মাস্টার ফিল্মমেকার সত্যজিৎ রায়ের হীরক রাজার দেশে চলচ্চিত্রটি সম্পর্কে আপনি নিশ্চয়ই জানেন। এটি বিখ্যাত একটি চলচ্চিত্র। যেখানে একজন অত্যাচারী রাজার অত্যাচার এবং পতনের গল্প বলা হয়েছে। এই চলচ্চিত্রটি অত্যাচারী শাসকদের সমালোচনার সময়ে ব্যবহৃত হয়। এর বিভিন্ন ডায়লগ এবং ঘটনা ইত্যাদি।
চলচ্চিত্রটি নিয়ে কিছু কথা বলা যায়।
হীরক রাজার রাজ্যে দেখা গেছে সবাই ছড়ার আকারে কথা বলে। কেবল উদয়ন পণ্ডিত কথা বলেন গদ্যে। এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে, শিক্ষকই কেবল মুক্তভাবে চিন্তা করতে পারেন।
কিন্তু ফিল্ম যখন শেষ হয়, তখন আমরা দেখি সবাই দড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খান খান এই ছড়ার মধ্যেই আটকে আছেন।
যন্তর মন্তর ঘরে হীরক রাজা মগজ ধোলাই করতেন অবাধ্য বা খাজনা দিতে না পারা প্রজাদের। এটা ছিল তার সমাধান। শেষকালে উদয়ন পণ্ডিত রাজাকে এবং তার স্যাঙ্গাতদের যন্তর মন্তর ঘরেই প্রবেশ করান, ও তাদের মগজ ধোলাই করান। অর্থাৎ, হীরক রাজার পথেই হাঁটেন উদয়ন পণ্ডিত। এখানে রাজা ও উদয়নের মধ্যে তফাত থাকলো কই?
এবং পণ্ডিত পাইক পেয়াদাদের বশ করেন হীরা ঘুষ দিয়ে। এরা আপাদমস্তক করাপ্ট ছিল। তিনি ঘুষের পথেই হেঁটেছেন এদের নিজের দলে আনতে। এখন প্রশ্ন হল, নতুন রাজ্যে এই অসৎ পাইক পেয়াদা নিয়ে তিনি কীভাবে রাজ্য চালাবেন?
আমরা ধরে নিতে পারি, হীরক রাজ্যে উদয়ন পণ্ডিতই নতুন রাজা হবেন। তিনিই যেহেতু লিডার।
কিন্তু, তার রাজ্যের ব্যাপারে আশা অল্প দেখা যায়।
যেখানে তিনি মগজ ধোলাইয়ের পথে হেঁটেছেন, এবং ফিল্মের শেষদিকে সবাই যে ছড়া বলছিল তা মুক্ত চিন্তার ইংগিত করে না। এক বদ্ধ চিন্তার থেকে আরেক বদ্ধ চিন্তার দিকে যায়।
আশা কেবল এই যে, উদয়ন পণ্ডিত লোক হিসেবে ভালো, এবং তার ছাত্ররা আছে। (ছাত্রীরা নাই। এই ফিল্মে সম্ভবত কোন মেয়ে ক্যারেক্টারই নাই। তাহলে কি সুখী হীরক রাজ্যে নারীরা থাকবে না?) সত্যজিৎ এর এখানে পলিটিক্যাল বক্তব্য, সমাজের আশা হলো নতুন প্রজন্ম, যদি তারা কূপমণ্ডূকতা থেকে বের হয়। যেটা তার জীবনের একটা প্রধান বক্তব্য ছিল। এইজন্যই ফেলুদা হয়ে তিনি তোপসেকে শিখিয়ে গেছেন। বা তার শেষ ফিল্ম আগুন্তুকে এই মেসেজই দিয়ে গেছেন।
উদয়ন পণ্ডিত যদি রাজ্যকে অসৎ পাইক পেয়াদা নিয়ে কোন ভাবে টিকিয়ে রাখতে পারেন, তাহলে ভবিষ্যতে আশা করা যায় তার ছাত্ররা একেকজন উদয়ন পণ্ডিত হয়ে উঠবে, আর হীরক রাজ্যের সমাজ ভালোর দিকে যাবে। কিন্তু এর মধ্যে কয়েকজন যদি অসৎ পাইক পেয়াদাদের অনুসরণ করে তাদের মত হয়ে যায়? ভালোর চেয়ে মন্দ আত্মীকরণ যেহেতু সহজে হয়। সময় অনেক কঠিন হবে পণ্ডিতের জন্য, নতুন হীরক রাজ্যের জন্য।