২০১০ সালে র্যাশনালিস্ট লেস রং ফোরামে রোকো নামের একজন সদস্য একটা থট এক্সপেরিমেন্ট শেয়ার করে। তার জিজ্ঞাস্য ছিল, যদি ভবিষ্যতে মহাশক্তিধর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তারে তৈরি করতে যারা অংশ নেয় নাই তাদের অনন্ত শাস্তিতে রাখে, তাহলে কী হবে?
তাইলে কি আমাদের কাছে দুইটা অপশন থাকে না,
এক, ওই মহাশক্তিধর খারাপ এআই’রে জন্মাইতে হেল্প করা অথবা
দুই, অংশ না নিয়া ভবিষ্যতে অনন্ত শাস্তির দিকে নিজেরে ঠেলে দেয়া
বহু শতক পরে ওই খারাপ মহা শক্তিধর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মরা মানুষগুলার ডেটা সংগ্রহ পুননির্মান করে কম্পুটারের মধ্যে রেখে অনন্ত শাস্তিতে রাখবে। এইটা সম্ভব।
এই পোস্ট ইতিহাসের এক ভয়ংকরতম থট এক্সপেরিমেন্টে পরিণত হয়। লেস রং এর ফাউন্ডার টেকনো ফিউচারিস্ট এলিজার ইওদকস্কি ইনফরমেশন হ্যাজার্ড, মানুষের মেন্টাল হেলথের ক্ষতি ইত্যাদি কারণ দেখিয়ে এই থ্রেড রিমুভ করে, পোস্টদাতাকে কিছু গালাগালিসহ। এ নিয়ে আলোচনা বন্ধ রাখে। কারণ ওই ফোরামের অনেকের নাকি এই চিন্তার ফলে মানসিক সমস্যা দেখা দিছিল, অনেকে তাদের ডেটা রিমুভ করা শুরু করেছিল।
র্যাশনালিস্ট এক বিখ্যাত ফোরামের ফাউন্ডারের এই প্রায় আতংকিত প্রতিক্রিয়ার কারণে এই রোকোর বাসিলিস্ক আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিষয়টারে দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে গেলে রোকোর বাসিলিস্ক বারে বারে আসবে।
ব্যাপারটা এখানে, নিউকম্বের প্যারাডক্স। আইডিয়াটা পদার্থবিদ রবার্ট নিউকম্বের, কিন্তু জনপ্রিয় করেন পলিটিক্যাল থিংকার রবার্ট নজিক।
ধরা যাক একটা এলিয়েন আইসা আপনারে দুইটা বক্স দিল। এ বক্স ও বি বক্স।
এ বক্সে ১০০০ ডলার আছে। বি বক্সে আছে ১ মিলিয়ন ডলার বা জিরো ডলার।
আপনার কাছে চয়েজ দুইটা
– ১। দুইটা বক্স নিবেন
– ২। খালি বক্স বি নিবেন
এখন ওই এলিয়েনের কাছে একটা মহা শক্তিধর সুপার কম্পিউটার আছে। সেটা অনুমান করেছে আপনি কী করবেন। তার অনুমান সঠিক হয় দেখা গেছে। সে যদি অনুমান করে আপনি শুধু বক্স ‘বি’ নিবেন, তাহলে এর মধ্যে ১ মিলিয়ন ডলার রেখে দিছে। আর যদি প্রেডিক্ট করে আপনি দুইটা নিবেন, তাহলে বি এর মধ্যে জিরো ডলার রেখে দিছে।
এক্ষেত্রে, আপনার কাছে র্যাশনাল চয়েজ কোনটা।
এই জায়গায় ডিসিশন থিওরির দার্শনিক চিন্তকরা দুইভাগে ভাগ হয়ে যান।
একদল বলেন, র্যাশনাল হল দুইটা বক্স নেয়া। কারণ কম্পুটার আগে প্রেডিক্ট করেই ফেলছে। আর বদলাবে না। ফলে, দুইটা নিলে যৌক্তিক হয়। হয় আপনি এক হাজার ডলার পাবেন, অথবা এক হাজার ডলার যোগ এক মিলিয়ন ডলার। এক বক্স নেয়া অযৌক্তিক।
অন্যদিকে অন্যদল বলেন, বি বক্স নিলে যৌক্তিক। তাদের কথা, কারণ সুপার কম্পুটারের প্রেডিকশন ভুল হয় না আগে দেখা গেছে। সে আগেও প্রেডিক্ট করছিল, যারা বি নিছে, তারা এক মিলিয়ন ডলার পাইছে। ফলে এই দল বলেন সুপার কম্পিউটাররে বিশ্বাস করাই যৌক্তিক।
এইটার মীমাংসা নাই।
রোকোর বাসিলিস্কে যাওয়া যাক। এই লেখায় যেহেতু আপনি জানছেন ব্যাপারটা, সুতরাং নিজেও রিস্কে পড়ে গেলেন। অপশন দুইটা
এক, শক্তিশালী ওই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরিতে অংশ নিবেন
দুই, অংশ না নিয়া নিজেরে শাস্তির দিকে ফেলে দিবেন
যারা প্যাসকেলের অয়েজার সম্পর্কে জানেন, তারা বুঝতেছেন হয়ত যে, এটা প্যাসকেলের অয়েজারেরই অন্য রূপ।
প্যাসকেল বলেছিলেন, ঈশ্বরে বিশ্বাস করাই যৌক্তিক। কারণ ঈশ্বর না থাকলে কিছু হবে না মরার পরে, ফলে লস কম। কিন্তু যদি আপনে ঈশ্বরে অবিশ্বাস করেন, কিন্তু ঈশ্বর থেকে থাকেন, তাইলে মাইর একটাও মাটিতে পড়বে না মরার পরে।
সহজভাবে এমনই। এই কথার যৌক্তিক কিছু সমস্যা আছে, যেমন নানা ধর্মে নানা গড, ইত্যাদি।
বাট, এটা এই রোকোর বাসিলিস্কের লগে মিলে।
আরও মিলে বাইবেলের কাহিনীর সাথে।বাইবেলের কাহিনী বলতেছি কারণ বাইবেলেরটা, আর ইসলামের কাহিনীর একটা বড় পার্থক্য আছে, বাইবেলে ঈশ্বর সরাসরি বলেন, ইসলামে “প্রিয় বস্তু কোরবানি” দিতে স্বপ্ন দেখানো হয়। নবীরে তার ঈশ্বর বলছেন তার পোলারে কোরবানি করতে। নবীর কাছে তখন অপশন কয়টা আছে?
১। ঈশ্বররে বিশ্বাস করবেন ও পোলারে কোরবানি করতে যাবেন
২। ঈশ্বররে অবিশ্বাস করবেন ও তার কথা মানবেন না
বাইবেলের নবী ঈশ্বরে বিশ্বাস করলেন অর্থাৎ রোকোর বাসিলিস্কে এটা হবে খারাপ শক্তিধর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বিশ্বাস বা নিউকম্বের প্যারাডক্সে ওই সুপার কম্পিউটারে বিশ্বাস।
আর, আরেকটা কথা, ঈশ্বর কি জানতেন নবী কী করবেন?
সর্বজ্ঞ তিনি, ফলে অবশ্যই জানতেন। যদি তিনি আগেই জানতেন, তাহলে কীভাবে সেইটা সম্ভব? তিনি কি সিমুলেশন কইরা আগেই দেখছেন? ও ভবিষ্যতে বসে আছেন? এইজন্যই কি তিনিই সময়, তারে বুঝা সম্ভব না কারণ সময়ের আগে যাওয়া যাবে না ও যেহেতু আমরা তার সিমুলেশনে বাস করি। বা আমাদের মহা শক্তিধর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে, সে কি ভবিষ্যতে বসেই আছে, এবং আমাদের এইসব কর্মকাণ্ড কি তারই তৈরি সিমুলেশন?