ট্রমা নিয়ে একটি দারুণ লেখা পড়েছিলাম নিউ ইয়র্ক টাইমসে। একজন সাইকিয়াট্রিস্ট লিখেছেন। তার নাম মার্ক এপ্সটাইন। তিনি ট্রমা অব এভ্রিডে লাইফ নামক বইয়েরও লেখক।
ভদ্রলোক তার লেখায় সহজভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ট্রমা তথা মানসিক আঘাত কখনো সেরে উঠে না। ভিতরে ঘাপটি মেরে বসে থাকে। অন্য কোন মানসিক আঘাতের প্রতিক্রিয়ায় তা আবার উঠে আসতে পারে।
আমি একজন ভদ্রলোককে চিনতাম। তার মধ্যবয়সে একবার পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধের কিছু পরে। তখন তার প্রাণ বিপন্ন ছিল। তিনি খুব নিরীহ ধরনের মানুষ ছিলেন। তাই মারাত্মকভাবে ভীত হয়ে পড়েন। তার পরিবারের লোকজনও প্রায় এক রকম আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি বেঁচে যান। এবং ভালোভাবেই ফিরে আসেন।
এর অনেক বছর পরে তিনি বৃদ্ধ হয়ে মারা যান। মারা যাবার আগে কিছুদিন তিনি ঘর থেকে বের হয়ে যেতেন পুলিশের ভয়ে। পুলিশের ভয়ে তিনি মৃত্যুর আগে আবার ভীত হয়ে পড়েন। সেই মধ্যবয়সের ভয় তার ভেতরে লুকিয়ে ছিল। বৃদ্ধ বয়সে তার সেই ভয় আবার উঠে আসে।
“স্পয়লার বিদ্যমান। তাই নিম্নোক্ত ফিল্মগুলো না দেখে থাকলে এবং দেখার ইচ্ছা থাকলে না পড়াই ভালো-
১। শাটার আইল্যান্ড
২। লস্ট হাইওয়ে
৩। আওয়ার চিলড্রেন (ফ্রেঞ্চ)
৪। সিক্রেট উইনডো”
মার্টিন স্করসেস পরিচালিত, লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও অভিনীত শাটার আইল্যান্ড (২০১০) মুভিতে ট্রমাতে বিধ্বস্ত এক আমেরিকান মার্শালকে দেখানো হয়েছে। ডেনিস লিহ্যানে নামক লেখকের একই নামের উপন্যাসের (২০০৩) উপর ভিত্তি করে ফিল্মটি নির্মিত। যে যুদ্ধে অসংখ্য হত্যা করেছে এর জন্য অপরাধবোধে ভুগত। তার স্ত্রী মানসিকভাবে অসুস্থ ছিল। একদিন তার স্ত্রী তাদের তিন বাচ্চাকে পানিতে ডুবিয়ে মেরে ফেলে। মার্শাল এজন্য খুন করে তার বউকে। বউয়ের নিজের সন্তান মেরে ফেলার কাহিনী তাহার রাহিম অভিনীত ফ্রেঞ্চ মুভি আওয়ার চিল্ড্রেনেও (২০১২) পাওয়া যাবে। এছাড়া হুমায়ুন আহমেদের মিসির আলী সিরিজের গল্প জিন কফিলেও একই বিষয় আছে।
শাটার আইল্যান্ডে মূল ঘটনা ফিল্মের শেষে জানা যায়। ফিল্মের প্রথমে দেখা যায়, মার্শাল তার এক সহকারী নিয়ে এসেছে শাটার আইল্যান্ডে। শাটার আইল্যান্ডে ভয়ানক মানসিক রোগীদের চিকিৎসা করা হয়। একজন মানসিক রোগী, যে তার তিন বাচ্চাকে পানিতে চুবিয়ে মেরে ফেলেছিল সে হঠাৎ করে পালিয়ে গেছে। তার তদন্তেই মার্শালের আসা।
ফিল্মের অগ্রগতির সাথে জানা যায় মার্শাল আসলে জানতে পেরেছে এই শাটার আইল্যান্ডে মানসিক রোগীদের নিয়ে ভয়ংকর সব পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। যেমন নাৎসীরা করত, রাশিয়ানরা করত গুলাগে (আমেরিকা যে করে না বা করে নি এমন নয়)। তাই সে এই আইল্যান্ডের তথ্য বাইরে প্রকাশ করে দিতে চায়। এজন্যই সে এখানে এসেছে মূলত।
মার্শালের এই নতুন চরিত্র তৈরী, নিজের যুদ্ধে করা অপরাধবোধের বিপরীতে বেঁচে থাকার এক প্রয়াস। অপরাধবোধে আক্রান্ত সে ছিল এক খারাপ লোক, যে যুদ্ধে অনেক খুন করেছে, তার স্ত্রীকে খুন করেছে। কিন্তু নতুন সৃষ্ট চরিত্রে সে একজন ভালো লোক যে শাটার আইল্যান্ডের সংঘটিত অন্যায় অপরাধ বাইরের বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে চায়।
এই ফিল্মের কাহিনী একই রকম আরেকটি ফিল্ম লস্ট হাইওয়ের (১৯৯৭) কথা মনে করিয়ে দেয়। ডেভিড লিঞ্চ লিখিত এবং পরিচালিত লস্ট হাইওয়ের আরেকটু বেশী কাফকায়েস্ক বা সারেয়াল। শাটার আইল্যান্ডে যেভাবে একটি ব্যাখ্যা হাজির করা হয়েছে শেষের দিকে সাইকিয়াট্রিস্টদের মাধ্যমে, লিঞ্চের লস্ট হাইওয়েতে এমনটা করা হয় নি। লস্ট হাইওয়েতে একটা লোক মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে অতি সন্দেহপ্রবণ হয়ে যায় এবং তার বউকে খুন করে। বউয়ের প্রতি তার সন্দেহের কারণ ছিল ফ্রয়েডিয়ান, যা জিজেক ব্যাখ্যা করেছেন তার পার্ভার্ট’স গাইড টু সিনেমা (২০০৬) ফিল্মে।
বউকে খুন করার পর সে নিজের কাছে এর জাস্টিফিকেশন তৈরীর জন্য এক কল্পণা করে। অন্যতম জটিল প্লটের এক ফিল্ম। বলা যায় একজন মানসিকভাবে অসুস্থ মানুষের মাথার ভিতরে কী হচ্ছে তা দেখে নেয়া। দুর্বোধ্যতার জন্য অনেকে একে বাজে রেটিং দিয়েছে। রজার এবার্ট দিয়েছেন মাত্র দুই। কিন্তু এই ফিল্মের একটি বিশেষত্ব আছে। এর ব্যাখ্যা উপস্থিত না করার ফলে বিভিন্নভাবে একে ভেবে নিতে পারবেন দর্শকেরা।
স্টিফেন কিং এর গল্প থেকে নির্মিত জনি ডেপ অভিনীত সিক্রেট উইনডো (২০০৪) ফিল্মও বলা যায় প্রায় একইরকম একটা সাইকোলোজিক্যাল থ্রিলার। সেখানে জনি ডেপ একজন মানসিকভাবে অসুস্থ লেখকের ভূমিকায় অভিনয় করেন।
Very nicely written, Thank you for your outlook. I loved all the movies.
I will recommend to watch Room 1408 – which has a very similar mental event and another movie called 6th Sense.
Thank you.