পিটার থিয়েল পেপালের সহ প্রতিষ্ঠাতা, এবং ফেইসবুকের প্রথম বাইরের ইনভেস্টকারী, এবং সিলিকন ভ্যালির একজন ‘বিগার দ্যান লাইফ’ ক্যারেক্টার। এই বিলিনিয়ার ইনভেস্টর অনেক সময়ই বিতর্কিত হয়ে উঠেন তার চিন্তার জন্য। তার বই জিরো টু ওয়ান ইন্টারনেট প্রযুক্তি নির্ভর বিজনেসদের জন্য অবশ্য পাঠ্য বলে বিবেচীত হয়। ফরাসি-আমেরিকান দার্শনিক রেনে জিরার্দ দ্বারা খুবই শক্তভাবে প্রভাবিত হয়েছে তার চিন্তাজগত। তিনি রিপাবলিকানদের সমর্থক এবং গত আমেরিকান ইলেকশনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন করে বেশ তর্ক বিতর্কের সূচনা করেন।
তার সাম্প্রতিক একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে Die Weltwoche এ। এই সাক্ষাৎকারের গুরুত্ব বিবেচনা করে সাইটে শেয়ার করা হলো। পুরো সাক্ষাৎকারের লিংক নিচে দিয়ে, কিছু অংশ বাংলা অনুবাদ করে দিলাম। এসব জায়গায় তিনি কথা বলেছেন কেন তিনি হার্ড বা উন্মত্ত জনতার চিন্তা বা মতের বিরুদ্ধে থাকেন। মূলত তার এই ভীড়ের বিরুদ্ধে থাকাটি মারাত্মকভাবে দার্শনিক রেনে জিরার্দের কাজ দ্বারা প্রভাবিত।
ভীড়ের উন্মত্ত ভেড়াসুলভ (হার্ড লাইক) আচরনের কঠিক সমালোচন ছিলেন আপনি। ১৯৮৫ সালের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের ডাইভারসিটি মিথ নিয়ে বই লিখেছিলেন। যেখানে লোকজনকে নির্বাচন করা হয় তারা দেখতে ভিন্ন এইজন্য কিন্তু শিক্ষা দেয়া হয় এমনভাবে যেন তারা একইভাবে চিন্তা করে।
থিয়েলঃ হ্যা, বৈচিত্র বেশী হওয়া উচিত ছিল চিন্তার, দেখতে বৈচিত্র নয়। বুদ্ধিবৃত্তিক বৈচিত্রকেই আমাদের গুরুত্ব দেয়া উচিত। উপরি বৈচিত্র যেগুলি ঐ স্টার ওয়ারসের স্পেইস ক্যান্টিনে দেখা যায় এমন বৈচিত্র নয়।
আপনি আপনাকে কন্ট্রারিয়ান (যে জনসাধারণের মতের বিরুদ্ধে) বলেন। কীভাবে আপনি তা হলেন? কীভাবে একজন লোক কন্ট্রারিয়ান হতে পারে?
থিয়েলঃ এই লেভেলটা আমাকে দেয়া হয়েছে, সাধারণত আমি নিজেকে এটা বলি না। আমি মনে করি না কন্ট্রারিয়ান হওয়াটাই ঠিক। একজন আদর্শ কন্ট্রারিয়ান লোকেরা যা চিন্তা করে সব সময় তার বিরুদ্ধে যায়। কিন্তু আমি মনে করি না জিনিসটা এতোই সোজা। আমি যা মনে করি গুরুত্বপূর্ন তা হলো, একজন মানুষের উচিত নিজের জন্য নিজে নিজে খুবই চিন্তা করা। আর হ্যা, এটা ঠিক যে, সব উন্মাদপ্রায় ক্রাউড, ম্যাস ফেনোমেনা ইত্যাদিকে আমি অবিশ্বাস করি, এবং আমি মনে করি এটা প্রচুর হয়।
একটি এনলাইটেড সমাজে কেন এটা হয় বা হচ্ছে?
থিয়েলঃ ২১ শতকের শুরুর প্রযুক্তিগত ভাবে উন্নত সমাজ এতই জটিল যে এখানে প্রত্যেকের নিজে নিজে সব বিষয়ে চিন্তা করা অসম্ভব। আপনি একজন পলিম্যাথ হতে পারবেন না যেটা আঠারো শতকে সম্ভব ছিল। আপনি গ্যেটের মত হতে পারবেন না। তাই এক্সপার্ট বা বিশেষজ্ঞদের শুনতে হয় সাধারণ লোকদের। এবং এটার বিপদ হতে পারে যখন এতই বেশী বিশেষজ্ঞদের মতের গুরুত্ব থাকে যে, লোকেরা নিজেরা ক্রিটিক্যালি চিন্তা করা বন্ধ করে দেয়। সিলিকন ভ্যালিতে এটা হচ্ছে। এর নিশ্চয়ই কোন দূর্বল জায়গা আছে যার জন্য নব্বইয়ের দশকে ডট কম বাবল হয়েছিল বা গত শতকের ক্লিনটেক বাবল।
এর মূল কী?
থিয়েলঃ অনেক ব্যবসা আছে এখানে যার নিজেকে প্রমাণ করতে অনেক বছর লাগে। কাজ করছে কি না এ নিয়ে খুব দ্রুত মতামত আপনি পাবেন না। তাই আপনি অন্য লোকদের মতামত খুজেন। আর আপনি যদি প্রচুর সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সমর্থন পেয়ে যান, তাহলে আপনি জোরেসোরে চিন্তা করা বন্ধ করে দেন যে এটা নিয়ে শুরু করা ঠিক না ভুল হবে।
আপনি ইলন মাস্কের বন্ধু, তার সাথে পেপালের কো-ফাউন্ডার ছিলেন। আপনাদের দুজনের কোন দার্শনিক চিন্তার মিল আছে?
থিয়েলঃ আমাদের কিছু প্র্যাক্টিক্যাল দর্শন চিন্তায় মিল আছেঃ যেমন ছোট ছোট গ্রুপ করে কাজটা করে নেয়া, যেমন স্টার্টাপের মাধ্যমে।
ইলন মাস্কের সবচাইতে অসাধারণ গুণটি কি?
ইলন মাস্কের অসাধারণ ক্ষমতা আছে অন্যদের অনুপ্রাণিত করার। সে যে কাজ করছে এর জন্য অন্যদের প্রচুর সহযোগীতা দরকার। তার এই গুণের খুবই দরকার, কারণ সে একা সব করতে পারবে না।
চীনের সাথে সমস্যাটা কী?
থিয়েলঃ চীনের রপ্তানি করতে প্রচুর কর দিতে, ব্যবসার ক্ষেত্রে বাঁধা, আভ্যন্তরীন নিয়ন্ত্রণ, বুদ্ধিবৃত্তিক প্রোপার্টি চুরি, ইনভেস্ট করতে গেলে অতিরিক্ত নিয়ম কানুন – চীনে ইনভেস্ট করা অনেক কঠিন।
——
চীনের সাথে ব্যবসা বিষয়ক এই অংশটি গুরুত্বপূর্ন কারণ ব্রেটন উডস চুক্তি পরবর্তী বিশ্বের ইঙ্গিত দিচ্ছে চীনে পণ্য রপ্তানী এবং ইনভেস্ট জনিত এইসব বাঁধা। যা নিয়ে আলোচনা করেছেন পিটার জেইহান তার এক্সিডেন্টাল সুপারহিরো বইতে। বইটি নিয়ে আমি লিখেছি এই সাইটে, আগামীর বিশ্ব বাণিজ্য ও সুপারপাওয়ার আমেরিকার ভবিষ্যত।
পুরো ইন্টারভিউয়ের লিংকঃ Interview of the Week: Peter Thiel “Hypnotic Mass Phenomena”