মানুষের ইতিহাস ক্রিস হারমানের এ পিপল’স হিস্টরি অফ দি ওয়ার্ল্ড এর বাংলা অনুবাদ।
প্রথম সভ্যতা
সভ্যতা, আরো স্পষ্টভাবে বলতে গেলে মানুষের শহরে বাস, শুরু হয়েছিল মাত্র ৫০০০ বছর আগে। এর প্রথম চিহ্ন হচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে পাওয়া বিরাট সব ইমারত, যেমন মিশর এবং সেন্ট্রাল আমেরিকার পিরামিড, ইরাকের জিগুরাট (উঁচু টাওয়ার মন্দির), ক্রীটের নসসের প্রাসাদ, গ্রীস মূলভূমির মাইসিনিয়ার দূর্গ, এবং সিন্ধু সভ্যতার হরপ্পা এবং মহেঞ্জোদারোতে ৪০০০ বছর আগের শহর। এই কারণে নৃতত্ত্ববিদ গর্ডন চিলডে একে বলেছিলেন নগর বিপ্লব।[৪৪] এইসব রয়ে যাওয়া কীর্তিগুলি অসাধারন। এবং এর চাইতেও অসাধারন হলো এগুলি এমন সব মানুষেরা বানিয়েছিল যারা কয়েক প্রজন্ম আগেও সাধারণ কৃষিকাজ ছাড়া কিছুই জানত। এখন তারা নির্মানের নানা দক্ষতা শিখে নিয়েছে, খনন করে বিভিন্ন খনিজ তোলা, পরিবহন, বড় পাথরের খন্ড কাটা, সেগুলি দিয়ে নির্মান করা ও তাতে বিভিন্ন শৈল্পিক কারুকাজ করা তারা শিখে নিয়েছে। এবং কখনো কখনো (যেমন মেসোপটেমিয়ান, মিশরীয়, ইথিওপিয়ান, চাইনিজ, এবং মেসো আমেরিকান) তারা লিখে রেখেছে তাদের আচরণ এবং অনুভূতির কথাও। ইউরেশিয়া এবং এশিয়ায় এই সময়ে তারা শিখেছিল পাথরের খনিজ থেকে কপার এবং টিন আলাদা করার পদ্বতি। এর কিছু সময় পরে তারা এগুলি গলিয়ে আরো শক্ত ধাতু, ব্রোঞ্জ তৈরী করে এবং তা দিয়ে অলঙ্কার ও অস্ত্র তৈরী হয়। এই জন্য এই সময়কাল ব্রোঞ্জ কপারের যুগ নামে ডাকা হয় প্রায়ই।
কিন্তু এর কিছুই হতো না যদি না লোকদের পূর্বের জীবন যাপনে পরিবর্তন হতো, সে জীবন যাপন ছিল প্রধানত কৃষিকেন্দ্রিক। প্রাথমিক যে কৃষিব্যবস্থা ছিল একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ের যন্ত্রপাতি দিয়ে এবং প্রাকৃতিক ভাবে প্রাপ্ত অল্প কিছু উদ্ভিদ ও প্রানীদের সহায়তায়, তাতে কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা খুব ধীর হয়ে উঠেছিল এবং তাতে কিছু লোক আয়েশের সাথে জীবন অতিবাহিত করতে পারত। [৪৫] কিন্তু অব ক্ষেত্রে এই “আদর্শ আদিমানব” অবস্থা ছিল না কারণ অনেক ক্ষেত্রেই জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে কৃষি উৎপাদন তাল মেলাতে পারে নি। লোকেরা হঠাৎ করে দুর্ভিক্ষে পতিত হলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন খরা, বন্যা, ফসলের রোগ ইত্যাদির কারণে। [৪৬] প্রি-হিস্প্যানিক ও মেসো-আমেরিকান সময়ে এক বছরে উদাহরণস্বরূপ, মানুষের জন্য খাদ্য উৎপাদন কঠিন হয়ে উঠেছিল বিস্তৃত এবং ভয়ংকর খরার কারণে। [৪৭]
তখন আসলে মানুষের সামনে দুটি পথ খোলা ছিল নিজেদের জীবনযাত্রা টিকিয়ে রাখার জন্য। এক হচ্ছে অন্য কৃষিভিত্তিক দলে আক্রমণ ও তাদের খাদ্য ছিনিয়ে নিয়ে আসা। ইউরোপের নিওলিথিক বিপ্লবে এইসময়েই যুদ্ধের কুড়াল এবং পাথরের ছুরি ব্যবহার খুব শুরু হয়। দ্বিতীয় পথটি ছিল কৃষি উৎপাদনের নতুন উন্নত পন্থা উদ্ভাবন। প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ছিল এক বিরাট সুবিধা। যেসব কৃষিভিত্তিক দল প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন করতে পেরেছিল তারা খরায় টিকে থাকতে পেরেছিল। যারা পারে নি তারা হয় মরে নিঃশেষ হয়েছে বা পিছনে পড়ে যায়।
উদ্ভাবন বলতে সাধারণ উদ্ভিদ প্রজাতিগুলিকে সামান্য উন্নত করা বা পোষা প্রাণীগুলিকে সামান্য মোটা করার কার্যকর করাও ছিল। কিন্তু কখনো তা ছিল ব্যাপক পরিবর্তন। যেমন, ইউরেশিয়া ও আফ্রিকায় লোকেরা শিখল বড় পোষা প্রাণীদের (ষাড় এবং পরে ঘোড়া) সাথে নির্দিষ্ট আকৃতির কাঠ – লাঙ্গল – সংযুক্ত করে টেনে আরো ভালোভাবে জমি চাষ করা যায়। আরেকটি ছিল বাঁধ নির্মান ও খাদ খনন শেখা। এর মাধ্যমে বন্যার হাত থেকে ফসলকে বাঁচানো সম্ভব হলো। এবং পানিকে অপেক্ষাকৃত অনুর্বর ভূমিতে নিয়ে গিয়ে সে জমিকে উর্বর করার ব্যবস্থাও করা গেল। তারপর দেখা গেল পোষা প্রাণীদের গোবর সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তাতে বার বার চাষে জমির উর্বরতা কমে না। এতে কিছুদিন পর পর নতুন জমি খুঁজে বের করা ও তা পরিষ্কার করার ঝামেলা কিছুটা কমল। পৃথিবীর এক এলাকায় বা অন্য এলাকায় এমন নানা কিছু উদ্ভাবিত হলো, যেমন জলাভূমি পরিস্কার করা, কুয়া খনন, পাহাড়ের গাত্রে খুঁড়ে খুঁড়ে শ্রমসাধ্য চাষাবাদ যা পরবর্তীতে হয় ধান চাষ( দক্ষিণ চীনে)।
এই ধরনের নতুন পদ্বতিগুলির ফল হলো দুরকমের। এক, আগের চাইতে বেশী ফসল উৎপাদন করতে লাগল মানুষেরা, তাদের অনেক খাদ্যশস্য রইল উদ্ধৃত। আর দুই, এর ফলে তাদের সামাজিক সম্পর্কে এলো পরিবর্তন।
এই নতুন পদ্বতিগুলি আরো বিভিন্ন ধরনের সহযোগীতামূলক সম্পর্ক তৈরী করল লোকদের মাঝে। যেমন লাঙ্গলের ব্যবহারের কথা ধরা আক, এর ব্যবহার শ্রম বিভাগ উৎসাহিত করল তার এটি চালনা করা ছিল শ্রমসাধ্য, যা মহিলাদের পক্ষে করা সম্ভব নয়। সেচকাজের জন্য নালা তৈরী, তার রক্ষনাবেক্ষণের জন্য অনেক, কখনো শত শত পরিবারেরও দরকার পড়ত। তখন কাজ তদারকি ও দেখাশোনা ইত্যাদি ভাগ বিভাজনের তৈরী হলো। খাদশস্য জমিয়ে রাখার ক্ষেত্রেও সেগুলি রক্ষণাবেক্ষন ও তদারকির জন্য কাজ ছিল। উদ্ধৃত খাদ্যশস্য প্রথমবারের মত কিছু লোককে কৃষিকাজ থেকে মুক্তি দিল। তারা বিভিন্ন শৈল্পিক কাজকর্ম, যুদ্ধের সরঞ্জামাদি তৈরী বা অন্য দলের সাথে পন্য বিনিময়ের কাজে নিযুক্ত হলো।
গর্ডন চিল্ডে মেসোপটেমিয়ায় ৫০০০ এবং ৬০০০ বছর আগে তাইগ্রিস ও ইউফ্রেতিস অববাহিকায় বসবাসরত লোকদের পরিবর্তন বর্ননা করেছেন। তারা যে জমিতে ছিল তা খুবই উর্বর কিন্তু চাষ করা সম্ভব একমাত্র “সেচব্যবস্থা ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা” তৈরী করা গেলে। এর জন্য তারা পরস্পর সহযোগীতার মাধ্যমে কাজ করল। [৪৮] সম্প্রতি মাইসেল বলেছেন, লোকেরা দেখল নদী থেকে যাওয়া নালা বা খালে ছোট নালা কেটে তারা পানিসেচের ব্যবস্থা করতে পারে, এবং এতে ফলন প্রচুর বেড়ে যায়। কিন্তু তারা যা উৎপাদন করেছিল তা প্রয়োজনের চাইতে অনেক বেশী, তাই অতিরিক্ত ফসল তারা জমিয়ে রাখল যাতে ভবিষ্যতে দুর্যোগে যদি ফসল নষ্ট হয় তখন ব্যবহার করতে পারে। [৪৯]
শস্যদানাগুলি বড় আয়তন বিশিষ্ট ঘরে মজুদ করে রাখা হলো। যারা এইসব শস্যদানার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিল তারা সমাজে সবচেয়ে সম্মানের আসন লাভ করল। তারা শস্যদানার রক্ষণাবেক্ষণ করত এবং এগুলি অন্যদের মধ্যে ভাগ করে দিত।এই দলের ক্ষমতা সমাজের অন্য সবার চাইতে বেশী হয়ে গেল, এবং এর ফলে তারা অন্যদের কাছে বশ্যতা ও সম্মান পেতে লাগল। তারা এক ধরনের অতিপ্রাকৃতিক অবস্থানে চলে গেল। এই খাদ্যশস্যের মজুতাগারই ছিল প্রথম মন্দির এবং এর রক্ষনাবেক্ষনকারীরা প্রথম পাদ্রী।[৫০] অন্য গ্রুপেরা দালান নির্মানের কাজ, রান্নার কাজ, পোশাক নির্মানের কাজ ইত্যাদির মাধ্যমে মন্দিরকে কেন্দ্র করে জড়ো হল এবং বাকীরা তাদের জন্য খাদ্যদ্রব্য ইত্যাদি নিয়ে আসত, এখানে পন্যের বিনিময়ও হতো। ক্রমে শত শত বছরের ব্যবধানে কৃষিভিত্তিক গ্রামগুলি ছোট শহরে পরিণত হল এবং এর পরে প্রথম বড় শহরেরর জন্ম হল, যেমন উরুক, লাগাশ,নিপ্পুর,কিশ এবং উর (যেখান থেকেই সম্ভবত বাইবেলের আব্রাহাম এসেছিলেন।)
প্রায় একই ধরনের ঘটনা ঘটে প্রায় সাড়ে দুই সহস্রাব্দ পরে মেসো-আমেরিকা। এখানে সেচকাজ বড় প্রভাব ফেলেনি, কারণ সেচকাজ ছাড়াই ভালো বছরে ভুট্টার প্রচুর ফলন হতো এবং অনেক উদ্ধৃত শস্য রয়ে যেত। [৫১] কিন্তু যেহেতু বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে বছরের ফলন নিশ্চিত ছিল না তাই লোকেরা উদ্ধৃত শস্য জমাতে শুরু করে এবং বিভিন্ন পরিবেশের দলদের সাথে সমন্বয় শুরু করে। বিভিন্ন দলের এই সমন্বয়ের দারুন সুবিধা ছিল সবার জন্য। এই সমন্বিত দল উৎপাদন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ঋতুতে সংরক্ষিত শস্যের দেখাশোনার কাজটি করত। এখানেও মজুতাগার এক সময় মন্দিরে, এর রক্ষনাবেক্ষনকারীরা পাদ্রীদে পরিণত হয়। ধীরে ধীরে এখানে অলমেক,তিওতিহোয়াকান,জাপোটেক, মায়ান সংস্কৃতি গড়ে উঠে। তাদের বড় সব ভাস্কর্য, মহিমান্বিত পিরামিড, ইটের বল কোর্ট, এবং পরিকল্পিয় নগর ছিল। তিওতিহোয়াকান জনসংখ্যা প্রায় ১০০,০০০ হয়েছিল প্রথমদিকের শতকগুলিতে।
মধ্যপ্রাচ্য এবং মেসো-আমেরিকাতে ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ন আরো কিছুও ঘটেছিল। যেসব দল অতিরিক্ত খাদ্যশস্য রক্ষণাবেক্ষণের এবং বিলি বন্টনের দায়িত্বে ছিল এবং প্রায় পাদ্রীদের মত ব্যবস্থার তৈরী করেছিল এরা কত জমা হচ্ছে আর কী পরিমাণ বন্টন হচ্ছে তার হিসাব রাখার জন্য পাথর বা কাদামাটির মধ্যে দাগ দিয়ে রাখত। আস্তে আস্তে, অনেক সময়ের ব্যবধানে কোন জিনিস বুঝাতে তারা ছবি আঁকত, যতদিন না পর্যন্ত মানুষের উচ্চারণে ও বাক্যে এসব বস্তু প্রকাশের জন্য কোন শব্দ ছিল না ততদিন এই ব্যবস্থায় ছিল তাদের লিখিত ভাব প্রকাশ। এইভাবেই লেখা উদ্ভাবিত হয়। মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিয়োজিত লোকদের প্রচুর অবসর ছিল তা তারা আকাশের দিকে তাকিয়ে, পর্যবেক্ষণ করে বিভিন্ন তারার গতিবিধি, চাঁদের গতিবিধি এবং সূর্যের সাথে এসবের সম্পর্ক বুঝতে পারল। তারা যখন ভবিষ্যত ঘটনা যেমন চন্দ্রগ্রহন সম্পর্কে ভবিষ্যতবানী দিতে পারত তখন এটাকে যাদকরী ক্ষমতা হিসেবে ধরা হত। মানুষেরা যাতে বছরের সবচেয়ে ভালো সময়ে চাষবাস করতে পারে এ জন্য সূর্য ও চন্দ্রের গতিবিধি দেখে তারা ক্যালেন্ডার তৈরী করেছিল। এই ধরনের প্রচেষ্টা গণিত ও জ্যোতির্বিদ্যার শেকড় গেড়েছিল মন্দিরে। যদিও অনেক ক্ষেত্রে তা যাদুকরী জ্যোতিষশাস্ত্রের মোড়কে ছিল। গর্ডন চিল্ডে বলেন, “মন্দিরের মজুতাগারে অতিরিক্ত খাদ্যশস্যের সংগ্রহই আসলে সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের সূচনা করে যা থেকে তৈরী হয় সভ্যতা।”[৫২]
যখন প্রথমদিকের সভ্যতার দিনগুলিতে মেসোপটেমিয়া ও মেসো-আমেরিকায় লেখা শুরু হলো, তখন তাদের সাথে আরো যাদের যোগাযোগ হয়েছিল তারা এই লেখার প্রক্রিয়াটা আয়ত্ব করে নিল, নিজেদের মত করে। প্রায় ৫০০০ বছর আগে মধ্যপ্রাচ্যে, এবং কেন্দ্র, পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ায়, উত্তর পূর্ব আফ্রিকায় এবং ভূ-মধ্য ইউরোপে লেখার বিস্তার হয়েছিল খুব দ্রুত। মেসো-আমেরিকান সভ্যতা থেকে শুরু করে অলমেকরা পর্যন্ত এটি ব্যবহার করত। কিন্তু এমন সভ্যতাও ছিল যারা খুব উন্নত লেখার প্রক্রিয়া না থাকা স্বত্তেও তাদের উন্নতি চালিয়ে যেতে পেরেছিল, যেমন দক্ষিণ আমেরিকায়, তারা বিভিন্ন চিহ্ন ব্যবহার করত কেবল মনে রাখার জন্য।
কৃষি এবং নগর জীবনের পরিবর্তনসমূহ বিষয়ে অল্প কিছু উদাহরণ দেয়ার সুযোগই হয়েছে এখানে। এটা হয়েছিল পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকায় যখন মানুষের জীবনযাত্রার জন্য ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছিল। অনেক ক্ষেত্রে কৃষিভিত্তিক সমাজগুলি যাচ্ছিল অনেক মানুষ একসাথে জড়ো হয়ে বাস এবং বিরাট সব ইমারত তৈরীর দিকে, যেমন তৃতীয় ও চতুর্থ সহস্রাব্দে নির্মিত মাল্টার পাথরের মন্দির, পশ্চিম ইউরোপে পাথরের চাকতি, ইস্টার দ্বীপের এবং তাহিতির বন্ধুর ভূমিতে বিশাল সব ভাস্কর্য। [৫৩] কখনো কখনো সভ্যতার দিকে এই যাত্রা কোথাও কোন উন্নতি দ্বারা প্রভাবিত হতো। [৫৪] কিন্তু এটা কখনোই বদলে যায় না যে, পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকায় নগর তৈরী, বড় শহর তৈরী, প্রায়ই লেখা প্রক্রিয়া তৈরী ইত্যাদি শুরু হয়েছিল আলাদাভাবে কৃষিভিত্তিক সমাজের একটা নির্দিষ্ট উন্নতির ফলেই। তাই পৃথিবীর কোন এক দল মানুষের অন্য দলের চাইতে সেরা ছিল তাই তারা সভ্যতায় তাড়াতাড়ি পৌছে গেছে, এমন ধারণা গর্দভী ধারণা।