রুস্তম পাভরি’রে নিয়া আমরা ভাবতে পারি। যেই ঘটনা থেকে এই ফিল্ম বানাইলেন পান্ডেজি সেইটা হইল, ইন্ডিয়ান নেভি অফিসার নানাভাতি তার বউয়ের লাভাররে খুন করছিলেন তিন গুলি মাইরা, ১৯৫৯ সালে।
এই খুন করার পরে তিনি আত্মসমর্পন করেন। পার্সি কম্যুনিটি পত্রিকার মাধ্যমে তার পক্ষে প্রচারনা চালায়। জুরি বোর্ড বিস্ময়করভাবে তারে নট গিলটি রায় দেয়। অতঃপর হাই কোর্টে তার যাবজ্জীবন হয়। কিন্তু শক্তিশালী পার্সি সাপোর্ট থাকায় তিন বছর পরে তিনি মুক্তি পাইয়া, বউ বাচ্চা নিয়া কানাডায় চইলা যান।
এই ট্রায়ালের পরে ইন্ডিয়া জুরি ট্রায়ালের সিস্টেম তুইলা দেয়।
ফিল্মে পুরা এই চিত্র উপস্থাপন করা হয় নাই। ফিল্মের গল্প ভিন্ন। ফিল্মে যে গল্প, ইংলান্ড হইতে বাজে একটা জাহাজ কিনতে যাইতেছিল ইন্ডিয়ান কিছু করাপ্ট নেভী অফিসার। রুস্তম পাভরি এই কারনেই তার প্ল্যান সাজান তার বন্ধু ও বউয়ের লাভার, বিশিষ্ট প্লেবয় বিক্রম মাকিজারে মাইরা ফালানোর, যেই বিক্রম মাকিজা সেই বাজে জাহাজ কিনার লগে জড়িত। রুস্তম পাভরিরে এই উপস্থাপন দেশপ্রেমিক হিশাবে। ফিল্মে শেষ পর্যন্ত রুস্তম জুরিদের রায়ে নট গিলটি হইয়া যান। উচ্চ আদালত পর্যন্ত আর যায় নাই ফিল্মের গল্প।
ফিল্ম দেইখা মনে হইতে পারে, রুস্তম পাভরি দেশের জন্য তার বউরেও ব্যবহার করছেন। যদি তার বউয়ের বিক্রম মাকিজার লগে প্রেম না হইত তবে পত্রিকা কীভাবে সিম্প্যাথী তৈরি করত তার পক্ষে? তারা মুখরোচক নিউজ পাইত কি? জনতার সাপোর্ট কি তিনি পাইতেন? কোর্টে খাড়াইয়া বাজে জাহাজ কিনার ষড়যন্ত্রের কথাও তিনি বলতে পারতেন না কারণ তিনি চান নাই সিভিলিয়ানদের কাছে নেভীর ভাবমূর্তি ফুটা হইয়া যাক। এবং যেহেতু তার কাছে ইংলান্ডের বাজে জাহাজের কোন কাগজ ছিল না, ওইটা ছিল একটা ব্লাফ।
বুদ্ধিমান, সার্ফ এক্সেল সুপার হিরো ধাঁচের রুস্তম পাভরি এইটা বুইঝাই তার চাল চালছেন। পুলিশের অফিসারের লগে তার পয়লা দাবা খেলার প্রতি নজর দেন। দেখবেন রুস্তম রানীরে বিসর্জন দিয়াও খেলায় জিতছেন। এতে অবাক হইয়া যান পুলিশ অফিসার।
রুস্তম রানীরে বিসর্জন দিয়াও খেলায় জিতছেন। Share on Xএখন একটু ইতিহাসে যাই, পার্সিয়ান কম্যুনিটি হইল জথরুস্ট্রিয়ান ধর্মের দুই শাখার একটা, যারা ভারতে চইলা আসছিল অষ্টম বা দশম শতকে ইরানে মুসলিমদের নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে।
আগে আমরা যেইরকম দেখতাম বলিউডি ফিল্মে মুসলিম সৎ অফিসার, যারে ইন্ডিয়ান অফিসাররা পাকিস্তানের এজেন্ট মনে করে কিন্তু তিনি জীবন দিয়াও প্রমান কইরা যান, তার ভারতের প্রতি দেশপ্রেম।
রুস্তম ফিল্মে আরেকটা মাইনরিটি পার্সিদের দেখানো হইল, যারা ৮/১০ শতকে মুসলিমদের মাইর খাইয়া আইছিল ইন্ডিয়ায়; এদের দেশপ্রেম দেখাইতে দেখানো হইল দেশের ভালোর জন্য অফিসার বউরেই দিয়া দিলেন, যারে তিনি অত্যধিক ভালোবাসতেন। মুসলিম অফিসারদের যেমন দেশপ্রেম প্রমান করতে হইত, পাভরি’র এমন কোন দায় ছিল না, তবুও বউ দিয়া তিনি বুঝাইয়া দিলেন তার দেশপ্রেম।
দিয়া দেওয়া বলতে আমি বুঝাইতেছি ব্যবহার করা। নিশ্চয়ই বউ দেয়া জীবন দেয়ার চাইতে বড়। কারণ জীবন দিলে একটা বীরত্বের সম্মান পাওয়া যায়। পৃথিবীতে কালে কালে লোকেরা হিরো হইছেন দেশের জন্য প্রাণ দিয়াই। এইটা দারুণ বীরত্বের এবং সম্মানের হিশাবে বিবেচিত হয়। কিন্তু বউ দিলে সেই সম্মানটা পাওয়া যায় না, এবং তা জনসমক্ষে প্রচার কইরা বাহবাও নেয়া যায় না। উলটা এইটা পুরুষ ও তার পৌরুষত্বের জন্য অপমানজনক, একটা হিউমিলিয়েশন। কারণ বউরে রক্ষা করাই পুরুষের জন্য পৃথিবীর রীতি, এইজন্য ওয়েস্টার্ন বিয়ার কালে বউ জামাইর বামদিকে খাড়ায়; যাতে শত্রু বউরে ছিনাইয়া নিতে আইলে জামাই ডাইন হাত দিয়া তরবারি লইয়া ফাইট দিতে পারেন। প্রাচীনকাল থেকে এই রীতি চলে আসতেছে। তাই বউ দেয়ার দাম, এই ত্যাগ স্বীকার জীবন দেয়ার চাইতে বেশী। পার্সি অফিসার রুস্তম পাভরি তাই দিলেন, নিজের রানীরে ব্যবহার কইরাও দেশরে বাজে, পুরানা, ইংলান্ডের জাহাজ কিনা থেকে বাঁচাইলেন।
নিশ্চয়ই বউ দেয়া জীবন দেয়ার চাইতে বড়। Share on Xরুস্তমের এই পোস্টারগুলা খেয়াল করেন। রুস্তম পাভরির চউখ অন্ধকারে ঢাইকা রাখা হইছে, যেন তিনি এক ট্র্যাজেডির নায়ক। পিছনে তার বউরে দেখানি হইছে বিক্রম মাকিজার লগে। রুস্তমের “ও” অক্ষরের বুক ফুটা কইরা চইলা গেছে তিনটা বুলেট, এই বুলেট তো মাকিজার বক্ষে লাগে নাই। পোস্টার ভালোভাবে খেয়াল করলেই বুঝবেন এই বুলেট তিনটা রুস্তমেরই বুকের ক্ষত।
পোস্টার ভালোভাবে খেয়াল করলেই বুঝবেন এই বুলেট তিনটা রুস্তমেরই বুকের ক্ষত। Share on X
কথা প্রসঙ্গে একইধরনের আরেকটা ফিল্ম অজয় দেবগনের দ্রিশ্যাম পোস্টারের কথা বলা যায়। সেইখানেও একটা প্ল্যান করে অজয় দেবগন তার ফ্যামিলিরে একটা মার্ডার থেকে বাঁচাইয়া ফেলেন। সেই ফিল্মের পোস্টারে দেখবেন অজয় দেবগনরে একটা ফ্যামিলির রক্ষাকারী, হিরো হিসেবে উপস্থাপন করা হইছে। তার ডিটারমাইন্ড চক্ষু বলে সে পরিবার রক্ষার জন্য ফাইট দিবে।
যাই হউক, শেষকথা; বলিউডের রুস্তমের বরাতে আমরা দেখলাম ইন্ডিয়ার মুসলিম মাইনরিটি অফিসারদের চাইতে, পার্সি মাইনরিটি অফিসারদের দেশপ্রেমের জন্য জন্য ত্যাগ স্বীকার বেশী। তাও ইন্ডিয়ার স্বাধীনতা উদযাপনের কালে, এই দুই হাজার ষোল সালে। যেই স্বাধীনতা অসংখ্য মুসলিম আর হিন্দুদের ব্লাডে রাঙা।