চিন্তা করা মানে কী

ডেভিড ফস্টার ওয়ালেস একজন আমেরিকান নভেলিস্ট, ছোটগল্পকার এবং প্রবন্ধকার তথা এসেইস্ট। তার একটা গুরুত্বপূর্ণ বই আছে, নাম দিস ইজ ওয়াটার। একই নামে তার একটি কমেন্সমেন্ট স্পিচ আছে। এটি সেরা একটা স্পিচ।

ওয়ালেসের এই স্পিচটি গুরুত্বপূর্ণ।

থিংকিং বা চিন্তা করা আসলে কী? চিন্তা করা শেখা মানে কী?

ওয়ালেস একটা ছোট রূপক গল্প দিয়ে শুরু করেন।

দুইটা ইয়াং মাছ যাচ্ছে। তাদের সাথে এক বয়স্ক মাছের দেখা হলো। বয়স্ক মাছ জিজ্ঞেস করলো, কী খবর, আজ পানি কেমন?

মাছ দুইটা উত্তর না দিয়ে এগিয়ে গেল। তারপর একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে বলল, এই পানি জিনিসটা কী?

তারা পানিতে বাস করছে, কিন্তু পানি কী তা জানে না।

সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলি, চোখের সামনে থাকলেও প্রায়ই এগুলি দেখা যায় না, এদের নিয়ে কথা বলা কঠিন।

চিন্তা করা কী, এরকমই একটা জিনিস।

আরেকটা গল্প বলেন ওয়ালেস এরপরে। দুইজন লোক বারে বসে গল্প করছে। তিনটা বিয়ারের পরে মানুষ যেমন উত্তাল তর্ক করে এমন। একজন ধার্মিক আরেকজন নাস্তিক। তাদের তর্কের বিষয় ঈশ্বরের অস্তিত্ব।

নাস্তিক বলছে, দেখো এইটা না যে, হুদাই আমি ঈশ্বরে অবিশ্বাস করি। আমি পরীক্ষা করে দেখছি। একবার ভয়ানক শীতে একটা জাগায় আটকা পড়ছিলাম। রাস্তা হারাইয়া ফেলছি। আমি হাঁটু গাইড়া বললাম, ঈশ্বর আমারে পথ দেখাও, বাঁচাও।

ধার্মিক বলল, তাইলে তো মিয়া তোমার ঈশ্বরে বিশ্বাস করার কথা। তুমি এইখানে আছো মানে তুমারে উনি বাঁচাইছেন।

নাস্তিক বলল, না, উনি হেল্প করেন নাই। একদল এস্কিমো যাইতেছিল, তারা আমারে পথ দেখাইল।

এই যে দুই লোক দুইভাবে ভাবলো, একই জিনিসরে, আমরা উদারনৈতিক অবস্থানে গিয়া এই ব্যাখ্যাতেই আটকা থাকলাম, একই জিনিস দুইজন দুইভাবে ভাবতে পারে। কিন্তু এই দুই লোক এই রূপ ভাবনার টেমপ্লেট বা ছাঁচ নিজেদের ভেতরে ঢুকাইল কেমনে?

আর তারা দুইজনই তাদের মতে নিশ্চিত।

ধার্মিক লোকটারে আমরা যদি ছাগল ভাবি তার নিশ্চয়তার জন্য তাইলে নাস্তিক লোকটাও একই ভাবে ছাগল তার নিশ্চয়তার জন্য।

এটাই হইল সমস্যা। এই দুইজনের ক্লোজ মাইন্ডনেস। এবং তারা আসলে একটা ছাঁচে বন্দী, একটা খাঁচায় বন্দী, যেটা তারা জানেই না।

চিন্তা করা শেখা মানে নিজের অবস্থানে কক শিওর না হওয়াটা আয়ত্ত্ব করা। যেইটারে বলে এরোগ্যান্ট হওয়া ঐ অবস্থান নিয়ে, এটা না হওয়া। নিজের ভেতরে একটা ক্রিটিক্যাল এওয়ারনেস তৈরি করা। স্বয়ংক্রিয় ভাবে কোন জিনিসে নিশ্চিত না হওয়া।

চিন্তা করা শেখা মানে নিজের চিন্তার উপরে কিছুটা নিয়ন্ত্রন করতে আয়ত্ত্ব করা।

চিন্তা করা শেখা হলো, কীসের উপর আপনি মনযোগ দিবেন তা পছন্দ করার, এবং অভিজ্ঞতা থেকে ব্যাখ্যা নির্ধারণ করার  ক্ষমতা অর্জন করার মত সচেতনতা তথা এওয়ারনেস অর্জন করা।

ওরশিপ বা পূজা ছাড়া মানুষের জিন্দেগী নাই। বাস্তব জীবনে কোন নাস্তিক নাই।  সবাই ওরশিপ করে এখানে। এই আরাধনা ঈশ্বরের জন্য যেমন অনেকে করে, অনেকে আরো নানা জিনিসে।

এই ওরশিপ, যদি ধরা যাক, আপনি টাকারে ওরশিপ করেন তাহলে কখনো ফিল করবেন না আপনার যথেষ্ট টাকা আছে। নিজের সৌন্দর্যরে ওরশিপ করলে আগলি ফিল করবেন, মরার আগে মরবেন হাজার বার। বুদ্ধিমত্তারে ওরশিপ করলে, নিজেরে বুদ্ধিমান দেখানোর চেষ্টায় থাকবেন ফিল করতে থাকবেন যে আপনে একটা ধান্দাবাজ। ইত্যাদি। এই ওরশিপটা হলো মানুষের ডিফল্ট স্টেইট, অটোমেটিক।

এবং এইগুলা আপনারে একটা দুর্দশাময় জীবনের দিকে নিয়ে যাবে।

চিন্তা করা শেখা মানে এই অটোমেটিক জিনিসগুলা থেকে বের হওয়া, এওয়ার হওয়া। এখানে নলেজের কিছু নাই। এর চাইতে বেশি দরকার এওয়ারনেস।

গুরুত্বপূর্ণ টাইপের স্বাধীনতায় আছে মনযোগ, এওয়ারনেস আর ডিসিপ্লিন। এবং অন্য মানুষদের ব্যাপারে সত্যি সত্যি কেয়ার করা। তাদের জন্য স্যাক্রিফাইস করে যাওয়া বার বার।

এটা রিয়াল ফ্রিডম। এবং শিক্ষিত হওয়া হলো, চিন্তা করা কী, কীভাবে চিন্তা করতে হয় তা বুঝা।

আর এর বিপরীত হলো নিজের ডিফল্ট স্টেট, আনকনশাস ইত্যাদির দ্বারা তাড়িত হয়ে অবিরত ইঁদুর দৌড়ে দৌড়ানো।

দিস ইজ ওয়াটার মানে কী?  চারপাশের ওয়াটারকে ফিল করা।

এওয়ার হওয়া।