এটা হলো প্রশ্নোত্তর পোস্ট। অর্ক এই দুইটা প্রশ্ন করেছেন। তাকে ধন্যবাদ।
১। বাংলাদেশের এভারেজ মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি এত তলানিতে যে তুলনামূলকভাবে সামান্য অগ্রসর মানুষের মনেও অহম জন্ম নিতে পারে। অথচ সত্যিকার হিসেব ধরলে আসলে ‘ভেড়ার মাঝে বাছুর পরামাণিক’ টাইপের বিষয় ঘটছে; ডেভেলপমেন্টের জন্য কোথাও সুপেরিয়র ফিল করা মাত্র’ই যেখানে নিজেকে ইনফেরিয়োর ফিল করা যায় সেখানে ছোটা জরুরি—ক্যালটেকের ওই গণিতজ্ঞের মতো যে নিজের সার্কেলে সুপেরিয়োর ফিল করার পর ফিজিক্সের লোকেদের টেবিলে লাঞ্চ করতে বসেছিলো।
এভারেজ মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি এভারেজই হয়, সম্ভবত প্রায় সবখানেই। তবে কালচারাল ইফেক্ট থাকে। যেমন প্যারিসের এভারেজ লোকের বুদ্ধি আর ঢাকার এভারেজ লোকের বুদ্ধি এক হবে না।
একজন কিউরাস ও বুদ্ধিমান মানুষ খুব অল্প বয়সেই আসলে ধরতে পারে সে বুদ্ধিমান। তখন তার সবচাইতে বড় পিটফল হলো নিজেকে সুপিরিয়র ফিল করে আত্মতৃপ্তিতে ভোগা। এটা মারাত্মক সমস্যা।
বাঙালীদের মধ্যে এটা বেশি দেখা যায়। কারণ তারা অন্যের কাছে শিখতে চায় না সংস্কৃতিগত কারণে। খুব সম্ভবত এখানে বিশ্বাস ও আস্থার অভাব কাজ করে। বাংলাদেশীদের পারস্পারিক আস্থা খুবই কম। আকবর আলি খানের রিসার্চ আছে এ নিয়ে।
আরেকটা কারণ ভৌগলিক বা ভূ-প্রাকৃতিক। প্রাকৃতিক দূর্যোগ হতো এ অঞ্চলে প্রতিবছর। ফলে মানুষের লং টার্ম চিন্তা গ্রো করে নি। এছাড়া জমি খুবই উর্বর হওয়ায় অল্প পরিশ্রমে প্রচুর ফসল হতো। এর কারণে ভোগবাদী প্রবণতা বেশি। লাইফের ডিপ মিনিং জনিত কোন আকাঙ্খা এতদঞ্চলের মানুষের নেই। এজন্য পরকাল পন্থী ধর্ম ইসলাম ইহকালপন্থী লোকায়ত রূপ ধারণ করেছে এখানে। যেমন, মাজারে শিন্নি দেয়া, মানত করা। এগুলি মানুষ করে হাতে হাতে ফল লাভের জন্য। এবং হিন্দু ধর্মেরও লোকায়ত রূপ এ অঞ্চলে। কট্টর নর্থ ইন্ডিয়ান রূপ দেখা যায় নি।
তাই, ভোগবাদ, লং টার্ম চিন্তাবিমুখতা, পরিশ্রমহীনতা, আস্থার অভাব এসব বৈশিষ্ট্য প্রকৃতিগত ভাবে থাকার কারণে, অপেক্ষাকৃত বুদ্ধিমান ব্যক্তিও শিখতে চায় না।
বুদ্ধিকে প্রাকৃতিক জিনিস ধরলে, গ্রোথ মাইন্ডসেট অতটা প্রাকৃতিক না। গ্রোথ মাইন্ডসেট হলো মনে করা যে নিজের চিন্তা বুদ্ধিবৃত্তি ডেভলাপ করা যায়। এটি ফিক্সড কোন বিষয় নয়। এবং সকল সময় ডেভলাপ করার জায়গা থাকে। চর্চার মাধ্যমে গ্রোথ মাইন্ডসেট অর্জন করা যায়।
তো, একজন বুদ্ধিমান মানুষের জন্য প্যাথেটিক পরিণতি হলো তার সুপিরিয়র ফিল। এটি এক্সট্রিম পর্যায়ে যেতে পারে। তখন মানুষ নিজেকে গড ভাবার ডিল্যুশনে পর্যন্ত যেতে পারে, যেটি আমি কয়দিন আগে একজনের দেখেছি।
এই পিটফল থেকে বাঁচার উপায় হলো, গ্রোথ মাইন্ডসেটকে গুরুত্ব দেয়া। এটি বাড়ানো। এটা একটা সিস্টেম। এই সিস্টেম তৈরি করতে পারলে ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন।
নিজেকে আশপাশের মানুষের একজন না ভেবে দুনিয়ার একজন ভাবা। ইন্টারনেটের কারণে দুনিয়ার সব ব্রাইট মানুষদের সংস্পর্শ পাওয়া এখন সম্ভব। ফলে, রুমের স্মার্ট ব্যক্তি হলে রুমেই থাকতে হবে এমন কথা নেই, এমন আবদ্ধ থাকতেই হবে এই বাস্তবতাও নেই।
আশপাশের মানুষ যারা আছে, যেমন বন্ধুবান্ধব, এরাও যে বুদ্ধিমান লোককে পছন্দ করবে এমন নয়। লাইফের এটা ট্রুথ, মানুষ এভারেজ মানুষ পছন্দ করে। কারণ এতে তার ইগো আহত হয় না।
এসব মেনে নিতে হবে। এটা তার বা তাদের ন্যাচারাল জিনিস। এর থেকে বেরোতে পারলে তো সে বুদ্ধিমানই হয়ে উঠত।
‘ভেড়ার মাঝে বাছুর পরামাণিক’ বা ‘বামনের দেশে অতিকায়’ এই ফিল আসলেও এখানে কোন সমস্যা নেই, বরং ভালো, যদি আপনার গ্রোথ মাইন্ডসেট থাকে। তখন আপনার বুঝ থাকবে যে কারা ভেড়া বা বামন। এই বুঝ থাকলে আপনি সুপিরিয়র ফিল করবেন না অভারল দুনিয়ার প্রেক্ষাপটে। ভেড়াদের মাঝে বা বামনদের মাঝে আপনি অতিকায় বা তা হবার চেষ্টা অব্যাহতই থাকতে হবে, যদি আপনি তা হতে চান। এটি অহম নয়, বাস্তবতা বুঝা।
একজন বুদ্ধিমান মানুষের সমাজ আসলে জীবীত ও মৃত সব বুদ্ধিমান মানুষদের সাথে। শেক্সপিয়র, চমস্কি, আইনস্টাইন, সক্রেটিস, পল গ্রাহাম, অভিনাশ কৌশিক এদের সমাজের একজন যখন আপনি, তখন ডিপ সেন্সে আপনার ঐ সমাজে সুপিরিয়র ফিল আসবে না। আসলে শুরু থেকেই আপনি ভুল ধারণা নিয়ে আছেন নিজের সম্পর্কে।
আমি আমার বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখেছি একজন গ্রোথ মাইন্ডসেটের মানুষ আরেকজন গ্রোথ মাইন্ডসেটের মানুষের সাথে মিশলে তারা লং টার্ম সম্পর্কে চলে যায়। তারা কানেক্টেড থাকে। এর কারণ হলো তারা যা করছে বা পড়ছে তা শেয়ার করার মত লোক নাই আশপাশে।
এটি আগেও ছিল। সক্রেটিসের পাশে বা আরো অনেক দার্শনিকের পাশে কত লোক ছিল। সবাই তাদের দিকে আকৃষ্ট হয় নি, তাদের গুরুত্বও দেয় নি। গুরুত্ব দিয়েছে কেবল বুদ্ধিমানেরাই। যাদের অনেকে হলেন অন্য দার্শনিক। পৃথিবীর এটা নিয়ম।
২। অনেকদিন আগে একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম, জ্যাক অফ অল ট্রেডস, কিং অফ নান—জাতীয় মুশকিলের সুরাহা কী…তা সে যা হোক, নিজের স্ক্যাটার্ড ক্রিয়াকলাপের নিরিখেই প্রশ্নটা করা। এই স্ক্যাটারড থাকা নিয়ে আক্ষেপ যেমন ছিলো, তেমনই ভালো লাগার জায়গাও ছিলো কারণ রিলেট করতে পারার সুবিধাটা পাই, ব্রড ভিউয়ের লোভটা আছে। পরে আপনার এক আর্টিকেলে ‘জেনারালিস্ট’ টার্মটা চোখে পড়ার পর নিজের তরিকা নিয়ে এক রকম আত্মপ্রসাদের জন্ম নেয়। (আত্মপ্রসাদ খারাপ নিঃসন্দেহে) তবে, এইখানে কি হিসাবের কোনও ভুল যাচ্ছে মনে করেন?
বুদ্ধিমান মানুষের আরেকটা পিটফল হচ্ছে সে যেহেতু কমন পিপলদের দূর্বলতাগুলি ও অল্পবুদ্ধিগুলি ধরতে পারে তাই তার মনে হয় যে, সে খুব সহজেই সফল হতে পারবে। পরিশ্রম তার করতে হবে না।
কিন্তু এখানে ভুল হয়। কারণ দুনিয়া কমন পিপলদের সিস্টেম। এখানে আপনি বুদ্ধিমান হলেও আপনারে তাদের সিস্টেমের ভিতর দিয়ে খেলায় প্রবেশ করতে হয় বা সুবিধাজনক জায়গায় যেতে হয়।
আপনি যতই বুদ্ধিমান হোন, জব ইন্টারভিউতে কাজের প্রুফ চাইবে ৯৯.৯৯% রিক্রুটার। আপনি যদি ভেবে বসে থাকেন রিক্রুটার বুদ্ধিমান হবে, আর কথা বলেই ট্যালেন্ট ধরতে পারবে, তা হবে ভুল ভাবনা।
বিভিন্ন জিনিসে আগ্রহ থাকলে যে সমস্যাটা হয়, কোনদিকেই মনযোগ ধরে রাখা যায় না বেশি সময়। ফলে, আপনার কাছে প্রুফ আসে না। প্রুফ আসতে সময় লাগে ও লেগে থাকতে হয়।
আমার ধারণা এটা মাল্টি ডিসিপ্লিনারি নলেজ এপ্রোচ যারা চর্চা করেন বা যারা এক্সপার্ট জেনারালিস্ট হতে চান তাদের মূল সমস্যা। কারণ, ধরা যাক ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রফেশনে এগুলি কাজে দিবে, কিন্তু অন্যের হয়ে কাজ করতে গেলে আপনার তাকে বুঝাতে সমস্যা হবে যে আপনি কী জানেন, বা আপনার চিন্তা কেমন।
এখানেও কমন পিপল সিস্টেম, যে আপনার বস সেও কমন পিপল হতে পারে।
এই সমস্যা কাটাতে কোন এক ফিল্ডে স্কিলড হতে হবে। যাতে আপনার কাছে দেখানোর প্রুফ থাকে। শর্ট টার্মে (জব ইত্যাদি) এটার দরকার। কিন্তু লং টার্মে অলওয়েজ মাল্টি ডিসিপ্লিনারি এপ্রোচ আপনাকে এগিয়ে রাখবে।
আপনি মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে কাজ করলেও দেখবেন, হিউমেন রিসোর্স ম্যানেজ করতে হচ্ছে, ব্যবসার নানাদিক বুঝতে হচ্ছে খালি এড ক্যাম্পেইন ম্যানেজ, কন্টেন্ট ম্যানেজ করে হচ্ছে না। মাল্টি ডিসিপ্লিনারি নলেজ ওলয়েজ আপনাকে ভেড়াদের সমাজে আলাদা আইডেন্টিটি দিয়ে রাখবে।
আরো কিছু সমস্যা,
আপনার আন সাকসেসফুল হবার সম্ভাবনাও আছে কারণ আপনি থিংকিং বেইজড, যেখানে কমন পিপলের দুনিয়া হলো ফিলিং বেইজড।
সমাধান হলো ফিলিং বেইজড দুনিয়াকে বুঝা।
পরিশ্রমের কথাটা আগেই বলেছি। পরিশ্রমকে না গুরুত্ব দেয়া একটা বড় সমস্যা।
সমাধান হলো পরিশ্রমকে গুরুত্ব দিতে হবে যদিও জানেন দুনিয়া অনিশ্চিত। পরিশ্রমের বিকল্প নাই।
কমন পিপল আপনার এনিমি। এরা নানাভাবে আপনাকে প্রেশারে রাখতে পারে। যেমন তারা আশা করবে আপনি টপ পারফরমার হোন। কিন্তু সব ক্ষেত্রে এটা সম্ভব না। অন্য সবার মতই আপনার দূর্বলতা ও নিরাপত্তাহীনতা আছে।
সমাধান হলো নিজের সকল কিছু মেনে নিন। অন্যদের এক্সপেক্টেশনের প্রেশার নিবেন না। কোন আনরিয়ালিস্টিক আশা আপনারে পূরণ করতে হবে এমন কোন প্রেশার নেই। এটা না থাকলেই আপনি ফেইলারের ভয় থেকে বের হবার রাস্তা পাবেন।
আপনার শত্রু কমন পিপলরা তাদের বুঝ দিয়ে আপনারে বিচার করবে। এতে মর্মাহত বা হতাশ হবার কিছু নেই। আপনি কিছু শিখলে যখন শেয়ার করবেন বা এ নিয়ে বলবেন, তারা ভাববে আপনি দেখাচ্ছেন, শো অফ। কিন্তু তাদের এই ভাবনাকে গুরুত্ব দেবার কিছু নেই। তাদের চিন্তা আপনার নিয়ন্ত্রণে নেই। আপনি আপনার কাজ করে গেলে আরো বুদ্ধিমান লোকেরাই আকৃষ্ট হবে। আপনি আসলে সবার জন্য দিচ্ছেন না, যারা বুঝার তারা বুঝবে।
আপনার অভারথিংকিং করার অভ্যাস থাকবে। এটি হলো একটা জিনিসকে নানাভাবে নানাদিক থেকে ভাবা। চর্চা করলে অসাধারণ একটি থিংকিং টুল, সেকন্ড অর্ডার থিংকিং আপনার আয়ত্ত্বে চলে আসবে। ফলে কোন ঘটনা আপনি সেকন্ড অর্ডারে গিয়ে অন্যভাবে দেখবেন। এটি কমন পিপল, তাদের সমাজ ও বুদ্ধিজীবীদের কাছে অচেনা। ফলে, তারা আপনাকে ভুল বুঝতে পারে।
কখনো অভারথিংকিং আপনার মেন্টাল পিস নষ্ট করতে পারে। আপনি কমন পিপলের অপ্রকাশিত মোটিভ, স্বার্থ, ছোটলোকি ইত্যাদি সহজেই ধরতে পারবেন, ফলে এরা আপনার আত্মীয় বা নিকটজন হলে এটি আপনাকে হতাশ করতে পারে।
সমাধান হলো, দূরে থাকা। এদের নিয়ে বেশি না ভাবা। এদের বিভিন্ন মানব সাইকোলজির পরীক্ষা সাবজেক্ট জ্ঞাণ করা, যেন তারা ল্যাবের গিনিপিগ, আর এসব করে আপনাকে সাইকোলজি বিষয়ক ইনসাইট দিয়ে যাচ্ছে।