নিউ এথিজম ও রিলিজিয়নবাদীদের কমন প্যাটার্ন, এবং সাইন্স কী

নিউ এথিস্টরা (নিউ এথিজম মুভমেন্ট)  যেমন ভুয়া অনেক কথা বলে, তাদের কাউন্টার করা রিলিজিওনপন্থী গুলি আরো ভুয়া বলে। এদের কাজ হইল নিজেদের দুই ধর্ম সাইন্টিসিজম আর ইসলাম বা হিন্দু ইত্যাদি নিয়ে তর্ক করা, ও কোনটা সেরা প্রমাণ করা। যেটা তারা করতে পারে না। বাট এন্টারটেইন করতে পারে।

যেমন করোনা বিবেচনায় বলা হইতেছে, মানুষের বিপদে বিজ্ঞান আগাইয়া আসছে, ধর্ম আসে নি।

এটা হইল বিজ্ঞানবাদী প্রচার। আর, এর ধর্মীয় কাউন্টারগুলা এর চাইতেও লেইম।

কথা হইল, বিজ্ঞানের কাজ সাইন্টিফিক এক্সপ্লোরেশন। ফলে, আপকামিং সমস্যা বা বিদ্যমান অনেক সমস্যার সমাধান তার মধ্যে থাকবে।

“অনেক” সমস্যা মানে সব সমস্যা না। যেটা বিজ্ঞানের ঘরে পড়বে সেটা নিয়া কাজ বৈজ্ঞানিক পদ্বতিই করবে। যেমন ভাইরাস গবেষণা, টেস্ট কইরা দেখা কোন ভ্যাকসিন কাজ করে, ক্রিটিক্যাল থিংকিং, সুক্ষ্ম অবজার্ভেশন। ভ্যাকসিনের আবিষ্কারই এভাবে হইছে যে, একজন ডাক্তার এডওয়ার্ড জেনার দেখলেন যারা দুধ বিক্রি করেন তাদের স্মল পক্স হয় না। স্মল পক্স একসময় মহামারী ছিল। তো জেনার বুঝতে পারলেন, গরুর শরীরে থাকা আরেক পক্স ভাইরাস গোয়ালাদের এটাক করে। ফলে, মানুষের স্মল পক্সের ভাইরাস আর ঐ শরীরে কাজ করে না।

জেনার তার থিওরি প্রুভ করতে তার কাজের লোকের ছেলেরে কাও পক্স দ্বারা সংক্রমিত করলেন। ছেলেটির জ্বর হইল, সেরে গেলো। পরে মানুষের স্মল পক্স দ্বারা সংক্রমিত করলেন। ছেলেটার কিছু হইল না।

এই শুরু হইল আধুনিক ভ্যাক্সিন, মেডিকেল কম্যুনিটির অনেক তর্ক বিতর্কের পরে।

যার জন্য আমরা এখনো বাঁইচা আছি এটা বলা যাইতে পারে, কারণ স্মল পক্স ডেডলি ছিল।

জেনারের কাহিনী বলার কারণ তার বৈজ্ঞানিক পদ্বতি বুঝানোর জন্য। তিনি সুক্ষ্মভাবে অবজার্ভ করলেন, ক্রিটিক্যালি চিন্তা করলেন, এরপরে পরীক্ষা করলেন। এটাই সাইন্স 😛 আর কোন সাইন্স নাই।

মানুষের লাইফের সব সমস্যা এইভাবে এক্সপ্লোর করা যায় না। ফলে সব সমস্যা সাইন্সের সমাধান করার মত না।

কিন্তু সাইন্সের যা ন্যাচার সেই অনুসারে এক্সপ্লোরেশন চালাইয়া যায়। যাইতে যাইতে লাইফ, লাইফের মিনিং ইত্যাদি নানা বিষয়ে সে তার সবচাইতে পরীক্ষানির্ভর ফলাফল হাজির করে, যেই ফলাফল আবার কিছু নির্দিষ্ট মানের (অনেক সময় অনুমান)  উপর ভিত্তি করে।

অনুমান বা কিছু রুল আগে ঠিক করতে হয় কারন যত ডেটা দরকার রিয়ালিটি নিয়ে অত ডেটা মানুষের কাছে থাকে না। অনেক কিছুই জানার বাইরে বা জানা অসম্ভব।

কিন্তু সাইন্টিফিক মেথড তার পদ্বতিতেই কাজ করবে, হাইপোথিসিস, পরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ।

আরো অনেক ওয়ে আছে লাইফের কোন বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবার।

যেমন জাদুবিদ্যা। নানাবিদ সংস্কার, রীতি। এবং অর্গানাইজড রিলিজিয়ন।

ধর্মপন্থীদের হিপোক্রিসিটা হলো, তারা তাদেরটা ছাড়া অন্যদেরগুলা বাতিল করে।

যেমন জাদুবিদ্যারে ফোর্সলি তারা ধ্বংস করেছে। খ্রিস্টানিটি, ইসলাম এসব অর্গানাইজড ধর্মগুলি। পলিথিয়িস্টিক বা প্যাগান বিলিফগুলিরে ধ্বংস করেছে। উইচ হান্ট থেকে শুরু করে নানা দমন পীড়ণ করেছে, আর তখন সাইন্স এবং খ্রিস্টানিটির লক্ষ্য ছিল এইদিক দিয়ে এক।

এবং আই আর্লি পর্যায় যদি আপনি দেখেন, তাইলে দেখবেন অর্গানাইজড বিবিলিকাল ধর্মগুলির একটা বিজ্ঞানবাদী অবস্থান ছিল। তারা মনে করতো তারাই লজিক্যালি ঠিক। কত শতো পাদ্রী বিশপ এরা বইয়ের পর বই লিখে গেছেন তাদের ফেইথের লজিক্যাল অবস্থান দেখাইতে।

আর্লি সাইন্সের প্রশ্নগুলি মূলত এইসব লেখা থেকে শুরু। অনেক বিজ্ঞানীই পাওয়া যাবে যারা পাদ্রী ছিলেন, যেমন গ্রেগর জোহান মেন্ডেল, যাকে মডার্ন জেনেটিক সাইন্সের জনকও বলা হয়।

সাইন্স আর রিলিজিয়নের বিচ্ছেদ মূলত হইছে দুইটার ন্যাচার দুই থাকার কারণে। সাইন্টিফিক এক্সপ্লোরেশনে থামা নাই, আপডেটেড তথ্য পাইলে অবলীলায় অবস্থান বদলাতে হবে। অন্যদিকে রিলিজিয়ন ফিক্সড। যাই তথ্য পান সব পূর্বের খাপে ফিট করতে হবে।    

যেরকম সাইন্স একটা পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষানির্ভর সিস্টেম, জুদাইজম, ইসলাম ও খ্রিস্টানিটি যেমন মনোথিয়িস্টিক ধারার সিস্টেম যা ফেইথ নির্ভর বলা হয়, তেমনই জাদু বিদ্যা, কালচারাল রীতি, বিভিন্ন প্যাগান ধর্ম বা আর্থ রিলিজিয়ন ও সংস্কারাদিও একেকটা সিস্টেম মানুষ বের করেছিল।

দেখবেন ধর্ম কুসংস্কার নাম দিয়ে নানা সংস্কারের বিরুদ্ধে স্বোচ্চার, যেমন সাইন্সবাদীরা যুক্তি  দিয়ে…এই জায়গায় ধর্মের আর উদারতা ও সম্মিলিত সহাবস্থানের বুলি নাই।

যত সব সিস্টেম মানুষেরা বের করতে পেরেছে, এর মধ্যে অনেক অনেক বিষয়ে সবচাইতে সেরা হলো সাইন্টিফিক পদ্বতি।

অনেক বিষয় আছে সাইন্সের বাইরে যেমন, একটা ভালো আর্ট বা মিউজিক। যেসব জিনিস সাইন্সের বাইরে…ওকে,  এইগুলা সাইন্সের বাইরে। এর জন্য এগুলা ছোটও না। এগুলা জাস্ট সাইন্সের বাইরে। ফাইনম্যান এইরকম একটা কথা বলেছিলেন।

ফাইনম্যান ফিজিক্স লেকচার ভলিউম ওয়ানে, এটাও বলেছিলেন যে, আমাদের পয়েন্ট অব ভিউ থেকে ম্যাথমেটিকসও সাইন্স না, মানে ন্যাচারাল সাইন্স না। কারণ এর ভ্যালিডিটি টেস্ট পরীক্ষার (এক্সপেরিমেন্টের) উপর নির্ভর করে না।

সাইন্টিফিক কম্যুনিটিতে বিলিফের একটা জায়গা রয়ে গেছে, কারণ যেসব মানুষ সাইন্টিস্ট এরা মানুষ। আর মানুষ হলো বিশ্বাসী প্রাণী, তার কগনিটিভ বায়াস আছে। ফলে, অনেক একমপ্লিশড বিজ্ঞানীও মিলে যারা অর্গানাইজড ফেইথ বেইজড সিস্টেম ( অর্গানাইজড রিলিজিয়ন) মানেন, কেউ কেউ একটু ভিন্নভাবেও বিশ্বাসী থাকেন, অনেকে থাকেন আধ্যাত্মিক। আবার আরো অনেকে সাইন্সরেই ধর্ম হিসাবে দেখতে থাকেন, যেটা বিজ্ঞানবাদ, এবং যেটা আনসাইন্টিফিক।