মুরাদুল ইসলাম » ব্লগ » বাকস্বাধীনতা, ভিন্নমত, উদারতা এবং সামাজিকতা

বাকস্বাধীনতা, ভিন্নমত, উদারতা এবং সামাজিকতা

বাকস্বাধীনতা বলতে আমরা বুঝি যে, একজন ব্যক্তি স্বাধীনভাবে তার মত প্রকাশ করতে পারবে। কিন্তু এই স্বাধীনতার কোন লিমিট আছে কি না?

বাকস্বাধীনতার চর্চাকারী ইউরোপের ১৬ টি দেশে হলোকাস্ট ডিনাই করা এবং এর পক্ষে কথা বলা আইনত অপরাধ। এর জন্য মানুষের শাস্তি হয়। অস্ট্রিয়াতে ২০০৬ সালে লেখক ডেভিড আর্ভিংকে হলোকাস্ট ডিনাইয়ের জন্য অভিযুক্ত করা এবং জেলে ঢুকানো হলে এর প্রতিবাদে মোরাল দার্শনিক পিটার সিংগার লিখেছিলেন প্রজেক্ট সিন্ডিকেটে।

তার কথা ছিল, উপযোগবাদী দার্শনিক স্টুয়ার্ট মিলের অন লিবার্টির বরাতে, যখন আমরা কোন মতরে ফুললি, ফ্রিকুয়েন্টলি এবং ফিয়ারলেসলি আলাপ আলোচনা করতে না দিব, তখন সেটি আর লিভিং ট্রুথ হবে না, হবে ডেড ডগমা।

এবং ডেমোক্রেটিক সমাজে যে হিউমেন প্রগ্রেস, এর উন্নতি বাধাগ্রস্থ হয়ে যাবে যখন আমরা মুক্ত আলোচনার পথ বন্ধ করে দেই।

সিংগার বলেছিলেন আর্ভিংকে মুক্ত করে দেয়া হোক। মুহাম্মদ জেসাস বুদ্ধের শিক্ষা নিয়ে যেমন সমালোচনামূলক আলাপ করার সুযোগ দিতে হবে, তেমনি হলোকাস্ট ডিনাই করার সুযোগও দিতে হবে।

আর্ভিং এর তিন বছরের জেল হয়। ১৩ মাস জেল খাটতে হয়। বাকী অংশ কমানো হয়।

Article 10 of the European Convention on Human Rights and Fundamental Freedoms states: “Everyone has the right to freedom of expression. This right shall include freedom to hold opinions and to receive and impart information and ideas without interference by public authority and regardless of frontiers.”

এর আলোকেই বাকস্বাধীনতাকে বিচার করা হয়।

কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ইউরোপ নিজেই এটা মানে না। এবং মুসলিম বিশ্ব যখন তাদের ধর্মীয় কিছু জিনিসের উপর বাকস্বাধীনতাকে মানতে চায় না, তখন মুসলিম দেশগুলিকে ইউরোপ পশ্চাতপদ হিসেবে দেখাতে থাকে।

এবং, প্রশ্ন এখানে, আমরা কি এই ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশনের মধ্যে গালি এবং কুৎসাকেও অন্তর্ভূক্ত করব?

সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে, যখন মিস ইনফরমেশন ছড়ানো হচ্ছে, এবং এর মাধ্যমে সামাজিক ক্ষতিও সম্ভব হচ্ছে, তখন কি আমরা ফ্রিডম অব স্পিচ এবং এক্সপ্রেশনের দোহাই দিয়ে এগুলিকে চলতে দেব? যেগুলি দিন শেষে গিয়ে আমাদের ডেমোক্রেসিকেই নষ্ট করে?

ভিন্নমতের স্বাধীনতা একটা সমাজে নিশ্চিত করা জরুরী। সেটা সমালোচনার-আলোচনার ভিউ পয়েন্ট থেকে। এখানে কারো অনুভূতিতে আঘাতকে গুরুত্ব দিলে চলবে না, কারণ অনুভূতিতে আঘাতের যুক্তি সামনে আনলে প্রায় যেকোন কিছু নিয়ে আপত্তি তোলা সম্ভব।

এবং একটা মতই একমাত্র মত নয়। আরো মত থাকে।

প্রচলিত যেকোন মতের বিরুদ্ধে কেউ মত প্রকাশ করলে প্রচলিত মত অনুসারীরা তাকে আক্রমণ করেন সাধারণত দেখা যায়। এখানে যে ব্যক্তি প্রচলিত মতের বিরুদ্ধে মত দিয়েছে সে তার বাক স্বাধীনতার চর্চা করেছে। কিন্তু যারা তাকে আক্রমণ করছে, গালি দিচ্ছে এরা বাকস্বাধীনতার চর্চা করছে না, বরং তার ভিন্নমতকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছে, ব্যক্তি আক্রমণ করছে , এবং একটা বদ্ধ সমাজ তৈরীর অনুসঙ্গ হিসাবে কাজ করছে এখানে।

কুৎসা ও মিস ইনফরমেশনকে বাক স্বাধীনতায় ফেলা যায় না। বিশেষত যে মিস ইনফরমেশন সমাজের ক্ষতি করে বা ব্যক্তির ক্ষতি করে।

কুৎসাকারক বা ব্যক্তিকে গালি দেয়া কারো সাথে ঐ ব্যক্তির বন্ধুত্ব করতে হবে, বা সামাজিকতা করতে হবে, এমন দাবী অন্যায়।

আমরা বড়জোর আশা করতে পারি সে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা করবে না, বা একে গালি হিসেবেই নিবে, বা পালটা গালি দিয়ে, ব্লক বা আনফ্রেন্ড করে জিনিসটা শেষ করে দিবে। এই অবস্থানকে অপেক্ষাকৃত উদার অবস্থান ধরা যায়।

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

×
গুরুত্বপূর্ণ
Scroll to Top
বই মডেলিং