মার্ক হ্যাডনের উপন্যাস (The Curious incident of the dog in the night time) এর বাংলা ভাষান্তর।
ক্রিস্টোফার জন ফ্রান্সিস বোন পৃথিবীর সব দেশ এবং তাদের রাজধানীর নাম জানে । সে ৭,০৫৭ পর্যন্ত সম মৌলিক সংখ্যা মুখস্থ বলে যেতে পারে । সে পশু পাখির সাথে সহজে মিশে যেতে পারে । কিন্তু মানুষের অনুভুতি বুঝতে পারেনা । কেউ তাকে স্পর্শ করুক তা সে পছন্দ করেনা ।
এই গল্প ক্রিস্টোফারের এডভেঞ্চারের গল্প । অন্যভাবে পৃথিবীটাকে দেখার গল্প । মধ্যরাতে মৃত কুকুর দেখে ক্রিস্টোফারের যে এডভেঞ্চার শুরু হয় তা শেষ পর্যন্ত যায় অনেক দূর ।।
— গার্ডিয়ান পত্রিকার শ্রেষ্ঠ চিলড্রেন বুক ক্যাটাগরিতে সেরা বই নির্বাচিত হয় ।
— ২০০৩ সালে জিতে বেষ্ট বুক এবং বেষ্ট নভেল ক্যাটাগরিতে হুইটব্রেড এ্যাওয়ার্ড ।
— ২০০৪ সালে সেরা প্রথম বই ক্যাটাগরিতে পায় কমনওয়েলথ রাইটার্স প্রাইজ ।
————————————————————————————————-
২।
তখন মধ্যরাত পেরিয়ে সাত মিনিট। মিসেস শিয়ারদের বাসার সামনে লম্বা সবুজ ঘাসের উপর কুকুরটি শুয়েছিল।
তার চোখ ছিল বন্ধ। দেখে মনে হবে সে পাশ থেকে দৌড়াচ্ছে, যেরকম কুকুরেরা যখন স্বপ্নে বিড়ালকে দৌড়ায় তখন করে থাকে। কিন্তু কুকুরটি দৌড়াচ্ছিল বা ঘুমোচ্ছিল না। সে ছিল মৃত। তার শরীরে বাগানের আগাছা পরিষ্কার করার নিড়ানি গাঁথা ছিল।
আমি ভাবলাম কুকুরটিকে নিশ্চয়ই এই নিড়ানির সাহায্যে হত্যা করা হয়েছে। কারণ তার শরীরে আর কোন ক্ষত চিহ্ন ছিল না। আর কোন কুকুর যদি স্বাভাবিক ভাবে মারা যায় যেমন ডায়রিয়ায় কিংবা রোড এক্সিডেন্টে তাহলে নিশ্চয়ই কেউ তার গায়ে নিড়ানি গেঁথে রাখবে না। তবুও আমি নিশ্চিত হতে পারছিলাম না।
আমি মিসেস শিয়ারের বাসার সামনে যেখানে কুকুরটি পড়ে ছিল সেখানে চলে গেলাম। কুকুরটির পাশে বসে তার গায়ে হাত রাখলাম। সে তখনো খুব গরম ছিল।
কুকুরটির নাম ওয়েলিংটন। এটি মিস্টার শিয়ারের স্ত্রীর কুকুর। তিনি আমাদের প্রতিবেশী। আমাদের বাসার বিপরীতে বামে দুই বাসা পড়ে তার বাসা।
ওয়েলিংটন ছিল একটি পুডো (Poodle)। এর গায়ে লম্বা লোম ছিল। কিন্তু তুমি যদি কাছে যাও এবং ভালোভাবে লক্ষ কর তাহলে দেখতে পাবে লম্বা লোমের নিচে তার হলুদ চামড়া। অনেকটা মুরগীর চামড়ার মত।
আমি ওয়েলিংটনের গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে ভাবছিলাম কে তাকে হত্যা করেছে এবং কেন?
৩।
আমার নাম ক্রিস্টোফার জন ফ্রান্সিস বোন। আমি পৃথিবীর সব দেশ এবং তাদের রাজধানীর নাম জানি। ৭০৫৭ পর্যন্ত সব মৌলিক সংখ্যা জানি।
আট বছর আগে যখন আমার স্কুলের ম্যাডাম শিয়োভানের সাথে আমার প্রথম দেখা হয়, তখন তিনি আমাকে এই ছবি দেখিয়েছিলেন
আমি জানি এর অর্থ “দুঃখী”। আমি যখন কুকুরটিকে মৃত অবস্থায় পাই তখন আমি এই অবস্থা অনুভব করছিলাম।
তারপর আমাকে এই ছবি দেখিয়েছিলেনঃ
আমি জানি এর অর্থ “খুশি”। আমি যখন এপেলোর মহাশূণ্য অভিযানের কথা পড়ি অথবা যখন আমি রাত তিনটা বা চারটা পর্যন্ত জেগে থাকি এবং একা একা হাটি ছাদে তখন আমার খুশি অনুভব হয়। চারিদিকে নিরবতা থাকে। তখন আমার মনে হয় এই পৃথিবীতে আমিই একমাত্র মানুষ।
তারপর তিনি আরো কিছু ছবি একেছিলেনঃ
আমি বুঝতে পারছিলাম না এগুলো কি।
ম্যাডাম অনেক গুলো ছবি একে তারা আসলে কি বোঝায় তা ছবির পাশে লিখে দিয়েছিলেন। আমি এগুলো পকেটে রাখতাম। যখন আমি কারো কথা বুঝতে পারতাম না তখন ছবিগুলোর সাথে তার মুখ মিলিয়ে দেখতাম বুঝার জন্য।
কিন্তু এভাবে বুঝা বেশ কঠিন। কারণ মানুষ দ্রুত মুখ পরিবর্তন করে।
আমি ম্যাডামকে বললাম আমি এরকম মিলিয়ে দেখি এবং মাঝে মাঝে বুঝতে পারি না। তখন তিনি পেনসিল দিয়ে আরেকটি ছবি আঁকলেন এবং বললেন, তখন আমার অবস্থা হয়
তিনি শব্দ করে হাসলেন। তাই আমি মুল কাগজটা ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছিলাম।
ম্যাডাম আমার কাছে পরে ক্ষমা চেয়েছিলেন।
তাই এখন আমি যদি বুঝতে পারি না কেউ কি বলছে বা বুঝাতে চাচ্ছে তখন আমি আবার জিজ্ঞেস করি সে কি বুঝাতে চায়।
৫। আমি কুকুরটার পাশে বসে তার ভিতর থেকে নিড়ানিটা বের করলাম। তাকে কোলে নিলাম। নিড়ানিটা তার যে জায়গায় ঢুকেছিল সেখান দিয়ে প্রচুর রক্ত ঝরছে।
আমি কুকুর ভালোবাসি। তুমি সহজেই বুঝতে পারবে একটি কুকুর কি ভাবছে। মানুষের মত সে দ্রুত মুখ পরিবর্তন করে না। কুকুর বিশ্বস্ত এবং মিথ্যা বলে না কারণ তারা কথা বলতে পারে না।
আমি ৪ মিনিট কুকুরটাকে জড়িয়ে ধরে রইলাম। একসময় চিৎকার শোনলাম। মিস্টার শিয়ারের স্ত্রী মিসেস শিয়ার আসছেন তার ঘর থেকে। তার পায়ের নখগুলো বড় বড়, তাতে লাল রঙের নেইল পালিশ দেয়া এবং তিনি কোন জুতা পড়ছিলেন না।
তিনি চিৎকার করছিলেন, ক্রিস্টোফার! তুমি আমার কুকুরকে কি করেছ?
মানুষ যখন আমার দিকে চিৎকার করে তখন আমার খারাপ লাগে। আমি ভয় পাই। মনে হয় তারা আমাকে মারবে বা স্পর্শ করবে। আমি বুঝতে পারছিলাম না কি হতে যাচ্ছে।
আমার কুকুরকে ছেড়ে দাও! তিনি আবার চিৎকার করলেন।
আমি কুকুরটাকে ঘাসের উপর রেখে দিলাম এবং দুই মিটার পিছনে সরে গেলাম।
মিসেস শিয়ার নিচু হয়ে কুকুরটাকে দেখলেন। আমি ভাবছিলাম তিনি হয়ত কুকুরটাকে কোলে নিবেন। কিন্তু তিনি নিলেন না। মনে হয় রক্ত ঝরছে দেখে তিনি একে স্পর্শ করে শরীর নোংরা করতে চান নি।
আমি দু হাত দিয়ে আমার কান চেপে ধরে পিছনে সরতে শুরু করলাম। আমার চোখ বন্ধ ছিল। আমি অনুভব করলাম আমার কপালে নরম ঘাসের স্পর্শ। ঘাসগুলো ভেজা ছিল। আমি ঘাসের মধ্যে মুখ ঢেকে রইলাম।
৭।
এটি একটি হত্যা রহস্য উপন্যাস।
ম্যাডাম শিয়োভান আমাকে বলেছেন এমন কিছু লিখতে যা আমি নিজে পড়তে পছন্দ করি। সাধারণত আমি বিজ্ঞান এবং গণিতের বই পড়ি বেশী। আমি সাহিত্যিক উপন্যাস পছন্দ করি না। এতে অনেক জটিল জটিল কথা থাকে।
সাহিত্যিক উপন্যাসে এরকম লাইন থাকে- “খালের ধারে প্রকান্ড বটগাছের গুঁড়িতে ঠেস দিয়া হারু ঘোষ দাঁড়াইয়া ছিল। আকাশের দেবতা সেইখানে তাহার দিকে চাহিয়া কটাক্ষ করিলেন।”[**]
এর মানে কি? আমি জানি না।
ম্যাডামও জানেন না। বাবাও জানেন না। এমনকী আমাদের স্কুলের মিস্টার জিভন্সও জানেন না।
ম্যাডাম এর লম্বা কালো চুল আছে এবং তিনি সবুজ প্লাস্টিকের ফ্রেমের চশমা পড়েন। মিস্টার জিভন্স বাদামী রঙের জুতা পড়েন যার প্রতিটিতে ৬০ টা ছোট ছোট ছিদ্র আছে।
আমি হত্যা রহস্য উপন্যাস পছন্দ করি। তাই লিখছি একটি হত্যা রহস্য উপন্যাস।
হত্যা রহস্য উপন্যাসে সাধারণত একটি খুন হয়। তারপর কেউ একজন গোয়েন্দার মত এই খুনের রহস্য উদঘাটন করেন। শেষে বের হয় কে খুন করেছে এবং পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়।
এটি একটি পাজলের মত। পাজল যদি খুব ভালো হয় তাহলে তুমি নিজে নিজেই চিন্তা করে বই শেষ হওয়ার আগেই বলে দিত পারো শেষে কি ঘটবে।
ম্যাডাম আমাকে বলেছেন বই এমন কিছু দিয়ে শুরু হওয়া উচিত যা মানুষের কৌতুহল সৃষ্টি করে। তাই আমি কুকুরকে দিয়ে শুরু করেছি। কুকুরকে দিয়ে শুরু করার আরেকটি কারণ এটা আমার জীবনে ঘটেছে। যা আমার সাথে ঘটে নি তা কল্পনা করা কঠিন।
ম্যাডাম প্রথম পৃষ্ঠা পড়েছেন। তিনি বলেছেন এটি অন্যরকম মনে হচ্ছে। তিনি আমাকে বললেন, সাধারণত হত্যা রহস্য উপন্যাসে মানুষ খুন হয়। আমি তাকে বললাম, হাউন্ড অব বাস্কারভিলে দুটি কুকুর মারা গিয়েছিল। একটি হাউন্ড আরেকটি মি মর্টিমারের স্প্যানিয়েল। কিন্তু ম্যাডাম বললেন, তারা ভিকটিম ছিল না, ভিকটিম ছিলেন স্যার চার্লস বাস্কারভিল। ম্যাডাম আরো বললেন, পাঠক কুকুরের চাইতে মানুষকে বেশী গুরুত্ব দেয়। যদি কোন মানুষ খুন হয় রহস্য উপন্যাসে তাহলে পাঠক বাকীটুকু আগ্রহ নিয়ে পড়তে থাকে।
আমি বললাম আমি সত্য ঘটনা নিয়ে লিখতে চাই। কোন মানুষকে আমি চিনি না যিনি মারা গেছেন হঠাৎ করে। মিস্টার পলসন ছাড়া। মিস্টার এডওয়ার্ডের বাবা। এডয়ার্ড আমার সাথে স্কুলে পড়ত। কিন্তু সেটি ছিল সড়ক দূর্ঘটনা, হত্যা নয়। এবং আমি তাকে ঠিকমত চিনতাম ও না।
আমি আরো বললাম, আমি কুকুরকে গুরুত্ব দেই। তারা বিশ্বস্ত এবং সৎ। তাদের কেউ কোন কোন মানুষের চাইতেও বেশী চালাক ও বুদ্ধিমান। যেমন, স্টিভ, যে প্রতি বৃহস্পতিবার স্কুলে আসে। সে নিজ হাতে খেতে পারে না। তাকে খাইয়ে দিতে হয়। এমনকী সামান্য জিনিস ও নাড়তে পারে না।
ম্যাডাম আমাকে বললেন, স্টিভের মাকে এসব না বলতে। তিনি শুনলে কষ্ঠ পাবেন।
১১।
এরপর পুলিশ আসল। পুলিশের ইউনিফর্ম থাকে। গায়ে নাম্বার থাকে। আমি পুলিশ পছন্দ করি। আমি নিয়মের মধ্যে থাকা সবকিছু পছন্দ করি। পৃথিবী নিয়ম মেনে চলে। মহাবিশ্ব নিয়মে চলে। আমাদের সবার নিয়ম মেনে চলা উচিত।
পুলিশের যিনি অফিসার তিনি গাড়ি থেকে নামলেন। তার পায়ে কালো রঙের জুতা ছিল যাতে দুই সারিতে ষোলটা করে ছিদ্র।
পুলিশ মিস্টার শিয়ারের স্ত্রীর সাথে কথা বলছিলেন। কিছু শোনা যাচ্ছিল না। আমি ঘাসের উপর থেকে মাথা তুলে শুনছিলাম তিনি হাত নাড়িয়ে বলছেন, আমার এত দামী কুকুরটাকে মেরে ফেলেছে।
একটু পরে পুলিশ অফিসার আমার কাছে আসলেন। তিনি আমার পাশে দু পায়ে ভর করে বসে বললেন, তুমি কি করছ এখানে?
আমি উঠে বসলাম এবং বললাম, কুকুরটি মারা গেছে।
তিনি বললেন, আমি বুঝতে পেরেছি।
আমি বললাম, আমার মনে হয় কেউ তাকে হত্যা করেছে।
তিনি বললেন, তোমার বয়স কত?
আমি জানালাম, পনের বছর তিন মাস দুই দিন।
তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি বাগানে কি করছিলে?
আমি উত্তর দিলাম, কুকুরটাকে কোলে নিয়ে বসে ছিলাম।
এবার তিনি আমার দিকে একটু ঝুকে এসে প্রশ্ন করলেন, কেন কুকুরটাকে কোলে নিয়ে বসে ছিলে?
এটি একটি কঠিন প্রশ্ন। আমি কুকুরটাকে কোলে নিয়ে বসেছিলাম কারণ আমি কুকুর ভালোবাসি। তাকে কেউ মেরে ফেলেছে। আমার তার জন্য খারাপ লাগছিল।
আমি পুলিশদের ও পছন্দ করি। আমি ঠিকমত উত্তর দেয়ার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু পুলিশ অফিসার আমাকে ঠিকমত উত্তর গোছানোর সময় দিলেন না। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, কেন তুমি কুকুরটাকে কোলে নিয়ে বসে ছিলে?
আমি উত্তর দিলাম, আমি কুকুর পছন্দ করি।
তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কুকুরটিকে মেরেছ?
আমি বললাম, না। আমি তাকে মারি নি।
পুলিশ অফিসার আবার বললেন, এটা কি তোমার নিড়ানি?
আমি বললাম, না।
পুলিশ অফিসার বললেন, কিন্তু তোমাকে এর জন্য চিন্তিত মনে হচ্ছে।
পুলিশ অফিসার অনেক প্রশ্ন করছিলেন। তিনি খুব তাড়াতাড়ি প্রশ্ন করছিলেন। এতে প্রশ্নগুলো আমার মাথায় জড়িয়ে যাচ্ছিল। যেমন বেকারির ব্রেড স্লাইসিং মেশিনে ময়দার কাই জড়িয়ে যায়।আমি বেকারির স্লাইস মেশিন সম্পর্কে জানি। আমার চাচার বেকারি আছে। তিনি ওখানে কাজ করেন। আমি দেখেছি। ব্রেড স্লাইসিং মেশিনে নিয়ন্ত্রিত ভাবে একটার পর একটা ময়দা আসলে টুকরো হয় । কিন্তু একসাথে অনেক চলে আসলে ব্লক হয়ে ময়দার কাই গুলো মেশিনে জড়িয়ে যায়।
আমার মাঝে মাঝে মনে হয় আমার মাথা মেশিনের মত। তবে সব সময় ব্রেড স্লাইসিং মেশিন না।
পুলিশ অফিসার আমাকে বললেন, আমি তোমাকে একটু পর আবার কিছু প্রশ্ন করব।
আমি আবার ঘাসে শোয়ে পড়লাম। ঘাসের মধ্যে মুখ লুকিয়ে শব্দ করতে শুরু করলাম। আমার বাবা এই শব্দকে বলেন “গো গো শব্দ”। আমার মাথায় বাইরে থেকে যখন একসাথে অনেক তথ্য আসতে শুরু করে তখন আমি এরকম শব্দ করি। এটা এরকম যে, যখন তোমার মন খারাপ তখন তুমি কানের কাছে একটা রেডিও নিলে। দুই স্টেশনের ঠিক মাঝখানে টিউন করলে। তারপর সাউন্ড বাড়িয়ে রেডিও কানের কাছে ধরে রাখলে। যাতে তোমার অন্যকিছু শোনতে হয় না।
পুলিশ অফিসার আমার ঘাড়ের নিচে এবং পায়ে হাত দিয়ে আমাকে তুলতে চাইলেন।
তিনি আমাকে এভাবে আমার গায়ে হাত দিচ্ছেন আমার পছন্দ হল না।
তখনি আমি তাকে আঘাত করলাম।
১৩।
এটি কোন হাসির বই নয়। আমি কৌতুক বলতে পারি না কারণ আমি আসলে এগুলো বুঝতে পারি না।
উদাহরণঃ একটি কৌতুক। বাবা বলেন।
এক মশার বাচ্চাকে মা মশা বলল মানুষের সামনে উড়াউড়ি করবে না। উপদেশ দিয়ে মা মশা কাজে চলে গেল। বাচ্চা মশা মনের আনন্দে উড়াউড়ি করল।
কাজ শেষে মা মশা বাড়িতে আসতেই বাচ্চা মা কে বলল, মা আমি মানুষের সামনে উড়ে দেখেছি। ওরা কেউ আমাকে মারে নি। শুধু হাততালি দিয়েছে।
এটি কেন হাসির কৌতুক আমি বুঝতে পারি নি। এটি হাসির কিছু না। বাচ্চা মশা যেকোন সময় মারা যেতে পারত। সে বুঝতে পারে নি ওটা হাততালি না। আমি জিজ্ঞেস করলে আমাকে বলা হয়েছে বাচ্চা মশা যেকোন সময় মারা যেতে পারত এবং বুঝতে পারে নি ওটা হাততালি না এটাই হাসির।
এখানে হাসির মত কোন বিষয় আছে আমার মনে হয় নি। কারো মৃত্যু হাসির হতে পারে না।
আমি এরকম কৌতুক করতে পারি না। চেষ্টা করে দেখেছি এরকম কৌতুক বানানোর। কিন্তু আমার খারাপ লাগে।
এই কারণে এই বইয়ে কোন কৌতুক নেই।
১৭।
পুলিশ অফিসার কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। তিনি নিশ্চয়ই অবাক হয়েছিলেন। তারপর আমাকে রাগত স্বরে বললেন, একজন পুলিশ অফিসার কে আঘাতের জন্য তোমাকে গ্রেফতার করা হল।
এই কথায় আমি আশ্বস্ত হলাম। এটি আমার পরিচিত কথা। পুলিশরা এমন কথা বলে থাকেন। আমি টিভিতে দেখেছি।
তিনি আবার বললেন, যাও গাড়িতে গিয়ে ওঠে বসো বদের হাড্ডি ছেলে। আর কোন বদমায়েশী করলে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে রাখব।
আমি কোন কথা না বলে পুলিশের গাড়িতে গিয়ে উঠলাম। পুলিশের গাড়িতে পোড়া ডিজেলের গন্ধ ছিল।
আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। তখন আমরা শহরের কেন্দ্রের দিকে যাচ্ছি। আকাশ ছিল পরিষ্কার। পরিষ্কার আকাশে তুমি মিল্কি ওয়ে দেখতে পাবে।
কিছু লোক মনে করে মিল্কি ওয়ে হচ্ছে তারাদের লম্বা লাইন। কিন্তু আসলে তা নয়। আমাদের মিল্কি ওয়ে হচ্ছে অসংখ্য তারকাদের একটি ডিস্কের মত। শত শত আলোকবর্ষব্যাপী ছড়িয়ে রয়েছে এসব তারকা।
আমাদের সৌরজগত এই ডিস্কের বাইরের দিকের কোন অংশের কাছে।
তুমি যখন ৯০ ডিগ্রি কোণে “এ” এর দিকে তাকাবে তখন তুমি তারকাদের একটি লাইন দেখতে পাবে। কিন্তু “বি” এর দিকে তাকালে দেখবে গ্যালাক্সির মূল অংশে অসংখ্য তারকা। কারণ গ্যালাস্কি একটি ডিস্ক। এবং তুমি শুধুমাত্র তারকাদের একটি লাইনই দেখো।
তারপর আমি চিন্তা করলাম কীভাবে বিজ্ঞানীরা অনেকদিন যাবত বিভ্রান্তিতে ছিলেন, আমাদের আকাশের যেদিকেই তুমি তাকাও সেখানে নিশ্চিত কোন তারকা আছে, তাহলে রাতে আকাশ কেনো কালো হয়? কেনো এসব অসংখ্য তারকার আলো আকাশকে সব সময় আলোকিত রাখে না?
তারপর তারা বের করলেন এই মহাবিশ্ব দিন দিন প্রসারিত হচ্ছে। বিগ ব্যাং এর পর থেকে তারকা গুলো পরষ্পর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তারকারা আমাদের থেকে যত দূরে ঠিক তত দ্রুত তারা একে অপরের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তাদের অনেকের এই সরে যাওয়ার বেগ আলোর বেগের মত বেশী। তাই তাদের আলো আমাদের কাছে এসে পৌছায় না।
আমার এই তথ্য ভালো লেগেছে। তুমি রাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে, তারকাদের দিকে তাকিয়ে, কাউকে জিজ্ঞেস না করেও এসব বের করতে পারো।
যখন এই মহাবিশ্বের প্রসারণ শেষ হবে তখন সব তারকা গুলোর গতি কমে যাবে। ঠিক বাতাসে ছোঁড়া বলের মত। তারা থেমে যাবে এবং পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে পড়তে থাকবে। তখন আমরা তারকাগুলিকে দেখতে পাবো। কারণ তারা খুব দ্রুত আমাদের দিকে ছুটে আসবে। ধীরে ধীরে তাদের ছুটে আসার বেগ বাড়বে। তখন আমি নিশ্চিত পৃথিবীর সময় শেষ হয়ে আসবে। আমরা রাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে অন্ধকার দেখব না। দেখব অসংখ্য তারকার উজ্জ্বল আলো। অসংখ্য অসংখ্য তারকা। আলো বিচ্ছুরণ করে আমাদের দিকে ছুটে আসছে।
কিন্তু আসলে এগুলো কেউ এগুলো দেখবে না। কারণ তখন কোন মানুষ বেঁচে থাকবে না। ততদিনে মানবজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। অথবা যদি তারা থাকে তবুও দেখতে পাবে না। কারণ আলো খুব উজ্জ্বল এবং উত্তাপ ছড়াবে। তাতে মানুষেরা মারা পড়বে। এমনকী তারা যদি মাটির নিচে লুকিয়ে তাকে তবুও মারা যাবে।
১৯।
সাধারণত বইয়ে কার্ডিনাল নাম্বার দেয়া হয় যেমন ১, ২, ৩, ৪ ইত্যাদি। কিন্তু আমি ঠিক করেছি এই বইয়ে সব নাম্বার হবে মৌলিক সংখ্যা। যেমন ২,৩,৫,৭,১১,১৩ ইত্যাদি। আমি মৌলিক সংখ্যা পছন্দ করেন।
প্রাইম নাম্বার বা মৌলিক সংখ্যা তুমি সহজে বের করতে পারো। এজন্য এক জায়গায় পৃথিবীর সব পূর্ণসংখ্যা লিখে ফেলতে হবে। যেমন-
এরকম। এরপর তুমি দুই এর গুণিতক যারা তাদের সরিয়ে ফেলবে। তারপর তিন এর গুণিতকদের সরাবে। এভাবে ৪, ৫ , ৬ , ৭ ইত্যাদির গুণিতকদের সরাবে। তখন যে সংখ্যা গুলো বাকী থাকবে তারাই প্রাইম নাম্বার বা মৌলিক সংখ্যা।
প্রাইম নাম্বার বের করা খুব সহজ। কিন্তু কেউ বের করে নি কোন বড় সংখ্যা প্রাইম নাম্বার কী না তা কীভাবে বলা যায় বা এর পরের প্রাইম নাম্বার কি হবে এটা জানার পদ্ধ্বতি।
বিভিন্ন ধরনের কোড লেখার জন্য প্রাইম নাম্বার খুব উপকারী। আমেরিকাইয় এটি আর্মি তে ব্যবহৃত হয়। তুমি যদি ১০০ ডিজিটের কোন প্রাইম নাম্বার বের করতে পারো তাহলে সি আই এ কে বলতে হবে। সি আই এ আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা। তারা ১০,০০০ হাজার ডলারে তোমার কাছ থেকে এটি কিনে নেবে। কিন্তু তাই বলে উপার্জনের জন্য প্রাইম নাম্বার খোঁজা খুব একটা ভালো কাজ না।
প্রাইম নাম্বার জীবনের মত। তারা যুক্তি মেনে চলে। সারাদিন এদের নিয়ে চিন্তা করলেও তুমি তাদের নিয়ম খুজে পাবে না।
২৩।
পুলিশ স্টেশনে যাওয়ার পর আমাকে একটি টেবিলের সামনে বসানো হল। টেবিলে অনেকগুলো ফাইল ছিল। তাদের মধ্যে বারোটি ফাইল নীল সুতা দিয়ে বাঁধা।
একজন সার্জেন্ট আমার পকেটে যা কিছু ছিল সব সামনের টেবিলে রাখল। আমার পকেটে ছিলঃ
১। একটি সুইস আর্মি নাইফ
২। একটি লাল পেপার ক্লিপ
৩। ১.৪৭পাউন্ড। ( একটি ১ পাউন্ডের নোট, একটি ২০ পেনি, দুটি ১০ পেনি, একটি ৫ পেনি এবং একটি দুই পেনির কয়েন।)
৪। একটি কাঠের পাজল যা দেখতে এরকমঃ
৫। তিন টুকরা ইঁদুরের খাবার। আমার ইঁদুরের নাম টবি।
৭। বাড়ির দরজার একটি চাবি।
আমি হাতে ঘড়ি পড়ে ছিলাম। তারা ঘড়ি খুলে টেবিলে রাখতে চাইল। আমি বললাম, আমার ঘড়ি হাতে রাখতে কারণ সঠিক সময় জানা দরকার। তারা জোর করে খুলে নিতে চাইল। আমি হাত সরিয়ে চিৎকার করতে লাগলাম। তাই শেষপর্যায়ে তারা ঘড়ি হাতে রাখতে দিল।
পুলিশ জিজ্ঞেস করল, আমার কে কে আছেন?
আমি বললাম, বাবা আছেন। মা মারা গেছেন। চাচা আছেন। তবে তিনি তার বেকারীতে কাজ করেন।
পুলিশ বাবার ফোন নাম্বার চাইল। আমি তাদের দুটি ফোন নাম্বার দিলাম। একটা বাসার। আরেকটা বাবার মোবাইল ফোনের।
এরপর পুলিশ আমাকে জেলখানায় ঢুকিয়ে দিল। জেলখানার মাপ খুব সুন্দর গানিতিক। ঘনকের মত। এটি দুই মিটার লম্বা, দুই মিটার চওড়া এবং ২ মিটার উচ্চতার। এতে প্রায় ৮ ঘন মিটার বাতাস থাকতে পারবে। এর সামনে লোহার রড দিয়ে সামান্য ফাঁক ফাঁক করে বেড়া দেয়া। যাতে পুলিশ বাইরে থেকে দেখতে পারে কোন কয়েদি পালিয়ে যাচ্ছে কি না কিংবা আত্নহত্যা বা মারামারি করছে কি না।
আমার শুধু কাপড় গায়ে এবং জুতা ছিল। সাথে আর কিছু ছিল না। আমি এখান থেকে পালানোর চিন্তা করতে লাগলাম। কিন্তু আসলে আমাকে পালানোর জন্য অপেক্ষা করতে হবে। যদি প্রচুর রোদ এসে পড়ে এখানে তাহলে আমি আমার চশমার গ্লাস ব্যবহার করে সুর্যের আলোক রশ্নিকে আমার কাপড়ের কোন এক বিন্দুতে ফেলতে পারব। ওই জায়গা গরম হয়ে উঠবে এবং আগুন ধরে যাবে। আমি চিৎকার করব। পুলিশেরা আগুন নেভাতে ভেতরে আসবে। তখনি কেবল আমি বেরিয়ে যেতে পারব।
কিন্তু তারা যদি আমার চিৎকার শোনতে না পায় তাহলে আমার কাপড় গুলো খুলে ফেলতে হবে।
আমি ভাবছিলাম মিসেস শিয়ার কি পুলিশকে বলেছেন আমি তার কুকুরকে মেরেছি। তিনি যদি বলে থাকেন তাহলে তার শাস্তি হওয়া উচিত। পুলিশের উচিত তাকে জেলে ভরে রাখা। কারণ কারো সম্পর্কে মিথ্যা বলা অপরাধ।
২৯।
মানুষকে আমার কাছে দুর্বোধ্য মনে হয়। আমি বুঝতে পারি না তারা তখন কি বুঝায়।
ম্যাডাম শিয়োভান বলেছেন, একইরকম মুখভঙ্গী করে অনেক কিছু বোঝানো যায়।
এছাড়া মানুষ বিভিন্ন রুপকের সাহায্যে কথা বলে। যেমন-
“তার পটল ছেড়া চোখ”
রুপক শব্দের ইংরেজি শব্দ মেটাফর। মেটাফর শব্দটি গ্রীক শব্দ μετα থেকে এসেছে। যার অর্থ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নেয়া। রুপক হল কোন শব্দ ব্যবহার করে অন্য কিছু বোঝানো।
কিন্তু আসলে এগুলো এক ধরনের মিথ্যে কথা। কারো চোখ ছেড়া পটলের মত হয় না কখনো।
আমার নাম ক্রিস্টোফার ও একটি মেটাফর বা রুপক। এটি গ্রিক শব্দ χριστος ( যার অর্থ জিসাস ক্রাইস্ট) এবং φερειυ থেকে এসেছে। সেইন্ট ক্রিস্টোফার কে এই নাম দেয়া হয়েছিল। কারণ তিনি একবার নদী পার হতে যিশু খ্রিস্টকে বয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন।
এখন তোমার মনে হতে পারে যিশুকে নদী পথে বয়ে নেবার আগে তাকে কি ডাকা হত। আসলে তাকে কিছুই ডাকা হত না। কারণ এগুলো হচ্ছে রুপকথার গল্পের মত। যা মিথ্যার কাছাকাছি।
৩১।
ঘড়িতে যখন রাত ১ টা ১২ তখন বাবা থানায় আসলেন। আমি তাকে দেখতে পাচ্ছিলাম না। তার কথা শুনতে পাচ্ছিলাম। তিনি বলছেন, আমার ছেলে এখানে কেন? তাকে ধরে এনেছেন কেনো?
পুলিশ অফিসার তাকে বলছিল আপনি একটু শান্ত হয়ে বসুন।
১ টা ২৮ মিনিটে আমাকে দরজা খুলে বাইরে আনা হল।
বাবা দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাকে উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছিল। আমরা আবার পুলিশ অফিসারের রুমে আসলাম। এখন অন্য আরেকজন পুলিশ বসে আছেন। তার শরীর অনেক বড়। একটু পর পর বাম হাত দিয়ে তিনি কান চুলকান। পুলিশ আমাদের বসতে বলল। আমি দেখলাম টেবিলে টেপ রেকর্ডার আছে। জিজ্ঞেস করলাম আমার কি ইন্টারভিউ নেয়া হবে এবং তা রেকর্ড করা হবে?
পুলিশ অফিসার বললেন, তার আর দরকার হচ্ছে না।
তিনি বললেন, আমি তোমার বাবার সাথে কথা বলেছি। তুমি আসলে ইচ্ছে করে পুলিশকে মারতে চাও নি।
আমি কিছু বললাম না। কারণ এটি কোন প্রশ্ন নয়।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে পুলিশ অফিসার জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি পুলিশকে সত্যি মারতে চেয়েছিল?
আমি বললাম, হ্যা।
পুলিশ অফিসার মুখ পরিবর্তন করে বললেন, কেনো?
আমি বললাম, আমি তাকে আঘাত করতে চাই নি। আমি চেয়েছিলাম যাতে তিনি আমাকে স্পর্শ না করেন।
তিনি বললেন, তুমি কি জানো পুলিশ বা কাউকে আঘাত করা অপরাধ?
আমি বললাম, আমি জানি।
তিনি আবার একটু ঝুঁকে এসে বললেন, তুমি কি কুকুরটাকে মেরেছ?
আমি উত্তর দিলাম, আমি কুকুরটাকে হত্যা করি নি।
তিনি আবার বললেন, তুমি কি জানো পুলিশের সাথে মিথ্যা বলা ঠিক না এবং তাতে তোমার শাস্তিও হতে পারে?
আমি বললাম, আমি জানি।
তিনি বললেন, তুমি কি জানো কে কুকুরটাকে মেরেছে?
আমি বললাম, আমি জানি না।
তিনি মুখ আবার পরিবর্তন করে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি সত্য বলছ?
আমি বললাম, আমি সবসময় সত্য বলি।
তিনি বললেন, ঠিক আছে। আমি তোমাকে যেতে দিচ্ছি। তবে এর আগে এই ঘটনার একটা রেকর্ড রাখতে হবে।
তিনি একটি কাগজে লিখছিলেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি এই কাগজ আমাকে দিবেন এবং আমি সার্টিফিকেটের মত তা সংরক্ষণ করতে পারব?
তিনি বললেন, না। এটা তোমার জন্য না। এটা পুলিশের ফাইলে থাকবে, যে তুমি পুলিশকে মারতে চাও নি। ওটা একটা নিছক দূর্ঘটনা ছিল।
আমি বললাম, ওটা তো কোন দূর্ঘটনা ছিল না।
বাবা বললেন, ক্রিস্টোফার! তুমি একটু চুপ কর!
পুলিশ অফিসার মুখ বন্ধ করে নাক দিয়ে লম্বা নিঃশ্বাস নিলেন। এরপর বললেন, তোমার এই রেকর্ড রাখা হচ্ছে যাতে আগামীতে তুমি কোন সমস্যা করলে আমরা তোমার সম্পর্কে সহজে বুঝতে পারি এবং গুরুত্ব দিয়ে ব্যাপারটা দেখি। বুঝতে পেরেছ?
আমি বললাম, জি, বুঝতে পেরেছি।
তারপর তিনি বললেন আমরা এখন যেতে পারি। আমাকে আমার জিনিসপত্র সব ফেরত দেয়া হল। আমি দেখলাম লাল পেপারক্লিপ, সুইস আর্মি নাইফ সহ সবকিছুই প্যাকেটে আছে। আমরা থানা থেকে বের হলাম এবং বাবার গাড়িতে গিয়ে উঠলাম। গাড়িটা পাশেই রাখা ছিল।
৩৭।
আমি মিথ্যা বলি না। আমার মা বলতেন আমি ভালো ছেলে তাই মিথ্যা বলি না। কিন্তু আসলে এটা কারণ না। আমি মিথ্যা বলতে পারি না।
আমার মা ছিলেন একজন ছোটখাট মহিলা।
মিথ্যা হল এমন কিছু বলা যা ঘটে নি। কিন্তু কোন নির্দিষ্ট স্থানে, নির্দিষ্ট সময়ে একটি ঘটনাই ঘটতে পারে। এবং অসীম সংখ্যক ঘটনা ওই সময়ে ওই স্থানে ঘটে না। আমি যখন যা ঘটে নি তা চিন্তা করতে যাই তখন যে অসীম সংখ্যক ঘটনা ঘটে নি সব সম্পর্কে আমি চিন্তা করতে শুরু করি।
যেমন, আজ সকালে আমি ডিম এবং ব্রেড খেয়েছি। কিন্তু আমি যদি বলতে যাই আমি চা খেয়েছি তাহলে আমার মাথায় চলে আসবে আমি স্যান্ডউইচ, বার্গার কিংবা কেচো ও খাই নি। আমার মাথায় চলে আসতে শুরু করবে আমি এখন কোন গভীর জঙ্গলে থাকতে পারতাম কিংবা ঘরে থাকতে পারত কোন গন্ডার…এগুলোও লিখতে গিয়েও আমার খারাপ লাগছে…মনে হচ্ছে অনেক উঁচু কোন বিল্ডিং এর উপরে আমি। আমার নিচে অসংখ্য মানুষ, গাড়ি, উপর থেকে ক্ষুদ্র দেখাচ্ছে। আমার মাথায় অসংখ্য জিনিস একটার পর একটা চলে আসছে। আমার মনে হচ্ছে যেকোন সময় আমি উঁচু বিল্ডিং থেকে পড়ে যাব এবং মারা যাব।
এটা আমার সত্যিকারের সাহিত্যিক উপন্যাস পছন্দ না করার আরেকটি কারণ। ওগুলো পড়ে আমি আসলে ভয় পাই।
এবং এজন্যই এই বইয়ে আমি যা লিখছি তার সবই সত্য।
৩৯।
আমরা যখন বাসায় ফিরছিলাম তখন আকাশে মেঘ ছিল। আমি মিল্কি ওয়ে দেখতে পাচ্ছিলাম না।
আমি বাবাকে সরি বললাম। কারণ আমার জন্য তার থানায় আসতে হল।
বাবা বললেন, ঠিক আছে।
আমি বললাম, আমি কুকুরটাকে হত্যা করি নি।
তিনি বললেন, আমি জানি।
তিনি একটু থেমে আবার বললেন, তোমার এসব সমস্যা থেকে দূরে থাকা উচিত।
আমি বললাম, আমি সমস্যায় জড়াতে চাই নি। আমি মিসেস শিয়ারের কুকুর ওয়েলিংটনকে পছন্দ করতাম। আমি ভেবেছিলাম সে শুয়ে আছে। কিন্তু গিয়ে দেখি তাকে কে যেন মেরে ফেলেছে।
বাবা বললেন, দয়া করে অন্যের বিষয়ে নাক গলাবে না। এটা তোমার কাজ না। আরেকজনের কুকুর মরেছে তাতে তোমার কি!
আমি কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললাম, আমি খুঁজে বের করব কে এই কুকুরটিকে হত্যা করেছে।
বাবা বললেন, আমি কি বলছি তুমি শুনতে পাও না?
আমি বললাম, হ্যা। আমি শুনতে পাচ্ছি। কিন্তু কাউকে যদি হত্যা করা হয় তাহলে হত্যাকারীকে খুঁজে বের করা দায়িত্ব। যাতে সে সাজা পায়।
তিনি বললেন, কিন্তু এটি একটি সাধারণ কুকুর!
আমি বললাম, আমার মনে হয় কুকুর ও গুরুত্বপূর্ন।
বাবা বললেন, ঠিক আছে। এখন এসব কথা বাদ দাও।
আমি বললাম, পুলিশ যদি হত্যাকারীকে খুঁজে পায় তাহলে নিশ্চয়ই শাস্তি দিবে।
হঠাৎ বাবা গাড়ির ব্রেক কষে দিলেন। এবং আমার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠলেন, আমি বলেছি না তোমাকে এ বিষয়ে আর কোন কথা না বলতে?
আমি বুঝতে পারছিলাম তিনি রেগে গেছেন। আমি তাকে রাগাতে চাচ্ছিলাম না। তাই বাসায় ফেরার পথে আর কোন কথা বললাম না।
যখন আমরা বাসায় ফিরলাম আমি দৌড়ে রান্নাঘরে চলে গেলাম। সেখানে আমার ইঁদুর টবি আছে। তাকে গাজর খেতে দিলাম।
আমার রুমে গেলাম। কম্পিউটার খোলে মাইন্সউইপার(৭৬ গেম) খেললাম। একস্পার্ট ভার্শন শেষ করতে সময় লাগল ১০২ সেকেন্ড। যা আমার বেস্ট থেকে তিন সেকেন্ড বেশী। আমার বেস্ট হল ৯৯ সেকেন্ড।
২ টা ৭ মিনিটে আমি ব্রাশ করে নিচে গেলাম। বাবা বসে টিভি দেখছিলেন। তার চোখে পানি ছিল।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, তোমার কি কুকুরটার জন্য খারাপ লাগছে?
তিনি আমার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। তারপর নাক দিকে বাতাস ছাড়লেন। ম্যাডাম বলেছেন একে বলে দীর্ঘশ্বাস। এর বিভিন্ন অর্থ হতে পারে। তাই এটি কখন কি বোঝায় আমি বুঝি না।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বাবা বললেন, হ্যা। ঠিক ধরেছ।
আমি তার সাথে আর কথা বাড়ালাম না। কারো খারাপ লাগলে তাকে একা থাকতে দেয়া উচিত। আমি আমার রুমে চলে আসলাম।
৪৩।
আমার মা মারা যান দুই বছর আগে।
একদিন আমি স্কুল থেকে এসে দেখি বাসায় কেউ নেই। আধঘন্টা পর বাবা আসলেন। তাকে বেশ উদ্বিগ্ন মনে হচ্ছিল। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, মা কে দেখেছি কি না।
আমি বললাম, না।
তিনি বিভিন্ন জায়গায় ফোন করলেন। তারপর আমাকে বললেন তিনি একটি জরুরী কাজে বের হচ্ছেন। ফিরতে দুই ঘন্টা লাগবে।
দুই ঘন্টার কিছু বেশী সময় পর তিনি ফিরে এলেন। আমি নিচে গিয়ে দেখলাম তিনি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছেন।
বাবা আমাকে দেখে বললেন, হয়ত তুমি তোমার মাকে কিছুদিন দেখতে পাবে না। তখনো তিনি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিলেন।
সাধারনত মানুষ যখন কথা বলে তখন আমার দিকে তাকায় বুঝার জন্য আমি কি চিন্তা করছি। কিন্তু তাদের দিকে তাকিয়ে তারা কি চিন্তা করছে বুঝতে পারি না। আমার জন্য এটি অস্বস্থিকর হয়ে দাঁড়ায়। তাই বাবা অন্যদিকে তাকিয়ে কথা বলছেন আমার ভাল লাগল।
আমিও অন্যদিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কেন?
বাবা দীর্ঘক্ষণ নিরব থাকলেন। তারপর বললেন, তোমার মাকে হাসপাতালে থাকতে হবে।
আমি বললাম, আমরা কি তাকে দেখতে যেতে পারি?
তিনি বললেন, না।
আমি বললাম, কেন?
বাবা বললেন, তার প্রচুর রেস্ট দরকার।
আমি বললাম, এটি কি কোন মানসিক হাসপাতাল?
বাবা বললেন , না। সাধারন হাসপাতাল। তোমার মায়ের সমস্যা হয়েছে…………হার্টে সমস্যা।
আমি বললাম, আমরা তাকে খাবার দিতে পারি। কারণ হাসপাতালের খাবার ভাল না। আমার বন্ধু ড্যাভিডের যখন পায়ের অপারেশন হয়েছিল তখন সে হাসপাতালে ছিল। তার মা প্রতিদিন খাবার নিয়ে যেতেন।
বাবা বললেন, ঠিক আছে। আমি খাবার নিয়ে যাব। তুমি যখন স্কুলে থাকবে তখন। নিয়ে ডাক্তারের কাছে দিয়ে আসব।
আমি আবার বললাম, কিন্তু তুমি তো রাঁধতে পারো না?
বাবা তার দু হাত দিয়ে মুখ ঢাকলেন। অনেকক্ষণ চুপ থেকে বললেন, ক্রিস্টোফার, আমি মার্ক এন্ড স্পেন্সার থেকে কিনে নিয়ে যাবো। তোমার মা ওগুলো পছন্দ করে ।
আমি বললাম, আমি একটি গেট ওয়েল কার্ড বানাব। কেউ হাসপাতালে থাকলে তার জন্য কার্ড বানাতে হয়।
বাবা বললেন আগামী দিন তিনি আমার কাছ থেকে কার্ডও নিয়ে যাবেন।