কোন খুচরা মন্তব্য করি তখন তারাই আবার খুব নম্র ভদ্র হয়ে যায়। এর কারণ সে আমাকে খুব বড় ভাবে, হয়ত আমি যতটা বড় তার চাইতেও অনেক বেশী। ফলে আলোচনায় তার অংশগ্রহণ যেহেতু আমি স্বীকার করছি না তাই সে হাসাহাসি করে আমার দৃষ্টি আকর্ষন করল। কিন্তু যখনই আমি তার সম্পর্কে খুচরা মন্তব্য করে তাকে আলোচনার একজন করে নিলাম তখনই সে আমার মহানতা স্বীকার করে নিল।’
কীর্কেগার্ড যে জিনিসটা বুঝেছিলেন, তা গুরুত্বপূর্ন। “কাছে আসা” মার্কেটিং তাই হেইটারদেরও লাইকারে পরিণত করার ক্ষমতা রাখে।
( বি দ্রঃ নোয়াহ ফিল্মে কীর্কেগার্ডের কোর ফিলোসফির কিছু চিত্রায়ণ আছে।)
কাছে আসা মার্কেটিং এর সুবিধা Share on X
প্রকৃত আয়নাবাজি
এবার প্রকৃত আয়নাবাজিতে আসা যাক। প্রকৃত আয়নাবাজির গল্প অতি প্রাচীন। জসিম উদদীন সম্পাদিত বাঙ্গালীর হাসির গল্প প্রথম খন্ডের দ্বিতীয় গল্প। নাম আয়না। অবশ্যই শরাফত করিম আয়না নয়। এই গল্প আপনাদের সবারই জানা হয়ত।
সেই গল্পে একজন কৃষক কৃষিকাজ করছিলেন। মাটি খুঁড়তে গিয়ে তিনি একটি আয়না পান। তখন আয়না কেউ চিনত না। কৃষক আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখলেন, একজনের মুখ দেখা যায়। বড় হলে ছেলেরা অনেক ক্ষেত্রে বাপের মত দেখতে হয়। এই কৃষকও তেমন হয়েছিলেন। আয়নাতে নিজের ছবি দেখে তিনি ভাবলেন এ তার মৃত বাবার ছবি।
তিনি আয়নায় ছবি দেখে দেখে বাপের সাথে নানাবিদ কথা বললেন। তা নিয়ে লুকিয়ে রাখলেন বাড়িতে। এদিকে কৃষকের আচরনের অস্বাভাবিকতা তার বউয়ের চোখে ধরা পড়ে। বউ দেখতে পান তার স্বামী কী এক বস্তুর সাথে অদ্ভুত সব কথা বলে যান।
পরদিন কৃষক কাজে যাবার পর কৃষকের বউ ঐ আয়না খুঁজে বার করেন। আয়না দেখে তার তো চক্ষুস্থির। আয়নাতে একটা মহিলার ছবি দেখা যায়। তখন তো আর কেউ আয়না চিনে না। নিজের মুখ আয়নাতে দেখে কৃষকের স্ত্রী ভাবলেন অন্য কেউ। ভাবলেন তার স্বামী নতুন বিয়ে করেছে। এই হলো নতুন বউয়ের ছবি। এর সাথেই সে অদ্ভুত সব কথা বলে।
তার পরের অবস্থা তো কল্পনা করা যায়। কারো বউয়ের কাছে তার এবং পরনারীদের স্ক্রিণশট প্রেমালাপ ফাঁস হবার মত বিষয়।
সেদিন বিকেলে কৃষক বাড়ি এলে তার বউ ঝাঁটা হাতে ছুটে যান। ঘটনার আকস্মিকতায় বিস্মিত কৃষক ধাতস্ত হয়ে বউকে বুঝাতে চান ওখানে তার স্বর্গীয় পিতার ছবি, কোন বেগানা নারীর ছবি নয়।
তাদের ঝগড়ার শব্দে পাড়া পরশীরা জড়ো হন। তখন একসময় মীমাংসা হয় আয়নারহস্যের। বুঝা যায় এ এমনই এক বস্তু, যাতে যেই তাকান তারই খোমাখানা ভেসে উঠে।
আয়না রহস্যের মীমাংসার পরে কৃষক এবং তার স্ত্রী সুখে শান্তিতে দিনযাপন করতে লাগলেন।