রেন্ট সিকিংঃ ফারুকীর নিয়োগে কেন দুই পক্ষই নাখোশ

যোগ্যতা বা অযোগ্যতার আলাপ না, কেবল নিয়োগের দিকটা দেখলে, ফারুকীর নিয়োগে আওয়ামীলীগ ও দেশের ফ্যাসিস্ট বিরোধী শক্তি দুই পক্ষই বিরক্ত ও নাখোশ হইছেন। খুশি হইতে দেখা গেল অল্প কিছু লোকরে, এদের বেশিরভাগই আবার ফারুকীর নেটওয়ার্কের লোকজন।

ফারুকী শুরু থেকেই পলিটিকাল, পলিটিক্স এবং পাওয়ারের এক প্রধান বিষয় নেটওয়ার্ক তৈরি, এটা তিনি করে গেছেন। পড়লাম, ইউনূস সাহেবের সাথে কী একটা বিষয়ে তিনি আলাপ করতে গেছিলেন, তখন নাকি ইউনূস তারে পছন্দ করছেন উপদেষ্টার জন্য।

ইউনূস তার ভেতরে এই জিনিশই দেখছেন, এ নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারে। এরে দিয়া কাজ হবে। তৃণমূলে শক্ত সামাজিক নেটওয়ার্ক তৈরির বড় এক বিশেষজ্ঞ ডক্টর ইউনূস।

তুলনামূলক উদাহরণ হিশেবে সালাহউদ্দিন লাভলু বা এইরকম আরো যারা ডিরেক্টর আছেন তাদের কথা ভাবতে পারেন। এদের কি কোন পলিটিকাল পাওয়ার আছে? নাই, কারণ তাদের ভাই বেরাদরের স্ট্রং নেটওয়ার্ক নাই।

কিন্তু ফারুকীর নিয়োগে দুই পক্ষের লোক কীভাবে নাখোশ হয়?

এইখানে মানুষের একটা কোর ব্যাপার উঠে আসে। প্রায় সব মানুষই রেন্ট সিকিং বিহেভ মেনে নিতে পারে না। রেন্ট সিকিং হইল, সে কোন ভ্যালু এড করে নাই, কোন রিস্ক নেয় নাই, কিন্তু লাভ নিয়া নিছে। দুনিয়ায় ন্যায়ের আইডিয়া তৈরি হইছে এই বিষয়টারে কেন্দ্র করে। কোর থেকে, একমাত্র আনজাস্ট হইল, ভ্যালু এড না করে, রিস্ক না নিয়ে, বেনিফিট নিয়ে নেয়া, এবং রিস্ক অন্যের দিকে ঠেলে দেয়া। সব নৈতিক আইনি আলাপ এইটারে ভিত্তি করে তৈরি।

ফারুকীর ক্ষেত্রে দুই পক্ষের লোকেরাই এইটা দেখতেছেন। উনি নাকি বিদেশে ছিলেন। শেষ মুহুর্তে সক্রিয় হইছেন। তার স্ত্রী মুজিব ফিল্মের নায়িকা, প্লট পাইছেন। আবার তিনি মুজিবরে নিয়া পোস্ট দিছেন।তারে চঞ্চলও অভিনন্দন জানান, মুন্নী সাহাও জানান। তিনি প্রথম আলোর লোক, আনিসুল হক তার স্ক্রিপ্ট রাইটার, আনন্দবাজার তারে প্রমোট করে। ফলে, দুই পক্ষই ভাবে, এতো মাঝখানে, মিডলম্যান। দুই দিকেই পজিশন নিয়া রাখছে, তার কোন রিস্কই নাই।

এটা গ্রে এরিয়ার বিষয় না। মিডলম্যান হইল মধ্যস্বত্ত্বভোগী। বাংলার লোকজন ঐতিহাসিক ভাবে এই পেশারে লাইক করে না। এইজন্য দালালী একটা গালিসম শব্দ। মধ্যযুগে বাংলা যখন দিল্লীর অধীনে চলে গেল তখন দিল্লীর শাসকেরা প্রচুর ট্যাক্স বাড়াইল। মুসলমান শাসকদের কোন সিস্টেম এবং লোকবল আছিল না ট্যাক্স কালেক্টের। তারা উচ্চ বর্ণের স্থানীয় হিন্দুদের এই দায়িত্ব দিয়া দিত। আর এরা সাধারণ মানুষদের যেমনে পারে শোষন করে বেশী টাকা আদায় করতে থাকে। তাদের লক্ষ্য থাকতো যত কম সময়ে যত বেশী টাকা লাভ করা যায়। কারণ ইংরেজ সামন্তীয় ব্যবস্থার মত বাংলায় এই পেশা বংশানুক্রমিক ছিল না। শাসক ইচ্ছা করলেই বদলাইতে পারতেন। ফলে এই মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা দ্রুত লাভ করতে চাইত এবং তার প্রতিযোগীদের ছলে বলে কৌশলে সরাইয়া ফেলতে চাইত। বাংলায় এই দিয়াই তৈরি হইছে মধ্যস্বত্বভোগীদের চরিত্র।

ফারুকীরে এই লেন্সেই দেখতেছেন দুই পক্ষের লোকেরা। তাই তাদের কাছে তিনি ডেস্পিকেবল ক্যারেক্টার।

ফন্ট বড় করুন-+=