মুরাদুল ইসলাম » Uncategorized » বিজনেস, ম্যানেজমেন্ট ও লিডারশীপ বিষয়ে

বিজনেস, ম্যানেজমেন্ট ও লিডারশীপ বিষয়ে

লিডারশীপ লেসন –

লিডারশীপের প্রথম কথা হলো যিনি লিডার তার জানতে হবে তিনি কোথায় যাচ্ছেন। তিনি সেদিকেই তো অন্যদের নিয়ে যাবেন।

একটা বিগার কজকে লিডার নিজের ভেতর থেকে নিজে বিশ্বাস করবেন। এটা প্রথম কথা।

ডেভলাপমেন্ট সাইকোলজিস্ট জিন পিয়াজে শিশুদের খেলা পর্যবেক্ষণ করে বলেছিলেন, শিশুরা যখন কাল্পনিক খেলা খেলে তখন খেলার আগে তারা নিজেদের মধ্যে কিছু শর্ত ঠিক করে নেয়। খেলা শুরু হলে সবাই তা মেনে চলে।

যেমন আমরা সবাই চোর। অমুক পুলিশ। সে আমাদের খুঁজবে।

অথবা, আমরা বাঘ, অমুক হরিণ, সে কচ্ছপ ইত্যাদি।

একজন লিডারকে একইভাবে কাজ করতে হয়। তার বিগার লক্ষ্যের সাথে অন্য লোকদের জীবনের লক্ষ্য মেলাতে হয়। তাকে বলতে দেখো আমি এটা করতে চাচ্ছি, এতে এই হবে, এই এই হবে তোমার কাজ, এখানে তুমি আমার সাথে আসলে তোমার এই হবে। শিশুদের খেলার মত এগুলি হলো শর্ত।

লিডার যদি মানুষকে এটা বুঝাতে না পারেন তাহলে তারা বিগ লক্ষ্যের জন্য অন্যরা কাজ করবে না।

একটা কোম্পানিতে লোকদের বলা হলো তোমরা কোম্পানির জন্য কী করবে, সে কেরিরার প্ল্যান লিখে আনো। আরেক দলকে বলা হলো তাদের জীবনের লক্ষ্য লিখে আনতে, কোম্পানি ও কাজকে একটি অংশ হিসেবে রেখে।

যারা জীবনের লক্ষ্য লিখে এনেছিল, দেখা গেল তাদের প্রোডাক্টিভিটি বেড়েছে শতকরা দশভাগ।

এখানে তারা জীবনের লক্ষ্যের সাথে কোম্পানির লক্ষ্য মেলাতে পেরেছে। মানুষকে এই সেন্স দিতে পারলেই সে কোম্পানির বিগার ভীষণের সাথে এক হয়ে কাজ করবে। অন্যথায়, ফায়দা নিতে চাইবে কাজ না করে।

কোম্পানির বিগার ভিশন এবং কর্মীর লাইফের লক্ষ্য, দুইটাকে এক সুটায় বাঁধা কঠিন কাজ। এজন্যই লিডারশীপ কঠিন, ও সবার জন্য নয়।

ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট জর্ডান পিটারসন লিডারশীপ নিয়ে বলতে, এরকম কথাই বলেন।

 

ম্যানেজমেন্ট শিক্ষা ফ্রম স্টিভ জবস-

উইনারদের সাথে টিম করুন। স্টিভ জবস তার প্রতিষ্ঠানে লুজারদের রাখতেন না। লুজার হইল একটা মাইন্ডসেট। যেমন উইনার একটা মাইন্ডসেট।

এপল এমপ্লয়ী যারা মনে করত তারাও যেকোন কিছু অর্জন করতে পারবে, এমন মানসিকতার লোক রাখতেন স্টিভ জবস। কারণ এমন লোক ছাড়া বড় ভিশনে আপনি কাজ করতে পারবেন না।

অনেক সময় তার এপ্রুচ রুড মনে হতো। তার একটা কথা আছে, ‘হয়ত অন্য ধরণের পদ্বতি আছে, যেখানে ভদ্রলোকেরা পরিশীলিত ভাষায় কথা বলেন স্যুট টাই পরে, কিন্তু আমি সেই পদ্বতি জানি না, কারণ আমি সাধারণ মিডলক্লাস।’

 

ম্যানেজমেন্ট শিক্ষা ফ্রম স্টিভ ওজনিয়াক-

এপলের কো ফাউন্ডার স্টিভ ওজনিয়াক বলেন, আমি একজন ধৈর্যশীল মানুষ, ঝামেলায় জড়াতে পছন্দ করি না। আমি মনে করি কোম্পানি হতে পারে একটি ফ্যামিলি।

একটু থেমে গিয়ে তিনি বলেন, কিন্তু ম্যাকিনটশ প্রজেক্ট যদি আমার পদ্বতিতে চালানো হতো, তাহলে সম্ভবত সব হতো একটি জগাখিচুড়ি।

 

উই আর নট এ ফ্যামিলি

সব কিছুকে ফ্যামিলি বানানোর অসুবিধা আছে।

পোস্ট মর্ডার্ন ফ্যামিলিই লোকে বানাতে চান, যখন উই আর এ ফ্যামিলি বলেন। কারণ ট্র্যাডিশনাল আগের ফ্যামিলি, যেখানে বাবা স্বৈরশাসকের মত, ধরে ধরে পিটান আর হুমকি ধামকি দেন, এমন ফ্যামিলি তো আর বানাইতে চান না কোম্পানিরে।

পোস্ট মর্ডার্ন ফ্যামিলি বানানোর অসুবিধা হলো, হায়ারার্কিক্যাল স্ট্র্যাকচার থাকে না।

একটা ফ্যামিলির কথা ভাবেন, আধুনিক ফ্যামিলি। মা একটা জিনিস ভাগ করে দিচ্ছেন। সব বাচ্চাই চায় সমান সমান ভাগ। কিন্তু একটা কোম্পানিতে এটা কি সম্ভব? সবাইকে কি সমান হালুয়া রুটি আপনি দিতে পারবেন? দিলে কোম্পানি টিকবে?

তাছাড়া, ফ্যামিলি মানেই ভাল এমন একটি কু ধারণা আমাদের মধ্যে আছে। এটি ভ্রান্ত। মধ্যবিত্ত এবং হাইয়ার মধ্যবিত্ত মামলাদের, বা বড় ঝামেলার বেশিরভাগই হয় ভাই বোনদের মধ্যে, সম্পত্তি নিয়ে।

এমনকি, এসব জায়গায় মাতা পিতাও নিরপেক্ষ থাকেন না। মা বাপেরও কোন কোন সন্তানের প্রতি পক্ষপাত থাকে।

এছাড়া, অনেক অনেক ফ্যামিলি আছে, যারা সন্তানদের সাইকোলজিক্যাল ঝামেলা তৈরি করে রাখছে। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট জর্ডার্ন পিটারসন ফ্যামিলি নিয়ে বলতে গিয়ে বলেছিলেন, কিছু ফ্যামিলি এমন যে, একজন সদস্য আরেকজন সদস্যের গলা চেপে ধরে আছে। এইরকম সমস্যাপূর্নও হতে পারে ফ্যামিলি।

তাই সব কিছুকে ফ্যামিলি বানানো ঠিক না। ফ্যামিলি ফ্যামিলির জায়গায় থাক।

কাজের ক্ষেত্র সুস্থ কাজের ক্ষেত্র হোক। খেলার জায়গায় সুস্থ খেয়াল জায়গা হোক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ডিপার্টমেন্ট তার কাজে ভালো হোক। সবার ফ্যামিলি হইতে হবে কোন দুঃখে?

 

ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে

 

#

মনে রাখবেন, একজন ভালো মানুষ দরকার আপনার ওয়ার্ক ফোর্সে। এটা হলো প্রথমকথা।

পল গ্রাহামের একটা কথা আছে, গুড পিপল ক্যান ফিক্স ব্যাড আইডিয়া। কিন্তু ব্যাড পিপলদের আপনি মহাগুড আইডিয়া দিলেও কাজ হবে না।

আপনার কোম্পানির ভিশন যারা বুঝে না, বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে যারা অথর্ব, এরা আপনার বোঝা, এসেট নয়।

 

#

সান জু’র আর্ট অব ওয়ারে ম্যানেজমেন্ট শিক্ষা হলো, যদি দেখেন আপনার অধীনে থাকা লোকেরা কাজ করছে না, তাহলে নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুন আপনার নির্দেশ দানে সমস্যা ছিল কি না।

এরকম গল্প প্রচলিত আছে। একবার রাজা সান জু কে বললেন, আপনে তো বিরাট যুদ্ধবিশারদ, তাইলে আমার হারেমের নর্তকীদের ট্রেনিং দেন তো।

সান জু রাজী হলেন। ট্রেনিং মাঠে নর্তকীদের নিয়ে গিয়ে তিনি নির্দেশ দিচ্ছিলেন। নর্তকীদের যা স্বভাব, তারা হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছিল। সান জু কয়েকবার নির্দেশ দিয়ে দেখলেন কাজ হচ্ছে না।

সান জু তখন নির্দেশ দিলেন নর্তকীদের দলনেতার মাথা কেটে ফেলার জন্য।

রাজা তখন ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। এ কী কথা! আমার সবচে সুন্দর নর্তকী!

সান জু বললেন, এখানে সেনাপতি আমি। আমার আদেশই চলবে।

নর্তকীর মাথা কাটা হলো নির্দেশ না মানার জন্য। পরে সান জু যখনই নির্দেশ দিচ্ছিলেন, তা সাথে সাথে পালন করছিল নর্তকীরা।

এই ম্যানেজমেন্ট শিক্ষা সব ম্যানেজারের মাথায় রাখা উচিত।

 

#

প্রাইসের নীতিঃ কোন কোম্পানিতে যত লোক আছে, তার স্কয়ার রুট পরিমাণ লোক ৫০ ভাগ কাজ করে।

২৫ জন লোক থাকলে ৫০ ভাগ কাজ করে ৫ জন।

 

#

বাংলাদেশে ফ্রেন্ডলিনেস, স্নেহ ইত্যাদিকে দূর্বলতা হিসেবে দেখে মানুষেরা। এইজন্য কোন ওয়ার্ক এনভায়রনমেন্টে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়া উচিত কার অবস্থান কী। অন্যথায় ধোঁয়াশা তৈরি হয়। আর, ধোঁয়াশা বিজনেস ব্যর্থ করার মেইন দশ জিনিশের একটা।

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

×
গুরুত্বপূর্ণ
Scroll to Top
বই মডেলিং