আর্ট অব সেলফিশনেস: নিজেকে গুরুত্ব দেয়া

আপনারে সেলফিশ হইতে হবে, তবে সেই সেলফিশনেস যেন অন্যায় না হয় বা অন্যের ক্ষতি না করে।

সচেতন সেলফিশনেস জীবনে অনেক উপকার করবে। এটি সেলফ আইডেন্টিটির বিকাশের জন্য দরকারী। পৃথিবীর সব গ্রেট ম্যানদের ইতিহাসে দেখবেন তারা কোন না কোনভাবে সচেতন সেলফিশ ছিলেন। এই কারণেই তাদের সমাজরে কিছু দেয়ার ক্ষমতা জন্মাইছিল।

সেলফিশনেস মানুষের একটি প্রাথমিক ড্রাইভ। সবাই সেলফিশ। কিন্তু সচেতন সেলফিশ খুব অল্প লোক হয়, যারা নিজের সেলফরে গুরুত্ব দেয়া, এবং অন্যদের ক্ষতি না করা – এই দুই জিনিস মানিয়ে চলতে পারে।

অসচেতন সেলফিশরা মনে করে তারা সেলফিশ না। কিন্তু ভিতরে ভিতরে সেলফিশ ও আত্মকেন্দ্রিক। এরা সুযোগ পাওয়া মাত্র নিজের স্বার্থে অন্যের ক্ষতি করে। তা না হলে দুনিয়াতে এতো খারাপি থাকত না।

সচেতন সেলফিশনেস দরকারী কারণ ব্যক্তি হিসেবে আপনি আপনার কাছে সবচাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ন। আপনি ভিড় না, আপনি যে ইউনিভার্সিটিতে পড়ছেন, যে দলের সাপোর্টার, যে দলের হেটার, সিনেমাখোর, বইপোকা  ইত্যাদি দিয়ে আপনার পরিচিতি যেন নির্মান না হয়। হলেও নিজের ব্যক্তিস্বত্তার ব্যাপারে সচেতন থাকুন।

ডেভিডের জন্ম আমেরিকার মিসৌরির সেন্ট লুইসে। সে বেড়ে উঠেছিল পাঁচ ভাই বোনদের মধ্যে।

তার বয়স যখন আঠারো বছর তখন সে ভিয়েনার একটি বিখ্যাত আর্ট স্কুলে পড়ার সুযোগ পায়। সেই বিখ্যাত স্কুলে পড়ার স্বপ্ন ছিল তার, কিন্তু কখনো ভাবে নি সুযোগ পেয়ে যাবে।  এ যেন বড় একটি স্বপ্নের বাস্তব হয়ে যাওয়া। স্বভাবতই ডেভিড অনেক উত্তেজিত ছিল। এরকম সুযোগ বার বার আসে না জীবনে।

কিন্তু তখন তার মা মৃত্যুশয্যায়। যেকোন সময় মারা যেতে পারেন। তার সব সন্তানাদি তাকে নিয়মিত প্রতিদিন দেখছেন এসে। এই অবস্থায় ডেভিড কীভাবে তাকে ছেড়ে ভিয়েনায় চলে যায়?

কিন্তু ডেভিড জানত এই সুযোগ একবার মিস হয়ে গেলে আর আসবে না। তাই সে তার ভাইবোনদের বলল, আমি ভিয়েনার আর্ট স্কুলে সুযোগ পেয়েছি। এদিকে মায়ের অবস্থা খারাপ।  এখন কী করব?

তার ভাই বোনেরা বলল, এসব কী বলছ তুমি? মা যেকোন সময় মারা যাবেন। এই অবস্থায় তুমি বাইরে যেতে যাচ্ছ? চরম সেলফিশের মত কথা বলছ তুমি। যে মা আমাদের এত কষ্ট করে লালল পালন করেছেন তার শেষ দিনগুলিতে তুমি তার পাশে থাকবে না?

ডেভিড মারাত্মক চাপ ও দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। একদিকে তার স্বপ্ন এবং অন্যদিকে ফ্যামিলির প্রেশার।

শেষপর্যন্ত সে সেলফিশ হতেই সিদ্ধান্ত নিল। সে চলে গেল ভিয়েনায়।

তার মা তাকে ত্যাজ্য করলেন। তার ভাই বোনেরা তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করল। পাড়া প্রতিবেশীরা বলাবলি করতে লাগল এমন খারাপ ও স্বার্থপর ছেলে আর হয় না।

ডেভিড তার ৩৮ বছর বয়েসে এই গল্প বলতে বলতে বলছিল, এখন, এই বিশ বছর পরেও আমার মা বেঁচে আছেন। আমি আমার স্বপ্নের পিছনে উঠেছি এবং অসাধারণ একটি লাইফ উপভোগ করছি। আর আমার ভাই বোনেরা তাদের লাইফ ছেড়ে দিয়ে মায়ের শয্যা পাশে দাঁড়িয়েই আছে।

এটি ডেভিড সিবুরীর গল্প। ১৮৮৫ সালে জন্ম ১৯৬০ সালে মৃত্যু। আমেরিকান সাইকোলজিস্ট, লেখক এবং লেকচারার।  যিনি হাজার হাজার মানুষের জীবন বদলে দিয়েছেন তার কাজের দ্বারা। এখনো তার লেখার মাধ্যমে অনেক মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলে চলেছেন।

সিবুরী ১৯৩৩ সালে একটি বই লিখেন আর্ট অব সেলফিশনেস নামে। সেখানে তার মূল থিসিসটা ছিল, ঠিক সময়ে সেলফিশ হওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ন। এতে সবারই লাভ হয়। যারা সাময়িকভাবে আহত হয় তাদের সহ, সবারই।

 

নার্স ও লেখিকা বনি ওয়ারের ফাইভ রেগরেটস অব ডাইং দেখলে দেখা যায়, মানুষের সবচাইতে বড় অনুতাপ থাকে যে তার কেন নিজের লাইফটা নিজের মত করে বাঁচার সাহস থাকল না।

নিজের লাইফ থেকে উদাহরণ দেই, যেটি হয়ত কারো কাছে খারাপ লাগতে পারে। প্রসঙ্গক্রমে চলে আসল।

আমি সচেতন সেলফিশ মানুষ। নিজেরে বেশি প্রায়োরিটি দিতে পছন্দ করি ও দেই।

যখন ইউনিভার্সিটি শেষ করলাম তখন স্বাভাবিক ভাবেই আমার উপর প্রেশার ছিল একটা চাকরিতে ঢুকে যাবার। সিভিল এঞ্জিনিয়ারিং এ কাজ শিখতে হলে কোন ফার্মে ঢুকে কয়েক বছর কাজ করতে হয়। কিন্তু এটি আমার পছন্দ না। ফলে আমি চাকরি করি নি।

ফ্যামিলি প্রেশার আসা স্বাভাবিক ছিল। কারণ সিভিল এঞ্জিনিয়ারিং পড়েছি। জব আমাকে সাধারণ হিসেবে এই ফিল্ডেই করতে হবে। সুতরাং অভিজ্ঞতা দরকারী, এবং এর জন্য শুরুতেই চাকরিতে লাগা দরকারী।

আমি আমার নিজের লেখালেখি ও লার্নিং করে গেলাম। আমার হিসাব ছিল, এই সিদ্ধান্ত বেটার। কারণ এটি করলে ফিউচারে টেক স্টার্টাপ আমি দিতে পারব, বা স্টার্টাপে ভালো কাজ করতে পারব। ( ইতিমধ্যেই কয়েক বছরে আমার দুইটি স্টার্টাপ, ও কয়েকটি ওয়েবসাইট ব্যর্থ হয়।)

প্রায় তিন বছর পরে আমি এখন যেখানে কাজ করছি সেখানে এপ্লাই করি, এবং জব হয়। প্রথমেই আমি উইডেভসের ( ক্রাঞ্চবেইজের পাবলিক এস্টিমেশন মতেই যার বাৎসরিক রেভিনিউ ১.৫ মিলিয়ন ডলার) মত দেশের সবচাইতে সফল একটি কোম্পানিতে কনসালটেন্ট বা এনালিস্ট টাইপের জবে প্রবেশ করতে পারি, যেখানে ইনোভেশন ল্যাব চালানোর কাজ ছিল আমার। আমার কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না কোম্পানিতে কাজের ও ব্যাকগ্রাউন্ড একাডেমিক পড়ালেখা ছিল না। এমনকি এই জবের সার্কুলারও তারা দেয় নি, আমার সাথে ইন্টার্ভিউয়ের সময়ই এই জব তৈরি করা হয়। তাও, আমি উপরের লেভেলের পজিশনে ঢুকতে পেরেছি লার্নিং এর জন্য [এবং লাক অবশ্যই]।

বর্তমানে এখানে আমার কাজের অবস্থান হচ্ছে ভিপি অব গ্রোথ, বা গ্রোথ ম্যানেজার।

আমি এটাকে বড় সাফল্য বলছি না। এগুলা ছোট জিনিস। তাছাড়া ফিউচারে কী হবে আমি জানি না। কোন জিনিস আমাদের জন্য সফলতা না ব্যর্থতা তা আসলে সেই সময়ে বুঝা যায় না। অনেক সময় দেখা যায় যেটা সফলতা মনে হয়েছিল সেটাই ছিল ব্যর্থতা, বা যেটি ব্যর্থতা মনে হয়েছিল সেটাই সফলতার শুরু। এজন্য সেকন্ড অর্ডার থিংকিং করতে হয় আমাদের।

মূল সফলতা হল, আপনার যদি স্বাধীনতা থাকে ও দিনে আপনি যা করতে লাইক করেন তা করতে পারেন। আমি এটা সব সময়ই করতে পেরেছি এখন পর্যন্ত। ফলে এই জব রিলেটেড ছোট বিষয় দিয়ে সফলতা পরিমাপ করতে চাই না।

বইয়ের ক্ষেত্রে বললেও একইকথা। বই লেখার জন্য আমি কখনো উৎসাহ পাই নি। কারণ এইসব ক্রিয়েটিভ কাজে হাতে হাতে ফল মিলে না। আমি যখন কোন জব করছিলাম না তখন অনেকে ভাবতেন আমার লেখালেখির কারণে এটা হচ্ছে। লেখার দিকে বেশি মনোযোগ চলে গেছে তাই আমি কাজ করছি না। ফলে আমার লেখালেখি হয়ে উঠত ভিক্টিম। কিন্তু এগুলিকে আমলে নেয়ার কোন কারণ দেখি নাই। লেখে গেছি। তাতে আমার মনের আনন্দ বজায় থেকেছে। বই হচ্ছে, লেখা হচ্ছে।

ফ্যামিলির কথা শুনলে কিছুই হত না।

এখন আমি বলছি না ফ্যামিলি আমার বা আপনার খারাপ চায়। তারা ভালোই চায়। কিন্তু তাদের কাছে অত ইনফরমেশন নাই যত ইনফরমেশন আমার কাছে আছে আমার সম্পর্কে। তারা তাদের অভিজ্ঞতা থেকে, অন্য ছেলেদের দেখে তাদের সিদ্ধান্ত তৈরি করছে। কিন্তু আমি তো জানি আমি কী করছি। আমি পাঁচ বছর প্রতিদিন ৫ ঘণ্টা সিরিয়াস পরিশ্রম করে গেলে আমি জানি আমি কী করছি, এবং তার সম্ভাব্য ফল কী হতে পারে। অন্যের কাছে তো এই ইনফরমেশন নেই। তার মনে হতে পারে আমি প্রতিদিন ফেইসবুকিংই করি।

তাছাড়া সময় বদলে গেছে। টেকনোলজির কারণে কর্মপদ্বতি ও ক্ষেত্র বদলে যাচ্ছে। এই আপডেটের ইনফরমেশন যার কাছে নেই সে তো বুঝবে না কী হচ্ছে ও হবে।

ফলে, বেটার হল, নিজে ব্যাপারটা বুঝতে পারলে সেলফিশ ডিসিশন নেয়া। এটা সবার জন্যই ভালোটা নিয়ে আসে।

 

“Don’t forget to love yourself.”

Soren Kierkegaard, Danish Philosopher