সেলফ কী

এক 

প্রাচীনকালে আমরা দেখতে পাই, জ্ঞানীদের এবং রেনেসাম্যানদের, যাদের অনেক বিষয়ে আগ্রহ ছিল। অনেক বিষয়ে তারা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে গেছেন। বর্তমানকালে জ্ঞান বিজ্ঞানের অগ্রগতির কারণে এরকম দেখা যায় না, এখন এক বিষয়ে এক্সপার্ট দেখা যায়, স্বাভাবিক কারণেই। 

কিন্তু, আমার আগ্রহ ক্ল্যাসিক্যাল ও রেনেসাম্যানদের প্রতি। তাদের কাজ কর্ম লাইফ আকর্ষণ করে। অনেক বিষয়ে আমার আগ্রহ আছে, ও সেই বিষয়ে আমি জানতে চাই ফলে এক বিষয়ে এক্সপার্ট বিষয়ক জ্ঞানের চাইতে প্রাচীন জ্ঞানীদের এপ্রোচেই ভরসা। 

প্রাচীন এইসব জ্ঞানীরা যে সব বিষয়ে এক্সপার্ট লেভেলের জ্ঞান রাখতেন, এমন আসলে না। তারা ব্যাখ্যা করার মত জ্ঞান অর্জন করতেন, এবং যেহেতু তাদের আগ্রহ ছিল জেনুইন, ফলে সব ব্যাখ্যা মিলে তারা দুনিয়া সম্পর্কে যে গ্র্যান্ড ব্যাখ্যা বুঝতে পারতেন, তা হত বেশি সত্যের কাছাকাছি। 

দুই 

মিশেল ডি মন্টেইন (১৫৩৩-১৫৯২), ষোল শতকের শেষদিকের দার্শনিক। তিনি ৩৮ বছর বয়সে সব জনকর্ম থেকে অবসর নিয়ে পড়া আর চিন্তায় মনোনিবেশ করেন। তিনি তার লাইব্রেরী কাঠের থামে তার প্রিয় লেখকদের বানী খোদাই করলেন, আর বাকি ২০ বছরের বেশিরভাগই ব্যয় করলেন পড়ায় লেখায় ও চিন্তায়। তিনি তার চিন্তাগুলি লেখায় প্রকাশ করতেন, যেগুলার নাম দিয়েছিলেন এসেইস। যাকে এখন আমরা ইংরাজিতে এসে আর বাংলায় প্রবন্ধ বলে থাকি। এসেইস এর অর্থ হচ্ছে ট্রায়াল বা এটেম্পমট। 

অর্থাৎ, এই যে লেখাগুলি, অর্থাৎ এসে, এগুলি আসলে নিজের সাথে কথা বলা। এগুলি চিন্তা, লেখতে লেখতে চিন্তা করা। এসে সত্য না, নির্দিষ্ট সত্য না, বরং ট্রায়াল বা বিভিন্ন এটেম্পট নিয়ে চিন্তা করা বা সত্যের কাছাকাছি যাওয়া। 

সত্য বহন করে পাঠকের কাছে নিয়ে যাওয়া না। বরং বিভিন্ন ট্রায়ালের মাধ্যমে চিন্তা করা, ও প্রকাশ করা, যা পাঠকের মধ্যে একই ট্রায়াল ও ভাবের তৈরি করে, ফলে সত্যের কাছাকাছি যাওয়া তার পক্ষে হয়ত সম্ভব হবে। যেমন লেখতে লেখতে লেখকের সত্যের কাছাকাছি যাওয়া হয়ত সম্ভব হবে। 

এসের যে আর্ট ফর্ম, যে আর্ট ফর্মের আধুনিক নির্মাতা মন্টেইন, সেই সূত্রধরে আমার উপরোক্ত ব্যাখ্যা। আমার লেখাগুলিকে আমি এমনই দেখি। 

তিন 

যখন পাথরটা ছিল, তখন থেকেই মিকেলেঞ্জেলোর মাথায় ডেভিডের অস্তিত্ব ছিল। মিকেলেঞ্জেলো যখন পাথর কেটে বানানো শুরু করলেন তখন তিনি ঐ ডেভিডের রূপই মূর্ত করে তুললেন, যা আগে তার মধ্যে ছিল। সেই অর্থে তিনি পেছন থেকে কাজ করলেন।

আগে থাকে গাছ। বীজের মধ্যেই। বীজ সেই গাছের আকর্ষনেই গাছ হয়, বড় হয়, ও ভবিষ্যতের গাছকে স্পর্শ করে।

মানুষের ভেতরে থাকে তার আইডিয়াল রূপ, যেটা হলো সেলফ। প্রাত্যহিক কর্মের মাধ্যমে সে ওইটার দিকেই ধাবিত হয়।

আগে হয় ভবিষ্যৎ, তার পরে, বর্তমান থেকে সেই ভবিষ্যতে যাত্রা, যেন অতীত থেকে যাচ্ছে ভবিষ্যতে।

অর্থাৎ, আমরা যেটাকে সেলফ বলি, বা আমি বলি, সেটা কী? 

ধরা যাক, করিম একজন লোক, সে মনে করে সে একজন সৎ লোক, মিথ্যা বলে না, খারাপ কাজ করে না, অন্যায়ের প্রতিবাদ করে। 

করিমের এই মনে করা হল তার কল্পনা, এটাই তার সেলফ। সেলফ কাল্পনিক। যখন করিমকে কেউ ঘুষ দিতে যাবে, তখন করিম নিজের কাছে নিজে ছোট না হতে চেয়ে ঘুষ খাবে না। যদি তার সেলফ শক্তিশালী হয়। বা কোন অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করবে। না করলে তার খারাপ লাগবে। কেন খারাপ লাগবে? কারণ সে তার সেলফের সাথে কনসিসটেন্ট থেকে আচরণ করে নি। 

বা অন্যভাবে ভাবা যায়। দুইজন পার্টনারের মধ্যে একজন আরেকজনের বেস্ট কল্পনা করে নিবে। এই বেস্ট কল্পনা করে নিয়ে তারা ভাববে যে তারা লাকি কারণ এমন একজনকে বিয়ে করতে পেরেছে। এরপর, সেই কাল্পনিক বেস্ট ভার্সনের দিকে সে তার পার্টনারকে যেতে সাহায্য করবে। 

বা, একজন শিক্ষক বা বাবা মা তার সন্তানের বেস্ট কল্পণা করে নিবে। এতে বিশ্বাস করবে। এবং সে ছাত্র বা সন্তানকে ঐ বেস্ট ভার্সনে যেতে সাহায্য করবে।