সব মানুষই চায় সৃষ্টিশীল হইতে কিন্তু সবাই তা হইতে পারে না। কীভাবে সৃষ্টিশীল হওয়া যায় এই নিয়া নানা বই আছে, প্রচুর লেখা আছে। কিন্তু একজন লোক সব লেখা পড়তে যাইতে পারবেন না। তখন তার পড়তে পড়তেই টাইম যাবে, সৃষ্টিশীল হওয়া আর হবে না। টাইম খুব অল্প।
আরেকটা ব্যাপারও আছে। জেন স্টোরিজ টু টেল ইওর নেইবরস বইয়ে আছে একটা জেন গল্প, এক ছেলে গেছে শিক্ষকের কাছে মার্শাল আর্টস শিক্ষা নিতে। গিয়া সে বলল, স্যার আমি মার্শাল আর্টস শিখতে চাই। তাড়াতাড়ি শেখার জন্য আপনার কাছ থেকে শিখব এক স্টাইল, আরেক মাস্টারের কাছ থেকে শিখব আরেক স্টাইল। আইডিয়াটা আপনার কেমন মনে হয়?
শিক্ষক কইলেন, যেই শিকারী দুইটা খরগোশের পিছে দৌড়ায়, সে কোনটারেই ধরতে পারে না।
এই জেন গল্পের নীতিশিক্ষা হইল ফোকাস ঠিক রাখতে হবে। শিখলে একজনের কাছ থেকেই শেখা যায়। ক্রিয়েটিভিটি বিষয়ে সেই একজন হইতে পারেন রিচার্ড হ্যামিং। হ্যামিং বলেনঃ
যারাই সৃষ্টিশীলতা নিয়া স্টাডি করছে তারাই বলছে এইটা আছে অবচেতন হইতে। কোনভাবে, হঠাৎ কইরা ওইটা ঐখানে ছিল। আর প্রকাশ হইয়া পড়ে। আমরা অবচেতন নিয়া খুব কম জানি। কিন্তু এইটা জানি স্বপ্নও আসে অবচেতন হইতে। আর আপনারা হয়ত এইটা জানেন যে যে স্বপ্নগুলা আমরা দেখি তা দিনে আমাদের কাজেরই একটা প্রতিরূপ। যদি আপনে গভীরভাবে কোন সমস্যায় ডুইবা যান, তা নিয়া দিনের পর দিন কাজ করতে থাকেন, ঐটা নিয়া কমিটেড হইয়া পড়েন তাইলে এই সমস্যা নিয়া কাজ করা ছাড়া অবচেতনের আর কোন উপায় থাকবে না। তারপর আপনে একদিন সকালে বা বিকালে ঘুম থেকে উঠবেন আর আপনার মনে ভাইসা উঠবে সমাধান। যারা তাদের সমস্যা নিয়া কমিটেড হয় না, তাদের অবচেতন আরো নানা কাজে ব্যস্ত হইয়া পড়ে। এবং বড় কোন ফলাফল দেয় না।
তাই নিয়ম হইল যখন আপনার আসলেই গুরুত্বপূর্ন একটা সমস্যা আছে, তাতে পুরা মনঃসংযোগ দিন। আর কিছুরে আপনার মনযোগের কেন্দ্রে আইতে দিয়েন না। আপনার অবচেতনরে ক্ষুধার্ত কইরা রাখেন যাতে সে আপনার সমস্যা নিয়া কাজ করতে পারে। আর আপনে শান্তিতে ঘুমাইয়া সকালে উইঠা উত্তর পাইতে পারেন, ফ্রীতে।
মানুষের ইন্ট্যুশন বা ষষ্ট ইন্দ্রিয় কীভাবে কাজ করে এইটা নিয়া অনেক কাজ হইছে এবং হইতেছে। ক্রিটিক্যাল থিংকিং এর চাইতে ইন্ট্যুশনের অন্তর্দৃষ্টি অর্জনের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়া লোকে অনেক চমৎকার ফল পান বাস্তব জীবনে, এর নানা উদাহরন নিয়া বই সিয়িং হোয়াট আদার’স ডোন্ট, লেখছেন কগনিটিভ সাইকোলজিস্ট গ্যারী ক্লেইন। এই বই বিষয়ে পূর্বে লিখেছিলাম এবং সেই লেখা থেকেঃ
মার্টিন চ্যালফি এক সময় কৃমির স্নায়ুতন্ত্র নিয়ে কাজ করছিলেন। স্নায়ুতন্ত্র পর্যবেক্ষণ করতে তখন কৃমিরে মেরে ফেলতে হত।
একদিন লাঞ্চ টাইমে চ্যালফি তার ইউনিভার্সিটি আয়োজিত একটা বক্তৃতা শুনতে গেলেন। তার বক্তৃতার বিষয়ে তেমন কোন আগ্রহ ছিল না, এমনিতেই গিয়েছিলেন। সেই বক্তৃতার মাঝামাঝিতে এসে বক্তা বললেন, জেলিফিশ দৃশ্যমান আলো তৈরী করতে পারে। একজন জাপানী বিজ্ঞানী বের করেছেন এটা একটা প্রোটিনের জন্য, ঐ প্রোটিনে আল্ট্রাভায়োলেট বা অতিবেগুনী রশ্মি পড়লে জেলিফিশ সবুজ আলো বিকিরন করে।
এটা শোনার পর চ্যালফি লাফিয়ে উঠলেন। তিনি বুঝতে পারলেন কৃমির ভিতরে এই প্রোটিন প্রবেশ করিয়ে তার উপর অতিবেগুনী রশ্মি ফেলে তিনি আলো তৈরী করতে পারবেন। বায়োলজিক্যাল ফ্ল্যাশলাইট তৈরীর জন্য এটা ছিল গুরুত্বপূর্ন এক মুহুর্ত।
মলিকুল্যার বায়োলজির জন্য অপরিহার্য আজ এই বায়োলজিক্যাল ফ্ল্যাশ লাইট এবং মাল্টিমিলিয়ন ডলারের ইন্ড্রাস্ট্রি। উল্লেখ্য, মার্টিন চ্যালফি গ্রিন ফ্লুরেসেন্ট প্রোটিন আবিষ্কারের জন্য যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পান ২০০৮ সালে।
কিন্তু এই ষষ্ট ইন্দ্রিয় হুট হাট ডেভলাপ করে বলে মনে হয় না। ষষ্ট ইন্দ্রিয় কীভাবে ডেভলাপ করে তা বুঝা যাইতে পারে রিচার্ড হ্যামিং এর উপরিউক্ত ভাষ্যে।
মানুষ কোন জিনিস নিয়া আন্তরিকভাবে এবং অতি সিরিয়াসভাবে কাজ করতে থাকলে তার সাবকনশাস বা অবচেতনের কাছে অন্য কিছু যায় না। ফলে অবচেতন কাজ করার মত একটা জিনিসই পায়। তাই সে এইটা নিয়াই কাজ করতে থাকে তার সর্বশক্তি দিয়া। ফলে এক সময় সে ফলাফল নিয়া আসে হঠাৎ কইরাই। তখন অনেকে তাকে বলেন অবচেতনের ক্ষমতা, অনেকে বলেন ভাগ্য।
কিন্তু তারে এই পর্যায়ে নিয়া আসতে সেই ব্যক্তির কঠোর ও একাগ্র পরিশ্রম করতে হইছে অনেক।
যে বিষয়ে একজন তার সৃষ্টিশীলতা বাড়াইতে চান সেই বিষয়ে তিনি রিচার্ড হ্যামিং এর ফর্মূলায় কাজ করতে পারেন। ফর্মূলাটা হচ্ছেঃ
খালি ঐ সমস্যা নিয়াই কাজ করেন, ভাবেন। সাবকনশাসরে ক্ষুধার্ত রাখেন, অন্য কিছু দিয়া তার পেট ভরাইয়েন না। তাহা হইলেও সাবকনশাস এক অসাধারন রেজাল্ট নিয়া আসবে সেই সমস্যার।
তখন অন্যেরা বলবে, লোকটা কী ভাগ্যবান আর ক্রিয়েটিভ, গাছের ডালে কাউয়া বইয়া পাখা নাড়তেছে এইটা দেইখা এত বড় থিওরী দিয়া দিল। কোন গুদামের চাল খায় কে জানে!
গণিতবিদ ও কম্পিউটার বিজ্ঞানী রিচার্ড হ্যামিং এর চিন্তা নিয়ে প্রথম লেখা ছিলঃ কীভাবে জ্ঞান ও প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানি যায়।