গালি হইল কিছু শব্দ যা মানুষের নির্দিষ্ট কিছু ভাব প্রকাশ করে। সমাজে বিভিন্ন ধরণের গালি মানুষ দিয়া থাকেন।গালি অবশ্যই এক সামাজিক বিষয়। সমাজের নির্মান। তাই এর নানা ধরণের, যেমন ফেমিনিস্ট, শ্রেণীবাদী বা মার্ক্সিস্ট, ফ্রয়েডিয়ান ইত্যাদি বিশ্লেষণ হওয়ার সুযোগ আছে।
এই গালির ব্যাপারে দুইটা ব্যাপার আমাদের মনে রাখা দরকার।
এক- গালি সব সময় অন্য ব্যক্তিরে আক্রমণ করতে সরাসরি হয় না। অন্য আরেকজনের সাথে কথাবার্তা বলার সময় আরেক ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমূহরে নিয়াও মানুষ গালি দেন। অথবা নিজে নিজে কথা বলার সময়ও গালি দেন। যেমন একটা স্ট্যাটাস দেইখা আপন মনেই বইলা উঠলেন খানকির পোলায় লেখছে কী!
দুই- গালি সবসময় আক্ষরিক অর্থে হয় না। অর্থাৎ, আপনি আরেকজনরে গাইল দিলেন কুত্তার বাচ্চা। আপনি নিজে যান সে কুত্তার বাচ্চা না। সেও জানে সে কুত্তার বাচ্চা না। এক্ষেত্রে গালিটি আক্ষরিক না বরং গালি হিসেবেই তার আলাদা অবস্থান। এই গালির বিপরীতে রিয়েক্ট করতে হবে এমন শিইখ্যা আসছেন ঐ ভদ্রলোক, তো তিনি তাই সাথে সাথেই রিয়েক্ট করেন।
সত্যিকার অর্থে গালি হইল এক ধরণের মিথ্যা অপবাদ। যে কুকুরের ছানা না, দিনের আলোর মত পরিস্কার এক মানুষের বাচ্চা, তাকে কুত্তার বাচ্চা বললে মিথ্যা অপবাদই দেয়া হয়।
গালি তত্ত্বে আরেকটা জিনিস ভাবার মতো। যেসব বাচ্চাযুক্ত গালি আছে, যেমন কুত্তার বাচ্চা, শুওরের বাচ্চা, খানকির পোলা, মাগীর পোলা, চুতমারানির পোলা, পুংগীর পোলা- এইসব গালির নিহিতার্থে আসলে যাকে গালি দেয়া হইতেছে, ঐ ব্যক্তিরে সমাজ থেকে এক্সক্লুড করা হয়।
যে মাগির পোলা বা খানকির পোলা তার মূল সমস্যা হইল যে তার বাপ কে তা হয়ত জানা যায় না। অর্থাৎ সে সামাজিক হিসাবে জারজ। মূলত এই পোলাযুক্ত গাইলের মাধ্যমে ‘তুই আমাদের সমাজের বাইরের বা জারজই’ বলা হয়।
শুওরের বাচ্চা, কুত্তার বাচ্চা গাইলও একই। এখানেও ব্যক্তিরে সমাজের বাইরের কেউ বলা হয়।
অনেকে ভাবতে পারেন মা তুইলা গালি দিচ্ছে এখানে, কিন্তু আসলে মা বাপরে তুলতেছে ব্যক্তিরে সমাজের বাইরের তথা সমাজ থেকে এক্সক্লুড করতেই।
তো এইসব গালি অতি প্রচলিত। এগুলিতে মানুষ রিয়েক্টও করেন, তাই এগুলি বেশী প্রচলিত হইছে।
মানুষের একটা ভয় আছে সমাজ থেকে যেন কেউ তারে এক্সক্লুড না করে। মানুষরে যে সামাজিক প্রাণী বলা হয়, কারণ তার মধ্যে ইন বিল্ট টেন্ডেন্সি সে সমাজের বাইরে গেলে আগেকার জঙ্গলী সমাজে টিকে থাকতে পারত না। সমাজের বা গ্রুপের বাইরে যাওয়া মানে মৃত্যু ছিল তার জন্য।
এই সমাজবিচ্যূত হবার সময় মানুষের সব চাইতে বেশী। এই ভয়ের জন্যই মানুষের নৈতিকতা ডেভলাপ করছে, মানুষের নলেজ এবং কথাবার্তাও এই ভয়রে কেন্দ্র করে চলে। সমাজের অন্যের কাছে যেন সে খারাপ বলে পরিগণিত না হয় এটা সে চায়।
মানুষের এই সমাজ বিচ্যূতির মারাত্মক ভয় যেহেতু ভেতরে থাকে, তাই সে এইসব সমাজ থেকে তারে বিচ্যূত বা এক্সক্লুড কইরা দেয়া গালিগুলিতে রিয়েক্ট কইরা আসতেছে, অনেক অনেক দিন ধরে।