নেটফ্লিক্স ২০১৯ সালে একটা ভালো সাই ফাই শর্ট সিরিজ বানাইছিল লাভ ডেথ এন্ড রোবট নামে। সেইখানে বিওয়ন্ড একুইলা রিফট নামে একটা গল্প ছিল, যেইটারে আমার খুব ডিপ মনে হইছিল বা এখনো হয়। এইখানে আজকে আমার হিরো অডিসিরে নিয়া আলাপ করতে ঐ গল্পটারে আনি।
ঐ গল্পের মূল থিম এমন, পৃথিবী থেকে শত আলোক বর্ষ দূরে মহাকাশযানে করে যেসব ব্যক্তিরা নানা কাজে গিয়া আটকা পড়ছেন ঐ জায়গায়, তথা মারা গেছেন, তারা বুঝতে পারেন না যে তারা মারা গেছে। তাদেরকে একটা সিমুলেটেড বাস্তবতা তৈরি কইরা দেয় এক এলিয়েন বা সিস্টেম। সেইখানে তারা তাদের দুনিয়ার প্রেমিক প্রেমিকার লগে সুখেই থাকেন।
আমাদের নায়ক থমও এইভাবে সুখে ছিল। কিন্তু তার মনে হইতে থাকে কি যেন মিসিং, কিছু সন্দেহ জাগে। ফলে সে তার প্রেমিকারে প্রশ্ন করে। এবং পর্যায়ে প্রেমিকা জানায় সে আসলে মানুষ না এলিয়েন। এবং এই বাস্তবতা সে বানাইছে কারণ এই খানে আটকা পড়া সকল লস্ট সউলরে সে লাইক করে।
নায়ক আসল বাস্তবতা দেখতে চায়। তখন এলিয়েন নাইকা আসল বাস্তবতা দেখায়। জীর্ণ পুরান চারপাশ। নায়ক দেখতে পায় সে বৃদ্ধ আর এলিয়েন ওইটার অসুন্দর এক রূপ।
এই মুভিটা দেইখা আমার মনে হইল, অডিসির কথা। মূল কাহিনী, ট্রজান যুদ্ধের পরে ইথাকার রাজা অডিসি ফিরতেছে তার দেশে। ট্রয়ের যুদ্ধ ট্রয়বাসীরা গ্রীকদের কোয়ালিশন জিতছে তার চালাকির কারণে। এই চালাকি জনিত গর্বের জন্যই বা অডিসি মিনিসিরিজের মতে, সমুদ্র দেবতা পসেইডনরে সাথে ইগো দেখাইয়া কিছু কথা বলে ফেলছিল অডিসি। এইজন্য পসেইডন বলেন সমুদ্র দিয়াই তো যাইবা তুমি বাছাধন? তোমারে যাওয়াতেছি আমি বাড়িতে।
অনেক বিপদ আসে এই যাত্রায় অডিসির। এবং যাত্রা প্রায় বিশ বছর দীর্ঘ হয়।
এই যাত্রায় একটা বিপদে পইড়া অডিসি ভীড়ে নিম্ফ ক্যালিপসোর দ্বীপে। ক্যালিপসোর দ্বীপে আরাম আয়েশের অত্যধিক ব্যবস্থা। অডিসি ও তার নাবিকেরা এতে মত্ত থাকে। আসলে ক্যালিপসো তার যাদুবলে এই ভ্রম তৈরি করে। আর অডিসি বুঝতেও পারে না যে অনেক বছর চলে যাইতেছে। সে ভাবছিল এক দুইদিন।
অডিসি সব সময় তার বউ পেনেলোপিরে লাভ করতো। অডিসির গল্পটা একটা লাভ স্টোরিও। পেনেলোপি তার জন্য অপেক্ষায় আছে। আর এইদিকে অডিসি বিপদের পর বিপদ পার হইয়া যাইতেছে, কেবল পেনেলোপির কাছে যাইতে। আর ওইদিকে অডিসির অবর্তমানে ইথাকার অভিজাতরা নানাভাবে পেনেলোপিরে বিয়া করতে চাইতেছে। কিন্তু পেনেলোপি রাজি হয় না। যদিও সবাই ভাবতেছে অডিসি সমুদ্র যাত্রায় মইরা গেছে, তথাপি পেনেলোপিরে কেউ সিডিউস করতে পারে নাই।
দ্বীপে নিম্ফ ক্যালিপসোর ট্রিক অডিসি ধইরা ফেলে এক সময়। কারণ তারও মনে হইতে থাকে এই দ্বীপে সব আছে বাট কী যেন নাই। তখন তার মনে হয় যে তার বাড়িতে যাইতে হবে, পেনেলোপি তার জন্য অপেক্ষায়।
সে ক্যালিপসোরে বলে তারে ছাইড়া দিতে। ক্যালিপসো ছাইড়া দেয় না। অডিসিরে বলে, তুমি আমারে বিয়া করো। আমি তোমারে অমর বানাইয়া দিব। আমরা এইখানে সুখে থাকব অনন্তকাল।
অডিসি বলে, যে কয়দিন ছিলাম তা তো ছিলামই তোমার ট্রিক্সে, কিন্তু এইখানে আমি থাকতে পারব না। অমরত্বের লোভ আমার নাই। বাড়িতে আমার বউ ও সন্তান। তাদের কাছে আমার যাইতেই হবে।
ক্যালিপসো তারে ছাড়তে চায় নাই। পরে দেবী এথেনার সাহায্য নেয় অডিসি। এথেনা ছিলেন অডিসির প্রটেক্টর। এথেনা জিউসরে বলে অডিসির ছাড়ানোর ব্যবস্থা করেন।
একইভাবে আরেকজন সুন্দরী নিম্ফ সির্ক অডিসিরে আটকে রাখতে চাইছিল। কিন্তু সেইটাতেও অডিসি আটকে থাকে নাই।
অডিসি কেন অমরত্বরে গ্রহণ কইরা প্লেজারময় অনন্তজীবন নিল না, এইটা একটা প্রশ্ন।
আমার মনে হয় এই জায়গাতেই অডিসি হইয়া উঠে একজন মানুষ হিরো।
ডেমিগড একিলিসের ক্ষেত্রে দেখা যায়, সে যুদ্ধই করছে অমরত্বের জন্য। কিন্তু অডিসি অমরত্বরে কেয়ার করে না।
সে জানে সে মানুষ, এবং মানব প্রকৃতি অনুযায়ী প্রাকৃতিক নিয়ম মাইনাই তারে চলতে হবে।
আন্ডারওয়ার্ল্ডে তার সাথে যখন একিলিসের দেখা হয় তখন একিলিস দুঃখ প্রকাশ করে। একিলিস বলে যে, এই অনন্ত খ্যাতি আমারে সুখী করে নাই। এর চেয়ে বরং দাস হইয়াও যদি আমি জীবন যাপন করতে পারতাম।
অডিসি এইটা বুঝতে পারছিল আগে থেকেই যে দুনিয়ার খ্যাতি আসলে মিনিং দেয় না। সে শুরু থেকেই লক্ষ্যে স্থির। ইথাকাই তার জীবনের সব। তার ছোট রাজ্য। তার বউ পেনেলোপি ও তার ছেলে। এবং রাজ্যের মানুষেরা।
সমগ্র যাত্রায় অডিসি তার এই লক্ষ্য থেকে সরে নাই।
এখন অডিসি কি হিরো?
অনেক দোষও আছে তার। যেমন, সে জানছিল তার নাবিকেরা যাত্রায় মারা যাবে, সে একা ফিরতে পারবে। কিন্তু তাও সে যাত্রা চালাইয়া গেছে। এইটারে অনেকে ভাবতে পারেন যে, সে তার লোকদের জন্য কেয়ার করে নাই।
কিন্তু তার এইখানে করার কিছু ছিলও না। যেহেতু এইটা একরকম ভাগ্য। আর সে ইথাকায় না ফিরলে ইথাকার লোকেরা কষ্টে থাকবে। তার বউ তার জন্য অপেক্ষায় আছে, যারে সে কমিটমেন্ট দিয়া আসছে। ফলে, সে যাত্রা অব্যাহতই রাখে।
আরেক দোষ ওডিসির হইল তার ইগো। সে তার বুদ্ধি বেশী এইজন্য অহংকারীও ছিল। দেবতার সাথে বেয়াদবীও করছে। কিন্তু এগুলারে দেখতে হবে তার মানবিক ফ্ল হিসেবে।
সবচাইতে বড় একটা ব্যাপার হইল, আন্ডারওয়ার্ল্ডে গ্রীক আদর্শ হিরো হারকিউলিসের সাথে যখন অডিসির দেখা হয়। ডেমিগড হিরো হারকিউলিস বলে, ওডিসি তুমি তো আমার মতো।
শুরুতে যেইটা দিয়া শুরু করছিলাম, লাভ ডেথ এন্ড রোবটের বিয়ন্ড দ্য একুইলা রিফটের যে গল্প, ঐখানে প্লেজারের মধ্যে থাইকাও কেন নায়কের মনে হইছিল কিছু একটা মিসিং? বা ক্যালিপসোর দ্বীপে এতো আরাম আয়েশে থাইকাও কেন অডিসির মনে হইছিল কিছু একটা নাই?
এইখানে আসে মিনিং এর সমস্যা।
মানুষ একজিস্ট করতে চায় না প্লেজারের মধ্যে। সে তার একজিজস্টেন্সের একটা মিনিং চায়।
এখন একটা আধুনিক সমাজ হইল প্লেজার নির্ভর ক্যালিপসোর দ্বীপের মত সমাজ। যেকোন কিছু আপনে পাইবেন একটা পশ্চিমা সমাজে, প্লেজারের জন্য, এনিথিং। কিন্তু এই জিনিস, এই ভোগবাদী অবস্থান কি মানুষরে হ্যাপি করবে?
ফিলোসফি বলে, না। হোমারের প্রাচীন কাব্য বলে, না। এতে হয় না মানুষের। মানুষের আরো বেশী কিছু লাগে।
এই মিনিং কী হইতে পারে?
অডিসির কাছে হইছিল তা তার বউ, তার পোলা, তার ইথাকা।
জোসেফ ক্যাম্পবেল যখন বলেন হিরো হইল সে যে নিজের লাইফের চাইতে বড় কিছুতে তার লাইফরে উতসর্গ করে। মিথিক্যাল গল্পগুলি বিশ্লেষণ কইরা ক্যাম্পবেল এই সিদ্ধান্তে আসেন।
এই জায়গায়, বড় কিছু বলতে মনে হইতে পারে বিরাট কিছু, যেমন দৈত্যরে মারা বা মঙ্গল গ্রহে রকেট পাঠানোর মত কাজ।
কিন্তু অডিসি দেখাইয়া দেয় যে, না ঐরকম হইতে হবে না। একিলিসের মত অমরত্বের জন্য যুদ্ধ করতে করতে মরতে হবে না। বড় জিনিস নিজের চারপাশেও থাকে। যেমন নিজের ফ্যামিলি, দায়িত্ব, রাজ্য। যেইটা দৃশ্যম ফিল্মের নায়ক চরিত্রটা করছিলো। পুরা ফিল্মে সে যা করে তার ফ্যামিলিরে বাঁচাইতেই করে। একটা সিম্পল ম্যান সে, কিন্তু হিরো হইয়া উঠে। (আবার রুস্তম পাভরির ক্ষেত্রে দেখা যায় উলটা, সে তার বউরে দিয়াই সে দেশের স্বার্থ বাঁচাইতে যায়।)
এবং একজন মানুষরে এইগুলাই মিনিং দেয়। পেনেলোপি, থেলিম্যাকাস ও ইথাকা।