মনোক্রোনিক ও পলিক্রোনিক

কিছু মানুষ একসাথে অনেক কাজ শুরু করতে পারেন না। তাদের নীতি হলো একবারে এক কাজ। ফোকাসের জন্য এটি দরকারী বলে মনে করা হয়। আবার কিছু লোক তার উলটা। তারা এক কাজ করতে থাকলে মনযোগ রাখতে পারেন না, বিরক্ত হন। তারা একসাথে অনেক কিছু করেন সেই বিরক্তি যাতে না আসে এজন্য।

কিন্তু এই দুই তরিকার মধ্যে কোনটি কার্যকরী?

উম্বের্তো একো এ বিষয়ে তার হাউ টু রাইট এ থিসিস বইতে দারুণ একটি কথা লিখেছেন।

“মনোক্রোনিক এবং পলিক্রোনিক এই দুই ধরণের লোক। মনোক্রোনিকেরা সফল হয় তখনই যখন তারা একটা সময়ে কোন একটা মাত্র জিনিস নিয়ে কাজ করে। তারা গান শুনতে শুনতে পড়তে পারে না, একটা উপন্যাস পড়া শুরু করে আরেকটা উপন্যাস ধরতে পারে না, এবং সবচেয়ে খারাপ হলো শেইভ করতে করতে বা মেইক আপ করতে করতে কথা বলতে পারে না।

পলক্রোনিক লোকেরা এদের পুরো বিপরীত। তারা তখনই সফল হয় যখন তারা একসাথে তাদের আগ্রহের অনেক বিষয়ের চাষ করতে পারে। তারা যদি এক ক্ষেত্রে নিজেদের উৎসর্গ করে তাহলে বিরক্ত হয়ে উঠে। মনোক্রোনিকেরা পদ্বতিগত ভাবে কাজ করে কিন্তু বেশীরভাগ ক্ষেত্রে তাদের কল্পনাশক্তি থাকে কম। পলিক্রোনিকদের সৃষ্টিশীল মনে হয়, কিন্তু তারা অস্থির ও অগোছালো। এবং শেষপর্যন্ত আপনি যদি পৃথিবীর সব বড় চিন্তক ও লেখকদের জীবনী ঘাঁটেন তাহলে মনোক্রোনিক ও পলিক্রোনিক, এই দুই ধরণের লোকদেরই দেখতে পাবেন।”

ছবিঃ দার্শনিক উম্বের্তো একো (১৯৩২-২০১৬)

একো অবশ্যই ছিলেন একজন পলিক্রোনিক লোক। গ্রেট চিন্তক ও লেখকদের তালিকায় তিনি নিশ্চিতভাবেই অবস্থান করেন। তার ব্যক্তিগত সংগ্রহে ছিল ৩০,০০০ এর বেশী বই। পাঁচ ভাষায় তিনি বক্তৃতা দিতে পারতেন।

বই, জ্ঞান, শেখা তথা লাইব্রেরী লার্নিং এবং নলেজের সাথে যুক্ত প্রায় প্রতিটি মানুষের কাছে প্রিয় বা আদর্শ একটি চরিত্র, উম্বের্তো একো। তার বাবা চেয়েছিলেন তিনি লইয়ার হন। কিন্তু একো পড়লেন মধ্যযুগীয় সাহিত্য। এবং এরপর নানা ভাবে তার জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়ে সমৃদ্ধ করে গেলেন বুদ্ধিবৃত্তির দুনিয়াকে।

যারা মনোক্রোনিক আছেন, বা যারা পলিক্রোনিক আছেন, তাদের চিন্তিত হবার কারণ নেই, আমরা বলতে পারি একোর বরাতে। কারণ বড় রাইটার চিন্তক বা অন্য পেশায় সফল হতে হলে মনোক্রোনিক হতেই হবে বা পলিক্রোনিক হতেই হবে এমন নয় বিষয়টা।

বিষয়টা হলো আপনার প্রকৃতি কীরূপ। পলিক্রোনিক হলে সেটাকে জোর করে মনোক্রোনিক করার চেষ্টা করলে ফল ভালো নাও হতে পারে।