ওয়েস্টার্ন কাপড় পরা মেয়েদের ছবি এবং পশ্চিমা ভয়ের পলিটিক্স

মাঝে মাঝে কিছু ছবি দেখা যায় আধুনিকতার মশালধারীদের কাছ থেকে। (অবশ্য তাদের মশালে আগুন নাই। আগুন থাকলে এসব ছবি শেয়ার দেয়ার কথা না।)। ছবিগুলো হচ্ছে এরকম, ওয়েস্টার্ন কাপড় পরে হেটে যাচ্ছে অতীতকালের আফগ্যানিস্টান অথবা ইরানের মহিলারা।

খোমেনির ১৯৭০ বিপ্লবের পূর্বে ইরানিয়ান ওম্যান
ছবিঃ ইসলামি বিপ্লবের পূর্বে ইরানিয়ান ওম্যান সম্প্রদায়ের একাংশ

ওয়েস্টার্ন, ইস্টার্ন বা ইসলামিক অথবা বৌদ্ধ, হিন্দু ইত্যাদি আরো যত আছে, কোন ধরনের পোষাকেই আমার আপত্তি নাই। কারণ পোষাক লোকের ব্যক্তিস্বাধীনতার ব্যাপার।

তবে, আধুনিকতার মশালবাহীরা ওয়েস্টার্ন পোষাক পরা মাইয়াদের ছবি দিয়া দুখী দুখী মুখে বলেন, “দেখেন এরা আগে কী ছিল। আর এখন কী হইছে।”

বুঝান, আগে ছিল বেহেস্তে আর এখন হাবিয়া দোযখে।

আর কেউ কেউ মাথা নেড়ে বলেন, তাই তো! তাই তো!

এখানে একটা বড় ফাঁক আছে এবং সে কারণেই এটা একটা মজার ব্যাপার। সেই মজা আপনারে নিয়া যাইতে পারে ১৯২৪ এর রেজা শাহের ইরানে। রেজা শাহ উরাধুরা সেক্যুলার লোক। তবে তিনি কোন ডেমোক্রেটিক লিডার না, রাজা। সেক্যুলার রাজা। সেক্যুলারিজম থাকলে কী তাহলে রাজতন্ত্র সাপোর্টযোগ্য হয়ে যায়?

যাইহোক, ভদ্রলোক ধর্ম পালনে অত্যধিক কড়াকড়ি জারি করছিলেন। হিজাব, বোরকা, দাঁড়ি রাখা সব বে-আইনি। ধর্মীয় উৎসব পালনে বিধিনিষেধ। কিন্তু তিনি ধীরে ধীরে কঠোরতর হইতে লাগলে ইংল্যান্ড-সোভিয়েত রাশা তারে সরাইয়া দেয়। তারে দেয়া হয় নির্বাসন। রাজা শব্দটার সাথে নির্বাসন জিনিসটা যায় ভালো। আমরা আগে বাংলা ছবির রাজাদের নির্বাসনে যাইতে দেখতাম। তিনি ১৯৪৪ সালে গত হন।

ছবিঃ মোহাম্মদ মোসাদ্দেগ
ছবিঃ মোহাম্মদ মোসাদ্দেগ

১৯৪১ থেকে ১৯৫৩ পর্যন্ত ইরানে ডেমোক্রেটিক সেক্যুলারিজম ছিল। যেটাকে বলা যায় ভালো সেক্যুলারিজম। যেহেতু ডেমোক্রেসি ছিল। ১৯৫১ সালে মোসাদ্দদেগ ছিলেন গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। তবে তিনি ডেমোক্র্যাটিক সেক্যুলার হলেও ছিলেন এন্টি কলোনিয়াল। নিজের দেশের ভালো মন্দ বুঝতেন।

ঐতিহাসিক এরভান্ড আব্রাহামিয়ান তার বই (The Coup: 1953, the CIA and the Roots of Modern US-Iranian Relations) তে লিখেছেন, মোসাদ্দেগ ছিলেন এমন একজন এন্টি কলোনিয়াল ফিগার যিনি ডেমোক্রেসি, হিউম্যান রাইটসের প্রতি ছিলেন কমিটেড।

১৯১৩ থেকে ইরানের সব তেল ইন্ড্রাস্ট্রি ছিল এংলো -পারসিয়ান অয়েল কোম্পানির অধীনে। ইউরোপ থেকে আইনে পিইচডি করা মোসাদ্দেক এর সরকার এই তেল ইন্ড্রাস্ট্রিকে জাতীয় করণ করার সিদ্ধান্ত নিল। মাথায় বাজ পড়ল ইংল্যান্ডের। সেই বাজ বর্জ্রদন্ডের সাহায্যে স্বহস্তে ফেলেছিলেন অলিম্পাসের দেবতা জিউস।

তেল হাত ছাড়া হলে ক্যাম্নে হবে!

ব্রিটিশ সিক্রেট ইন্টিলিজেন্স সার্ভিস (ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের দল) আমেরিকান গোয়েন্দাদের দল সিআইএকে বলল, চলো আমরা একসাথে কাজ করি। আমরা আমরাই তো।

আমেরিকান সেন্ট্রাল ইন্টিলিজেন্স সিআইএ বলল, ডোন্ট ওয়ারি। ক্যু হবে ক্যু। ক্যু ডি’টা।

মানে সামরিক অভ্যুত্থান।

সিআইএ মোসাদ্দেগকে সেনাবাহিনী দ্বারা উৎখাতের নাম দিল অপারেশন এজাক্স। তারা কাজ শুরু করে দিল। রাজনীতিবিদ, বড় আর্মি অফিসারদের টাকা দিয়ে কেনা হল। এই বস্তু দিয়া কেনা যায় না এমন জিনিস কমই আছে। টাকা ছড়ানোর সাথে সাথে তাদের প্রোপাগান্ডাও চালাল ঠিকমত।

তারপর এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। সিআইএ প্ল্যানিং এবং এস্কিকিউশন দুইটাতেই অংশ নিল। মোসাদ্দেগকে গ্রেফতার করে তিন বছরের জেল দেয়া হল। তারপর রাখা হল নিজগৃহে নজরবন্দী অবস্থায়। জনগণের একটা সমর্থন ছিল তার প্রতি। তাই তিনি মারা গেলে তার বাড়িতেই নিরবে দাফন করা হয় গণবিস্ফোরনের আশংকায়।

এখন কেউ বলতে পারেন সিআইএ খুব ভালো। তারা ব্রিটিশদের সাহায্য করার জন্য একটা ক্যু ডি’টা করে ফেলল। একটা ক্যু করা কী কম বড় কথা!

এরকম বললে আপনি ভুল বলেছেন। সিআইএ’র উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটেনের নিতে থাকা ইরানের তেলে ভাগ বসানো। এই ক্যু দ্বারা মোসাদ্দেগকে সরানোর পর ইরানে আমেরিকান পেট্রোলিয়াম কোম্পানিগুলো কাজ শুরু করে দেয়। ফ্রান্সের এবং ডাচ পেট্রোলিয়াম কোম্পানিও কাজ শুরু করে। এখানে সিআইএ’র নীতি হল, কেউ খাবে আর কেউ খাবে না, তা হবে না, তা হবে না।

রাজা, রানী, রাজপুত্র; সুখী পরিবার
ছবিঃ রাজা, রানী, রাজপুত্র; সুখী পরিবার

যাইহোক, এরপর রেজা শাহের পুত্র রেজা শাহ পহলবী রাজা হিসেবে শাসন করতে লাগলেন। দেশের সম্পদ বিদেশীরা নিয়ে যাবে এমন ইচ্ছা তারও ছিল না। তিনি তেল ইন্ড্রাস্ট্রি জাতীয়করণের ক্ষেত্রে মোসাদ্দেকের মতকে সমর্থনই করতেন। তার হাবভাব দেখে ব্রিটেন তারে বলল, তোমার জান বড় না তেল বড়?

পহলবীর কাছে অবশ্যই জান বড় ছিল। তাই তিনি আম্রিকা-ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যাওয়ার সাহস পান নাই। হয়ে গেলেন একজন একনায়ক। তিনি ডেমোক্রেসিকে উষ্টা মেরে বিতারণ করলেন। শুরু করলেন টোটালিটারিয়ান সেক্যুলারিজম। পোস্ট রেভ্যুলোশনারী ফ্রান্স এবং ক্লাসিক্যাল আমেরিকান রাজনৈতিক চিন্তা থেকে ধর্ম এবং রাষ্ট্রকে আলাদা করার চিন্তা তার মাথায় ছিল।

দেশে স্বৈরশাসক। এর মাঝে মুসলিম দেশ। যে দেশের শক্ত ইতিহাস ও ঐতিহ্য আছে। সেসব ভুলে গিয়ে তিনি ভীনদেশের তরিকামত আগানো শুরু করলেন। যার ফলাফল হিসেবে রাইজ করতে থাকল ইসলামি মৌলবাদ। দেশে দূর্নীতি হলে, মানবাধিকার লংঘিত হলে সাধারণ মানুষ কিন্তু ঠিকই বুঝতে পারে। অসহ্য পর্যায়ে চলে গেলে যেকোন আদর্শের ছায়াতলে গিয়ে তাদের বিদ্রোহ করার সম্ভাবনা থাকে। মানুষ বিদ্রোহী হতে লাগল।

শাহ এই ইসলামি মৌলবাদের উত্থানের পিছনে দায়ী করতে লাগলেন ব্রিটিশদের। ব্রিটিশদের সাথে সম্পর্ক খারাপ করে তিনি আমেরিকা ও ফ্রান্সের সাথে রিলেশন ভালো করলেন।

কিন্তু ইসলামিজম ও র‍্যাডিক্যাল ইসলামিজমের উত্থান ঠেকানো গেল না।

১৯৭৯ সালে আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে হল বিপ্লব। যাকে বলা হয় ইসলামি বিপ্লব। বিভিন্ন কম্যুনিস্ট দলও এতে সমর্থন দিয়েছিল। আমেরিকার সমর্থনপুষ্ট আমাদের একনায়ক শাহের শাসনকাল ছিল দূর্নীতিতে পূর্ন, সামাজিক ন্যায়বিচারহীন, ব্রুটাল এবং অপ্রেসিভ। লংঘিত হচ্ছিল মানবাধিকার। কিন্তু পশ্চিমাইজেশন ছিল, ছিল কঠোর সেক্যুলারিজম।

 

ইসলামি বিপ্লব ইরান, ১৯৭৯, আজাদী টাওয়ারে সমবেত লোকজন।
ছবিঃ ইসলামি বিপ্লব ইরান, ১৯৭৯, আজাদী টাওয়ারে সমবেত লোকজন।

এর প্রতিক্রিয়াতেই মানুষ ইসলামি বিপ্লবে সমর্থন দেয়। এবং তুলনামূলক একটি নন-ভায়োলেন্ট বিপ্লবের মাধ্যমে শাহের পতন ঘটে। ইরান ইসলামী প্রজাতন্ত্র হয়।

ইরানের রাজতন্ত্র বিলোপ করা হয়। শাহকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়। শাহ আনোয়ার সাদাতের মিশরে এসাইলাম নিয়ে ছিলেন। ইরান থেকে বলা হলো, দেশে আসলে তোমারে ধরে ঠিকমত বানানো হবে।

তাই তিনি আর দেশে আসেন নি। ক্লিওপেট্রার দেশে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যু পরবর্তী শেষ ক্রিয়ায় মিশরের আনোয়ার সাদাত, আমেরিকার রিচার্ড নিক্সন, গ্রীসের দ্বিতীয় কন্সটানটাইন যোগ দিয়েছিলেন। তাকে মিশরের জাতীয় সম্মানের সাথে সমাহীত করা হয়।

শেষ ইরানের ইতিহাস। এখন আমরা টিভি-পত্রিকার খবরে দেখি ইরানের আমেরিকা বিদ্বেষের কথা। এই বিদ্বেষ দেখে মনে হতে পারে ইরান ইসলামিক তাই আমেরিকার বিরোধীতা করে। কিন্তু আমেরিকা ইরানের প্রতি যে অন্যায় করেছে নিজের স্বার্থে সেই ইতিহাস জানলে এই চিন্তা হয়ত আসবে না। শুধুমাত্র ইসলামের জন্য না, আমেরিকার করা অন্যায়ের জন্যই ইরানের মধ্যে আমেরিকা বিদ্বেষের বীজ।

ইরানের বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী তো আমেরিকা-ব্রিটেনের তেলের লোভ। গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত মোসাদ্দেক ক্ষমতায় থাকলে নিশ্চয়ই এখন ইরান ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান হত না। জোর করে ধর্মবিরোধী নীতি প্রণয়ন, জোর করে সেক্যুলারিজম চাপিয়ে দেয়ার ফল হিসেবে দেখা গেল ইরান ইসলামিক রিপাবলিক হয়ে গেছে। একই ব্যাপার অন্য যেকোন দেশের ক্ষেত্রেও হতে পারে। ব্যাপারটা তাই মাথায় রাখতে হবে।

যাইহোক, এই ঐতিহাসিক পোস্ট পড়ে আসলে কী জানা গেল? মোসাদ্দেক, শাহ বা ইরানের কথা। ঠিক আছে। এগুলো জানার হাজারো সাইট আছে। কিন্তু পোস্টের বিষয়বস্তু হলো স্কার্ট পরা আধুনিক মেয়েছেলে।

এই পয়েন্টেই লেখা শুরু হয়েছিল। এই পয়েন্টেই শেষ হবে। এবং এটাই লেখার গুরুত্বপূর্ন বিষবস্তু।

একটা দেশের জন্য কী গুরুত্বপূর্ন?

স্কার্ট পরে মেয়েদের কাচাবাজার করতে যাওয়া না সামাজিক ন্যায়বিচার?

স্কার্ট পরে মেয়েরা হাটাহাটি করলেই একটা দেশ বেহেস্ত হয়ে যায় না। ওয়েস্টার্ন কাপড় পরা মেয়েদের ছবি দিয়ে কেউ যখন মৌলবাদের বিরোধীতা করে তখন সে কিন্তু অন্যদিকে ডিকটেটরশীপ, মানবাধিকার লংঘন, আমেরিকার সমর্থনপুষ্ট দূর্নীতিবাজ স্বৈরশাসককে সমর্থন দেয়। এটা কি একজন আধুনিক, মানবতাবাদীর কাছ থেকে আশা করা যায়?

রেজা শাহ পুলিশদের নির্দেশ দিয়েছিলেন হিজাব পরে বের হলে বা মাথায় কাপড় দিলে পুলিশ যেন জোর করে তা খুলে ফেলে। এটা কি ব্যক্তিস্বাধীনতার বিরুদ্ধে না? জোর করে হিজাব পরানো আর জোর করে হিজাব খোলার মাঝে কি পার্থক্য?

স্কার্ট পরা মেয়েদের হাটাহাটির পিকচার দেখে তো আমেরিকান সমর্থনপুষ্ট, ডিকটেটরশীপ, টোটালিটারিয়ান শাসন ব্যবস্থাকে সমর্থন দেয়া যায় না। ফ্রিডম বলতে খালি কাপড় চোপড়ের স্বাধীনতা না। ন্যায়বিচার পাওয়ার স্বাধীনতা, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ মৌলিক অধিকার পাওয়ার স্বাধীনতা, নিরাপত্তা পাওয়ার স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা ইত্যাদিও বুঝায়। যদিও ডিপ সেন্সে স্বাধীনতা বলতে কিছু নাই তবুও স্বাধীনতা বলতে যা বুঝানো হয় তা যেন কেবল মেয়েদের কাপড়ের মাঝে হারিয়ে না যায়

এইসব অতীতের ছবি দিয়া এবং তার বিপরীতে বোরকা পরা মেয়েদের ছবি দেখাইয়া ভয়ের পলিটিক্স করা হয়। বুঝানো হয় যে আগে সেখানে মহিলাদের অধিকার ছিল আর এখন কিছুই নাই। এর মাঝে এমন কিছু ইঙ্গিত থাকে যা আধুনিক মানবতাবাদীর মনে ভয়ের উদ্রেক করে। এবং জাগিয়ে তুলে ইসলামফোবিয়া। কারণ মানুষের ভয়ের মূল বসবাস তার ফ্যান্টাসীতে। সুতরাং, মানবতাবাদী ভয় পান সেখানে মহিলাদের করুণ অবস্থা কল্পণা করে। আরো তাদের রাগ হয় এই কারণে যে এই মহিলারা কেন তাদের সাহায্য নিতে চায় না এটা ভেবে।

কিন্তু বোরকা পরা আফগানিস্তানের মেয়েদের দেখে মানবতাবাদীদের মনে এই প্রশ্ন কেন আসে না, হয়ত এই মহিলার স্বামীরেই ডেমোক্রেসি দেবার নাম করে আমেরিকা বোমা দিয়া মারছে। এর সন্তান হয়ত মইরা গেছে আমেরিকান বোমায়। কেন আসে না? আমেরিকা ডেমোক্রেসি বিলায়, কিন্তু তার দেশী ডেমোক্রেসি নাই , আছে অলিগার্কি মানে কিছু ধনী লোকের নিয়ন্ত্রণে তাদের দেশ। এটা প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির গবেষনালব্ধ ফলাফল, আমার এইমাত্র বানানো কোন তথ্য নয়।

ভয়ের রাজনীতি কীভাবে ক্রিয়া করে তা বুঝতে ট্যাক্সি ড্রাইভার ফিল্মের দিকে তাকানো যাক। এর প্রধান চরিত্র ট্রাভিস। যেই চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন রবার্ট ডি নীরো। সে একা, হতাশ লোক, ক্রণিক ইনসোমনিয়া থেকে বাঁচতে ট্যাক্সি ড্রাইভারের কাজ নেয়। কিন্তু শেষে হঠাৎ বন্দুক হাতে প্রতিবাদী হয়। জোডি ফস্টাররে বাঁচাতে। তার এক আদর্শ ছিল, সে শহরের ড্রাগস, প্রস্টিটিউশন এইগুলা দেখে ছিল বিরক্ত। সে চাইছিল এগুলার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে।

Fear2
ছবিঃ ট্যাক্সি ড্রাইভারে রবার্ট ডি নীরো


জোডি ফস্টার একটা বদ লোকের নিয়ন্ত্রণে প্রস্টিটিউশন করতেছিল এটা ঠিক আছে। কিন্তু তার কোন অসুবিধা হচ্ছিল এমন মনে হয় নাই। সে ট্রাভিসের কাছে সাহায্যও চায় নাই। ট্রাভিস গাড়ি নিয়ে তারে ফলো করেছে। এবং পারিপার্শ্বিকের সাপেক্ষে সে কতটা খারাপ আচরনের শিকার হতে পারে সেটা কল্পনা করে নিয়েছে। এখানে সে আরো কল্পনা করে নেয় যে হয়ত ভিক্টিম (জোডি ফস্টার) যে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তা নিজেই উপভোগই করছে, তাই সে মুক্ত হইতে চায় না। এই ভাবনা তার প্রতিবাদের ইচ্ছাকে তীব্র করে তোলে।

ট্রাভিস তার ফ্যান্টাসি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে প্রতিবাদে নামে অস্ত্রসহ। গুলি করে কয়েকটা খুন টুন করে। নিজেও আহত হয়। স্লোভানিয়ান দার্শনিক স্ল্যাভো জিজেক তার পার্ভাটস গাইডস টু সিনেমাতে এভাবেই ট্রাভিসের এই কাজকে ব্যাখ্যা করেন এবং এর সাথে তুলনা দেন আফগানিস্তান, ইরাক ইত্যাদি দেশে তথাকথিত মানবিকতার কারণ দেখিয়ে আমেরিকার হামলাকে।

যাইহোক, মজার একটা ব্যাপার দিয়ে শেষ করা যাক। নিঞ্জুৎসু নামে মার্শাল আর্টের একটা পদ্বতি ইরানিয়ান মেয়েদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এজন্য ইরানিয়ান টিভি চ্যানেল এটা নিয়ে একটা রিপোর্ট করেছিল। এরপর রয়টার্স ছাঁপিয়ে ছিল যে, ইরান মহিলাদের আত্মঘাতি মিশনের জন্য ট্রেনিং দিচ্ছে। পরে অবশ্য তারা টাইটেল ঠিক করে।

iranian women
ছবিঃ ইরানিয়ান মেয়েরা মার্শাল আর্ট প্র্যাকটিস করছেন

আমাদের দেশের ক্ষেত্রেও ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মেয়েদের প্রতিবাদের ছবি দেখিয়ে বলা হয়, দেখুন আগে কোন মেয়েদের মাথায় কাপড় ছিল না। কিন্তু এখন ভার্সিটিতে কত হিজাবী মেয়ে দেখা যায়। ভেরী ইন্টারেস্টিং কথা।  যারা এসব বলেন তারা বুঝাতে চান যে, দেশে ব্যাপক হারে ইসলামাইজেশন বা মৌলবাদী ইসলামাইজেশন হচ্ছে। সেই একই ভয়ের রাজনীতির চেষ্টা। কিন্তু এই কথার ফাঁকটা হল, ১৯৫২ সালে কতজন কনজারভেটিভ মুসলিম ফ্যামিলির মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত আর এখন কতজন পড়ে সেই সংখ্যার তারতম্য। আগে কনজারভেটিভ মুসলিম ফ্যামিলির মেয়েরা কম যেত বিশ্ববিদ্যালয়ে, এখন অনেক বেশী যাচ্ছে।

এখন ১৯৫২ সালের থেকে অনেক অনেক বেশি কনজারভেটিভ ফ্যামিলির মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। সেই অনুপাতে দেখা যাচ্ছে হিজাবের সংখ্যাবৃদ্ধি। একসময় তারা এ শিক্ষাকে গ্রহণ করে নি, এখন করছে। এটাই বড় কথা।  এটা আতংকিত হবার মত বিষয় নয়, আশান্বিত হবার মত বিষয়।

বিভিন্ন কালচারাল বিষয়াবলী আগে যেখানে কনজারভেটিভ মুসলিম ফ্যামিলি গ্রহণ করত না, এখন ইসলামী ফ্লেভার দিয়ে গ্রহণ করছে। এটি একটি স্বাভাবিক কালচারাল প্রক্রিয়া। যেমন, একটার কথা মনে পড়ছে, গায়ে হলুদ। গায়ে হলুদ হিন্দুয়ানী বলে অনেক কনজারভেটিভ মুসলিম ফ্যামিলি গ্রহণ করে নি একসময়। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে মেহেদী সন্ধ্যা নামে গ্রহণ করছে।

১৭ জুন, ১৯৭০; তেহরান, ইরান
ছবিঃ ১৭ জুন, ১৯৭০; তেহরান, ইরান