তখনকার পরিস্থিতি ও গল্পের প্রেক্ষাপট
দ্য লাস্ট কিংডম চার সিজন দেখলাম। কিছু জিনিশ লেখা দরকার। যেহেতু কাহিনী নিয়ে তাই এই লেখায় স্পয়লার থাকবে। যাদের দেখার ইচ্ছা তারা আগে দেখে নিয়ে পরে পড়তে পারেন।
দ্য লাস্ট কিংডমের কাহিনী একেবারে সাধারণ। প্রফেসর জোসেফ ক্যাম্পবেলের মনোমিথ বা হিরো’জ জার্নির স্ট্র্যাকচারে গল্পের কাহিনী আবর্তিত।
সাধারণভাবে কাহিনীর প্রেক্ষাপট এমন, ইংল্যান্ড তখন একত্রভাবে ইংল্যান্ড হয় নি, আলাদা রাজ্যে বিভক্ত। ওয়েসেক্স, ওয়ালস, মার্সিয়া, ইস্ট এংলিয়া, নর্থাম্ব্রিয়া।
তার একটা অংশে ড্যানিশ বা ভাইকিংসদের আধিপত্য। এরা ডেইনল্যান্ড থেকে জাহাজে করে এসেছে, সম্পদের জন্য এরা মানুষ খুন করে।
ইংল্যান্ডের রাজ্যগুলিতে এরা নিয়মিত হানা দেয়।
ওয়েসেক্স একটা স্যাক্সন রাজ্য, যার রাজা হন কিং আলফ্রেড, তিনি একত্র ইংল্যান্ডের স্বপ্ন দেখেন। ড্যানিশদের বিতাড়িত করে বা ড্যানিশদের তার অধীনে রেখেই তিনি সমগ্র ইংল্যান্ডের রাজা হবেন এটা তার ইচ্ছা। তিনি মনে করেন এটা তার ঐশ্বরিক দায়িত্ব। এর মাধ্যমেই তিনি এক খ্রিস্টান ইংল্যান্ড তৈরি করে যাবেন।
মূল সংঘর্ষ, স্যাক্সনদের সাথে আগ্রাসী ডেইনদের।
স্যাক্সনরা খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাসী। এক ঈশ্বরে তাদের বিশ্বাস। অন্যদিকে ডেইনরা প্যাগান। তারা বহুঈশ্বরে বিশ্বাসী, এবং একেশ্বরবাদী এই খ্রিস্টান ধর্মকে অপমান করতে তারা আনন্দ পায়।
ডেইনদের সরাসরিভাবে বর্বর, অসভ্য ও আগ্রাসী হিসেবে চিত্রায়িত করা হয়েছে। অন্যদিকে স্যাক্সন খ্রিস্টান রাজা আলফ্রেডকে ভালো হিশেবে। ফলে, সরাসরি ভালো মন্দের ভাগ আছে গল্পে, তাই এইদিক থেকে সাধারণ গল্পের প্রেক্ষাপট।
দ্য লাস্ট কিংডমের মূল ক্যারেক্টার উথ্রেড, যার জন্ম নাম ছিল অসবার্ট। যে বেবেনবার্গের লর্ডের ছেলে। ডেইনরা একবার বেবেনবার্গ আক্রমণ করে, এবং তার বড় ভাই উথ্রেডকে হত্যা করে। তখন তার বাপ তারে উথ্রেড নামে ব্যাপটাইজ করান।
ডেইনদের সাথে যুদ্ধে উথ্রেডের বাপ মারা যান। ডেইনরা উথ্রেডকে ধরে নিয়ে যায়।
ঘটনাক্রমে, ধরে নিয়ে যাওয়া ডেইন বীর র্যাগনার দ্য ফিয়ারলেস তারে ছেলের মর্যাদা দিয়ে পালন করে। তখন উথ্রেডের পরিচয় হয় উথ্রেড র্যাগনারসন।
সেইখানে, আরেকজন ডেইন, কিয়াটান একদিন ঘটনাক্রমে অতর্কিত আক্রমণ করে র্যাগনার দ্য ফিয়ারলেসের ঘর জ্বালিয়ে দেয়। তাকে পুড়িয়ে মারে।
উথ্রেড তখন ঘুরতে থাকে তার বাপ র্যাগনার দ্য ফিয়ারলেসের হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য। তার তুলে নিয়ে যাওয়া বোন থোরাকে উদ্ধার করার জন্য। আর তার মূল পিতৃভূমি বেবেনবার্গ উদ্ধার করার জন্য, যেটি তার চাচা দখল করে রেখেছে।
এই উথ্রেড কিং আলফ্রেডের যোদ্ধায় পরিণত হয়।
কিং আলফ্রেড তাকে কৌশলে “শপথ” করিয়ে আটকে রাখেন। তিনি উথ্রেডকে বিশ্বাস করতে পারেন না, কারণ উথ্রেড খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করতে চায় না। সে তার প্যাগান ঈশ্বরে বিশ্বাস করে। একইসাথে আলফ্রেড এটাও বুঝতে পারেন, সে কথা দিলে তা রাখে।
সুতরাং, গল্পের মূল দ্বন্দ্ব এই জায়গায় চলে আসে, কিং আলফ্রেড এমন একজনের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে একক খ্রিস্টান রাজ্যের স্বপ্ন দেখছেন, যে নিজেই একজন অবিশ্বাসী। ঈশ্বরে বিশ্বাসী কিং আলফ্রেড এই কারণে মনোযাতনায় ভুগেন। তার প্রায়ই মনে হতে থাকে, এই উথ্রেড হয়ত শয়তানের সাহায্যকারী, যে সাহায্য করছে শয়তানের ইশারায়, আর এভাবেই কিং আলফ্রেডকে তার প্রতি নির্ভরশীল করে তোলে ঈশ্বরের পথ থেকে সরাতে চাইছে।
উথ্রেড অব বেবেনবার্গ
উথ্রেডের চরিত্রের বৈশিষ্ট্য তার বোল্ডনেস। সে ভাবনা চিন্তা না করে প্যাশন থেকে কাজ করে। আলফ্রেডের কমান্ডার হিসাবে কাজ করলেও তার প্যাগান ধর্ম বিশ্বাস ছাড়ে না। যুদ্ধে, আক্রমণে সে ফিয়ারলেস। সে তার ভেতরের গুডনেস দ্বারা পরিচালিত।
উথ্রেডের লাইফ দেখলে, আমরা একজন হিরোর লাইফ দেখতে পাই।
প্রথমত, তার আত্মপরিচয়ের সংকট। উথ্রেড অব বেবেনবার্গ, উথ্রেড সান অব উথ্রেড, উথ্রেড র্যাগনারসন, কিং আলফ্রেডের সোর্ড এন্ড শিল্ড, উথ্রেড দ্য ডেইনস্লেয়ার, উথ্রেড দি কিংমেকার, প্রটেক্টর অব ওয়েসেক্স, উথ্রেড দি আউটল, উথ্রেড দি গডলেস – এইসব পরিচয়ের মধ্যে ঘুরে বেড়ায় সে, এবং এই ভয়ও তার ভেতর আসে, সে কি উথ্রেড অব নো হয়ার। সে একজন স্যাক্সন, কিন্তু বড় হয়েছে ডেইন হিসাবে, বিশ্বাস করে ডেইনদের ধর্মে কিন্তু যুদ্ধ করে খ্রিস্টান ধর্ম রাজ্য তৈরিতে। সে যখন ওয়েসেক্স থেকে আউট ল হয়, আবার ডেইনদের সাথে মিলতে গিয়ে ওয়েসেক্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে দেখে ওইখান থেকেও সরে আসে, তখন সে এমন অবস্থায় পড়ে যে সে, না ডেইন, না স্যাক্সন। উথ্রেড দি নাথিং।
উথ্রেড কী দ্বারা পরিচালিত হয় এটা বুঝার বিষয়। কিং আলফ্রেডের ক্ষেত্রে দেখা যায় একজন মারাত্মক বুদ্ধিমান মানুষ, অনেক ক্যালকুলেটিভ, তার লক্ষ্য একক ইংল্যান্ড প্রতিষ্ঠা, যেটি হবে গডের কিংডম। উথ্রেডের এরকম কোন লক্ষ্য নাই। প্রথমদিকে তার লক্ষ্য হিসাবে সামনে ছিল তার বাপের এলাকা বেবেনবার্গ উদ্ধার করা। তখন থেকেই সে নিজেকে উথ্রেড অব বেবেনবার্গ বলত, কারণ জন্মসূত্রে সে ওইখানকার লর্ড। তার এই অহংকার দেখে কিং আলফ্রেড তাকে বলেছিলেন, ইউ উথ্রেড অব নো হয়ার।
সময় যত যায় তত দেখতে পাই উথ্রেড তার ডেস্টিনি দ্বারা চালিত। এই ডেস্টিনিতে বিশ্বাস তার প্যাগান ধর্ম বিশ্বাসের অংশ। ঈশ্বরেরা আমাদের পরিচালিত করছেন। তাদের কাছে এটা খেলার মত। তারা এগুলি কেন করছেন আমরা তা বুঝতে পারি না। সময়ের সাথে সাথে উথ্রেডের মুখে এই কথা শোনা যায় কয়েকবার, সে এই চিন্তার দিকে চলে যায়। ডেস্টিনি ইজ অল।
উথ্রেডের কোন এম্বিশন নেই। সে রাজা হতে চায় না। অন্য সবার মত ল্যান্ড এন্ড সিলভারই ছিল তার কাছে মুখ্য প্রথমদিকে। একক ইংল্যান্ডের স্বপ্ন তার কাছে অর্থহীন। কিন্তু ঘটনাক্রমে, কিং আলফ্রেডের কাছে বার বার কথা দিতে বাধ্য হয়ে সে একক ইংল্যান্ডের স্বপ্নের সাথে জড়িয়ে পড়ে। তার কাছে মূলত এটা তার দেয়া কথা রাখতে হবে, এবং পরবর্তীতে এটা দায়িত্ব বা তার ডেস্টিনি হয়ে যায়।
এখানে আমরা ইতালিয়ান পণ্ডিত উম্বের্তো একোর একটা কথা স্মরণ করতে চাই। একো বলেছিলেন, একজন হিরো হিরো হতে চায় না, সে অন্যদের মতই সৎ কাপুরুষের জিন্দেগি যাপন করতে চায়।
কিন্তু, দায়িত্ব হিরোর উপরে গিয়ে পড়ে। একসময় সে দেখতে পায় এটাই তার ডেস্টিনি।
উথ্রেড ও কিং আলফ্রেড
কিং আলফ্রেড এই ফিল্ম গল্পের আরেক নায়ক। তার পদ্বতি ভিন্ন। তিনি সরাসরি হিরোয়িক না। কিন্তু বড় এক উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তিনি তার জীবন অতিবাহিত করেন। ফিল্মের গল্প যত আগায় তত আমরা দেখতে পাই তিনি তার সেই স্বপ্নের প্রতি কত অবসেসিভ।
অধ্যাপক জোসেফ ক্যাম্পবেল হিরোর সংজ্ঞায় বলেছিলেন, হিরো হচ্ছে সে যে তার নিজের জীবনের চাইতে বড় কিছুতে নিজেকে উৎসর্গ করেছে।
এই হিসাবে কিং আলফ্রেড হিরো।
প্রথমদিকে তার সাথে উথ্রেডের দ্বন্দ্ব, তাদের লাভ হেইট রিলেশনশিপ গল্পের প্রধান দ্বন্দ্ব হিসেবে কাজ করে।
কিং আলফ্রেড মৃত্যুর আগে লাইব্রেরী কক্ষে উথ্রেডের সাথে যে কথাবার্তা বলেন, তা এই গল্পের সবচাইতে সেরা অংশ। আমরা গল্পটির মেজর দ্বন্দ্বের মীমাংসা এখানে দেখি। দুই প্রধান চরিত্র নিজেদের অবস্থান ও পারস্পারিক সম্পর্ক সরাসরি বুঝে নিচ্ছে।
কিং আলফ্রেড তখন অসুস্থ। যেকোন সময় মারা যাবেন। কিছুদিন আগে উথ্রেডকে তিনি ওয়েসেক্সে আউট ল ঘোষনা করেছেন। তাকে দেখা মাত্র হত্যার বিধান। কারণ ঘটনাক্রমে সে উইটানদের উপস্থিতিতে, রাজার সামনে চড় মেরে এক পাদ্রিকে মেরে ফেলেছিল, এবং রাজার গলায় ছুরি ধরেছিল। উথ্রেডের ক্ষোভের কারণ আছে। সে বার বার ওয়েসেক্সকে বিপদ থেকে উদ্ধার করে গেছে। বিনিময়ে কিছুই পায় নাই। বরং আলফ্রেড তাকে নানা অছিলায়, কৌশলে নতুন প্রতিজ্ঞায় বাঁধতে চেয়েছেন, বিশ্বাস করেন নি।
আরেকটা ওয়ান্ডাফুল সিন, যখন আলফ্রেড মারা যাবার পর রানী লেডি এলসউইথ বিশ্বাস করেন না আলফ্রেড উথ্রেডকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, এবং তিনি তাকে বন্দী করতে চান ও শুনিয়ে দেন ক্রনিকলের কোথাও তার নাম নেই। তখন উথ্রেড যে ডায়লগগুলি দেয় তা এই ফিল্মের আরেক ইমোশনাল জায়গা।
But I am there! Unwritten, lady, but I am there! The warriors of Wessex know it. The danes know it. And it is what the king himself has told me. I am with them from the Somerset Marches to Ethandun and all of the battles that have followed…we were bonded him and I. He was the man I could never be, nor did I wish to be. He was a man that I loved and despised…but it was never less than honor to serve him.
He was my king!
একজন হিরো
একজন হিরোর কী কী চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থাকতে হয়, এ নিয়ে ২০১৫ সালে জার্নাল অব পার্সোনালিটি এন্ড সোশ্যাল সাইকোলজিতে প্রকাশিত একটি স্টাডি ১২ টি বৈশিষ্ট্যের কথা বলে। উথ্রেডের ভেতরে এসব বৈশিষ্ট্য আছে কি না দেখা যাক।
১। সাহসিকতা – উথ্রেডের ভেতরে এটি রয়েছে। পুরো সিরিজই তার সাহসিকতায় পূর্ণ।
২। কনভিকশন – কোন স্ট্রং বিশ্বাস বা মত। উথ্রেডের ক্ষেত্রে সে বেবেনবার্গ পুনরায় দখল করবে, সে বেবেনবার্গের লর্ড, এই কনভিকশন শুরু থেকেই ছিল, যখন তার কিছুই ছিল না। এছাড়া, যুদ্ধে কোন সিদ্ধান্ত যখন সে নেয়, অন্যরা না মানতে চাইলে সে একাই পদক্ষেপ নিতে পারে, এটা তার স্ট্রং কনভিকশনের প্রমাণ।
৩। সৎসাহস – উথ্রেডের সৎসাহস প্রচুর। সে তার এই সাহসিকতা দেখাতে অগ্র পশ্চাৎ বিবেচনা করে না।
৪। প্রতিজ্ঞাবদ্ধতা- সে তার বাপ র্যাগনার দ্য ফিয়ারলেসের হত্যার প্রতিশোধ নিতে যেমন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, তেমনি তার জন্মভূমি উদ্ধারে। স্ট্রং ডিটারমিনেশন তার চরিত্রের বড় অংশ।
৫। সাহায্যকারী – সে অন্যদের সাহায্য করে। লাস্ট কিংডমের গল্প বেশিরভাগই ওয়েসেক্সকে উথ্রেডের নিঃস্বার্থ সাহায্যের গল্প।
৬। সততা – উথ্রেড সৎ। সে যখন আলফ্রেডের কাছে প্রতিজ্ঞা করে, ইচ্ছে করলেই ঐ প্রতিজ্ঞা ভাঙ্গতে পারত, কিন্তু কখনো ভাঙ্গে না। ডেইনদের একজন বড় নেতা র্যাগনার র্যাগনারসন তার প্রিয় ভাই, যে ভাই তাকে বার বার অনুরোধ করে ফিরে আসতে, কিন্তু উথ্রেড যায় না কারণ সে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করতে নারাজ।
৭। অনুপ্রেরণামূলক – উথ্রেড সৈন্যদের মাঝে, ও তার সঙ্গী সিথ্রিক, ফিনান এদের জন্য অনুপ্রেরণামূলক। তার কাজকর্ম ও কথাবার্তায় এরা সাহস পায়। ইভেন, লাস্ট কিংডমের বেশীরভাগ চরিত্রের ভরসাই উথ্রেড, এটা বলা যায়।
৮। নৈতিক সততা বা মরাল ইন্টেগ্রিটি – এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। উথ্রেডকে তিনবার ব্যাপটাইজ করানো হয়। সে চাইলে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করে কিং আলফ্রেডের প্রিয় পাত্র হতে পারত। কিন্তু তার কথা ছিল, যে জিনিশ আমি বিশ্বাস করি না, ঐ জিনিশ আমি মানব না। উথ্রেডের মরাল ইন্টেগ্রিটি এত বেশি যে, তার নিজের ছেলে যখন ঘটনাক্রমে ছোট পাদ্রি হয়ে যায়, তখনো সে তার মত থেকে ফিরে আসে নি। একজন হিরো কখনো চালাকি করে না।
৯। রক্ষাকারী বা প্রটেক্টটিভ- উথ্রেড কিংডম অব ওয়েসেক্সের রক্ষাকর্তা, তার ফ্যামিলির রক্ষা করে, পরবর্তীতে আলফ্রেডের মেয়ে, ও মার্সিয়ার রানী এথেলফ্লেডরে রক্ষা করে বার বার। উথ্রেডই রক্ষার ক্ষেত্রে তাদের শেষ ভরসা। কিং আলফ্রেড এ নিয়ে মনোযাতনায় ভুগতেন। তার বিশ্বাস ছিল একমাত্র গডই রক্ষা করেন। পরে এই বলে নিজেকে আশ্বস্থ করেন, আসলে গড মানুষের মাধ্যমেই কাজ করেন, এই ক্ষেত্রে সেই মানুষ উথ্রেড।
১০। আত্মত্যাগ ও ১১। স্বার্থহীনতা – লাস্ট কিংডমের গল্প উথ্রেডের আত্মত্যাগের ও পরার্থপরতার গল্প। সে নিজের স্বার্থ দেখে কাজ করে না। যখন দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, তখন ওয়েসেক্সের জন্য আত্মত্যাগ করতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করে না। তার আত্মত্যাগের অনেক নিদর্শনের মধ্যে একটি হলো, যখন ডেইনরা কিং এডওয়ার্ডকে তার দুই ছেলের একজনকে বেছে নিতে বলে, তখন উথ্রেড এগিয়ে যায়। সে নিজেকে তাদের হাতে ধরা দিয়ে বিনিময়ে রাজার দুই পুত্রকে ফেরত আনে। প্রতি সিজনেই সে তার আত্মত্যাগ দ্বারা ওয়েসেক্সকে ঋণী করে।
১২।স্ট্রেংথ – শক্তি, শারীরিক ও মানসিক, দুই ক্ষেত্রেই উথ্রেড অনেক এগিয়ে। তাকে দাস হিসেবে ধরে নিয়ে জাহাজে মানবেতর ভাবে খাটায় ডেইনদের একদল। সেই কঠিন সময়ে সে নিজে বেঁচে থাকে ও তার সঙ্গীদের মানসিক শক্তি যোগায়। শারীরিক শক্তি, সাহস ও যুদ্ধ পারদর্শীতার প্রমাণ প্রতিটি যুদ্ধে দেখা যায়, ডেইনদের বড় বীর উব্বা র্যাগনারসনকে হত্যা যার এক উদাহরণ।
কিং আলফ্রেডের যুদ্ধ, পশ্চিমা রাজনৈতিক চিন্তায় ম্যাকায়াভেলি ও উথ্রেড
লাস্ট কিংডমে কিং আলফ্রেডের ভাতিজা এথেলউল্ড রাজা এথেলরেডের ছেলে, সেই হিসাবে উত্তরসুরি হয়ত সে হতো। কিন্তু সে ছিল অযোগ্য। ফলে রাজা তার ভাইকে রাজত্ব দানের পক্ষে ছিলেন, এবং রাজা মারা যাবার পর উইটানরা আলফ্রেডকে ক্ষমতায় বসান।
এটি এথেলউল্ড মানতে পারে না। সে মনে করতে থাকে তার প্রতি অন্যায় হয়েছে, তার রাজত্ব তার কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছে।
এথেলউল্ডের ভেতরে থাকা এই “অন্যায়ের স্বীকার হয়েছি” মনোভাব, এবং তার কৃতজ্ঞতাহীনতার প্রকাশ দি লাস্ট কিংডমে দেখা যায়। একসময় এথেলউল্ড কিং আলফ্রেডের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। জন্মভূমি ওয়েসেক্সের বিরুদ্ধে আক্রমণ করতে ডেইনদের সংঘবদ্ধ হতে বুদ্ধি দেয়, ও তাদের সাথে হাত মেলায়।
পরে ডেইনরা তাকে আবার ওয়েসেক্সে পাঠায় এখান থেকে এক সৈন্যদল তাদের সাহায্যে পাঠানোর জন্য। এথেলউল্ড কিং আলফ্রেডের কাছে ফিরে আসে ও মিথ্যা বলে যে, সে ভুল বুঝতে পেরে ফিরে এসেছে।
এই জায়গাতে কিং আলফ্রেড একটা বড় সমস্যায় পড়েন। বিশ্বাসঘাতকতা ও ষড়যন্ত্রের জন্য এথেলউল্ডকে তার শাস্তি দিতে হবে। শৃঙ্খলা, রাজার শক্তিক্ষমতা সম্পর্কে অন্যান্যদের ধারণা ইত্যাদি বজায় রাখার জন্য এই শাস্তি জরুরী। রানী শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড চান। উইটানরা এমনই প্রত্যাশা করেন। কিন্তু কিং আলফ্রেডের মন এতে সায় দেয় না। তিনি তার ভাইয়ের ছেলেকে কীভাবে হত্যা করবেন, এত বড় শাস্তি দিবেন, এটা তিনি মানতে পারেন না।
যদিও তিনি জানতেন তিনি এখন অসুস্থ, যেকোন সময় মারা যাবেন। তিনি মারা গেলে তার ছেলে এডওয়ার্ড রাজা হতে চাইলে এথেলউল্ডই এর বিপক্ষে থাকবে। সে নিজে রাজা হতে চাইবে ও ষড়যন্ত্র করবে।
কিন্তু তবুও তিনি তার ভাইয়ের ছেলেকে হত্যা করতে মনস্থির করতে পারলেন না। তিনি বললেন, ঈশ্বর যে প্রাণ দেন সে প্রাণ আমি কীভাবে কেড়ে নেব।
ইতালিয়ান রাজনৈতিক চিন্তক ম্যাকায়াভেলি তার দ্য প্রিন্স বইতে রাজাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, রাজার উচিত একইসাথে ভালোবাসা ও মানুষের ভয় দুইটাই অর্জন করার চেষ্টা করা। কিন্তু একসাথে এই দুইটা অর্জন প্রায়ই অসম্ভব। যদি এমন হয়, ভয় না ভালোবাসা কোনটা বেছে নিতে হবে, তাহলে যেন তিনি নির্ধিদ্ধায় ভয় বা ত্রাস কায়েম করাকে বেছে নেন।
এই উপদেশের পেছনে মানুষের প্রকৃতি সম্পর্কে ম্যাক্যায়াভেলির এক বিশ্বাস দায়ী ছিল, তিনি যেটাকে মনে করতেন ভাববাদী ধারণার বিপরীতে বাস্তব ধারণা। আলফ্রেডকে উপদেশ দিলে, ম্যাক্যায়াভেলি বলতেন অবশ্যই যেন তিনি তার ভাতিজা এথেলউল্ডকে মৃত্যুদণ্ড দেন। আলফ্রেড ম্যাকায়াভেলির পথে গেলেন না, তিনি শাস্তি দিলেন ওয়েসেক্সের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার জন্য এথেলউল্ডের এক চোখ তুলে নেয়া হবে, কিন্তু সে বেঁচে থাকবে। এভাবে, একইসাথে তিনি শাস্তির ভয়ও দেখালেন, এবং নিজেকেও নিজের ধর্মের দৃষ্টিতে যা অন্যায় তা থেকে দূরে রাখলেন।
কিং আলফ্রেড এবং ম্যাকায়াভেলির প্রিন্সের চিন্তার পার্থক্য দিয়ে রাজনৈতিক দর্শনের কিছু জিনিশ বুঝা যায়, যা আমাদের বর্তমান সমাজ বুঝার ক্ষেত্রেও কাজে লাগার মত হতে পারে।
কিং আলফ্রেড খ্রিস্টান ধর্মের ভক্ত, দুনিয়াতে ঈশ্বরের রাজ্য বানাতে চান। সেইন্ট অগাস্টিনের সিটিজ অব গড বা খ্রিস্টান ইউনিভার্সালিজমের ধারণা তার ভেতরে কাজ করে। দয়া, মায়া, ত্যাগ, শত্রুকে ক্ষমা করা, ঈশ্বরের প্রতি অগাধ আস্থা ও বিশ্বাস, ভালোর প্রতি বিশ্বাস ইত্যাদি খ্রিস্টান আদর্শ তার শাসনের মূল স্তম্ভ, বলে তিনি মনে করেন।
অপরদিকে, ম্যাকায়াভেলী এসব আদর্শকে রাষ্ট্র চালনার জন্য অকার্যকর বলেছিলেন। কারণ তিনি মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের ছায়া দেখতেন না, তিনি মানুষকেই বেশি ভয় পেতেন ঈশ্বরের চেয়ে। তিনি মনে করতেন তরবারি ছাড়া কোন নবী সফল হন নি। বাইবেলের ডেভিড ও গলায়াথের মূল গল্পে ছিল, ডেভিড একটা গুলতি নিয়ে গিয়েছিলে গলায়াথের সাথে যুদ্ধে। কিন্তু ম্যাকায়াভেলির ভার্সনে ডেভিডের কাছে গুলতির সাথে একটা ছুরিও ছিল। অর্থাৎ, ঈশ্বরে বিশ্বাস থাক, সাথে অস্ত্রও থাকুক, যদি দরকার হয় কাজে আসবে।
ম্যাকায়াভেলির জীবনের অভিজ্ঞতা তাকে এই শিক্ষা দিয়েছিল। মাঝারি মানের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে তার জন্ম। তিনি ফ্লোরেন্তাইন এক মিলিশিয়া বাহিনী করে মেডিসি পরিবারের বিরুদ্ধে একবার বিদ্রোহ করেছিলেন। বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়, তাকে বন্দী করে নির্যাতন করা হয়, নির্বাসন দেয়া হয়। অর্থাৎ, মানুষের ভয়ানক প্রকৃতিও তার দেখা ছিল সরাসরি।
তার মতে মানুষ হচ্ছে,অকৃতজ্ঞ, নির্মম, কাপুরুষ, ছল ও লোভী। সব কিছু ভালো চলতে থাকলে, উন্নতি করতে থাকলে তারা অহংকারী হয়ে উঠে। আর পরিস্থিতি খারাপ হলে পা চাটতেও দ্বিধাবোধ করে না। তাই এদের ভালোবাসার উপর কোন রাজা বিশ্বাস করতে পারেন না। যদিও রাজাকে খেয়াল রাখতে হবে তিনি যেন ঘৃণা উৎপন্ন না করেন। আর তাকে এটাও মনে রাখতে হবে, এই লোকজন তার পক্ষে থাকবে যখন কোন দূর্বল শত্রু আক্রমণ করে ও জয় নিশ্চিত। কিন্তু যদি বড় শক্তি আক্রমণ করে, জয় দুরূহ হয়, তাহলে এরা অকৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করতে পিছপা হবে না।
তার মতে প্যাগান ও রোমান আদর্শ দরকার একজন মানুষের ভালোভাবে রাষ্ট্র চালনার জন্য। যেমন তার ভেতরের নৈতিক শক্তি, বীরত্ব, ম্যগনানিমিটি, লয়ালটি, সিভিক সেন্স, পাবলিকের ভালো করার ইচ্ছা, এবং সর্বোপরি নিরাপত্তা, ক্ষমতা ও গৌরবের প্রতি ডেডিকেশন, এগুলি দরকার।
কিং আলফ্রেডের এই নিরাপত্তা, ক্ষমতা ও গৌরবের প্রতি ডেডিকেশন ছিল। আবার তার ধর্ম বিশ্বাসও ছিল কঠিন। আলফ্রেডের মধ্যে খ্রিস্টান ভ্যালু ও নিজের দেশ টিকানোর জন্য প্রয়োজনীয় কাজগুলি করা, এই দুই জিনিশের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব প্রবল ছিল।
খ্রিস্টান পলিটিক্যাল আদর্শ যে কাজ করবে না কিছু ক্ষেত্রে, তা আলফ্রেড বুঝতে পারতেন। এইজন্যই তিনি শেষ পর্যন্ত উথ্রেডকে দূরে সরিয়ে রাখেন নি। তার পরামর্শ, ও সাহায্য নিয়েছেন।
আরেকটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার থেকে কিং আলফ্রেডের এই দ্বন্দ্বের পরিচয় মিলে। আলফ্রেড তখন রাজা হন নি। রাজা এথেলরেডের ভাই হিসাবে আছেন। তখন তার ভেতরে কিছু চারিত্রিক দূর্বলতা দেখা যায়। বউ থাকতেও তিনি দাসীর সাথে সম্পর্ক করছেন। তার ভাতিজা এথলউল্ড পরবর্তীকালে বলে বেড়াত, তোমরা তো জানো না, ইয়াং বয়সে তোমাদের আলফ্রেড যাকে পেত তার সাথে শুয়ে পড়তো। বা আলফ্রেডের মৃতদেহের সামনে ছেলেমেয়েকে উদ্দেশ্য করে রানী যখন আলফ্রেড নিয়ে বলছিলেন, তখনো তিনি উল্লেখ করেন, হ্যাঁ যুবক বয়েসে তার কিছু দূর্বলতা ছিল, যার জন্য আমি কষ্ট পেয়েছি, বাট আই লাভ হিম, ইত্যাদি ইত্যাদি। অর্থাৎ, গল্পে এই জিনিশটা ফোকাস করা হয়েছে।
যুবক বয়েসে আলফ্রেড এই শুয়ে পড়ার পরে আবার তার পাদ্রী ফাদার বেয়োকাকে বলত, ফাদার আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন ঈশ্বরের কাছে। আমি পাপ করে ফেলেছি।
ইয়াং আলফ্রেডের এই ঘটনাটি, তার অনুতাপবোধ – তার ভেতরকার দ্বন্দ্বটা দেখায়। তার মানব প্রকৃতি ও খ্রিস্টান ধর্মীয় আদর্শ দুইটার যুদ্ধ, শুরু থেকেই তাকে বিব্রত করে রেখেছিল।
উথ্রেড এখানে তার উলটা ভ্যালু ধারণ করে। ম্যাকায়াভেলি যে ধরণের ভ্যালু চান, বীরত্ব, সাহস, প্রয়োজনে হিংস্রতা, প্রতিশোধ নিতে এগিয়ে যাওয়া ইত্যাদি, উথ্রেডের মধ্যে আছে। উথ্রেডের এইসব ভ্যালুর মুল ভিত্তি তার প্যাগান অরিজিন। যে প্যাগান ভ্যালুকে ম্যাকায়াভেলি খ্রিস্টান ভ্যালুর উপরে স্থান দিয়েছিলেন, তার আদর্শ ছিল রোমান রিপাবলিক।
উথ্রেডকে বার বার ব্যাপটাইজ করার পরেও যে সে খ্রিস্টান হয় না, এটাকে সিম্বোলিক হিসেবে দেখা যায়। খ্রিস্টান ধর্মে পুরোপুরি বিশ্বাস করলে তার এই ভ্যালুগুলি থাকত কী? যা আলফ্রেডের ছিল না কিন্তু সবচাইতে প্রয়োজন ছিল, তা সে আলফ্রেডকে দিতে পারত কি?
উথ্রেড এবং কিং আলফ্রেড এই গল্পে একে অপরের পরিপূর্ণকারী। এইজন্য উথ্রেড বলে, we were bonded him and I….
দি লাস্ট কিংডম শেষ পর্যন্ত একটা পলিটিক্যাল ড্রামা। এর মূল ফোকাস, একজন খ্রিস্টান রাজার রাজ্য প্রতিষ্ঠা। এবং সেই প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে তিনি ‘গল্পের কাহিনী অনুযায়ী অসভ্য বর্বর’ ডেইনদের আক্রমণের শিকার হন। ডেইনদের বর্বরতা, হিংস্রতা প্রথম থেকেই বিস্তারিত করে দেখানো হয়েছে। এই বর্বর, অসভ্য শত্রুদের বিরুদ্ধে খ্রিস্টান ধর্মের অহিংস বানী নিয়ে কিং আলফ্রেড এগিয়ে যেতে চান, এবং এর সীমাবদ্বতা দেখতে পান। একটা শক্ত রাজ্য বানাতে গিয়ে মানবপ্রকৃতি সম্পর্কে কোন বিভ্রান্তিকর ধারনা থাকলে হয় না। মানবপ্রকৃতি বাস্তবে যেরকম ঠিক সেরকম দেখতে হয়।
ম্যাকায়াভেলির চিন্তা ও ওয়েস্টার্ন কিংডম অব গডের ভাববাদী ধারনার সংঘর্ষ এখানে স্পষ্ট হয়। ম্যাকায়াভেলি খ্রিস্টান ধারণার বিপরীতে গিয়ে তার রাজনৈতিক দর্শন প্রকাশ করেছিলেন। এই কারণেই তার লেখাকে ১৬ শতকের এক কার্ডিনালে বলা হয়েছিল শয়তানের আঙ্গুল দিয়ে লেখা।
দুনিয়ার হিংস্রতা, মানুষের বর্বরতার রূপকে আসা ডেইনদের কীভাবে প্রতিহত করবেন এক ধর্মরাজ?
সেই জায়গাতেই গল্পের সমাধান উথ্রেড। কিং আলফ্রেডের যেসব জায়গায় অভাব ছিল, তা সে পূরণ করে, সে হয় কিংমেকার।
দার্শনিক ইসাইয়া বার্লিন বলেছিলেন, একজন তার নিজের আত্মাকে বাঁচাতে পারে, অথবা একটা গ্রেট গ্লরিয়াস রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারে, চালাতে বা তার সেবা করতে পারে। কিন্তু সবসময় দুইটা একসাথে হয় না।
কিং আলফ্রেডের একক ইংল্যান্ড প্রতিষ্ঠার যে যুদ্ধ আমরা দেখি, তার সাথে আরেক যুদ্ধ উহ্য ভাবে বিরাজ করে, তার ঈশ্বরের সামনে নিজের আত্মাকে বাঁচানোর যুদ্ধ।
গল্পের লেখক অবশ্যই জাতীয়তাবাদী একক খ্রিস্টান ইংল্যান্ড প্রতিষ্ঠার এক গল্প লিখেছেন, যেখানে গ্রেট আলফ্রেডকে তার গ্রেট খৃষ্টান হিসেবে রাখতে হত, আবার ডেইনদের বিরুদ্ধে বিজয়ী হিসেবেও দেখাতে হত। এই দুই জায়গা ঠিক রাখতেই উথ্রেড নামক হাফ ডেইন হাফ সেক্সন বীরের আগমন গল্পে।
কিং আলফ্রেড, কন্ট্রাডিকশন ও চিন্তার শুরু
কিং আলফ্রেড একবার ডেইনদের আক্রমণে রাজ্যহারা হলেন। প্রাণ বাঁচাতে এক জলা জংলা জায়গায় আশ্রয় নিলেন। সেইখানে তার সাথে উথ্রেডও ছিল, তখন আবার উথ্রেডের সাথে তার দ্বন্দ্ব চলছে, তবুও উথ্রেড তাকে বাঁচায়।
সেইসময় উথ্রেডের পরামর্শে রাজা আবার বিভিন্ন জায়গায় তার সাহায্যের আবেদন জানিয়ে লোক পাঠান। আরেকটা ফাইট হবে ডেইনদের বিরুদ্ধে, যে ফাইট নির্ধারণ করে দিবে কে বাঁচবে কে পরাজিত হবে।
এই অবস্থায়, আলফ্রেডের শিশু পুত্র এডওয়ার্ড মারাত্মক অসুস্থ হয়। তাকে সুস্থ করা যাচ্ছে না। দিনে দিনে অসুস্থ ও দূর্বল হয়ে সে মারা যাচ্ছে।
এমতাবস্থায়, উথ্রেড রাজার কাছে গিয়ে বলে, তার তখনকার গার্লফ্রেন্ড ইসোলত এই ছেলেকে বাঁচাতে পারবে। সে একজন সিয়ার, যে তন্ত্র মন্ত্র কবিরাজি জানে ও ভবিষ্যৎ দেখতে পারে।
খ্রিস্টান ধর্মে এসব জিনিশ তীব্রভাবে নিষিদ্ধ। কিং আলফ্রেড এবং তার স্ত্রী এগুলিকে ঘৃণা করেন কারণ ঈশ্বর বলে দিয়েছেন এগুলি কুসংস্কার।
কিন্তু তার পুত্র মারা যাচ্ছে।
একসময় আলফ্রেড ইসোলতের হাতে তার ছেলেকে তুলে দেন, তার স্ত্রীর বিরোধিতা স্বত্বেও।
ছেলে বেঁচে যায়।
অনেক পরে, উথ্রেড এবং কিং আলফ্রেড যখন শেষবারের মত কথাবার্তা বলেন, তখন আলফ্রেড এই প্রসঙ্গ তুলেন।
Alfred: It seems just yesterday that I gave Edward over to you as dying infant. I feared my prayers had not been answered. Then I gave him over to you…and Isuelt.
Uhtred: You remember her?
Alfred: Always.
স্বাভাবিক ভাবেই উথ্রেড অবাক হয়ে যায় যে, এতদিন পরেও আলফ্রেড ইসোলতকে মনে রেখেছেন। এবং তার অলওয়েজ বলাটা এটা বুঝায় যে আলফ্রেড সবসময়ই এটা নিয়ে ভাবতেন। যে আলফ্রেড ঈশ্বরের রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে নেমেছেন, খ্রিস্টান ধর্মে যার অবিচল বিশ্বাস তিনি যখন বলেন ইসোলতকে অলওয়েজ মনে রেখেছেন, এটা এক কন্ট্রাডিকশন।
(কয়েক বছর আগে আমি একটা গল্প লিখেছিলাম, এই জিনিশ নিয়ে ভিতরে ছয়ফুট লম্বা খরগোশ নিয়ে বেঁচে থাকা যায়।।
মানুষের মধ্যে চিন্তা ডেভলাপ করে কন্ট্রাডিকশনের মাধ্যমে। অর্থাৎ, পরস্পরবিরোধী চিন্তার সংঘর্ষের ভেতর দিয়ে। আমরা সমাজে জন্ম নেই, বেড়ে উঠি, ফলে সামাজিক অনেক রীতি নীতি তথা চিন্তা আমাদের ভেতরে থাকে। আমাদের অভিজ্ঞতা (বই, ফিল্ম দেখা ইত্যাদি সহ) থেকে অর্জিত বুঝাপড়ার সাথে ওইসব চিন্তার সংঘর্ষ হয়।
আলফ্রেডের ক্ষেত্রে, তার বেড়ে উঠা সমাজ ও ধর্মের বিশ্বাস তথা চিন্তা তার ভেতরে ছিল, এর সাথে সংঘর্ষ হয় তার জীবনের এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতালব্ধ চিন্তার, যেখানে একজন প্যাগান সিয়ার তথা তন্ত্রবিদ্যাজ্ঞ নারী তার মরণাপন্ন ছেলেকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল।
এই সংঘর্ষকে আলফ্রেড স্বীকার করেছেন। তিনি এর অস্তিত্ব নাই ভেবে এড়িয়ে যান নি। এটা এক উদাহরণ।
এই কন্ট্রাডিকশনগুলি স্বীকার করার জন্যই দি লাস্ট কিংডমে কিং আলফ্রেড সবচাইতে বেটার চিন্তা করা লোক। উথ্রেডের বন্ধু লেওফ্রিচ একবার উথ্রেডকে বলেছিল, তুমি আলফ্রেড হইতে পারবা না, কারণ দ্যাট বাস্টার্ড থিংকস।