মুরাদুল ইসলাম » ব্লগ » সহিংসতা ও ক্ষমা

সহিংসতা ও ক্ষমা

বেশ কিছুদিন পরে লেখতেছি। বিষয়টা ইন্টারেস্টিং, জিরার্দ যেইটারে বলছেন, স্যাকরেড ভায়োলেন্স ও হলি ক্ষমা। অর্থাৎ, একই ঐশ্বরিক অথোরিটি ব্যবহার করে যে দুইটাই করা যায়, তার উদাহরণ, ও ব্যাখ্যা। এবং সেইখান থেকে আমরা বুঝতে চেষ্টা করতে পারি আমাদের সমাজের স্যাকরেড ভায়োলেন্স ও হলি ক্ষমা কেমন হতে পারে। সেক্যুলার সেন্সে, ঐশ্বরিক অথোরিটি হয়ত ব্যবহার হবে না, কিন্তু ব্যবহার হবে “ভালোর” পক্ষের অথোরিটি।

এপোলোনিয়াস নামে একজন প্রাচীন পিথাগোরিয়ান বিজ্ঞ লোক ছিলেন। তার অনেক মিরাকল তথা অত্যাশ্চর্য ক্ষমতা ছিল বলা হয়ে থাকে। পিথাগোরিয়ানরা রহস্যজনক ছিলেন, তাদের অনেক গুপ্তবিদ্যা ছিল, সেই ধারার একজন নবীর মত এপোলোনিয়াস। প্রাচীন গ্রীসের একজন সোফিস্ট ফিলোস্ট্র্যাটাস লাইফ অব এপোলিনিয়াস লিখেন, যেইখানে উদ্দেশ্য ছিল দেখানো এপোলোনিয়াসের ম্যাজিক আসলে কেবলই জাদু ছিল না, ছিল ঐশ্বরিক ক্ষমতা থেকে প্রাপ্ত, প্রফেটিক। বইটি লেখা হয় এপোলনিয়াসের মৃত্যুর প্রায় শত বছর পরে।

সেই বইতে আছে, ৪.৬-১০ অংশে, এফেশাস শহরে যখন প্লেগ দেখা দিল, তখন মানুষেরা সাহায্যের জন্য গেল এপোলিনিয়াসের কাছে। এপোলিনিয়াস আসলেন। তিনি একজন বুড়া দূর্বল ভিক্ষুককে দেখতে পেলেন। নগরবাসীকে লক্ষ করে বললেন, তোমরা পাথর সংগ্রহ করে এই লোকরে ঢিল মারতে থাকো। এ দেবতাদের শত্রু।

মানুষেরা এই নির্মম কাজ করতে রাজী ছিল না। কিন্তু এপোলিনিয়াস বলতে থাকলেন।

তখন কয়েকজন ঢিল মারলো।

যে ভিক্ষুক ছিল দূর্বল, চোখ খুলতে পারছিল না, ঢিল খেয়ে দেখা গেল তার চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে।

তখন সবাই বুঝে গেল এ আসলেই ডেমন। তারা সবাই মিলে ঢিল ছুঁড়তে লাগল।

এক পর্যায়ে এপোলনিয়াস তাদের বললেন, থামো তোমরা। এখন দেখে নাও কারে তোমরা হত্যা করলে।

লোকেরা ঢিল সরাল উপর থেকে। কিন্তু ঢিলের নিচে ভিক্ষুকের শরীর মিললো না। মিললো একটা বড় সিংহের আঁকারের এক মলোসিয়ান কুকুর।

প্যাগানরা এই এপোলিনিয়াসের ঐশ্বরিক ক্ষমতাকে যিশুর চাইতে বেশি মনে করত।

যিশুর একটা গল্প আছে বাইবেলে, জন ৮:১,১১, যিশু টেম্পলের নিচে বসে মানুষদের নানা কিছু নিয়ে শিক্ষা দিচ্ছিলেন। এই সময়ে কিছু আইনজ্ঞ ও কর্তাব্যক্তিরা একজন মহিলারে নিয়ে তার কাছে আসল। তারা বলল, শিক্ষক, এই মহিলাটা বিবাহ বহির্ভুত সেক্স করেছে। মুসার আইন মতে একে পাথর নি:ক্ষেপ করে হত্যা করার বিধান। আপনার মত কী?

যিশু নিচু হয়ে তার আঙ্গুল দিয়ে মাটিতে কিছু লিখতে থাকলেন। লোকগুলা প্রশ্ন করতে থাকলো।

এক পর্যায়ে যিশু বললেন, তথাস্তু! তোমাদের মধ্যে যে জীবনে কখনো কোন পাপ করো নাই সে মারবে প্রথম পাথর।

তিনি আবার মাটিতে লেখতে শুরু করলেন হাত দিয়ে।

তখন আস্তে আস্তে লোকেরা কমে যেতে থাকল। শেষ পর্যায়ে কেবল ঐ মহিলা এবং যিশু রইলেন।

যিশু মহিলারে বললেন, তারা কোথায়? তাদের কেউই কি তোমারে শাস্তি দেয় নাই?

মহিলা বলল, জি না।

যিশু বললেন, তাহলে আমিও তোমাকে শাস্তি দিচ্ছি না। যাও, পাপমুক্ত জীবন যাপন করো।

এই দুই ঘটনার মধ্যে প্রথমটা স্যাকরেড ভায়োলেন্সের। ঐশ্বরিক অথোরিটি ব্যবহার করে শাস্তি দেয়ার। দ্বিতীয় ঘটনা হলি ফরগিভনেসের। ঐশ্বরিক অথোরিটি ব্যবহার করে ক্ষমা করে দেয়ার।

প্রথম ঘটনায়, একজনকে স্কেইপগট বানানো হয়েছে, ও জনতাকে উন্মত্ত করে তাকে নিধন করা হয়েছে। জনতার হতাশা ও ভয়কে ব্যবহার করা হয়েছে।

দ্বিতীয় ঘটনায়, বিষয়টাতে পক্ষ নেয়া হয়েছে নির্যাতীতের। ক্রাউডের অভিযোগকে, তাদের অন্যায় দণ্ডকে অস্বীকার করা হয়েছে। জনতাকে স্কেইপগটিং করা থেকে বিরত রাখা হয়েছে।

এপোলোনিয়াস ও নাজারাথের যিশু একই সময়ে ছিলেন। যদিও তাদের মধ্যে দেখা হয়েছে এমন শোনা যায় না। তাদের ভক্তদের দেখা হয়েছে, এবং কে সেরা এটা নিয়ে তর্ক ছিল। মধ্যযুগের ইসলামিক দুনিয়াতেও এপোলনিয়াস পরিচিত ছিলেন, একজন গুপ্ত বিদ্যা বিষয়ে প্রাজ্ঞ, আলকেমিস্ট ইত্যাদি হিসেবে। তাকে বালিনাস বলা হতো। তার নামে অনেক গুপ্তবিদ্যার বই প্রচলিত ছিল। বাহাই ধর্মের বাহা’উল্লাহও এপোলনিয়াসকে উচ্চ আসন দিয়েছেন।

স্কেইপগটিং ও মিমেটিক ডেজায়ার সম্পর্কে আরও পড়তে জিরার্দের মিমেটিক তত্ত্বের জগত লেখাটি পড়তে পারেন।

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

×
গুরুত্বপূর্ণ
Scroll to Top
বই মডেলিং