হেতিমগঞ্জ বাজার

নিলয় সেইদিন আমাদের আইসা বলে যে বিজনপুর নামে একটা জায়গা আছে এবং সেখানে অতি অদ্ভুত একটি ঘটনা ঘটে গেছে, একটি মেয়ে আচানক মাছে পরিণত হইছে। তাও পুরা মাছ না, অর্ধেক মাছ।

আমাদের জীবন সমান্তরালে বইতে থাকা নদীর প্রবাহ বিশেষ, এতে কোন বিরাট ঢেউ কিংবা উথাল পাতাল পরিবর্তন নাই। আমি, নিলয়, ও আরমান। আমরা কাজ করি, খাই, একসাথে আড্ডা দেই।

নিলয়ের কথাটি আমাদের আগ্রহ জাগাইয়া তুলে। যদিও আমরা আমাদের যুক্তিবাদী মন ও স্নাতক পর্যন্ত পড়ালেখার বরাতে জানি এই ধরনের ঘটনা ঘটা সম্ভব না। কোন মানুষ মাছ হইতে পারে না, পুরা বা আংশিক। মাছ মাছই, মানুষ মানুষই। উলটা বিবর্তনের সুযোগ নাই ধরায়। কিন্তু যেহেতু আমরা সাম্প্রতিক কালে আগ্রহ উদ্দীপক কিছু পাইতেছিলাম না, যেহেতু সাহিত্য ফাহিত্য এইসব ভুংভাং নিয়া আর কত আলাপ করা যায়; তাই আমরা নিলয়ের কথারে সিরিয়াসলিই নিলাম।

আরমান বলল, তুই জানলি ক্যামনে?

নিলয় বলল, আমি ক্যামনে জানলাম সেইটা বিবেচ্য না। বিবেচ্য হইল কাহিনী সত্য কি না। আমি গ্যারান্টি দিয়া কইতেছি কাহিনী সত্য।

আমি বলি, ক্যামনে এত নিশ্চিত হইলি? তুই গিয়া দেখছস?

নিলয় বলে, গিয়া দেখি নাই। তবে ঘটনা মিথ্যা না, এইটা জাইনা রাখ।

আরমান বলে, যদি আমরা যাই আর গিয়া দেখি মিছা সব?

নিলয় বলে, এমন কখনো হবে না। নেভার।

আরমান বলে, যদি হয়?

নিলয় বলে, তাইলে আমার গাল আর তর জুতা।

আরমান জিজ্ঞেস করে, বিজনপুর এইটা কোনদিকে?

নিলয় বলল, বেশী দূরে না। শহর থেকে বিশ পচিশ মিনিটের পথ বেশী হইলে।

আরমান বলে, তাইলে তো আমরা এখনই গিয়া দেখতে পারি।

নিলয় বলে, তা যাওয়া যাইতে পারে।

নিলয়ের আত্মবিশ্বাস দেইখা আমি অবাকই হইলাম।

আমি ঘড়িতে তাকাইয়া দেখলাম তখন রাইত বাজে দশটার মত। এখন রওনা দিলে আমরা বারোটার আগে মৎস মানবী দেইখা ফিইরা আসতে পারব। তাই যাওয়ার চিন্তাটা আমার খারাপ লাগল না। আমাদের কারোরই তা খারাপ লাগল না। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা বিজনপুরে যাব।

চায়ের দোকানদার মানিকবাবুরে চায়ের দাম মিটাইয়া দিয়া আমরা গেলাম সিএনজির খোঁজে। সিএনজি বেশ খোঁজতে হইল না। দেখলাম একটা সিএনজি খাড়াইয়া আছে অন্ধকারে। চালকের সিটে হুডিতে মাথা ঢাকা এক লোক বইসা আছে।

নিলয় গিয়া বলল, যাইবা নাকী?

চালকের আসনে বইসা থাকা লোক না তাকাইয়াই উত্তর দিল, কই যাইবেন?

বিজনপুর।

হ, যামু।

কত নিবা ভাড়া?

যা দিবেন তাই।

কও কি! ভাড়া কত?

ভাড়া পার হেড বিশ টাকা দিয়েন।

এইভাবে চালকের সাথে আমাদের কথা হইল। স্বাভাবিক কথাবার্তা। তবে দুইটা জিনিস আমার তখনই অস্বাভাবিক লাগছিল। এক হইল, এইখানে সাধারনত সিএনজি দাঁড়ায় না, এইটা সিএনজির স্ট্যান্ড না। এই জায়গাটা অন্ধকার, এইদিকের ল্যাম্পপোস্ট গুলা কাজ করে না। তাছাড়া বেশ গাছ গাছালি আছে। যেই গাছের নিচে সিএনজি খান দাঁড়াইয়া ছিল সেটি এক অশীতিপর তেঁতুল গাছ। বয়স্ক এই ধরনের গাছ নিয়া নানা ধরনের কথা শোনা যায়, এই গাছ নিয়াও এইরকম কিছু কথা আমার কানে আসছিল। দ্বিতীয় যেই জিনিস অস্বাভাবিক লাগছিল তা হইল চালকের আচরন। সে যেইভাবে ভাড়ার কথা কইল তা সাধারনত সিএনজির ড্রাইভারের আচরনের সাথে যায় না। সিএনজি ড্রাইভারদের প্রবনতাই থাকে ক্যামনে বেশী ভাড়া নেয়া যায়। এছাড়া লোকটা একবারও আমাদের দিকে তাকায় নাই। অর্থাৎ আমরা তার মুখ দেখি নাই।

এই অস্বাভাবিকতাগুলি আমার তখন একরকম মনে আসলেও এদের আমল দেয়া দরকার তা মনে হয় নাই। কারণ আমরা তিনজন যুবক পোলা একসাথে। আমাদেরই শহরে। এই অবস্থায় এই লোকটা যাই হোক, আমাদের ডরানির কিছু নাই। তার স্বাভাবিক বুদ্ধি থাকলে আমাদের সাথে লাগবে না।

আমরা সিএনজিতে উঠলাম। গাড়ি স্টার্ট নিল। স্টার্ট নেয়ার পর গাড়ির চালক পিছনে ফিইরা আমাদের দিকে তাকাইয়া বলল, স্যারেরা, শর্টকার্টে যামু নাকী?

আমরা দেখলাম লোকটার চউখ মুখ দেখা যায় না কারণ তার চউখে ইয়া বড় এক কালা চশমা। এই রাতে কালা চশমা পইরা বইয়া আছে, আবার গাড়ি চালাইতেছে, লোকটা ত এক্সিডেন্ট করবে!

নিলয় বলল, কী মিয়া, চউখে কি সানগ্লাস নাকী?

লোকটা বলল, জি স্যার। চউখ উঠছে। তাই এইটা পইরা থাকি। আপনাদের শুচিবাই থাকলে অন্য গাড়িতে যাইতে পারেন।

আরমান বলল, আরে না না! ঐসব আমাদের নাই। শর্টকার্টের কথা কী জানি বললা?

লোকটা খসখসে গলায় বলল, বিজনপুরে যাওয়ার শর্টকার্ট রাস্তা স্যার।

আমরা তারে বললাম, তাইলে ঠিক আছে। তুমি শর্টকার্টেই যাও। শর্টকার্ট থাকতে হুদা লম্বা রাস্তায় যাইবা ক্যান।

লোকটা গাড়ি চালাইতে শুরু করল। আর আমরা নানাবিদ আলাপ শুরু কইরা দিলাম। গাড়ি চলার কারণে বাতাস আইসা লাগতেছিল আমাদের শরীরে। নিলয় বলতেছিল সেই আধা মাছ হইয়া যাওয়া মাইয়াটার কথা। মাইয়াটা দেখতে সুন্দর আছিল। সুন্দর মাইয়াদের বেশী অজায়গা কুজায়গায় সময়ে অসময়ে ঘুইরা বেড়াইতে নাই, এমন একটা কথা প্রচলিত আছে গ্রামে গঞ্জে। কারণ পৃথিবীতে যেইসব অদৃশ্য জীবেরা থাকেন তারা সুন্দর মাইয়াদের এমন ঘোরাঘোরি দেইখা তাদের প্রতি আকৃষ্ট হইয়া পড়তে পারেন। তো যেই মাইয়াটা অর্ধ মৎসে পরিণত হইল সে সম্ভবত এই কারণেই মাছ হইয়া গেছে। নিলয় মাইয়াটার মাছ হওয়া নিয়া তার ব্যাখ্যা হাজির করল, যার মর্মার্থ এই।

শুইনা আমার বিরক্ত লাগল। আমি কইলাম, এইগুলা বিশ্বাস করার কিছু নাই। যেইসব অদৃশ্য জীবের কথা লোকে কয় এনারা কখনো ছিলেন না। এখনো নাই। ভুয়া সব।

আরমান বলে, আমরা গিয়া হয়ত দেখতে পারি এই আধা মাছের মাইয়ার গল্পটাও ভুয়া। মৎসমানবী, এইগুলা ফিল্মেই হয়।

নিলয় বলল, ক্যান প্রাচীন মিথে দেখছ নাই? পৃথিবীর সব মিথেই এইগুলা পাইবি। ইউলিসিস আর সাইরেনের গল্পটা মনে কইরা দেখ। আরো আছে, সেনতোর ইত্যাদি, এছাড়া ইন্ডিয়ান মিথেও আছে মে বি। সব মিথে তাইলে আধা অন্য প্রানী আর আধা মানুষ আইল কেন? এইটার ব্যাখ্যা কী?

আরমান বলল, হইতে পারে এইটা বুঝাইতে যে মানুষ আসলে হাফ মানুষ হাফ পশু।

এইভাবে কথা কইতে কইতে আমরা যাইতেছিলাম। অন্ধকার রাইত। সিএনজি চালক যেই রাস্তায় নিয়া আইছে তা একেবারে শুনশান। প্রথমে ঢুকছিল একটা ছোট রাস্তায়। এরপর এখন যে রাস্তা দিয়া যাইতেছে তা বেশ বড়োই, কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হইল আর কোন গাড়িঘোড়া দেখি না আমরা।

এইদিকে পঁচিশ মিনিট চইলা গেছে। অধৈর্য হইয়া আমি চালকরে জিজ্ঞেস করলাম, কি মিয়া, আর কত টাইম লাগব?

ধুম কইরা লোকটা ঘুইরা তাকাইল। আর আমরা ভয় পাইয়া প্রায় লাফাইয়া উঠছিলাম। লোকটার চোখের দুই জায়গায় লাল লাল কী যেন। প্রথমে মনে হইছিল আগুনের চাক্কা। পরে বুঝলাম ঐটা তার চোখ।

সে হয়ত আমাদের অবস্থা বুঝতে পারছিল। তাই রাস্তার একদিকে নিয়া গাড়ি থামাইল। আর চউখে সানগ্লাস পইরা আমাদের দিকে তাকাইল আবার। তাকাইয়া বলল, স্যারেরা, আপনেরা কি ঐ মাছ মাইয়ারে দেখতে যাইতেছেন বিজনপুরে?

আমরা বললাম, হ্যাঁ, কেন?

লোকটা বলল, আপনেরা কিছু জানেন না?

আমরা অবাক হইয়া বললাম, না। কী হইছে?

লোকটা বলল, সেইখানে আরো কয়েকটা মাছ মাইয়া পাওয়া গেছে, আর এরপর এইগুলারে ধইরা বিদেশে পাঠাইতে লোক লাগছে। প্রশাসন, পুলিশ সব মিলাইয়া পুরা সিরিয়াস মামলা। মার্ডারও হইছে তিনটা। ঐদিকে যাওয়া সেইফ হইব না।

আমরা শুইনা অবাক ও আশাহত হইয়া গেলাম। নিলয় যে মাছমানবী দেখাইতে আমাদের নিয়া যাইতেছিল, সেও মাছ মানবীর গল্পের সত্যতা এবং আরো মাছ মানবী উদ্ভবের কাহিনী ও তাহাদের সংস্লিষ্ট বিষয়ে তিন তিনটা মার্ডার হইয়া গেছে শুইনা যেন বাকরুদ্ধ হইয়া গেল।

আমরা বিস্মিত হইয়া চুপ মাইরা গেছি দেইখা চালক বলল, স্যারেরা এখন তাইলে কী করবেন? হেতিমগঞ্জ বাজারে যাইবেন নাকী?

আরমান জিজ্ঞেস করল, সেইটা আবার কী?

চালক বলল, ভালো বাজার। সারা রাইত জমা থাকে। বড় বড় মাছ উঠে। এইখানে বছরে একবার মাছের মেলাও হয়। অবশ্য এইবারের মেলা হইতে অনেক দেরী।

আমরা জিজ্ঞেস করলাম, সেইখানে আমরা গিয়া কী করব?

চালক বলল, এই চা টা খাইলেন। বইলেন। বাজার দেখলেন। আইলেন যখন দেইখা যান। কাছেই তো।

আমরা আপত্তি জানাইলাম না। আসছি যখন একটা কিছু অন্তত দেইখা যাই।

গাড়ি ঘুরাইয়া ড্রাইভার দুই মিনিট চালাইল বোধহয়। এর মধ্যেই আমরা চইলা আসলাম হেতিমগঞ্জ বাজারে। গাড়ি থেকে নাইমা দেখলাম লোকটার কথা সত্য। বাজার পুরা গম গম করা অবস্থায়। মানুষেরা নানাবিদ জিনিস কিনতেছে, খাইতেছে, গল্প করতেছে, দোকানে দোকানে জ্বলতেছে আলো। ছোট ছোট চায়ের দোকানে চা হইতেছে, আর পাশে বিরাট কড়াইয়ের তেলে ছোট ছোট পিয়াজি ভাজা হইতেছে। লোকেরা খাইতেছে, গল্প করতেছে; এরকম প্রাণবন্ত বাজার আমরা আর দেখি নাই। বিস্মিত হইয়া গেলাম আমরা।

বাজার যেন আমাদের দুই হাত মেইলা ধইরা ডাকতেছিল, আয় আয়!

আমরা গেলাম। একটা চায়ের দোকানে বইসা ধোঁয়া উঠতে থাকা গুড়ের চা আর পিয়াজি লইয়া বইলাম। খাইলাম আর দেখতে লাগলাম মানুষ ও বাজার। বাজারের এই সৌন্দর্য, না দেখলে বিশ্বাস করার মত নয়।

বইতে বইতে আমরা দেখতেছিলাম অনতিদূরে অবস্থিত মাছের বাজার। নানাবিদ মাছ লইয়া বসছেন মাছ ব্যবসায়ীরা। তাদের কিছু কিছু মাছ এত জ্যান্ত যে লাফাইতেছে। মানুষেরা মাছ কিনতেছেন। আমাদের মনে হইল একবার ঐখানে গিয়া দেখি মাছের দাম কেমন।

আমরা মাছের বাজারে গেলাম।

একটা বিরাট রুই মাছ, সতেজ। দাম জিজ্ঞেস করলাম আমি।

এর বিক্রেতা বেশ বুড়া লোক। তিনি তার পান খাওয়া হলুদ হলুদ দাঁত বাইর করা হাসি দিলেন আর কইলেন, আপনেরাই কন কতো দিবেন, মনে হইতাছে দূর হইতে আসছেন আমাদের বাজারে।

আমি মাছের গায়ে গতরে ভালো কইরা চোখ বুলাইলাম। এই মাছের দাম কম কইরা হইলেও বারোশ হইব। আমি কইলাম, পাঁচশ।

মাছ বিক্রেতা আমার দিকে তাকাইয়া বললেন, খুবই অল্প বললেন দাদাভাই। একটু বাড়ান।

আমি বললাম, না, আর হবে না।

বইলা আমরা অন্যদিকে যাইতে চাইছিলাম। কিন্তু মাছ বিক্রেতা বললেন, দাঁড়ান দাঁড়ান। আমাদের বাজারে আইসা মাছ না নিয়া যাইবেন এইটা কি হয়? নেন, নিয়া যান। পাঁচশই দেন।

আমরা অবাক হইয়া গেলাম লোকটার কথায়। এই দামে এই মাছ পাওয়া যাবে তা কল্পনাও করা যায় না। পুকুর ভরা মাছ আর গোয়াল ভরা গরুর যে ইতিহাসের গল্প আমরা শুনি বাপ দাদার মুখে, সেইসময়েও এইরকম মাছ এত স্বস্তা ছিল না।

ভালো কইরা দেইখাও মাছে কোন গলদ পাইলাম না। মাছ বিক্রেতা আমাদের চউখে সন্দেহের উঁকিঝুঁকি দেইখা মাছের কানকো দেখাইয়া আমাদের বললেন, এই দেখেন, কেমন টকটকা লাল!

মাছ যেহেতু ভালো, আর দাম অবিশ্বাস্য কম তাই আমরা তিনজনে তিনটা মাছই নিলাম। ঘড়িতে তখন এগারোটা বিশ বাজে। বেশী রাইত হইলে ফিরা আরেক ঝামেলা। তাই হেতিমগঞ্জ বাজারে আমরা বেশীক্ষণ থাকতে পারলাম না।

আমাদের সিএনজি রাস্তার একপাশে দাঁড় করানি ছিল। আমরা তথায় গিয়া উপস্থিত হইলাম। মাছসহ। গিয়া দেখি ড্রাইভার তার আসনেই বইসা আছে। আমাদের তখন মনে হইল চা খাওয়ার সময় বা পেয়াজি খাওয়ার সময় তারে ডাক দেওয়া আমাদের উচিত ছিল।

আমি বললাম, কী ব্যাপার? আপনে কি নামেন নাই? চলেন গিয়া চা খাই?

ড্রাইভারের মাথা তার হুডিতে ঢাকা। সে বলল, না স্যার। আমি নামমু না। নিষেধ আছে। আপনারা উঠেন। যাওয়া যাক।

নিষেধের কথায় আগ্রহের তৈয়ার হইল। জিজ্ঞেস করলাম, নিষেধ কীসের?

লোকটা বলল, বলা যাবে না স্যার। আপনেরা ত্বরা কইরা উঠেন। বারোটার আগে আমারে ফিইরা যাইতে হইব।

আমরা গাড়িতে উঠলাম। ড্রাইভার এইবার খুব দ্রুত চালাইল। আমরা বিশ মিনিটেই বোধহয় শহরে আইসা পড়লাম। সে আমাদের নামাইয়া দিল।

ভাড়া হিশাবে আমরা খুশি হইয়া তারে দুইশ টাকা দিলাম। সে তা নিয়া দ্রুতই চইলা গেল।

আমাদের মন তখন বেশ ভালো ছিল। হেতিমগঞ্জ বাজার আমাদের মনের অবস্থা বদলাইয়া দিছে। কম দামে মাছ কেনার মধ্যে আরেক ধরনের আনন্দ আছে।

মাছ নিয়া আমরা নিজ নিজ বাড়িতে পৌছাইয়া গেলাম বারোটার আগেই।

এবং তার পরেই বিস্ময়।

আমাদের পরিবারের লোকজন আবিষ্কার করেন আমাদের ব্যাগের ভিতরে মাছের বদলে কেবলই মাটি।

আমরা তখন বিস্ময়ে বিমুঢ় হইয়া বুঝাইতে চেষ্টা করি আসলে সত্যিই ঐখানে মাছ ছিল, আমরা হেতিমগঞ্জ বাজার থেকে নিজ হাতে ধইরা কিনছি; কিন্তু কেহ বিশ্বাস করে না। করার কথাও না তাদের জন্য, কারণ ব্যাগে সত্যিই মাটি!

আমরা তখন হেতিমগঞ্জ বাজারের বর্ননা দেই, রাস্তার বর্ননা দেই কিন্তু আমাদের অভিজ্ঞ পরিজনরা বলেন ঐদিকে এমন কোন রাস্তাই নাই।

আমরা তখন বিজনপুরের কথা বলি। আমাদের পরিবারের লোকেদের কেউ কেউ টিভির খবরে নিয়মিত চোখ রাখতেন, তারা আমাদের জানান বিজনপুরে ঐ মৎসকন্যা নাটকের অবসান হইছে তারা রাতের খবরে দেখেছেন। ঐটা ছিল মূলত এক ভন্ড পীরের চালিয়াতি।

আমরা তাদের কোনক্রমেই বুঝাইতে পারি না হেতিমগঞ্জ বাজারের কথা। একসময় আমাদের নিজেদেরই সন্দেহ জাগে। আসলেই কি হেতিমগঞ্জ বাজার বলে কিছু আছে?