রেইপের ক্ষেত্রে পোষাকের আলাপটি হচ্ছে একেবারে অল্পবুদ্ধিদের আলাপ। যারা পোষাককে দায়ী করে, এবং যারা কেবল এই দায়ী করাদের বিরোধীতাকেই রেইপ নির্মূলের উপায় মনে করে এরা হচ্ছে একটি অল্পবুদ্ধি কয়েনের এপিঠ ওপিঠ।
রেইপ একটি পাওয়ার ক্রাইম। ক্রাইমের নানা কারণ থাকে সামাজিক, অর্থনৈতিক। রেইপের ক্ষেত্রে সেসবের সাথে সাথে মূল ব্যাপারটা হচ্ছে অন্যায় ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। কোন ক্ষমতাবান লোকের মেয়ে রাস্তায় বের হলো ধরা যাক ছোট পোষাক পরিধান করে, এলাকার লোকেরা জানে তাকে রেইপ করা যাবে না, করলে নির্ঘাত নিজের মৃত্যু ডেকে আনা। সারভাইভাল সচেতন লোকেরা তাই এ কাজ করবে না।
কোন সমাজে রেইপ আমাদের দেখায় নারীরা খারাপ অবস্থায় আছে সামাজিক ভাবে, বিচারহীনতা চলছে, দুর্নীতি চলছে, ক্ষমতা অপব্যবহার চলছে, এবং নির্যাতীতরা বিচার পাচ্ছে না। একসময় এসিড সন্ত্রাস ছিল। সরকার কঠোর শাস্তি চালু করায় তা উঠে গেছে।
রেইপের জন্য যারা পোষাককে দায়ী করে এরা একটি অপরাধকে উৎসাহিত করে, সমর্থন করে। যে অন্যায় সংঘটিত হয়েছে তার বিচার দাবী না করে তারা ভোক্তভোগীর দোষ দেখতে যায়।
যে যুক্তিতে তারা এইরকম মূর্খ আচরণ করে সেটি হলো ছোট পোষাক পরিধান করে নারীরা চললে পুরুষেরা উত্তেজিত হবে যৌনভাবে। কিন্তু, এই মূর্খরা বুঝে না যে সামাজিক নিয়মের ভেতরে থাকা এবং বাইরে থাকা পোষাক পরে কেউ হাঁটলে তাকে আঘাত করা, নির্যাতন করা বা রেইপ করার অধিকার কারো কখনো জন্মে না।
আর এই যুক্তি যারা দেয় এদের বিরুদ্ধে গিয়ে যারা এই যুক্তিটির বিরোধীতাকেই রেইপ সমস্যার প্রধান বিষয় রূপে আনে, এতে সত্যিকার সমস্যা পাওয়ার ক্রাইম রেইপ আড়ালে চলে যায়। ফলে, এরা তাদের বিরুদ্ধ পক্ষের বিরুদ্ধেই যুক্তি টুক্তি দেয়, এবং অন্যায় নির্যাতন রূপীকে রেইপের আরেক সহায়ক শক্তি রূপে আবির্ভূত হয়, কেন্দ্রকে সরিয়ে নিয়ে ভুল বিতর্ক তৈরী করে।
একবার এক নারীকে টাইট হিজাব ছাড়া বোরকা পরিয়ে ইরানের শিরাজ শহরের ব্যস্ত রাস্তায় রাখা হলো। সেই সোমবারে ১০০০ গাড়ি পাস করার কালে ২১৪ জন ড্রাইভার তাকে এসে লিফট দিতে চাইল।
এরপরের সোমবারে একই মহিলাকে একই জায়গায় আবার দাঁড় করানো হলো। এবার বোরকার সাথে চাদর, ভালো ভাবে ঢাকা শরীর। দেখা গেল ১০০০ গাড়ি পাস করে যাবার কালে ৩৯ জন ড্রাইভার এসে মহিলাকে লিফট দিতে চাইল।
অর্থাৎ, পোষাক আকর্ষনের ক্ষেত্রে অবশ্যই কাজ করে। বিবর্তনীয় সাইকোলজি অনুসারে পাখিরা গান গায়, বাসা বানায়, নাচে সঙ্গীকে আকর্ষনের জন্য। মানুষ এক্ষেত্রে লাল বস্তু পরে, কৌতুক বলে, দামী গাড়ি দৌড়ায়; গান গাওয়া আর নাচা তো আছেই। পোষাক এইরকম জিনিসের মতো বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষনে কাজ করে।
এই আকর্ষন আছে, থাকবে ও স্বাভাবিক। কিন্তু একে কোন অপরাধের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে না। অপরাধের কারণ মূলত অপরাধী।
আবার কাপড়ে আকর্ষণ তৈরী করে না, এমন কথা বলার অবকাশও নেই। শুধু পোষাক কী, সঙ্গী নির্বাচনের সাইকোলজিতে দেখা যায়, পুরুষ যখন নারীদের দিকে তাকায়, তার সঙ্গী হবার যোগ্যতা ঐ ব্যক্তির আছে কি না দেখে, তখন সে ব্রেস্ট, ওয়েইস্ট, হিপস ইত্যাদির দিকে বেশী সময় দেয়। একই ভাবে নারীরাও (হেটারোসেক্সুয়াল হলেও) যখন অন্য নারীদের দিকে তাকায় তখন এই সব জায়গায় বেশী সময় দেয়। নারীর কাছে ঐসব নারী প্রতিযোগী, এবং এইসব জায়গায় সে তাকায় খুত ধরার জন্য। খুত বের করা অর্থাৎ ডেরোগেশন অব কম্পিটিটর তার জন্য মেটিং স্ট্র্যাটেজির অংশ। খুত পেলে সে তা প্রচার করে তার প্রতিযোগীর সঙ্গী সম্ভাবনা কমিয়ে ফেলতে পারে।
যাইহোক, পোষাক দায়ী করাদের বিরোধীতা করতে গিয়ে আবার “পোষাক”কেই কেন্দ্রে নিয়ে আসা যাবে না। কেন্দ্রে অন্যায় ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ, নির্যাতন ও অপরাধ রেইপটিকে রাখুন।
রেফারেন্সঃ
১। Pazhoohi, F., & Burriss, R. (2016). Hijab and “Hitchhiking”: A Field Study Evolutionary Psychological Science, 2 (1), 32-37 DOI: 10.1007/s40806-015-0033-5
২। Cundall, A., & Guo, K. (2017). Women gaze behaviour in assessing female bodies: the effects of clothing, body size, own body composition and body satisfaction, 81: 1 DOI:10.1007/s00426-015-0726-1