মুরাদুল ইসলাম » ব্লগ » একগামীতা নাকি বহুগামীতা, হে বিপ্লবী?

একগামীতা নাকি বহুগামীতা, হে বিপ্লবী?

একগামীতা নাকি বহুগামীতা, হে বিপ্লবী?

 

আচ্ছা,  একগামীতা ও বহুগামীতা নিয়া ভাবলাম। একটা কম্যুনিটি আছেন ওয়ার্ল্ডের  যারা বহুগামিতার পক্ষে যুক্তি দেন। যেটারে ইংরাজিতে কয় পলিয়ামরি।

তাদের আর্গুমেন্ট হইল যে, প্রকৃতিগত ভাবেই মানুষ বহুগামি। ফলত, এক সঙ্গীতে তারা সন্তুষ্ট থাকে না। তারা পরিসংখ্যান দেখান যে, বিরাট পার্সেন্টেজ ইনফিডালিটি হয়। ফলে, মনোগামি সিস্টেম কাজ করে না।

তারা যুক্তি দেন, হিউমেন হিস্টোরিতে বেশিরভাগ সময়েই বহুগামিতা ছিল। একজন মানুষ অনেকজন মানুষের সাথে সম্পর্ক রাখতেন।

তারা আরো যুক্তি দেন, ইন ফিউচার মানুষের ব্রেইন থেকে জেলাসি সরাইয়া নেবার সিস্টেম করা হবে। তখন কেউ একজন তার সঙ্গীর আরো আরো সঙ্গীরা থাকলে এটা তার খারাপ লাগবে না।

এই লাইনের আর্গুমেন্ট আমার কাছে মনে হইতেছে ফালতু, কিছু কারণে।

কারণ এক, হিউমেন হিস্টরিতে মানুষ অনেক ফালতু কাজ করছে, যেগুলা আমরা এখন করি না পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে। লাইক হিউমেন স্যাক্রিফাইস, সতীদাহ, দাস প্রথা ইত্যাদি।

কারণ দুই, হিউমেন ব্রেইন সেক্সের জন্য তৈরি না। সেক্স এজ এন এক্ট অন্যান্য প্রাণীদের যেমন, মানুষের ক্ষেত্রে এমন আর নাই। কারণ মানুষ বুদ্ধির দিক থেকে আগাইয়া গেছে অনেক। ফলে সেক্স এখন মানুষের ফিলোসফিক্যাল ও সাইকোলজিক্যাল প্রবলেম। যেটা আগের আগের মানব সমাজে হয়ত কেবল এক্ট হিসাবে ছিল।

কারণ তিন, পরিবার মানুষ ফর্ম করে আলটিমেটলি মানুষের বাচ্চার জন্য। কারণ মানুষের বাচ্চা খুবই অপরিণত অবস্থায় জন্ম নেয়। গরুর বাচ্চা উইঠাই দৌড়ায়। পাড়ান্তু, মানুষের বাচ্চা একটা ফিজিক্যাল ও মেন্টাল কেয়ার ছাড়া টিকে না। সাইকোলজিক্যাল কেয়ার দিনে দিনে গুরুত্বপূর্ণ হইতেছে মানুষের জন্য। ফলে পরবর্তী মানব সমাজের সুস্থতার জন্য মনোগামিতা টিকে থাকবে।

কারণ চার, মানুষ মিনিংফুল লাইফ চায় আলটিমেটলি। যেই মিনিংফুলনেসের সাথে একজন সঙ্গীর কনসেপ্ট জড়িয়ে আছে। যেটা হলো ব্যক্তি জীবনের মিনিংফুলনেস। ওয়ান্ডারফুল উপন্যাস লিটল প্রিন্সের লেখক আন্তোইন সেইন্ট জুপেরী। আই লাভ দিস গাই। জুপেরীর লিটল প্রিন্স ডিপলি স্যাড একটা উপন্যাস। পার্সোনাল লাইফে জুপেরী ও তার বউ বহুগামী ছিলেন। মানে তাদের আদার লাভারস ছিল। বাট, লিটল প্রিন্স, যেটা আসলে জুপেরীর একরকম আত্মজীবনী, সেখানে তিনি একগামীতার পক্ষে গেছেন। তার ফুল ও তার সম্পর্ক, এটাই তার অপিনিওন হিউমেন লাভ রিলেশন নিয়ে।

জুপেরীর লিটল প্রিন্স যখন গ্রহে তার ফুলরে ছাইড়া আসে, লিটল প্রিন্সের মন খারাপ হয়। এরপর যখন সে দুনিয়াতে আসে, দেখবেন গোলাপ বাগানের সামনে একটা সীন আছে। গোলাপ বাগানের ফুলেরা তারে সৌন্দর্য দেখায়, আর লিটল প্রিন্স রাইগাই যায় একরকম।

সে বলে তোমরা আমার কাছে কিছুই না, কারণ তোমরা আমার ফুল না।

এগুলা সব রূপক কথাবার্তা।

আরেকটা কথা লিটল প্রিন্স বলে, খুবই ডিপ রোমান্টিক, যে, দুনিয়াতে প্রচুর ফুল থাকতে পারে, কিন্তু ওই একটা ফুলই আমার ফুল।

এইটা হইল একজিজটেনশিয়াল ট্রুথ ফর এ লাভার।

আমার মনে হয়, জুপেরী খুব কোর থেকে লাভ রিলেশন দেখতে পারছেন। সবচাইতে সুন্দর জিনিসগুলা চোখে দেখা যায় না, অনুভব করতে হয়, ইত্যাদি অনেক ডিপ কথাবার্তা আছে ওই উপন্যাসে।

বাট, এট লাস্ট লিটল প্রিন্স তার ফুল হারায়, সে খুবই স্যাড লাইফ লিড করে।

শুরু থেকেই ফুলের সাথে তার এনকাউন্টারটাই মূল ছিল। ওইখানে ঝামেলা হওয়াতেই তার মন খারাপ হয় ও সে ঘুরতে বের হয় ঘর ছাইড়া। অভারল লিটল প্রিন্সের লাইফের যে অন্তঃসারশূন্যতা, অস্তমান সূর্যের মত, যেটা বসে বসে দেখা তার প্রিয় ছিল, এটা হইল তার প্রেমিকা তথা ফুলের সাথে বিচ্ছেদের কারণে।

ওয়েস্টার্ন সমাজে এই একগামীতা ও বহুগামীতা প্রশ্ন নতুনভাবে আসছে যেহেতু প্রযুক্তি সমাজরে বদলাইয়া দিছে। যেখানে মানুষের ইনফিডালিটিতে যাওয়া ইজি হইছে। আরো আগে, নানা সমাজে, ধর্মে বহুগামীতা প্রমোট করা হইছে, ফলে আমি এটা পশ্চিমা সমাজের আবিষ্কার বলতেছি না।

বরং, আমি বর্তমান টেকনোলজিক্যাল সমাজে পরিবর্তিত অবস্থা যে, এরকম চিন্তার পেছনে ভিত্তিভূমি তৈরি করছে সেটা বলতে চাইতেছি।

বাট ইন দ্য লং রান, এটা কোন সল্যুশন না, বহুগামিতা।

সমাজের প্রশ্ন পরে, মানুষের মেন্টাল ওয়েল বিং এর জন্যই ভালো না।

একটা টোটাল মেন্টাল এংজাইটি এটা তৈরি করে সমাজে, যখন সিচুয়েশনটা এমন হয় যে, অনেক অনেক লিটল প্রিন্স ঘুরে বেড়াইতেছে, লাইফের মিনিং পাইতেছে না, কারন তাদের কোন ফুল নাই, বা এক ফুলে তারা ইমান রাখতে পারতেছে না।

জর্ডান পিটারসনের মত ক্লাসিক্যাল লিবারাল, সাইকোলজিস্ট স্পিকারদের জনপ্রিয়তা এই কারণেই হইছিল ঐ সমাজে, কারণ এইখানে একটা ভয়েড আছে। যেটা ট্রাডিশনাল মোটিভেশনাল স্পিকাররা দিতে পারতেছে না। পিটারসন যখন তার ইয়াং ম্যানদের বলেন যে, সবার কাছে সুন্দর হইবা বা সেক্স করবা একজনের সাথে। কারণ সেক্স করা মানে ইউজ করা না, নিজেও ইউজ হওয়া।

পিটারসন কী করছিলেন, একগামিতার পক্ষে তার মত দিছিলেন, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টের ভিউ পয়েন্ট থেকে। কারণ ঐটা মেন্টাল ওয়েল বিং এর জন্য ভালো, এবং সামগ্রিক হতাশা দূর করতে হেল্প করবে। পিটারসন এখন অসুস্থ। তার বউয়ের বড় অসুস্থতা ধরা পড়ায় তার ডিপ্রেশন বেড়ে যায়, আর একটা ড্রাগ বেশী নিতে নিতে তিনি সংকটাপন্ন হয়ে পড়েন। শেষ খবর জানতাম রাশায় চিকিৎসা নিতেছেন।

তো, এই লেখাটা আমি কেন লেখতেছি বা আমি কি পলিয়ামোরাসদের নাই কইরা দিতে চাই?  অবশ্যই না। লেখা হয় সামগ্রিক বিচারে। কিন্তু ইন্ডিভিজুয়াল ব্যক্তি আলাদা হইতে পারে। যেমন কেউ গে হয়, লেসবিয়ান হয়, বা এইরকম হয়ত পলিয়ামোরাস হয়। যদি দুইজন পার্টনার একমত হইয়া তারা পলিয়ামোরাস রিলেশনে যান, এইটাতে আমার মত মহান জ্ঞানীর বলার কিছু নাই, শুভকামনা জানানো ব্যতিরেকে।

বাট, সামগ্রিক ভাবে এই জিনিস সবার জন্য না, এইটা আমার মত। ও সামগ্রিক ভাবে এইটা সমাজের জন্য ভালো না, এই আমার আরেক মত।

আমি যেহেতু মিনিংফুলনেস, লাভ ও একক ফুলের সাথে সম্পর্করে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়া দেখতেছি, অতএব আমার এই লেখাটি সম্পর্ক নিয়া যারা ভাবেন (সবারই ভাবা উচিত যেহেতু তারা সম্পর্ক করেন বা করবেন) তাদের চিন্তায় পুকুরে একটা ইটা মাত্র।

ইটা হচ্ছে ঢিল এর সিলেটি শব্দ।

 

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

×
গুরুত্বপূর্ণ
Scroll to Top
বই মডেলিং