আসক্তি বা বদ অভ্যাসের লগে ফাইটের প্রকৃত উপায়!
প্রাককথন
শুধু ফেইসবুক আসক্তি না, যেকোন ধরনের আসক্তি বা বদ অভ্যাস যা ভবিষ্যতে ক্ষতির কারণ হইয়া দাঁড়াইতে পারে তাদের দূর করার এক উপায় অনুসন্ধান এই লেখা। এমন না যে এই লেখার লেখকের কোন বদ অভ্যাস নাই বা তিনি সব দূর কইরা ফেলছেন। এই লেখাটা লেখা হইছে যাতে এই জিনিসগুলা লেখকের মনে থাকে, যা তিনি শিখেছেন চিন্তাশীল লোকদের কাছ থেকে। যাতে তিনিও এর পাঠকদের সাথে সাথে, কয়েকদিন পরে পরে এই লেখা পইড়া নিজের নিত্য নতুন বদ অভ্যাসের লাগাম টাইনা ধরতে পারেন।
ওডিসি ও সাইরেন
ফেইসবুকাসক্তি (বা যেকোন বদ আসক্তি) থেকে মুক্ত হওয়ার প্রকৃত উপায় অনুসন্ধানের আগে ইউলিসিস ও সাইরেনের গল্পটা শোনা যাইতে পারে।
গ্রীক মিথের গল্প। হোমারের ইলিয়াড আর ওডিসির এন্টিহিরো হইতেছেন ওডিসি বা ইউলিসিস। ১০ বছর ট্রয়ের যুদ্ধ কইরা তিনি জাহাজে করে যাচ্ছেন নিজ দেশে। তখন একটা দ্বীপে ছিল এক ধরনের প্রাণী নাম সাইরেন। এরা দারুণ গান গাইত। এত দারুণ গান যে নাবিকেরা মুগ্ধ হইয়া ছুইটা যাইত। এবং বড় পাথরে লাইগা জাহাজ ধ্বংস হইত। সাইরেনেরা নাবিকদের মাইরা ফেলত।
ওডিসি এই কাহিনী জানতে পারলেন এক দেবীর কাছ থেকে। তাই তিনি প্রস্তুতি নিলেন। তার জাহাজের লোকদের বললেন, “তোরা কানে মোম ভইরা রাখবি। যাতে কিছু শুনা না যায়। আর আমারে বাইন্ধা রাখ খুঁটির লগে। আমি কান খুইলা রাইখা শুনতে চাই এদের গান কেমন।”
জাহাজের লোকেরা তার আদেশমত কাজ করল। সাইরেনদের দ্বীপে কাছে আসার পরে ওডিসিরে টাইট কইরা বান্ধা হইল। ওডিসি বললেন, “আমি অনুনয় বিনয় কইরা খুইলা দিতে কইলে আরো টাইট দিবি।”
জাহাজের লোকেরা বলল, “ঠিক আছে।”
একসময় সাইরেনদের দ্বীপের কাছে চইলা আসল। তাদের গান শুনা যাইতে লাগল। তারা গাইতে লাগল। ওডিসির গুণকীর্তন কইরা গান। ওডিসি দেখলেন এরা ট্রয়ের হেলেনের চাইতেও যেন বেশী বিউটিফুল। তার আত্মা যেন ছুইটা যাইতে চাইল। তিনি হুংকার দিলেন, “ওরে! আমারে ছাইড়া দে, ছাইড়া দে!”
কিন্তু জাহাজের লোকেরা তারে আরো টাইট কইরা বানল।
এইভাবে আস্তে আস্তে জাহাজ দূরে যাইতে লাগল। সাইরেনদের পিছে ফালাইয়া। একসময় যখন তারা দৃষ্টিসীমা থেকে নাই হইল, তাদের গানের প্রতিধ্বনিও শোনা যাইতেছিল না, তখন ওডিসির হুশ ফিরল। তার লোকেরা তারে খুইলা দিল।
এইভাবে ওডিসি তারে ও তার জাহাজরে বাঁচাইছিলেন।
এইটারে বলে সেলফ কন্ট্রোল বা আত্মসংবরন।
মানুষ একটা ইরেশন্যাল প্রাণী। এবং এই অযৌক্তিকতা মানবসভ্যতায় নানা উপকার করেছে এবং অপকার করেছে।
যখন আপনি দেখতে পাইলেন ফেসবুক আসক্তি আপনার পাঁচ ছয় ঘন্টা খাইয়া ফেলতেছে, যেই ঘন্টাগুলাতে আপনি গুরুত্বপূর্ন আরো অনেক কাজ করতে পারতেছেন না; তখন আপনার এই অযৌক্তিক ফেসবুকাসক্তি আপনার ক্ষতি করতেছে।
কীভাবে এই আসক্তি দূর করবেন? সেলফ কন্ট্রোল। ওডিসির মতো বাইন্ধা রাখতে হবে নিজেরে। সোজা একটা ফ্রি এপ বা সফটওয়ার নামান ফেইসবুক ব্লক করার। এইগুলা দিয়া ফেইসবুক ব্লক কইরা রাখেন যেই সময়ে আপনি ফেইসবুকে ঢুকতে চান না সেইসময়ের জন্য।
এই সফটওয়ারগুলা এতো কাজের যে ফেইসবুক ব্লক করে এগুলা রিমুভ করলেও ঐ সময়ের পূর্বে ফেইসবুকে আপনি ঢুকতে পারবেন না। এভাবে যেকোন সাইট এদের দ্বারা ব্লক করে রাখা যায়।
দ্বিতীয়ত, ফেইসবুক আসক্তি ছাড়তে অভ্যাস কীভাবে কাজ করে তা আপনারে জানতে হবে না, ব্রেইনের ফাংশন হাবিজাবিও না। জানতে হবে ফেইসবুক কেন ভালো লাগে আপনার। সোজা বিষয় মূলত লাইকের জন্য। লাইক হইল রিওয়ার্ড এইখানে। ধরেন আপনি ঠিক করলেন আর ফেইসবুকে আজ ঢুকবেন না। এইসময়ে হঠাৎ দেখলেন ফেইসবুক এডিকশন থেকে মুক্ত হইবার উপায় নামে বাজে একটা লেখা বিষয়ে লিখেছিলেন বিকালে, তা শেয়ার করেছেন এক বড় ফেইসবুক সেলেব্রেটি। আর হাজার লাইক পাইতেছেন আপনে তার শেয়ার করার কারনে। তখন আপনার সিদ্ধান্ত বদলে যাবে। ঐদিনেই আরো বেশী বেশী ঢুকবেন। ফেইসবুক হইল কন্টিনিউয়াস রিওয়ার্ডের জায়গা। এইখানে কোন হ্যাবিট চেইঞ্জের লুপ তাই কাজ করবে না আনলেস আপনি রিওয়ার্ডরে তুচ্ছ মনে করে।
লাইকের প্রতি মনোভাব চেইঞ্জ করতে হবে। তুচ্ছ লাইক। লাইকরে বলতে হবে, লাইক তুই তুচ্ছ লাইক।
তাহলে আপনি একসাথে কয়েকটা স্ট্যাটাসও দিতে পারবেন। একই বিষয়েও দিতে পারেন। কারণ লাইক তো আপনার কাছে তুচ্ছ।
যখন লাইক গুরুত্বপূর্ন থাকে, তখন লোকে এক স্ট্যাটাস দিয়া অপেক্ষা করে। তারপরে কয়েক ঘন্টা পরে পরবর্তী স্ট্যাটাস। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ভিন্ন বিষয়ে। যাতে লাইকদাতারা বিরক্ত না হন।
তৃতীয়ত, ফেইসবুক জিনিসটারেই তুচ্ছ ভাবতে পারেন। তখন আসক্তি কমবে। আর আসলেই তো ফেইসবুক তুচ্ছ। এইরকম সোশ্যাল সাইট আগেও ছিল, জনপ্রিয়তা কমছে একটা সময় পরে। বেশীরভাগ লোকে দেখছি ফেইসবুকের বায়ো সিভির মত বানাইয়া রাখেন। কতো ইনফো, এই সেই। যেন একটা সিভি। কারো কারো জন্য এইটা আবার দরকার। যারা পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং এ বিশ্বাস করেন। তাদের কাছে ফেইসবুক কেরিয়ার ডেভলাপমেন্টের একটা টুল। তাদের জন্য ফেইসবুক কাজের ক্ষেত্র, আসক্তি না।
আর আপনের কাছে যদি এমন না হয়, যদি ফেইসবুক আপনার সোনার ডিম সম্ভাবনায় কেরিয়ারের জন্য হুমকি হইয়া দাঁড়ায়, তাইলে ফেইসবুকরে তুচ্ছ ভাবতে পারেন।
আমার ধারণা ফেইসবুক প্রোফাইল বায়ো দেইখা আপনারে কেই জব দিবে না বা কোন জায়গায় এপ্লাই করতে কেউ সিভির বদলে ফেইসবুক প্রোফাইল দিবে না। এর জন্য লিংকেডিন আছে। ফেইসবুকে আপনার দেয়া এইসব বায়ো আসলে বিজ্ঞাপন দাতাদের কাজে লাগে। ধরেন আপনে দিয়া রাখছেন আপনে জব পাইছেন গত মাসে। ফেইসবুক এড ম্যানেজারে গিয়া গত মাসে বা রিসেন্টলী জব পাইছেন এমন লোকদের টার্গেট কইরা বিজ্ঞাপন দাতারা এডে আপনারে টার্গেট করতে পারবেন। এইভাবে কয়টা বাচ্চা আছে, ডিভোর্স হইছে কি না, নয়া বিয়া হইছে কি না, ফ্যামিলি থেকে দূরে থাকেন কি না ইত্যাদি প্রায় বিষয় দিয়াই টার্গেট করা যায়। ফলে আলটিমেটলী আপনার এভরি তথ্য ফেইসবুক ব্যবহার করে বা বিজ্ঞাপন দাতাদের কাছে বিক্রি করে।
তবে আপনে যদি অথরিটি হইয়া ফেইসবুকের লোকসকলকে ইনফ্লুয়েন্স করতে চান, তাইলে বিস্তারিত বায়ো কাজের। কারন লোকে এইসব দেইখা আপনার অথরিটিরে বিশ্বাস করতে পারে।
আর আপনে লোকসকলদের ভিতরের কেউ হলে, ডিগ্রী ফিগ্রী আর বায়ো দেইখা ভুল ইনফ্লুয়েন্স হইতে না চাইলে অথরিটির কু প্রভাব এর ব্যাপারে সাবধান থাকতে পারেন।
ফেইসবুক ব্যবহারকে কঠিন কইরা তুলুন
যা আপনি ত্যাগ করতে চান তাকে কঠিন করে তুলতে হবে। আর যা করতে চান অর্থাৎ যে ভালো অভ্যাস, তার প্রক্রিয়াকে রাখতে হবে সহজ। জার্মানীতে অর্গান ডনেশনের হার হইল প্রায় দশ ভাগ, আর অস্ট্রিয়াতে নব্বই ভাগ। এই এত বড় ব্যবধান কেন? কারণ জার্মানীতে অর্গান ডোনেট করতে হলে একটা পদ্বতির ভেতর দিয়ে যাইতে হবে, রেজিস্ট্রেশন ইত্যাদি। আর অস্ট্রিয়াতে ডিফল্ট নিয়মই অর্গান ডোনেট হবে, কেউ এর থেকে বাইর হইতে হলে ফর্ম টর্ম পূরন কইরা ডি-রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। মানুষের প্রকৃতি হইল অলস। তাই রেজিস্ট্রেশন কইরা বাইর হওয়ার ঝামেলায় যাইতে চায় না।
এই নিয়া যে রিসার্চ হইছিল, তার গ্রাফিকাল রেজাল্ট একটা দেখা যাক,
ফেইসবুকের ক্ষেত্রে আমাদের রিমেম্বার পাসওয়ার্ড দেয়া থাকে। এইটা যদি অফ থাকে, প্রত্যেকবার যদি পাসওয়ার্ড ইমেল মাইরা লগিন করতে হয়, তাইলে ফেইসবুক আসক্তি কমানিতে এটা সাহায্য করবে। প্রতিবার ইমেল পাসওয়ার্ড দেয়ার সময় সিদ্ধান্ত নিতে হবে, মনে পড়বে আপনে ঠিক করছিলেন কম ইউজ করবেন ফেইসবুক।
কোন অল্প উঁচা বিল্ডিং এই পদ্বতি কাজে লাগাইয়া দেখতে পারে লিফটে, যদি তারা চায় বাসিন্দারা কম লিফট ইউজ করুক। লিফটের বাইরের বাটন থাকবে একটা বক্সের ভিতরে। আর সেই বক্সের থাকবে ছোট দরজা। দরজা খুইলা বাটন প্রেস করতে হইবে প্রত্যেকবার।
আর সেই বক্সের উপরে লেখা থাকবে সিঁড়ি ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এরপরে লেখা থাকবে কত সংখ্যক মানুষ গত বছর মারা গেছে স্থুলতা জনিত হৃদরোগে ইত্যাদি। এতে দুইটা কাজ হবে। এক বাক্সের ভিতরে বাটন দিয়া কাজটারে একটু কঠিন করে দেয়া। দুই, বাক্সের উপরের সিগনাল হিশেবে সিঁড়ি ভাইঙ্গা উঠার উপকারীতা এবং উঠলে ঐ ব্যক্তি কীরকম স্বাস্থ্যজনিত লস থাইকা বাইচা যাবেন, তা বুঝানো যাবে। মানুষ সাধারণত লস এভার্স অর্থাৎ লস ডরায়, তাই এই পদ্বতি কাজ করার কথা।
বর্তমানের অল্প লাভ না ভবিষ্যতের বেশী লাভ?
এবার আরো কিছু ইকোনোমিক-সাইকোলজিক্যাল কিছু কথাবার্তায় যাওয়া যাক। ধরেন কাউরে দুইটা অপশন দেয়া হইল। অপশন এক- আজকে দশ হাজার টাকা দেয়া হবে। অপশন দুই- এক সপ্তাহ পরে বারো হাজার টাকা দেয়া হবে। এই দুইটার মধ্যে একটা চয়েজ করতে হবে।
সাধারনত মানুষেরা এই ক্ষেত্রে অপশন এক অর্থাৎ আজকে দশ হাজার চয়েজ করে।
পরীক্ষার মানির পরিমান এক রাইখা এবার সময় বাড়ানি হইল। বলা হইল, আগামী এক বছর পর আপনারে দশ হাজার টাকা দেয়া হবে, এইটা অপশন এক। আর আগামী এক বছর এক সপ্তাহ পর আপনারে বারো হাজার টাকা দেয়া হবে, এইটা অপশন দুই।
দুই ক্ষেত্রেই এক বছর করে সময় বাড়ছে।
এই ক্ষেত্রে সাধারণত মানুষেরা অপশন দুই চয়েজ করে। তার কাছে তখন মনে হয় এক বছর তো গেছে, আর এক সপ্তাহে আর কী!
কিন্তু এখানে আসলে হইতেছেটা কী? খেয়াল কইরা দেখেন, যখন বর্তমানে তারে বিচার করতে দেয়া হচ্ছে তখন সে এক সপ্তাহ ওয়েট করতে নারাজ বাড়তি দুই হাজার টাকার জন্য। কিন্তু যখন ভবিষ্যতে বিচার করতে দেয়া হচ্ছে তখন সে বাড়তি দুই হাজারের জন্য এক সপ্তাহ ওয়েট করতেছে।
এইটা মানুষের একটা ইন্টারেস্টিং আচরণ। একই জিনিস বর্তমানের সাপেক্ষে সে একভাবে দেখে, ভবিষ্যতের সাপেক্ষে অন্যভাবে।
ভবিষ্যতের সাপেক্ষে দেখলে সে এক সপ্তাহ ওয়েট কইরা দুই হাজার বেশী পাইতে পারে অর্থাৎ ভালো সিদ্ধান্ত সে নিতে পারে। এইটা এক গ্রাফের মাধ্যমে দেখা যাক-
গ্রাফে এস এস টা হচ্ছে শর্ট টার্মে লাভ, যেমন এখনই দশ হাজার টাকা।
এল এল টা হচ্ছে লং টার্মে লাভ, অর্থাৎ, এক সপ্তাহ পরে বারো হাজার টাকা।
মূল বিন্দু থেকে একজন যখন দেখবেন, তখন তিনি দেখতে পাইবেন এল এল অনেক উঁচা। মানে এল এল নেয়াই ভালো সিদ্ধান্ত। কিন্তু এস এস ও এল এল এক জায়গায় মিলিত হইছে, তারপরের একটা অংশ স্ট্রাইপ করা আছে, এই জায়গা থেকে তিনি যদি দেখেন তাইলে তার কাছে এস এস উঁচা মনে হবে। তখন তিনি শর্ট টার্মেই লাভ চাইবেন। নগদ যা পাও হাত পাতিয়া লও টাইপ।
এই জায়গাটার নাম ল্যাপস জোন, অর্থাৎ এই খানেই মানুষেরা ডিজায়ারের সাথে পরাজিত হইয়া লোভে পতিত হন।
ল্যাপস জোনে যে জিনিস কম লাভজনক তা বেশী লাভজনক মনে হয়। আর্কিটেকচারে একটা জিনিশ আছে প্যারালাক্স নামে। প্যারালাক্স বলতে বুঝায় কোন অবজেক্টরে আমরা যেইভাবে দেখতেছি, বাস্তবিক ভাবে সে সেইরকম না এমন অবস্থা; এবং এর কারণ যেই এঙ্গেলে বা কোনে আমরা তারে দেখতেছি তা।
দুইটা বিল্ডিং ধরেন পাশাপাশি, আপনি দূর থেকে দেখতেছেন একটা উঁচা, আরেকটা নিচা। কিন্তু নিচাটার নিচে গিয়া উপরে তাকাইয়া দেখলে আপনার মনে হইল নিচাটা উচাটার চাইতে একটু উঁচা আসলে। এইরকম অবস্থা হইল প্যারালাক্স।
উপরের গ্রাফে তাই হইতেছে ল্যাপস জোনে। গ্রাফে হইতেছে মানে আমাদের মাথায় হইতেছে, সিদ্ধান্ত নেবার কালে। তাই সে শর্ট টার্ম লাভটা দেখতেছে, লং টার্ম লাভটা দেখতেছে না।
মানুষের ভিতরে অংশ দুইটা আছে ধরেন। একটা বুদ্ধিমান, বিচার বুদ্ধি কইরা আগায়, আরেকটা অত বিচারের ধার ধারে না, তার মনে খালি সুখ চায়। বিচার বুদ্ধির অংশ ব্যবহার করলে কেউ লং টার্ম লাভটাই দেখবে, সে মূল বিন্দুতে গিয়া ভবিষ্যতের দিকে তাকাবে।
যেকোন ধরনের আসক্তি মানুষের সুখ লোভী অংশের কারণে হয়। যেমন, কেউ সিগারেট ছাড়তে চায়। তার বিচার বুদ্ধির অংশ তারে বুঝায় সিগারেট খারাপ। খাইলে ক্ষতি হয়। হুদাই পয়সা নষ্ট। তাই সে ঠিক করে সিগারেট ছাইড়া দিবে। কিন্তু তার সুখ লোভী অংশে হঠাৎ নিকোটিনের লোভ চাগাড় দিয়া উঠে। তখন সে আস্তে আস্তে মূল বিন্দু থেকে সইরা ল্যাপস জোনে চইলা আসে। সুখ লোভী অংশ বুঝায়, কাইল থেকে ছাড়ব, আইজ খাইয়া নেই। ভবিষ্যতের বেইল নাই, লিভ ইন বর্তমান। সে খায়। এইভাবে তার সিগারেট ছাড়া আর হয় না।
তো ঐ ব্যক্তির সিগারেট ছাড়তে হলে, প্রথমে ভবিষ্যতের হিশাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তিনি সিগারেট ছাড়বেন। আর দুই তিনি ওডিসি বা ইউলিসিসের মত বাইন্ধা রাখবেন তার সুখলোভী অংশটারে, সামনে ঝুলাইয়া ভবিষ্যতের মূলা।
সিগারেট দিয়া উদাহরণ দিলাম, তা ফেইসবুক আসক্তি বা অন্য কোন আসক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। প্রায় প্রতিটি বাজে আসক্তিই ভবিষ্যতের ক্ষতি করে; অর্থনৈতি, শারিরিক বা মানসিক।
কোন ছাত্র যদি ভাবেন তার ফেইসবুক আসক্তি পড়ালেখায় ক্ষতি করতেছে তাইলে তিনি ভবিষ্যতের দিকে তাকাইয়া ভাবতে পারেন। তিনি যদি ফেইসবুক ইউজ করতেই থাকেন পড়ালেখা বাদ দিয়া, যেইটা তার কাছে এখন দারুন লাগে; ইন দ্য লং রান তিনি বাজে রেজাল্ট করবেন। তার অভিভাবকেরা দুঃখ পাইবেন। তার নিজের কেরিয়ার পড়বে হুমকির মুখে। ফলে, তারে ল্যাপস জোন অর্থাৎ লোভের গর্তে না পইড়া পড়ালেখায় মন দিতে হবে। এইটা তার জন্য ভালো সিদ্ধান্ত মূল বিন্দু থেকে দেখলে।
উপরের গ্রাফখানা জার্নাল অফ কনজিউমার রিসার্চে প্রকাশিত সেলফ কন্ট্রোল বিষয়ক একটি আর্টিকেল থেকে নেয়া। এই খানে দেখানো হইতেছে উইলপাওয়ার তথা ইচ্ছাশক্তি ও ডিজায়ারের ভিতরের ফাইট। উইলপাওয়ার উইনার হলে আপনে যেকোন আসক্তি ছাড়তে পারবেন। ডিজায়ার উইলপাওয়ারের চাইতে বলশালী হইলে আপনি আসক্তিতে আরো নিমজ্জিত হইবেন।
যে বিষয়ে আসক্তি তার ডিজায়াররে কমাইতে হবে। আর আসক্তি ছাড়ার উইলপাওয়াররে বাড়াইতে হবে।
শেষকথা
সময় নষ্ট একটা শব্দ যারে অনেক ভাবেই দেখা যাইতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে অন্য লোকদের কাছে যা সময় নষ্ট বইলা মনে হয় তা আসলে হইতে পারে বেস্ট একটা ইনভেস্টমেন্ট। যেমন, বই পড়া। এই এগ্রিকালচারাল সোসাইটির পুঁজিবাদী সমাজে লোকে কাজ, টাকা আর কেরিয়ার নিয়াই ব্যস্ত। সেইখানে অনেক ক্ষেত্রে আমার মনে হয়, যারে টাইম নষ্ট বলা হয়, ওইটাই তার লাইফ। বাকীটা তো খাটা খাটনি, প্রতিযোগীতা। তবু, আমাদের বাস্তববাদীও হইতে হয় মাঝে মাঝে। যেই খেলায় আমরা পইড়া গেছি সম্ভাব্যতার খেলাধুলার কারণে, তাতে থাকতে হইতেছে যেহেতু।
প্রাসঙ্গিকঃ