দেখা যেত যে যদি একই মূল্যের দুই ধরণের মুদ্রার মধ্যে একটি বানানো হতো মূল্যবান কোন ধাতু দিয়ে, আর আরেকটি বানানো হতো সাধারণ কোন ধাতু দিয়ে তাহলে বাজার হতে মূল্যবান ধাতু দিয়ে তৈরী মুদ্রা নাই হয়ে যেত, এবং একচেটিয়াভাবে সাধারণ ধাতুর তৈরী মুদ্রাটিই বিরাজ করত।
যেমন, ধরুন ৫ টাকার কয়েন একটি বানানো হয়েছিল সোনা দিয়ে। আরেকটি বানানো হয়েছিল সাধারন কোন ধাতু দিয়ে। দুইটার মূল্যমান একই, ৫ টাকা। এক্ষেত্রে, দেখা যেত বাজারে দামী ধাতুর তৈরী মুদ্রাটি থাকত না।
যখন মুদ্রা দিয়ে বাণিজ্য চলত, রানী এলিজাবেথের সময়, সেই সময়ে স্যার থমাস গ্রেশাম (১৫১৯-১৫৭৯) এই প্রবণতাটি জনপ্রিয় করেন। তিনি বলেন যে, ভালো মুদ্রাকে খারাপ মুদ্রা বাজার থেকে হটিয়ে দেয়। তার অনেক আগে কেপার্নিকাসও বলে গিয়েছিলেন একই কথা।
কেন খারাপ মুদ্রা ভালো মুদ্রাকে বাজার থেকে হটিয়ে দেয়?
খুবই স্বাভাবিক। দামী ধাতু যেহেতু মূল্যবান তাই অনেকে এগুলি গলিয়ে অন্যান্য কাজে ব্যবহার করত। ফলে বাজারে মুদ্রা হিসেবে কেবল বাজে ধাতুর মুদ্রাটিই রইত।
গ্রেশামের অনেক আগেই এই নীতিটি প্রচলিত ছিল দুনিয়ার অনেক জায়গায়। খ্রিস্টান বা মুসলিম সমাজে প্রচলিত ছিল। প্রাচীন গ্রীসের এরিস্টোফ্যানিসের নাটকেও ছিল। সেখানে তিনি বলেছিলেন, কীভাবে খারাপ মানুষেরা ভালো মানুষদের হটিয়ে দিচ্ছে।
এখন মুদ্রার যুগ না হলেও গ্রেশামের নীতিটি নানা ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যেমন, খারাপ আচরন ভালো আচরনকে হটিয়ে দেয়। ধরা যাক, একজন আপেল বিক্রেতা একটি ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার করে তার আপেলের মিষ্টতা বৃদ্ধি করে বিক্রি করে বাজারে। ক্রেতারা বেশী তার আপেল কিনে। এখন যদি বাজারের পর্যবেক্ষকেরা এই ব্যক্তির ক্ষতিকর রাসায়নিক মেশানোর ব্যাপারটি চেক না করেন, বন্ধ না করেন, তাহলে লাভের জন্য অন্যান্য ব্যবসায়ীরাও একই পথে হাঁটবে। তখন এক পর্যায়ে দেখা যাবে বাজারের বেশীরভাগ আপেল বিক্রেতাই ঐ ক্ষতিকর রাসায়নিকটি মিশিয়ে আপেলের মিষ্টতা বৃদ্ধি করছে।
গ্রেশামের ল ব্যবহার করে সৈয়দ মুজতবা আলী বাংলা সাহিত্যে বাজে বইয়ের প্রাদুর্ভাব ব্যাখ্যা করেছিলেন। গ্রেশামের ল মোতাবেক বাজে বইগুলি বাজার থেকে ভালো বইকে হটিয়ে দেয়।
“বাংলাদেশের সর্বক্ষেত্রে ভালো লোককে তাড়িয়ে দিচ্ছে খারাপ লোক। সর্বস্তরের শিক্ষাব্যবস্থায়ও এখন “গ্রেশাম’স ল” চলছে। গ্রিসে উৎপত্তি হওয়া “গ্রেশাম’স ল” অর্থনীতির একটি সূত্র। যেখানে বলা হয়েছে, ভালো লোকদের তাড়িয়ে দেয় খারাপ লোকেরা। দেশে এখন সেটাই হচ্ছে।” – আকবর আলি খান, ৯ জানুয়ারী ২০১৬, সমকাল।
সময়ের ব্যবধানে খারাপ ভালোকে হটিয়ে দিবে, যদি চেক এন্ড ব্যালেন্সের ব্যবস্থা না থাকে। কোন সিস্টেমে দুর্নীতি করে পার পাবার সুযোগ থাকলে সময় ব্যবধান্য সেখানে দুর্নীতিরই হবে প্রাধান্য।