বাংলা বানানের নিয়ম

বাংলা অভিধান

এই ব্লগে আমি বাংলা ভাষায় লেখিয়া থাকি। কিন্তু অনেকের এটা দেখে অসুবিধা হতে পারে, যারা কেবল প্রমিত বাংলাকে বাংলা মনে করেন। কিন্তু সামগ্রিকভাবে বাংলার মানুষদের ভাষা নিয়েই বাংলা ভাষা। যে প্রমিত বাংলা চালু আছে তা অসম্পূর্ন এবং বাংলার ভাষার বিরাট শব্দভান্ডার, ভাব ও অনুভূতি থেকে সে বঞ্চিত।

ভাষা মানুষের গুরুত্বপূর্ন একটি উপাদান। তাই ভাষা নিয়া রাজনীতি হয়। কারো ভাষা নিয়ন্ত্রণ করা গেলে তার চিন্তা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়। কারণ ভাষা দিয়েই লোকে চিন্তা করেন। এছাড়াও আমার প্রধান লেখেলেখি গল্প। সেই গল্পগুলিতে ভাষার শক্ত, যথার্থ এবং অসাধারণ প্রয়োগের জন্য এখানকার ব্লগের নন-ফিকশনগুলিতে নানা ধরনের ভাষার কসরত করা বুদ্ধিমানের কাজ বলেই মনে হয়।

জনভাষা ও বহুভাষা বাংলা তার মূল রূপে ফিরে আসবে, যদি সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবিরা তা ব্যবহার করতে পারেন, তথাকথিত প্রমিতের ভিতরে আটকে না থাকেন। জনমানুষের মুখের ভাষাই ভাষা।

ভাষা বিষয়ে ভালো একটি সাক্ষাৎকার আছে সলিমুল্লাহ খানের। তা এখান থেকে পড়া যেতে পারে – বিডিনিউজ আর্টস

ভাষার কিছু বানান প্রচলিত আছে। যেমন, পড়া ও পরা। পড়া মানে বই টই ইত্যাদি পড়া, পঠন। আর পরা মানে পরিধান করা। এই একইরকম দুইটা শব্দ, ভিন্ন দুই জিনিস বুঝায়। আবার কি দ্বারা বুঝায় হ্যাঁ বা না দ্বারা উত্তর দেয়া যায় যেসব প্রশ্ন সেইসব। আর কী দ্বারা লম্বা উত্তর। যেমন, আপনি কি ভাত খান? হ্যাঁ খাই। আপনি কী ভাত খান? মোটা চালের ভাত।

এই কারণে বানানের গুরুত্ব বর্তমান। বানান ভুল সবারই হয়। তাই বানান ভুল দেখলে লজ্জা না পাইয়া না ঠিক করে ফেলা ভালো। আর কেউ বানান ভুল করলে তাকে লজ্জা দেয়ার নীচ চেষ্টা থেকে বিরত থাকা উচিত।

 

বানান ভুল বিষয়ে জয়ঢাক পত্রিকা 

জয়ঢাক বাংলা শিশু কিশোর সাহিত্যের একটি বিখ্যাত পত্রিকা। তারা ২০১৩ সালের ৮ মে লেখায় বানানরীতি নিয়ে একটি আলোচনায় বসেন। সেই আলোচনার ফলাফল তারা তাদের সাইটে পিডিএফ আকারে প্রকাশ করেন। সাধারণ বানান ভুলের হাত থেকে বাঁচতে এই পিডিএফ কাজে লাগার মত।

এখানে তিন প্রকারের সাধারণ বানান ভুলের কথা তারা উল্লেখ করেছেনঃ

১/ টাইপো – বালক লেখতে বাকল লেখা। অভ্রতে কখনো কখনো “আরও” লেখতে গিয়ে দুইবার “ও” না চাপলে তা “আরো” হয়ে যায়।

২/ কাছাকাছি উচ্চারন যুক্ত অক্ষরের মধ্যে কোনটা ব্যবহার করতে হবে সেটা না বুঝে করা ভুল। যেমন, জাগতিক না লিখে যাগতিক লিখে ফেলা।

৩/ একই শব্দের বিভিন্ন বানানরূপ আছে। এক জায়গায় একটি এবং আরেক জায়গায় অন্যটি লেখা। এটা আসলে বানান ভুল নয়। কিন্তু একই লেখায় একই বানানের ভিন্ন ভিন্ন রূপ না থাকা ভালো।

কিছু শব্দ যেমন, হতো, যাবো, খাবো ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। কিন্তু আদর্শ রূপ হত, যাব, খাব

কোন নিত্য বর্তমানে বুঝালে, “কর” হবে। যেমন, তুমি প্রতিদিন দাঁত ব্রাশ কর। এখানে বলা হচ্ছে, একজন প্রতিদিন দাঁত ব্রাশ করে সে কথা। আদেশ নয়।

আবার বর্তমান অনুজ্ঞা বা আদেশ বুঝালে “করো” হবে। যেমন, তুমি এখনই দাঁত ব্রাশ করো। এখানে, দাঁত ব্রাশ করতে বলা হচ্ছে।

আবার ভবিষ্যতের আদেশ বা অনুজ্ঞা বুঝালে ”কোরো” হবে। যেমন, তুমি কাল থেকে দাঁত ব্রাশ কোরো

আরো কিছু নিয়ম জয়ঢাকের পিডিএফ ফাইলে পাওয়া যাবে।  এই বানানরীতি পশ্চিমবাংলার আকাদেমী বানান অভিধান অনুসারে।

 

শুদ্ধশব্দ

শুদ্ধশব্দ নামে একটি মাইক্রোসফট ওয়ার্ড টুল আছে। এর কথা আমি জানতে পারি লেখক মাশুদুল হকের কাছ থেকে। এই টুলটি লেখায় ভুল বানান মার্ক করে দিতে পারে। এটি ফ্রিতে ডাউনলোড করে লেখার বানান পরীক্ষা করা যায়।  টুলটি ডেভলাপ করেছেন জাহিদুল ইসলাম রবি। শুদ্ধশব্দের ওয়েবসাইট লিংক – শুদ্ধশব্দ।

বাংলা একাডেমী সংক্ষিপ্ত বানান অভিধান

বাংলা অভিধান

বাংলা একাডেমীর বানান অভিধান বইটি বানান বা নতুন শব্দ শেখার জন্য ভালো একটি বই। এতে অনেক শব্দ সন্নিবেশিত আছে। প্রতিদিন বা সপ্তাহে একবার কয়েকঘন্টা করে সময় দিলেই প্রচুর নতুন শব্দ শেখা সম্ভব হবে। যত বেশী শব্দ আয়ত্বে থাকবে, লেখার ক্ষেত্রে ভাব প্রকাশ ততো সমৃদ্ধ ও সহজ হয়ে উঠবে।

বাংলা বানান নিয়ে ব্লগ

অনলাইনে বানান নিয়ে কিছু লেখালেখি হয়েছে। অনেক ব্লগার বানান নিয়ে লিখেছেন। তাদের মধ্যে ডক্টর মোহাম্মদ আমিনের এর ব্লগ শুবাচ অন্যতম। এই ব্লগে বানান নিয়ে লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হয়। শুদ্ধ বানান চর্চা ব্লগের লিংক – শুবাচ।