দ্য নেম অব দ্য রোজ ফিল্ম এবং উম্বের্তো একোর কমেডি চিন্তা

ফিল্ম শুরু হয় ফ্রান্সিসকান মোনক উইলিয়াম অব বাস্কারবিল এবং তার শিষ্যের একটি বৃহৎ মোনাস্টারি বা আশ্রমে যাওয়ার মধ্য দিয়ে। ঘটনার সময়কাল ১৩২৭ সাল। উইলিয়াম অব বাস্কারবিল অন্য সব মোনকদের চাইতে চিন্তা চেতনায় আধুনিক। তার ডিডাকশন ক্ষমতা ভালো। এবং ইন্টেলেকচুয়াল প্রাইড অনেক।

মোনাস্টারিতে অদ্ভুতভাবে একজন লোক খুন হয়। উইলিয়াম অব বাস্কারবিল এই খুনের রহস্য উদঘাটন করতে লাগেন স্ব ইচ্ছায়। কিন্তু তার সাথে সাথে মোনাস্টারিতে আরো খুন হতে থাকে।

The Name of the Rose

দেখা যায় খুন হওয়া ব্যাক্তিদের জিহবায় এবং হাতের আঙ্গুলে কালো দাগ বিশেষ। এরই মধ্যে অন্য ধরনের একজন মোনক বার্নার্ড গুই এর আগমন হয়। বার্নার্ড গুই এর সাথে উইলিয়াম অব বাস্কারবিলের এক বাজে অভিজ্ঞতা আছে। ইনকুইজিশনে বার্নার্ড গুই এর রায়ের বিরুদ্ধে কথা বলায় ধর্ম বিদ্রোহের অভিযোগে উইলিয়াম জেল খেটেছেন এবং টর্চারিত হয়েছেন। ফলে শক্তিশালী আরেক প্রতিপক্ষের আগমন ঘটল মোনাস্টারিতে।

মার্ডার মিস্ট্রি হিসেবে ভাল। একটা পর্যায়ে খুনি কে বা কি এর উদ্দেশ্য তা বুঝা যায় না। মোনাস্টারির সেটিং এবং অভিনয়ও ভালো।

লেখক ও দার্শনিক উম্বের্তো একোর একই নামের উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে ফিল্মটি নির্মিত। একো বলেছিলেন, “বই হলো ক্লাব স্যান্ডুইচ, তাতে টার্কি, সালামি, টমেটো, লেটুস, চিজ ইত্যাদি থাকে। ফিল্মে দুটির মধ্যে পছন্দ করতে হয়, লেটুস বা চিজ, বাকীগুলো বাদ দিয়ে। ধর্মীয় দিক, রাজনৈতিক দিক। মুভিটা ভালোই।”

উম্বের্তো একো মারা গেলেন এই বছর ফেব্রুয়ারির ষোল তারিখে । প্যারিস রিভিউতে তার একটি স্বাক্ষাতকার বিদ্যমান। সেখানে একটি কমেডি বিষয়ে ভাবনা নিয়ে তিনি কিছু কথা বলেছেন। এই অংশগুলো পড়লে ফিল্মটি আরো ভালো লাগবে বা বুঝতে সহায়তা হবে।

একোর কমেডি ভাবনা – প্যারিস রিভিউ থেকে ভাষান্তর

umbertoeco-654x404

 

পঞ্চাশ বছর বয়সের আগ পর্যন্ত এবং আমার পুরো যৌবনকালে আমি কমেডি তত্ত্বের উপর একটি বই লেখার স্বপ্ন দেখেছি।  কেন? কারণ এই বিষয়ে যত বই লেখা হয়েছে সব অসফল, অন্তত যা আমি পড়তে পেরেছি। যারা কমেডি তত্ত্ব নিয়ে লিখেছেন, ফ্রয়েড থেকে বার্গসন, সবাই কিছু কিছু ব্যাখ্যা করতে পেরেছেন, সব নয়। এটা এমন এক জটিল বিষয় যে এখনো কোন তত্ত্ব তাকে পুরো ব্যাখ্যা করতে পারে নি। তাই আমি ভেবেছিলাম কমেডির সত্যিকার তত্ত্ব নিয়ে লেখব। কিন্তু পরে দেখলাম তা অনেক কঠিন।  আমি যদি জানতাম কেন কঠিন তাহলে এর উত্তর বের করতে পারতাম এবং বইটা লিখতে পারতাম।

সৌন্দর্য এবং কদাকারতার সাথে তুলনা করলে কমেডি ভয়ংকর বস্তু। আমি হাসি নিয়ে বলছি না, মাথায় রাখবেন। না, কমিকের একটা অস্বাভাবিক বা ভুতুরে ভাবালুতা আছে, যা এত জটিল যে আমি ব্যাখ্যা করতে পারি না। এবং এইজন্য আমি বইটা লিখতে পারলাম না।

যেহেতু এটা মনে হয় পশুপাখিরা হাস্যরস বঞ্চিত। আমরা জানি তাদের খেলাধুলা করার বোধ আছে, তারা দুঃখ অনুভব করে, তারা কষ্ট পায়। আমাদের সাথে যখন তারা খেলে, আমরা তাদের আনন্দ বুঝতে পারি। কিন্তু কমিক অনুভূতিটা ওদের নেই। এটা মানুষের অভিজ্ঞতা, যা গঠিত—না, আমি ঠিকভাবে বলতে পারব না।

আমার সন্দেহ হয় আমরাই একমাত্র প্রাণী যারা জানে তারা মারা যাবে এবং এর সাথে বিষয়টার সংযোগ আছে। অন্য প্রাণীরা জানে না তারা মারা যাবে। তারা মৃত্যুর সময় ঘটনাস্থলেই তা বুঝতে পারে। তারা “সব মানুষ মরণশীল” এর মত বাক্য তৈরী করতে সক্ষম নয়। আমরা করতে পারি। এবং এই জন্যই হয়ত ধর্ম, প্রথা আছে।  আমার মনে হয় কমেডি হচ্ছে মৃত্যুভয়ের প্রতি মানুষের যথাযথ প্রতিক্রিয়া। আপনি এর বেশী কিছু জিজ্ঞাসা করলে আমি উত্তর দিতে পারব না।

আমি একটি গোপনীয়তা তৈরী করে যেতে পারি বরং, যাতে সবাই বুঝতে পারে কমেডিকে বুঝার কার্যকর তত্ত্ব আমার কাছে আছে। ফলে যখন আমি মারা যাবো তারা অনেক সময় ব্যয় করবে সেই গোপন পুস্তক খুঁজে বের করতে।

সত্যিকার অর্থে, কমেডি নিয়ে বইটা লেখা বিষয়ে যা হয়েছিল তা হলো আমি এর পরিবর্তে দ্য নেম অব দ্য রোজ লিখেছিলাম। এটা এরকমই একটা বিষয়, যখন তুমি তত্ত্ব দাঁড় করাতে পারো নি, তাহলে একটা গল্প বর্ননা করলে। এবং আমি বিশ্বাস করি দ্য নেম অব দ্য রোজে বর্ননামূলক ভঙ্গিতে কমেডির একটা তত্ত্ব বিস্তৃত করেছি। কমিক হচ্ছে ধর্মান্ধতাকে দূর্বল করে দেয়ার ক্রিটিক্যাল এক উপায়। প্রতি সত্যের ঘোষনার পিছনে এক নারকীয় সন্দেহের ছায়া।