নির্বাচনী প্রচারণায় যেভাবে নাজ ব্যবহার করতে পারেন

জার্মানীর একটা এয়ারপোর্টের  পুরুষ কমোডে একবার এক মাছির ছবি এঁকে রাখা হলো। এটি করা হয়েছিল প্রস্রাবের ছিটকে পড়ার সমস্যা দূর করতে। এর পেছনের লজিকটা ছিল, যদি পুরুষদের টার্গেট করার কোন জিনিস দেয়া হয় তাহলে প্রস্রাবের ছিটকে পড়ার হার কমবে।

দেখা গেল ঠিক তাই হয়েছে।

প্রস্রাবের ছিটকে পড়ার হার কমে গেছে শতকরা ৮০ ভাগ।

এই যে মাছির ছবি এঁকে রাখা, এখানে কিন্তু ব্যবহারকারীদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয় নি। কিন্তু তাও তাদের আচরণকে প্রভাবিত করা হয়েছে, এবং যেটা চাওয়ার ছিল সেটা করানো হয়েছে।

এভাবে পরিবেশে সামান্য পরিবর্তন করে লোকদের আচরণ প্রেডিক্টেবল ভাবে পরিবর্তন করার পদ্বতিকে বলে নাজিং, এবং যেটা করা হয় সেটাকে বলে নাজ।

যেমন, উল্লিখিত এয়ারপোর্টের ঘটনায়, কমোডে মাছির ছবি আকাটা হলো নাজ।

নাজের কনসেপ্ট নাজ নামে পরিচিত না হলেও মানব সমাজে প্রচলিত ছিল। বিশেষত মনস্তাত্ত্বিক অর্থনীতিবিদ রিচার্ড থ্যালারের কাজের মাধ্যমে এটি জনপ্রিয়তা পায়, এবং তিনি নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর আরও পরিচিত হয়ে উঠে।

থ্যালারের কথায় নাজ কী?

রিচার্ড থ্যালার চেয়েছিলেন যে সরকার লোকদের ভালোর জন্য এটি ব্যবহার করবে। বা কোন সংস্থা করতে পারে। যেমন একটি ইউনিভার্সিটি তার ক্যান্টিনে স্বাস্থ্যকর সব্জীনির্ভর খাবারগুলি রাখল লোকদের চোখের সামনেই। কিন্তু বার্গার জাতীয় খাবারগুলি রাখল একটু পেছনে। এর মাধ্যমে তারা স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার ব্যাপারে লোকদের নাজ করল। কিন্তু লোকদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয় নি। ফাস্ট ফুড ক্যান্টিনে রয়েছেই।

কিন্তু সব সময় এটি যে লোকদের ভালর জন্য ব্যবহার হবে, এমন মনে হয় না। কারণ এই নাজ ব্যবহার তাদের ম্যানিপুলেটও করা সম্ভব। এবং অনেক জায়গা রয়েছে ব্যবসা ও মানুষের জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে, যেখানে তাদের ম্যানিপুলেট করে অন্য কোন লোক বয়া সংস্থা, তাদের জন্য নাজ হয়ে উঠতে পারে এক অস্ত্র বিশেষ।

বাংলাদেশে বর্তমানে নির্বাচনী আবহাওয়া চলছে। প্রচার প্রচারণা হচ্ছে, মনোনয়ন হচ্ছে। ইন্টারনেট ভিত্তিক মাধ্যমগুলি, বিশেষত সোশ্যাল মিডিয়া ফেইসবুক হয়ে উঠবে প্রচারণার গুরুত্বপূর্ন মাধ্যম।

এমতাবস্থায়, এই লেখাটি হলো, কীভাবে রাজনৈতিক নেতা বা  তাদের কর্মীরা নাজ থিওরি ব্যবহার করে নিজেদের প্রচারণা করতে পারবেন। প্রচারণার মূল উদ্দেশ্য হলো লোকদের কনভিন্স করা, তাদের বিশ্বাস করানো যে তাদের সমস্যাগুলি উক্ত নেতা সমাধান করতে পারবেন, ও তিনি যোগ্য লোক। এই কাজের জন্য কীভাবে নাজ থিওরি ব্যবহার করা যায়, আসুন দেখি।

 

সহজতা

 

প্রথম যে জিনিসটা নিয়ে কথা বলা যায়, তা ফেইসবুক বা ইন্টারনেট মাধ্যমে প্রচারণার প্রধান মূল নীতি বলে আপনি ধরে নিলে  ভুল হবে না। কেবল নির্বাচনী প্রার্থীদের জন্য নয়, এড কপিরাইটিং বা অন্য ধরনের বিজ্ঞাপনের জন্যও এটি সমান ভাবে প্রযোজ্য।

কোন একটি জিনিস মানুষ দুইভাবে বুঝতে পারে। একটা হলো খুব দ্রুতভাবে, একটার সাথে আরেকটা মিলিয়ে। এই বুঝায় মানুষের চিন্তাপ্রক্রিয়ার যুক্তির অংশ কার্যকর হয় না।

দ্বিতীয়টা হলো, ধীরভাবে, যুক্তি কাজে লাগিয়ে বুঝা।

আপনি যখন প্রচারণা করছেন কোন দলের হয়ে, তখন মনে রাখবেন আপনাকে ট্রিগার করতে হবে লোকদের অযৌক্তিক বুঝা তথা দ্রুত বুঝাকে। আপনি যদি দ্বিতীয় পদ্বতি তথা যুক্তি দিয়ে বুঝার অংশকে ট্রিগার করে ফেলেন, তাহলে লোকেরা ব্রেইনের  যুক্তি সিস্টেমে চলে যাবে ও তাদের কনভিন্স করা কঠিন হয়ে উঠবে।

অযৌক্তিক দ্রুত বুঝা ট্রিগার করতে কী করবেন?

এমনভাবে বিজ্ঞাপন বানাবেন যাতে যেকোন সাধারণ মানুষ এক দেখায় বুঝে নিতে পারে বক্তব্য। মাত্র এক দেখায়।

আপনার প্রচারণার লেখাগুলিও এমন হতে হবে।

আপনি যদি যুক্তি দিয়ে বুঝাতে যান, রেফারেন্স টেনে কঠিন করে ফেলেন, তখন লোকদের আর সহজে বুঝাতে পারবেন না।

উদাহরণ দেই, তাতে বুঝতে সুবিধা।

ধরুন, আপনি বুঝাতে চাচ্ছেন যে দল ক্ষমতায় আছে সেই সরকার দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে নি। এই প্রচারণার মাধ্যমে আপনি তাদের ব্যাপারে খারাপ মনোভাব তৈরি করতে চান ও আপনার দলের ব্যাপারে ভাল মনোভাব তৈরি করতে চান।

আপনি যদি লিখেন বিশ্লেষণ করে কীভাবে চালের দাম বেড়েছে, আটার দাম বেড়েছে, এটিতে বেশি লোককে কনভিন্স করতে পারবেন না। ম্যাস পিপলকে কনভিন্স করতে হলে ব্যানার বানাতে হবে,

 

২০০০ সাল                     ২০১৮ সাল

চালের দাম ১০ টাকা         চালের দাম ৬০ টাকা

গমের  দাম ১২ টাকা         গমের দাম ৫০ টাকা

আটার দাম ১৫ টাকা       আটার দাম ৭০ টাকা

 

এইভাবে তুলনা করে (ছবিসহ)  আপনি আপনার মেসেজ দিলে তা দ্রুত মানুষের ভেতর চলে যাবে। তারা দ্রুত ধরতে পারবে আপনি কী বুঝাতে চাচ্ছেন। তাদের মনে হবে তারা হাতেনাতে কনভিন্সিং প্রমাণ পেয়ে গেল।

কিন্তু ব্যানারের তথ্যটি  একদিক থেকে ঠিক হলেও মূলত ভুয়া।

কারণ, পণ্যের দাম বছর বাঁই বছর পরিবর্তনের পেছনে অন্য অনেক কারণ থাকে।

আপনি সেসবে যেতে পারবেন না বিজ্ঞাপনে, কারণ গেলে আপনাকে মেসেজ দীর্ঘ করতে হবে। আর দীর্ঘ করলে সেটি সহজটা হারাবে ও লোকের কাছে গৃহীত হবে না।

আমেরিকার গত নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হয়েছেন।

লোকেরা ওই দেশে অভিবাসী পরিসংখ্যান, অর্থনৈতিক নীতি কী হবে, সীমান্ত নীতি কী হবে ইত্যাদি নিয়ে রিপোর্ট শুনতে চায় নি, বিশ্লেষণ শুনতে চায় নি। তারা চেয়েছে সল্যুশন। ডোনাল্ড ট্রাম্প এসে বলেছে, আমি দেয়াল তৈরি করব।

এই কথাটি সহজ, মারাত্মক সিম্বোলিক, এবং এর প্রভাব অনেক তীব্র, কারণ এটি সমাধান দিচ্ছে।

এখন মেক্সিকো বর্ডারে দেয়াল নির্মানের এই কথাটি হাস্যকর। এ নিয়ে প্রচুর হাসাহাসি হয়েছে। অনেক সমালোচনা হয়েছে।

কিন্তু টার্গেট অডিয়েন্সের কাছে মেসেজটা ঠিক ঠাক পৌঁছে গেছে। তারা খাতাকলম নিয়ে হিসাব করতে বসে পড়ে নি যে আসলেই দেয়াল নির্মান করা সম্ভব কি না। বরং তাদের মনে হয়েছে এই সরকার হবে অভিবাসীদের প্রতি অনমননীয়।

ট্রাম্প এই উদ্ভট হলেও, সহজ কথাটির মাধ্যমে তার পলিসি ও নীতি লোকদের ভেতর ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন।

আমি বলছি না এর জন্যই তিনি জিতেছেন। হিসাব এত সহজ কখনোই নয়। কিন্তু এটি রাজনৈতিক প্রচারণা হিসেবে মারাত্মক কার্যকর ছিল।

একইরকম প্রচারণা ভারতীয় জনতা পার্টি করতে থাকে ‘বাংলাদেশী তাড়িয়ে দেয়া হবে’ বলে। এর মাধ্যমে তারা সমর্থন বাড়ায়। মানুষের একটি প্রধান সাইকোলজিক্যাল ভয় হলো অন্যেরা এসে তাদের সুখ সমৃদ্ধিতে যেন ভাগ না বসায়, বা তাদের দুর্দশার কারণ না হয়। এছাড়া, মানুষেরা তাদের সমস্যার একটি ব্যাখ্যা চায়, আর সহজে এই ব্যাখ্যা দেবার উপায় হলো কোন গ্রুপকে শত্রু বানানো, এবং তাদের বলা যে এদের কারণেই আমাদের এতো সমস্যা হচ্ছে।  এই ভয় ট্রিগার করেই মাইনরিটিকে দোষারূপ করে প্রচারণা চালানো হয়। 

আমাদের ব্রেইন সহজতা পছন্দ করে। কোন কিছু বুঝতে বা  করতে সহজ মনে হলে সে এর প্রতি ঝুঁকে যায়। এটি তার ভাল লাগে। কিন্তু করতে বা বুঝতে কঠিন মনে হলে তখন সে ওই জিনিসটি এড়িয়ে চলতে চায়, ওই জিনিস অপছন্দ করে।

এই মানব মস্তিষ্কের ব্যাপারটির নাম হলো ইংরেজিতে কগনিটিভ ইজ।

ফেইসবুক হোমপেইজ স্ক্রল করতে ভাল লাগে কারণ এটি সহজ, কিন্তু একটি গনিতের সমস্যা সমাধান করতে ভাল লাগে না, কারণ এটি কঠিন। (ব্যতিক্রমের কথা বলা হচ্ছে না।)

কগনিটিভ ইজ এর জন্য আপনার প্রচারণার বক্তব্যটি হতে হবে সহজ, হতে হবে ভিজ্যুয়াল। যাতে চট করে মানুষ ধরে ফেলতে পারে।

এই কগনিটিভ ইজ আবার কৃত্রিমভাবেও তৈরি করা যায়। যেমন কোন জিনিস বার বার  দেখানো। বার বার একই  জিনিস দেখতে দেখতে এটি প্রসেস করা মানুষের মস্তিষ্কের জন্য সহজ হয়ে যায়। ফলে এটি তার ভাল লাগে। টিভি বিজ্ঞাপন এজন্যই বার বার দেখানো হয়। শোবিজনেসে সেলিব্রেটিদের ছবিও একই  কারণে বার বার এবং বিভিন্ন জায়গায় দেখানো হয়। তাতে ঐ ব্যক্তির প্রতি পছন্দ তৈরি হয়।

একটা কথা আছে মিথ্যা বার বার বললে সত্যের মতো শোনায়। এর কারণও হলো কগনিটিভ ইজ।

এই নীতির উপর ভিত্তি করেই প্রোপাগাণ্ডা দাঁড়িয়ে আছে।

বার বার একটা কথা শুনতে থাকলে মানুষের ব্রেইন এই কথাটি পছন্দ করতে শুরু করে কগনিটিভ ইজ এর জন্য, এবং পরে সে বায়াসড হয়ে পড়ে এর প্রতি , এবং তার মনে হতে থাকে কথাটি সম্ভবত সত্য।

 

জেতা নৌকা

 

প্রচারণার ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় আপনাকে মনে রাখতে হবে, মানুষ খুবই স্বার্থপর প্রাণী। সে জেতা নৌকাতে উঠতে চায়। এই কারণে আপনি যদি প্রচারণার ক্ষেত্রে যুক্তিতে আপিল করেন, তাহলে লোকে আপনার কথা শুনবে না, যত ভাল কথাই বলেন না কেন। আপনাকে দেখাতে হবে যে, কতো লোক আপনাকে পছন্দ করে। এটি যদি বুঝাতে পারেন, যদি বুঝাতে পারেন আপনি জিততে যাচ্ছেন নিশ্চিত, তাহলে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা লোকগুলি আপনাকেই সমর্থন দিবে।

আর নির্বাচনী প্রচারণার দুইটি মূল উদ্দেশ্য থাকে ধরে নিতে পারেন,

এক – আপনার সমর্থকদের সমর্থনের জন্য গ্রাউন্ড বা যুক্তি দেয়া।

দুই – সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা লোকগুলিকে কনভার্ট করা।

 

আপনার বিরোধী পক্ষের সমর্থকদের কনভার্ট করা টাফ বা প্রায় অসম্ভব। তাই এটি করতে যাওয়া মানে রিসোর্সের অপচয়।

 

পেইন দেখান ও পেইন থেকে বাঁচান

 

আপনি আপনার প্রচারণায় মানুষের ভেতরে অপরাধবোধ জাগ্রত করে একটা পেইন তৈরি করবেন, এবং সেই পেইন থেকে বাঁচার জন্য একটা উপায় তাকে দেখিয়ে দিবেন। সে উপায় এখানে অবশ্যই আপনাকে ভোট বা সমর্থন দেয়া।

নিচের বিজ্ঞাপনটি দেখেন। এখানে খুবই সহজ ছবির মাধ্যমে লোকের অপরাধবোধ জাগ্রত করা হয়েছে। তাদের দেখানো হচ্ছে একটা বিলাসী পণ্য ব্যাগের দাম কতো। এর নিচে বলা হয়েছে একজন মানুষরে খাওয়াইতে কতো খরচ হবে।

বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হয়েছে আফ্রিকান এক জন মানুষের ছবি।

এই বিজ্ঞাপনের পেইন তৈরি অংশ হলো, হ্যান্ডব্যাগের উপস্থাপন, এরকম একজন মানুষের হাতে, কনজিউমারদের অপরাধবোধ তৈরি করে এখানে পেইন দেয়া হয়েছে।

এরপরেই পেইন থেকে বেরোবার, তথা অপরাধবোধ থেকে বাঁচার উপায়ও দেখিয়ে দেয়া হয়েছে। এটি হলো ডোনেট করতে হবে।

অপরাধবোধের পেইন থেকে বাঁচতে, এই অস্বস্থি থেকে বাঁচতে মানুষ ডোনেট করবে।

একইরকম ভাবে অপরাধবোধ তৈরি করে, এবং তার পেইন থেকে বাঁচতে আপনাকে সমর্থন দিতে হবে, এমন একটি জায়গা খোলা রেখে দিন। প্রচারণা হিসেবে এটি কার্যকর হবে।

 

শেয়ারড ভ্যালু’র ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে

 

রাজনৈতিক সমর্থক শেয়ারড ভ্যালুর উপর ভিত্তি করে হয়। কোন ব্যক্তি নিজে কনজারভেটিভ ধ্যান ধারনা পোষণ করে, সে একটি কনজারভেটিভ দলকেই সমর্থন করবে সাধারণত। কারণ তাদের ভ্যালুর জায়গাতে মিল রয়েছে। একইভাবে একজন উদারপন্থী লোক একটি উদারপন্থী দলকে সমর্থন করে থাকে সাধারণত।

প্রচারণার ক্ষেত্রে, প্রতিটি ক্যাম্পেইন এ এই শেয়ারড ভ্যালুর জায়গাটিতে গুরুত্ব দিতে হবে।

আপনি আপনার রিসার্চ টিম দিয়ে বের করুন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে থাকা ভোটারদের ভ্যালুর জায়গা কোন গুলি। বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের শেয়ারড ভ্যালুর ব্যাপারে ডেটা সংগ্রহ করুন। যেমন, হতে পারে রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাদের ধারণা কী, দূর্নীতির ব্যাপারে তাদের মনোভাব কী, ক্রিকেট বা কালচারাল অন্যান্য ব্যাপারে তারা কী ভাবে।

এইসব বের করে, এগুলি আপনার প্রচারণায় ঢুকিয়ে দিন।

এতে, আপনার প্রচারণাটি এইসব ব্যক্তিদের পছন্দ করার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে।

 

আইডেন্টিটি বা আত্মপরিচয়ের সংকটে দিশা দিন

 

প্রচারণার একটা কৌশল হওয়া উচিত নিজের মতাদর্শ ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে সমর্থকদের ও টার্গেট অডিয়েন্সদের আত্মপরিচয়ের সাথে যুক্ত করে ফেলা। আবহমান কাল ধরে এটি রাজনৈতিক দলগুলি ও নেতারা ব্যবহার করে আসছেন।

এজন্য মানুষ রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে তীব্র বিতর্ক করে, মারামারি হাতাহাতি হয়। রাজনৈতিক বিতর্ক খুব দ্রুত শুরু হয়ে যায়। কারণ রাজনৈতিক ভিন্নমত ব্যক্তির আত্মপরিচয়কে আঘাত করে। ঐ দলের বিরুদ্ধে কথা বললে তার মনে হতে থাকে যেন তার নিজের বিরুদ্ধেই কথা বলা হয়েছে। সে সাথে সাথে রিয়েক্ট করে।

মানুষের আত্মপরিচয়ের ব্যাপারটা তার জীবনের মিনিং এর সাথে জড়িত। বাচ্চারাও পর্যন্ত সাহায্য করো বললে যত সাহায্য করে, সাহায্যকারী হও বললে বেশি সাহায্য করে। সাহায্যকারী কথাটি তার আত্মপরিচয় বাড়ায়।

এমন প্রচুর প্রচুর ব্যক্তি আছে, রাজনৈতিক দল তাদের খাওয়ায়ও না, পরায়ও না। এবং, এমন অনেক দেশ আছে যেখানে দেশের সামগ্রিক উন্নতির জন্য রাজনৈতিক দলের সরকার ব্যবস্থার প্রভাব খুবই অল্প। এইসব ক্ষেত্রেও, রাজনৈতিক দলগুলিকে, তাদের মতাদর্শকে প্রচুর মানুষ নিজের আত্মপরিচয়ের সাথে মিলিয়ে দেখে ও তার জন্য প্রাণপাত করে সোশ্যাল মিডিয়ায় বা চায়ের স্টলে।

তাছাড়া, আপনার দলের প্রচারণা এরাই ছড়াবে, নিজ উদ্যোগে, নিজের ডেটা খরচ করে। যদি আপনি তাদের আত্মপরিচয়ের সাথে নিজের দল ও আদর্শকে মিশিয়ে ফেলতে পারেন।

এই আত্মপরিচয়ের দিশা দিতে শেয়ারড ভ্যালু অবশ্যই গুরুত্বপূর্ন একটি জায়গা। এছাড়া, নিজেদের প্রচারণা, বিজ্ঞাপনের ছবি ও ব্যানারে টার্গেট অডিয়েন্সের আত্মপরিচয়ের ব্যাপারে সজাগ থাকুন। আপনার প্রচারণার বক্তব্য অডিয়েন্সের আত্মপরিচয়কে বাড়াচ্ছে কি না, সেই পরিচয়ে মিনিং যোগ করছে কি না?

 

উপসংহারঃ

 

লেখা পড়ে আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন নাজ বা বিহেভিওরাল সাইন্সের ইনসাইটগুলি খারাপ ভাবে ব্যবহৃত হতে পারে। বুদ্ধিমান কোন চয়েজ আর্কিটেক্ট আপনার চয়েজকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, বিশেষত যখন তার কাছে অনেক ডেটা থাকবে বিশ্লেষণ করার জন্য। সাইকোলজিক্যাল এমন অনেক টেকনিক সেই প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে, তবে এখনকার সময়ে ব্যাপারটি মারাত্মক হয়ে উঠেছে ডেটার ব্যাপ্তির কারণে।

এই ব্যাপারে জানাশোনা থাকা তাই যেকোন সচেতন মানুষের জন্য দরকারী। মানুষ সাধারণত প্রাইভেসি বলতে বুঝে মোবাইল নাম্বার নিয়ে গেছে বা ইমেইল নিয়ে যাচ্ছে। এটা মাত্র একটা দিক। এই তথ্যের চাইতে গুরুত্বপূর্ন তথ্য হলো এটি জানা যে আপনি রাতে কয়টায় ঘুমান ও ঘুমানোর আগে কী গান শুনেন। হয়ত ফেইসবুক, ইউটিউব সেই তথ্য জানে।

মানুষের চয়েজের উপরে, তার ওয়ার্ল্ড ভিউ এর উপড়ে পারিপার্শ্বিক পরিবেশের প্রভাব অনেক, তাই ভোটের স্থান কী হবে, এর উপরও মানুষ কাকে ভোট দিবে  বা কোন পলিসি সমর্থন করবে তা প্রভাবিত হয়। যেমন চার্চ ভোটের স্থান হলে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা ভোটাররা কনজারভেটিভ দলকে বেশি ভোট দিতে পারে, আবার ভোটের স্থান বিদ্যালয় হলে ভোট দিতে পারে লিবারেল দলকে বেশি। ২০০৮ সালে আমেরিকার ন্যাশনাল একাডেমী অব সাইন্সে প্রকাশিত ইউনিভার্সিটি অব পেন্সেলভেনিয়ার  ওয়ারটন স্কুলের অধ্যাপক সাইকোলজিস্ট জোনাহ বার্গারের রিসার্চ এই ইঙ্গিত দেয়।