মুরাদুল ইসলাম » ব্লগ » মানুষের ব্যক্তি-সম্পর্ক কেমন হবে?

মানুষের ব্যক্তি-সম্পর্ক কেমন হবে?

সমাজের একেবারে শেষ এককে যদি যান, তাহলে সেটা আপনি। কারণ আপনি যদি না থাকেন তাহলে সমাজ নাই। এবং পরের একক আমি এখানে। যেহেতু আমি আপনার সাথে কমিউনিকেট করছি। 

অর্থাৎ, সমাজ হচ্ছে এককে আপনি ও আমি (যার সাথে আপনি তখন কমিউনিকেট করছেন)। 

এবং সমাজের চাকা হচ্ছে আপনার ও আমার সম্পর্ক। বা ব্যক্তি সম্পর্ক। 

এই সম্পর্কের ক্ষেত্রে দুই ধরণের সম্পর্ক সম্ভব। 

একটা ভার্টিকাল। সেখানে আপনি থাকবেন নিচে, আরেকজন উপরে (বা ভাইস ভার্সা)। যে উপরে থাকে সে ক্ষমতায়, জ্ঞানে, বুদ্ধিতে বা অন্যকোন ভাবে আপনার চাইতে এগিয়ে। ফলে আপনি তার নিচে অবস্থান করেন। 

আরেক ধরণের সম্পর্ক যেখানে আপনি অন্য ব্যক্তির সাথে সমান্তরাল কিন্তু এক না, এমন একটা সম্পর্কে থাকেন, যাকে বলা যায় হরাইজন্টাল সম্পর্ক। 

সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলিব্রেটি ও বুদ্ধিজীবী বিস্ফোরণের কারণে মানুষের ভেতর হীনম্মন্যতা গ্রো করে, এর কারণ হল যারে এরা বুদ্ধিজীবী ও সেলিব্রেটি মানে তার সাথে ভার্টিকাল সম্পর্ক তৈরি করে। এবং বুদ্ধিজীবী এবং সেলিব্রেটিও ভার্টিকাল সম্পর্ক তৈরি করতে চায়। 

কিন্তু প্রকৃত পক্ষে, একজন বুদ্ধিজীবী বা সেলেব্রেটি আপনাকে যে উপদেশ, পরামর্শ ও ক্রিটিক্যাল এনালাইসিস দিতে পারে, তা তার অভিজ্ঞতা থেকে। তার লাইফ ভিন্ন লাইফ আপনার লাইফ থেকে। আপনি তার কাছ থেকে ইনসাইট নিবেন কি না, নিলে তা দিয়ে কী করবেন, এটা সম্পূর্ন রূপে নির্ভর করে আপনার উপরে। জগতে একজন মানুষকে মুক্তি দেবার জন্য অন্য কেউ নাই। নিজের মুক্তি নিজেকেই দিতে হয়। অন্যেরা সাহায্যকারী হতে পারে, ইনসাইট দিতে পারে। 

ফলে সম্পর্ক হবার কথা ছিল হরাইজন্টাল। মানে সমান্তরাল, কিন্তু এক না। 

কেউ বেশি বুদ্ধিমান থাকতে পারে স্বাভাবিক ভাবেই, সেটা মেনে নিয়েও সমান্তরাল সম্পর্ক সম্ভব হয়। 

কিন্তু মানুষ ভার্টিকাল সম্পর্কে বেশি অভ্যস্থ। কিছু ক্ষেত্রে, এর বাইরে অন্য সম্পর্ক যে সম্ভব তারা ভাবতেই পারে না। 

যেমন অফিসে বস, বা ম্যানেজারের সাথে কর্মীদের যে হায়ারার্কিক্যাল সম্পর্ক। 

আপনি যদি ভার্টিকাল  সম্পর্ক তৈরি করেন কোন মানুষের সাথে ফেইসবুকে বা অন্যত্র, তাহলে আপনার সকল ব্যক্তি সম্পর্ক ভার্টিকাল হয়ে যাবে আস্তে আস্তে। 

এর ফলে আপনার মধ্যে ইনফিরিয়রিটি তৈরি হবে। 

সকল সম্পর্ককে সমান্তরাল বা হরাইজন্টাল করা সম্ভব। 

যেমন, পিতা ও পুত্রের সম্পর্কের ক্ষেত্রে, পুত্রের যদি স্বাধীন মত প্রকাশের সুযোগ থাকে, তাহলে তা সমান্তরাল সম্পর্ক হয়।  

যেসব ক্ষেত্রে তীব্র ভাবে ভার্টিকাল সম্পর্ক হবার সুযোগ থাকে, যেমন সরকারের সাথে জনগণের সম্পর্ক, শিক্ষকের সাথে ছাত্রদের সম্পর্ক, পিতার সাথে পুত্রের, বসের সাথে কর্মীর ইত্যাদি, সব ক্ষেত্রে হরাইজন্টাল সম্পর্ক সম্ভব। 

সরকারের ক্ষেত্রে যদি জনগণের মুক্তভাবে মত প্রকাশের সুযোগ থাকে। 

শিক্ষকের ক্ষেত্রে, যদি শিক্ষক তার শিক্ষকতাকে শেখানোর জার্নি না কেবল, শেখার জার্নি হিসেবে দেখেন। 

পিতা পুত্রের ক্ষেত্রে, পিতা যদি পুত্রকে সুযোগ দেন তার কথা বলার ও পুত্রের আলাদা অস্তিত্ব স্বীকার করে নেন। 

বসের ক্ষেত্রে, বস যদি মনে করেন তার কর্মিরাও তার সাথে একই পেইজে আছে, তারা সকলে মিলে এক বড় লক্ষ্যের দিকে যাচ্ছেন, তিনি মালিক না বা তারা তার অধীনস্থ না বরং তাঁদের সম্পর্ক একটা মিচুয়াল ডেভলাপমেন্টের। 

কেন সম্পর্ককে হরাইজন্টাল রাখা দরকারি? 

কারণ আপনি কোন ভার্টিকাল সম্পর্ক তৈরি করলে, অন্য সব সম্পর্ককে ভার্টিকাল হিসেবে ট্রিট করতে থাকবেন। আপনি ফেইসবুকে এক বুদ্ধিজীবীকে উঁচাতে রেখে নিজে নীচাতে থেকে ভার্টিকাল সম্পর্ক করলেন, এর দুইদিন পরে নিজে উঁচাতে উঠে চারপাশের লোকদের নীচাতে রেখে সম্পর্ক করবেন। এই প্রক্রিয়া চলোতে থাকবে, আর এক টক্সিক হায়ারার্কির খেলায় আটকে থাকবেন। 

মানুষের সম্পর্ক হবে “সমান্তরাল, কিন্তু সমান না”। 

দুইজন মানুষ ভিন্ন অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, তাদের দক্ষতা জ্ঞান বুদ্ধি দক্ষতা প্রতিভা ভিন্ন হতে পারে,  তারা সবদিক দিয়ে সমান হয় না। কিন্তু মানুষ হিসেবে তারা সমান্তরালে অবস্থান করে। 

2 thoughts on “মানুষের ব্যক্তি-সম্পর্ক কেমন হবে?”

  1. আপনার এই লেখাটা ভালো। এ বিষয়ে আরও জানতে চাই। বই পড়ে কি আরও জানা সম্ভব? যদি হয় তাহলে কী পড়া দরকার?

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

×
গুরুত্বপূর্ণ
Scroll to Top
বই মডেলিং