এনিথিং ইউ ওয়ান্ট – ডেরেক সিভার্স

গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোক্তা ও বিজনেস থিংকারদের একজন ডেরেক সিভার্স। এনিথিং ইউ ওয়ান্ট তার লেখা একটা ভালো বই।

১৯৯৮ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে নিজের শখের জিনিস নিয়ে কাজ করতে গিয়ে তিনি সফল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে ফেলেছিলেন। তা পরে ২২ মিলিয়ন ডলারে বিক্রিও করে, এবং তা পুরোটাই চ্যারিটিতে দিয়ে দেন। চিন্তায় ও প্র্যাকটিসে মিনিমালিস্ট সিভার্সকে আমার পছন্দ।

মানুষ তার কাছে টিপস, উপদেশ চায় জীবন বা ব্যবসা সম্পর্কে। সুতরাং এই বইটি তিনি লিখছেন তার অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান নিয়ে।

কিন্তু এও তিনি বলেন, তার জীবন বা ব্যবসাকে দেখার পদ্বতিটিই একমাত্র পদ্বতি না, বরং অন্যতম একটি পদ্বতি। এবং এই পদ্বতিটির বিরুদ্ধে তিনি নিজেও বিরুদ্ধ যুক্তি দাঁড় করাতে পারবেন।

আমি নিজেও এটি মনে করি। একজন মানুষের জন্য যে পদ্বতি কাজ করে, অন্যের জন্য তা কাজ করবে তা নিশ্চিত হয়ে বলা যায় না বেশিরভাগ সময়েই। কারণ ভিন্ন মানুষের চিন্তাশক্তি, ক্ষমতা ও দূর্বলতার জায়গা এবং পরিবেশ অনেক ভিন্ন হতে পারে।

সিভার্সের ফিলোসফি

১। বিজনেস টাকার জন্য না। এটি আপনার নিজের স্বপ্ন ও অন্যদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা।

২। বিজনেস তৈরি হলো দুনিয়াকে ইম্প্রুভ করার আর এর সাথে সাথে নিজেকেও ইম্প্রুভ করার সেরা এক উপায়।

৩। আপনি যখন কোম্পানি বানালেন তখন বানালেন নিজের ইউটোপিয়া। অর্থাৎ, সেখানে আপনি ডিজাইন করবেন আপনার নিঁখুত পৃথিবী।

৪। কখনো কোন কিছু কেবল টাকার জন্য করবেন না।

৫। কেবল নিজের স্বার্থের জন্য কখনো ব্যবসা দিবেন না। অন্যদের সাহায্য করতে বা তাদের সমস্যা সমাধান করতেই শুরু করুন।

৬। সফলতা আসে স্থিরভাবে নতুন কিছু আবিষ্কার করে যাওয়া এবং সেটিকে আরো ইম্রুভ করে যাওয়ার মাধ্যমে। যা কাজ করছে না তাকে অটলভাবে প্রমোট করে যাওয়ার মাধ্যমে নয়।

৭। আপনার বিজনেস প্লান হলো বাস্তবের সাথে মিল নেই এমন জিনিস। বিজনেস শুরু করার আগে কেউ জানে না আসলে মানুষ কী চায়।

৮। টাকা ছাড়া শুরু করা একটা সুবিধা। মানুষকে সাহায্য করা শুরু করতে আপনার টাকার দরকার নেই।

৯। আপনি সবাইকে খুশি করতে পারবেন না তাই গর্বের সাথে কিছু লোককে বাদ দিন।

১০। আপনার বিজনেস চালাতে নিজেকে অপ্রয়োজনীয় করে তুলুন।

১১। কোন কিছু করার মূল কারণ হলো নিজেকে হ্যাপি করা। তাই, সেটাই করুন যা আপনাকে হ্যাপি করে।

বইয়ে এই জীবনবোধ গুলিই বিস্তারিত করা হয়েছে। সিভার্স প্রতিটার পেছনে নিজের গল্প বলে বুঝাতে চেয়েছেন যে, কেন তিনি এটাকে ভালো মনে করেন।

একটা চিন্তা আমি এখানে ব্যাখ্যা করি।

ইউ মেইক ইওর পারফেক্ট ওয়ার্ল্ড। আপনারে আপনার ইউটোপিয়া বানাতে হবে। অর্থাৎ যা আপনি ভালোবাসেন, পছন্দ করেন ও যা আপনাকে হ্যাপি করে। এরকম একটা জায়গা আপনার দরকার যেখানে আপনারই রুল চলবে। সব জায়গায় হয়ত পারবেন না।

একটা কোম্পানি আপনি বানালেন। একসময় কোম্পানিটি বড় হয়ে উঠল, নানা দায়িত্ব। এবং তখনো আপনি নিজের মত করে চালাতে পারবেন না। কত ফর্মালিটি থাকে।

বা ধরেন আপনার ফেইসবুক আইডি। বা লেখালেখি। অনেকের মন রক্ষা করে চলতে হয়?

এগুলি একটা আনহ্যাপিনেস তৈরি করে। অন্তত একটা জায়গায় আপনার উচিত নিজের ইউটোপিয়া বানানো।

সিভার্সের বইটি মিনিমালিস্ট। তাই এই লেখাটিও মিনিমালিস্ট রইল, যদিও এইরকম কয়েকটা লাইন রয়ে গেছে বাহুল্যতা হিসেবে, বাদ দেয়া যেত।