কানাডিয়ান ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট, বুদ্ধিজীবী জর্ডান পিটারসন নানা কারণে আলোচিত, বিতর্কিত। মূলত তিনি একজন সেলফ-ইম্প্রুভমেন্ট জাতীয় কথাবার্তা বলা লোক মনে হলেও অন্যান্য অনেক বিষয়ে তার মন্তব্য রয়েছে, যেমন খ্রিস্টিয়ানিটি, পলিটিক্যাল কারেক্টনেস বিরোধীতা, ফেমিনিজমের সমালোচনা, সমাজতন্ত্র সমালোচনা, কিন্তু এসব ক্ষেত্রে অনেক সময়ই তাকে ভুল বুঝা হয়। এইসব পলিটিক্যাল সামাজিক ডিসকোর্সের বাইরে তার ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট সত্ত্বাতে আমরা মনযোগ দিতে পারি। তিনি কার্ল গুস্তাভ জাঙ্গ, ফ্রয়েড, নীচা প্রভাবিত একজন চিন্তক, যার পড়ালেখা অনেক, এবং যিনি অনেক প্র্যাক্টিক্যাল কথাবার্তা বলেন।
তার ইউটিউব চ্যানেল বিখ্যাত। নতুন বই লিখেছেন ১২ রুলস অব লাইফ, যা বেস্ট সেলার। এছাড়াও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিতে তার গুরুত্বপূর্ন কাজ রয়েছে। আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান। সব মিলিয়ে, এই হলো তার এক অতি সংক্ষিপ্ত পরিচয়, যা উড়িয়ে দেবার মত নয় কোনভাবেই। এই পোস্টে জীবন যাপন বিষয়ে তার কিছু উপদেশ তুলে ধরব বাংলায়, যা থেকে ১২ টি নির্বাচন করেই তিনি তার বই ১২ রুলস অব লাইফ লিখেছিলেন।
যেই সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন সত্যগুলি সবার জানা উচিতঃ
১। সত্য কথা বলবেন।
২। এমন কাজ করবেন না যা আপনি ঘৃণা করেন।
৩। এমনভাবে কাজ করুন যাতে কীভাবে কাজ করেছেন বললে আপনি সত্য বলতে পারেন।
৪। যা সুবিধাজনক তা নয়, যা অর্থপূর্ন (মিনিংফুল) তার পেছনে ছুটুন।
৫। যে কাজ করে এবং যাকে কাজ করতে দেখা যায় এই দুইয়ের মধ্যে যদি একটা পছন্দ করার সময় আসে তাহলে যে কাজটি করে সে হোন।
অর্থাৎ, কিছু মানুষ কাজ না করে মঞ্চের সামনে থাকতে পছন্দ করে। এরকম হবেন না।
৬। মনযোগ দিন।
বিশেষত, অন্যে যখন কথা বলে।
৭। ধরে নিন যার সাথে আপনি কথা বলছেন সে এমন কিছু জানে যা আপনি জানেন না। শক্তভাবে তার কথায় মনযোগ দিন যাতে সে আপনার সাথে ঐ অজানা বিষয়টি শেয়ার করে।
৮। সচেতন ভাবে কাজ করুন যাতে আপনার সম্পর্কে (রিলেশনশীপে) আনন্দ রাখতে পারেন।
৯। কার সাথে ভালো খবর শেয়ার করছেন এ ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
কারণ, অনেকেই আপনার ভালো খবরে ভিতরে ঈর্ষান্বিত হবে এবং আপনাকে দমিয়ে দেবার চেষ্টা করবে। যেমন, “ও তুমি এই বই লেখছো, আমার চাচাত ভাইয়ের বউয়ের বুয়ার ছেলেও এমন, বয়স কম, কিন্তু তিন তিনটা বই লিখে ফেলছে!”
১০। কার সাথে খারাপ খবর শেয়ার করছেন এ ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
কারণ, অনেকেই এতে আনন্দিত হবে। আপনাকে আরো হতাশ করে দেবার চেষ্টা করবে। বন্ধু বলে যারা পরিচিত তারা সবাই কিন্তু ভালো বা খারাপ খবর শেয়ার করার মতো নয়, তাদের সাথে এসব শেয়ার করলে ক্ষতি আপনারই।
১১। যেখানেই যান, ওখানকার অন্তত একটি জিনিসকে আরো ভালো করুন।
১২। কল্পনা করুন আপনি কে হতে পারবেন, তারপর একাগ্রভাবে ঐদিকে মনস্থির লক্ষ্য করুন।
১৩। নিজেকে উগ্র (এরোগ্যান্ট) বা ক্ষুব্ধ (রিসেন্টফুল) হতে দিবেন না।
১৪। আপনার বাড়ির একটি কক্ষকে যতটা পারা যায় সুন্দর করে তুলুন।
১৫। আগামীকাল আপনি কী ছিলেন তার সাথে আজকের আপনির তুলনা করুন। আজকের আপনির সাথে আজকের অন্য কারো তুলনা নয়।
১৬। কোন একটি বিষয়ে নিজে যতটা পারেন পরিশ্রম দিয়ে কাজ করুন এবং দেখুন কী হয়।
১৭। অতীতের কোন দুঃখের স্মৃতি যদি আপনাকে কাঁদায় তাহলে তা বিস্তারিত ও পরিস্কারভাবে লিখে ফেলুন।
এটি হলো রাইটিং থেরাপি যা নিজে জেমস প্যানেবেকার কাজ করেন। জর্ডান পিটারসন প্যানেবেকারের কাজের একজন ভক্ত, এবং তিনি প্যানেবেকারের একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকারও নিয়েছেন। প্যানেবেকারের কাজ নিয়ে আমি এই সাইটে লিখেছি। লেখাটি পড়া না থাকলে পড়ে দেখুন – লেখা বিশ্লেষণ।
১৮। মানুষের সাথে আপনার যোগাযোগ (কানেকশন) রক্ষা করে চলুন।
১৯। সামাজিক প্রথা প্রতিষ্ঠান বা শিল্পের অর্জনগুলিকে অযথা অসচেতন সমালোচনা করবেন না।
এটা একটা ট্র্যাপ। অনেকেই, যারা বয়সে তরুণ তারা জানাশোনা শুরু করার কালে প্রতিষ্ঠিত প্রথা প্রতিষ্ঠান, বা কালচারাল ও শিল্পের অর্জনকে তাচ্ছিল্য করতে শুরু করে। নিজেকে তুলে ধরার এটি বাজে পন্থা। কারণ হাজার বছরের ব্যবধানে যেসব জিনিস অর্জিত হয়েছে তার সব ফেলনা নয়। এগুলিকে অযথা অ অসচেতন সমালোচনা করা বোকামি।
২০। নিজের সাথে এমনভাবে ব্যবহার করুন, যেন আপনি এমন কেউ, যাকে সাহায্য করা আপনার দায়িত্ব।
২১। অন্যের কাছে ছোট সাহায্য চান, যাতে ভবিষ্যতে সে আপনার কাছে সাহায্য চাইতে পারে।
২২। যারা আপনার সবচাইতে ভালো চায় তাদের সাথেই বন্ধুত্ব করুন।
২৩। কাউকে বাঁচাতে চাইবেন না যদি না তার বাঁচার ইচ্ছা থাকে। যার বাঁচার ইচ্ছা আছে তাকে বাঁচানোর সময়ও খুব সতর্ক থাকুন।
২৪। ভালো ভাবে করা কোন কিছুই অগুরুত্বপূর্ন নয়।
২৫। বাইরের পৃথিবীর সমালোচনা করার আগে নিজের ঘরকে শৃঙ্খলায় আনুন।
২৬। আপনি যে লোকটি হতে চান, তার মত পোষাক পরুন।
২৭। কথা বলার সময় স্পষ্ট হোন।
২৮। কাঁধ সোজা করে দাঁড়ান।
২৯। আপনার পথের সামনে ভয়ংকর কিছু পড়লে তা এড়িয়ে যাবেন না – এবং অযথা বিপদজনক কিছু করবেন না।
৩০। আপনার সন্তানদের এমন কিছু করতে দিবেন না যা করলে আপনার তাদেরকে অপছন্দ করতে হয়।
৩১। আপনার স্ত্রীকে কাজের লোকে পরিণত করবেন না।
৩২। অযাচিত জিনিস ধামাচাপা দিবেন না।
৩৩। লক্ষ্য করে দেখুন সেখানেই সুযোগ চোরাবালির মতো থাকে যেখানে দায়িত্ব নেয়া হয় নি। ( Notice that opportunity lurks where responsibility has been abdicated.)
৩৪। গ্রেট কারো লেখা কিছু পড়ুন।
অর্থাৎ, বই পড়ার সময় বা যেকোন লেখা পড়ার সময় সতর্ক হোন। যার তার লেখা পড়বেন না।
৩৫। রাস্তায় কোন বিড়ালের সাথে দেখা হলে বিড়াল পুষুন। ( এটা রূপক। এর ব্যাখ্যা হলো, জীবনে অনেক খারাপ সময় আসলে, ছোট ছোট অন্যান্য জিনিসে আনন্দ খুঁজে নিন।)
৩৬। শিশুরা যখন স্কেইটবোর্ডিং করছে তখন তাদের বিরক্ত করবেন না।
৩৭। যদি দেখেন কোন সমস্যা যা ফিক্স হওয়া দরকার, সরকারকে চিঠি লিখুন এবং কিভাবে সমাধান করা যাবে সে ব্যাপারে আপনার সমাধানটি দিন।
৩৮। মনে রাখবেন আপনি যা জানেন না তা আপনি যা জানেন তার চাইতে সবসময়ই বেশী গুরুত্বপূর্ন।
৩৯। যতই দুর্দশায় থাকুন না কেন, কৃতজ্ঞ থাকুন।