গুরুত্বকে কমিয়ে দেখানো
যখন কোন বিষয় নিয়ে আপনি দীর্ঘ সময়, দীর্ঘদিন ধরে ব্যয় করতে থাকবেন, মনোযোগ দিয়ে ঐ বিষয় চর্চা করতে থাকবেন, এবং ঐ বিষয়ে আপনার যদি প্রতিভা থাকে তাহলে একটা সময়ে গিয়ে আপনি ঐ বিষয়ের একজন অথরিটিতে পরিণত হবেন। লোকেরা তখন আপনার কথা শুনবে। এই পর্যায়ে পৌঁছে গিয়ে আপনার একটি সমস্যা হতে পারে।
যে পদ্বতিতে আপনি এই এক্সপার্টিজের জায়গাতে গেছেন তা হলো কন্টিনিউয়াস লার্নিং বা নিজেকে বেটার করে যাওয়ার মাধ্যমে। কিন্তু যখন আপনি দেখতে পাবেন অনেক লোকে আপনার কথা শুনছে, এবং তাদের যদি আপনাকে প্রশ্ন করার ও চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ না থাকে তাহলে আপনার মনে হতে পারে উন্নতি করার জায়গা বোধহয় আর নেই।
কিন্তু কোন মানুষের ক্ষেত্রেই এমন হয় না কখনো। উন্নতি করার জায়গা সব সময়ই রয়ে যায়।
তাহলে আপনি কী করবেন?
আপনার সাথে যারা কথা বলতে আসবে বা যাদের সাথে আপনার যোগাযোগ হবে, তাদের কাছে নিজেকে এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে যেন তারা প্রশ্ন ও চ্যালেঞ্জ করতে ভয় না পায়। ও উৎসাহ পায়।
মার্লোন ব্র্যান্ডো প্রায় কয়েক দশক ধরে হলিউডের সেরা একজন নায়ক ছিলেন। কিন্তু তিনি অভিনয়ের মতো বিষয়েও নিজের গুরুত্ব কমিয়ে দেখাতে পারতেন কথোপকথনে যাতে অন্যেরা তার সাথে সমালোচনা ও প্রশ্ন করতে ভয় না পায়।
নিচের ভিডিওতে এ নিয়ে তার কথাবার্তা দেখুন।
তবে আমি মনে করি, আপনাকে একটি ব্যালেন্স রাখতে হবে। সবাই যেন আপনার ভুল ধরিয়ে দিতে না পারে। আবার যোগ্য লোকেরা যেন আলোচনা করার সাহস পায়। অর্থাৎ, যোগ্যদের কাছে আপনি নিজের গুরুত্ব কমিয়ে তাদের সাহস দিতে পারেন। কিন্তু সবাইকে যদি সাহস দেন আপনার ভুল ধরিয়ে দেবার, তাহলে আপনি তাদের সম্মান হারাবেন। দার্শনিক ও আধুনিক কূটনীতির জনক ম্যাকায়াভেলী তার প্রিন্সে এমন কথাই লিখে গেছেন।
ছোট বিষয়, যা অন্যে চিন্তা করছে কিন্তু বলতে পারছে না তা খেয়াল করা ও তা ধরিয়ে দেয়া
অন্যের সমীহ আদায় করে নিতে হলে আপনাকে সূক্ষ্ণ বিষয়াদিতে নজর দিতে হবে। এবং সে যেসব জিনিস ভাবছে কিন্তু কোন কারণে বলতে পারছে না তা ধরে সেসব ভালোভাবে বলতে হবে।
কোন বিতর্কে যদি দেখা যায় আপনি এমন লোকের পাল্লায় পড়েছেন যে তার মত থেকেই সরবেই না, তাকে পরাস্থ করতে আপনি সূক্ষ্ণ বিষয়াবলীতে নজর দিতে পারেন।
যেমন এই ভিডিওটিতে মার্লোন ব্র্যান্ডো ও ডিক ক্যাভেট এক বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। ব্র্যান্ডো বলছিলেন সব মানুষই অভিনেতা, অন্যদিকে ডিক তা মানতে চাচ্ছিলেন না। তখন ব্র্যান্ডো ডিকের টকশোর উদাহরণই সামনে আনেন এবং এ দিয়ে বুঝিয়ে দেন যে , তিনি যে টকশোতে কথা বলছেন, এটাও একটা অভিনয়।
এমন সরাসরি দেখিয়ে দেয়ায় ডিক মানতে বাধ্য হোন, এবং দর্শকেরাও।
প্রশংসা করা সূক্ষ্ণ ভাবে এবং দ্রুত সরে যাওয়া সেই জায়গা থেকে
প্রশংসা একটি মারাত্মক জিনিস। ফেইক প্রশংসা ধরে ফেলতে পারে প্রায় লোকে, এবং প্রশংসা মন থেকে করলেও এর উপস্থাপন ঠিক না হলে যাকে প্রশংসা করা হচ্ছে সে বিরক্ত হয়ে উঠবে।
এক্ষেত্রে ক্লিশে এবং জেনেরিক প্রশংসা এড়িয়ে চলতে হবে। জেনেরিক প্রশংসা মিথ্যা বলে মনে হয় লোকের কাছে।
যেমন কেবল উদাহরণের জন্য বলা যায় , আপনি সুন্দর একটি জেনেরিক কথা। কিন্তু আপনার চোখের পাপড়িগুলি একটু অন্যরকম, দেখতে সতেজ লাগে, এটি নির্দিষ্ট প্রশংসা।
জেনেরিক প্রশংসা মানুষের উপর বেশি প্রভাব ফেলে না। মানুষ ভুলে যায়। যেমন, আপনি একজনকে বললেন আপনার লেখাটি অসাধারণ হয়েছে, সে ভুলে যাবে। কারণ এটি এমন কথা যা অনেকে বলেছে। আমার লেখা কতজন অসাধারণ বলেছেন আমার মনে নেই। কিন্তু কুমার গন্ধর্বের গানের প্রসঙ্গ একজন এনেছিলেন আমার গল্প নিয়ে বলতে গিয়ে, এটি আমি ভুলতে পারব না।
জেনেরিক ও স্পেসিফিক প্রশংসা এটি আরেক উদাহরণ।
নিচের ভিডিওতে দেখতে পাবেন মার্লোন ব্র্যান্ডো কীভাবে একজন মেয়েকে স্পেসিফিক প্রশংসা করছেন যে তিনি মুখ বাঁকা করে কথা বলেন। এই প্রশংসা কীরকম কাজে দিয়েছে ভিডিওতে তা স্পষ্ট আছে।
স্পেসিফিক প্রশংসা করতে হলে সূক্ষ্ণ বিষয় নজর দিতে হয়। তাই এমন প্রশংসা ফেইক হবার সম্ভাবনা কম থাকে। ফেইকভাবেও অনেকে এটি করতে পারে। কিন্তু এই ফেইকনেস চর্চার জন্য নিজের ভেতরে সে একটা ধূর্ত ও চালাক লোক বলে বিবেচিত হবে। এ শাস্তি নিশ্চয়ই সবাই মেনে নিতে চাইবেন না।