ব্রেইন, মানুষের নৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়া ও সাপোলস্কি

সাপোলস্কি

মানুষের মস্তিষ্কের সামনের অংশ ফ্রন্টাল করটেক্স। সবচেয়ে বড় অংশ। এর কাজের মধ্যে আছে কোন কাজের ফিউচার প্রভাব কী হবে তা বুঝা, গুড- ব্যাড বা বেটার- বেস্ট এর পার্থক্য করতে পারা (যা বিবেক, চেতনা বা কনশেন্স নামেও পরিচিত), বিভিন্ন ঘটনার ভিন্নতা এবং একরকমতা বুঝা, সমাজে যেসব আচরন বা ব্যবহার খারাপ এগুলি সাপ্রেস করে রাখা বা কাটিয়ে উঠা ইত্যাদি কাজ করে থাকে।

“In particular, the frontal cortex is especially important for planning appropriate behavioral responses to external and internal stimuli.” []

অর্থাৎ,বাইরের বা ভিতরের কোন স্টিমুলাই এর সাপেক্ষে আপনার আচরণ কী হবে তা নির্ধারণ করে।

কোন একটা ঘটনা দেখলেন, তা ভালো না মন্দ তা বুঝা যায় এই ফ্রন্টাল করটেক্সেই। এবং তার প্রতিক্রিয়ায় আপনি কী করবেন তা এখানে নির্ধারিত হয়।

এই ফ্রন্টাল করটেক্স ব্রেইনের একমাত্র অংশ যা পূর্ন হয় ধীরে ধীরে। এটি তৈরী সম্পূর্ন হয় প্রায় পঁচিশ বছর বয়সে। যেহেতু এটি শৈশব থেকে ডেভলাপ হতে থাকে পঁচিশ বছর পর্যন্ত তাই পরিবেশের প্রভাব সবচেয়ে বেশী এবং জিনের প্রভাব সবচেয়ে কম এর উপর। এবং এটিই নির্ধারন করে আপনি কেমন ব্যক্তি হবেন বা আপনার ব্যক্তিত্ব কীরকম হবে।

অর্থাৎ, কোন পরিবেশে বড় হচ্ছেন, কী আপনার অভিজ্ঞতা হচ্ছে (বই পড়া, ফিল্ম দেখাও অভিজ্ঞতা) তা আপনার ব্রেইনের এই অংশের ডেভলাপমেন্টে প্রভাব ফেলে।

এখানে উল্লেখ্য, সমাজবিজ্ঞানের দীর্ঘতম একটি গবেষণা মতে, [] সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থা শিশুর মেধা বিকাশে খুবই গুরুত্বপূর্ন প্রভাব ফেলে, এবং ধনী পরিবারে জন্ম নেয়া বাচ্চারে গরীব পরিবারে জন্ম নেয়া বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের ক্ষমতার দিক থেকে অনেক এগিয়ে যায় খুবই অল্প দিনের ব্যবধানে।


রবার্ট সাপোলস্কির তার নতুন বই বিহেভঃ দ্য বায়োলজি অব হিউম্যান এট আওয়ার বেস্ট এন্ড ওরস্ট, নিয়ে কথা বলেছেন “Behave” by Robert Sapolsky, PhD নামের ইউটিউব ভিডিওতে।  তিনি ব্রেইন এবং আমাদের আচরনে তার প্রভাব নিয়ে কথা বলেছেন। তার ২৩ থেকে ২৫ মিনিটের উপরোক্ত ইনসাইট বা সাইন্টিফিক তথ্য আছে। []

সাপোলস্কি
ছবিঃ রবার্ট সাপোলস্কি

মানুষের নৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়া

 

মানুষ নৈতিক সিদ্ধান্ত নেয় (বা বিচার করে) এই ফাউন্ডেশনগুলি ভিত্তি করেঃ

১। মানুষের ক্ষতি হইল কি না

২। ন্যায় হইল কি না

৩। গ্রুপ/দল/জাতি গোষ্ঠির প্রতি অধীনতা বজায় থাকল কি না

৪। অথরিটির প্রতি সম্মান বজায় থাকল কি না

৫। ধর্মীয় পবিত্রতা রক্ষা হইল কি না

এক দুই করে দেয়া হইছে তালিকার জন্য কেবল। যারা লিবারেল বা উদার এরা ১ এবং ২ দিয়াই কোন নৈতিক সিদ্ধান্ত নেন।

এডওয়ার্ড স্নোডেন আমেরিকার কিছু গোপন তথ্য ফাঁস কইরা দিছেন। লিবারেলদের মতে তা অপরাধ বা অন্যায় না। কারণ ১ এবং ২ ফাউন্ডেশন মতে এই কাজ ঠিক আছে। মানুষের ক্ষতি হয় নাই বরং উপকার হইছে। ন্যায়কাজও হইছে।

কিন্তু কনজারভেটিভদের মতে তা অনৈতিক। কারণ এতে গ্রুপ/দল/গোষ্ঠির প্রতি অধীনতা বজায় রাখেন নি স্নোডেন। অথরিটির প্রতিও সম্মান রাখেন নি।

কনজারভেটিভরা পাঁচটা ফাউন্ডেশনই ব্যবহার করেন নৈতিক সিদ্ধান্ত নেবার কালে।

মানুষের ব্রেইনের এক অংশের কাজ হইল ভিসেরাল ডিজগাস্ট তৈরী করা। ধরেন পচা ডিম মুখে দিলে যে অনুভূতি হবে আপনার। সাথে সাথেই ব্রেইনের একটা অংশ সচল হইয়া উঠবে। কিছু হরমোন নিঃসৃত হবে। আপনি সহসাই বুঝতে পারবেন যে বস্তু মুখে নিছেন তা খাওয়া যাবে না। খাদ্য আর ভিতরে যাবে না, বাইরে ফেলবেন আপনে।

প্রাচীনকালে যখন মানুষ বিভিন্ন গাছের ফল টল খেয়ে জীবন ধারণ করত, তখন এই ভিসেরাল ডিজগাস্ট সেনসিটিভিটি তার অনেক উপকার করছে।

মানুষের মোরাল ডিজগাস্ট অর্থাৎ, কোন জিনিসরে নৈতিক ভাবে ডিজগাস্ট করাও ব্রেইনের একই অংশ থেকে তৈরী হয়। মোরাল ডিজগাস্টের জন্য ব্রেইনে আলাদা কোন অংশ তৈরী হয় নাই, যেহেতু এটা অনেক আধুনিক ব্যাপার।

যাদের ভিসেরাল ডিজগাস্ট বেশী শক্ত, তারা কনজারভেটিভ হয়ে থাকেন নৈতিক সিদ্ধান্ত নেবার কালে। []