মহররম গেল, এবং আমি এক নতুন গান শোনলাম।
আখেরি সালাম লও ওহে নানা জান
তোমার হোসেন যায় কারবালার ময়দান
বুক চাপড়াইয়া শিয়ারা এটা গেয়ে থাকেন। গানটা এখান থেকে শুনতে পারেন।
মহররমের তাজিয়া মিছিলে শিয়া মুসলিমদের অনেকে তাদের দেহ রক্তাক্ত করেন। এই দিনে কারবালার ময়দানে এজিদের সাথে যুদ্ধে ইসলামের নবী মুহাম্মদ (স) এর নাতি ইমাম হোসাইন ইবনে আলী মর্মান্তিক ভাবে নিহত হন। সেই ঘটনাকে মনে রেখে শিয়ারা ওই ঘটনার সাথে একাত্মতায় নিজেদের চাবুক দ্বারা আঘাত করেন।
এই ধরণের নিজেরে আঘাত করার তীব্র রিচুয়াল বিভিন্ন ধর্মে ও সংস্কৃতিতে প্রচলিত আছে।
খ্রিস্টান ধর্মে অনেক লোক চাবুক দিয়া একই ভাবে দেহে আঘাত করেন, ক্রুশে বিদ্ধ যিশুর কষ্ঠের সাথে একাত্মতা পোষণ করতে। ফিলিপাইনের এক দল খ্রিস্টানের নিজেদের ক্রুশেই বিদ্ধ করে ফেলেন!
ইহুদি ধর্মেও অনেকে করে থাকেন। তবে মূল ধারার ইহুদি ধর্মে, এবং ইসলাম ধর্মে এইরকম নিজেকে আঘাত করা নিষিদ্ধ।
হিন্দু ধর্ম খুবই বিশাল, বিভিন্ন এলাকায় তার নানা ধরন আছে। অনেক জায়গায় এই ধরণের আধ্যাত্মিক প্র্যাকটিসের অংশ হিশেবে প্রকাশ্যে নিজেকে আঘাত করা, যন্ত্রণা দেয়া প্রচলিত আছে। যেমন, শক্ত ধাতব হুক চামড়ার মধ্যে ঢুকিয়ে তারা শূন্যে ঝুলে যান উৎসবের দিনে। পিঠের চামড়ায় লোহার হুক ঢুকিয়ে রথ টেনে নিয়ে যান।
যেসব মানুষ এসবে অংশ নেন, নিজেকে যন্ত্রণা দেন, তাদের উপর এদের কী প্রভাব পড়ে জানতে কয়েজন নৃতাত্ত্বিক, বায়লোজিস্ট ও ধর্মতাত্ত্বিকেরা গবেষণা করেছিলেন।
তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, যারা এতে অংশ নেন তাদের হ্যাপিনেস বাড়ে, আত্মসম্মান বাড়ে, এবং সামাজিক মর্যাদা বাড়ে। যদিও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি থাকে ইনজুরির, তথাপি এটি তাদের মেন্টাল হেলথে পজিটিভ প্রভাব ফেলে। তাদের কোয়ালিটি অব লাইফের উন্নতি হয়।
এটা একধরনের স্ট্যাটাস সিগনাল হিসেবে কাজ করে। ঐ গ্রুপের মধ্যে তার সম্মান অনেক বেড়ে যায়।
অবশ্যই কস্টলি সিগনাল, ঝুঁকি অনেক, তাই সোশিও ইকোনমিক ক্লাসে নিচে থাকা লোকেরা এতে অংশ নিতে বেশি আগ্রহী। এমনো দেখা গেছে, এইসব যন্ত্রণাদায়ক রিচুয়ালে অংশ নেবার পর প্রাপ্য হাই সোশ্যাল স্ট্যাটাস তাদের অনেকে ব্যক্তিস্বার্থেও ব্যবহার করেন।
ধরা যাক, এলাকার এক ছেলে, যে নিঃস্ব মা বাপ নাই। সমাজে শক্তিশালী হইতে আধুনিক কালে তার পড়ালেখা করতে হবে, ভালো চাকরী পাইতে হবে, বা রাজনৈতিক দলের ক্যাডার হইতে হবে। কিন্তু ওইসব ধর্মীয় গোষ্ঠীতে রিচুয়ালের সময়ে সে নিজেরে প্রকাশ্যে পেইন দিয়া সামাজিক মর্যাদা অর্জন করে নিতে পারে।
এই ধরণের আচার গ্রুপের প্রতি ব্যক্তির এটাচমেন্ট বাড়ায়, সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় করে। ওই ঘটনার সময়ে ব্যক্তি যে পেইন পান তা স্বল্প সময়ের জন্য, এবং ঠিক হয়ে যায় একসময়, কিন্তু এর সাইকোলজিক্যাল ও সামাজিক বেনেফিট হয় দীর্ঘস্থায়ী।