বিউটি এবং ট্রুথ
আমরা বিউটির কথা বলি, সৌন্দর্য। ধরেন কোন সুন্দর মিউজিক বা স্ত্রীলোক। বা কোন সুন্দর পেইন্টিং। কিন্তু তা আমাদের অসত্য বলছে, ভুল কথা বলছে।
অন্যদিকে একটি সাধারণ জিনিস, আমাদের বলছে সত্য। সুন্দরের কাছে এই সাধারণ জিনিস খারাপই দেখাবে। পাশাপাশি রাখলে হবে তুলনাভ্রান্তি।
খারাপের মুখ থেকে, সাধারনের মুখ থেকে সত্য গ্রহণের মানসিকতা আমাদের থাকবে কি?
আমাদের তো মনে হবে ঐ সুন্দরের মুখ থেকে যা আসে তাই বেশী কনভিন্সিং।
তখন আমরা কী করব?
সুন্দর আমাদের প্রভাবিত করে। তার প্রভাবে আমরা যদি অসত্যরে সত্য বলে মেনে নেই, তখন আমাদের কী হবে?
অথবা ধরা যাক এই বিষয়ে আমরা সচেতন। আমরা সচেতন যে সৌন্দর্য অসত্য নিয়ে হাজির, সত্য আছে ঐ সাধারণ মুখেই। তবুও কি আমরা অসত্য গ্রহণ তথা বিউটির ছলনা থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে পারব?
এটি কোন সহজ কাজ নয়। খুব সম্ভবত প্রায় অসম্ভব এক কাজ। কারণ এই বায়াস অবচেতনে কাজ করে, এবং নিগুঢ়ভাবে আমাদের দেখার ভঙ্গিই পালটে দেয়।
রিসার্চ
আমরা যে সুন্দর লোকদের বেশী প্রাধান্য দিয়ে থাকি তা নিয়ে প্রচুর রিসার্চ হয়েছে।
সাইকোলজিস্টেরা তাদের গবেষণায় দেখেছেন যে আকর্ষনীয় চেহারার লোকদের ব্যাপারে অন্যেরা মনে করে তারা বেশী বুদ্ধিমান, বেশী সফল, বেশী সুখী, বেশী গুরুত্বপূর্ন। তাদের বাহ্যিক চেহারা বা দেখার সৌন্দর্য এইসব ভাবনায় সরাসরি প্রভাব ফেলে।
অবশ্য এটি রিসার্চে প্রমাণ না হলেও আমরা জানতাম। কারণ বাস্তব অভিজ্ঞতায় আমরা এমন দেখে থাকি।
মানুষেরা সুন্দর চেহারার লোকদের মানসিক শারীরিক বুদ্ধিমত্তা সব দিক দিয়েই বেশী ভালো মনে করে, মনে করে তারা সামাজিক ভাবে বেশী মিশুক ইত্যাদি। [১]
এবং মানুষেরা সুন্দর চেহারা লোকদের কাছে নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য দিতেও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। [২]
এবং একই অপরাধে দেখতে সুন্দর লোকের কম দোষী হবার সম্ভাবনা বেশী থাকে। [৩]
এইরকম দেখা গেছে আমাদের শক্ত বিউটি বায়াসের অস্তিত্ব। এই বায়াস এতো শক্ত যে বেশীরভাগ সময় ভালো হলেও, অনেক সময় বিউটিফুলদের এতে হীতে বিপরীতও হয়।
যেমন বিউটিকে নারীত্বের একটা সংযোগ স্থাপন করে দেখে মানুষেরা। বিশেষত পুরুষেরা। তাই পৌরষিক কাজ অর্থাৎ ট্রাক চালনা, সিক্যুরিটি গার্ড ইত্যাদি যেসব কাজে সাধারণত পুরুষদের প্রথমে কল্পণা করা হয় সেসব কাজে একজন সুন্দরী ও কম সুন্দরী নারী আবেদন করলে কম-সুন্দরী নারীর কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা বেশী।
এই রিসার্চ করেছেন রাইস ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ক্যান পডরাজ। তিনি দেখেছেন পুরুষ চাকরি দাতারা সুন্দরী মহিলাদের রিসিপশনিস্ট জাতীয় কাজে রাখতে বেশী আগ্রহী। মহিলা চাকরি দাতাদের এমন প্রবণতা কম।
আর পৌরষিক কাজগুলিতে কম সুন্দরী মহিলাদের নিয়োগ দেয়া হয় বেশী। এক্ষেত্রে চাকরিদাতা মহিলা বা পুরুষ হলে পার্থক্য হয় না। কেউই সুন্দরীদের ঐসব কাজ দেন না।
গবেষক বলেন এমন হয় সৌন্দর্যের সাথে নারীত্বকে মিলিয়ে দেখার দরুন। চাকরিদাতারা ভাবেন সুন্দরী মহিলাদের এসব শক্ত কাজ করার সামর্থ্য নেই। [৪]
বিউটি বায়াসে কী বিপদ
এমনিতে মনে হয় সৌন্দর্য তো আরাধ্য, এর আবার বিপদ কী? কিন্তু বিপদ হতে পারে যখন সৌন্দর্য ছলনা নিয়ে উপস্থিত হয়। যখন কোন সুন্দরী মহিলা বিজ্ঞাপনে ভুল পন্য কিনতে প্ররোচিত করে, বা কোন সুন্দরী নারী মধু হই হই আপনার মুখে তুলে দেয় বিষ। বা নিচের ছবির মতো যদি অবস্থা হয়।
নিজে বাঁচতে হলে তখন সুন্দরীকে মারতে হবে। সুন্দরীদের মারতে নিশ্চয়ই বেশী খারাপ লাগবে। ইতালিয়ান জাল্লো ফিল্মের পরিচালক ডারিও আরজেন্টো তাই তার ফিল্মে সাইকোদের দিয়ে সুন্দরীদের খুন করাতেন, যাতে দর্শকের বেদনাটা বেশী হয়।
ধরা যাক, যুদ্ধে আপনি আর বিপক্ষে অস্ত্র হাতে ছবির মতো এক সুন্দরী মহিলা। এখানে বিউটি বায়াসে আক্রান্ত হয়ে সামান্য দ্বিধায় সময় নষ্ট করলেই সুন্দরীর অস্ত্র থেকে বেরোবে বুলেট, গোলাপ নয়।
বায়াস আমাদের জাজমেন্টকে/বিচারকে ভুল পথে চালিত করে। তাই অপেক্ষাকৃত ভালো সিদ্ধান্তের জন্য এর ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকা দরকার, যতটা পারা যায়।