ভিয়েতনামের লোককথা

ভিয়েতনামের দুটি লোককথা বাংলায় রূপান্তর করলাম।

 

Watermelon

লোককথা-১

 

রাজা তার ছেলের ব্যাপারে বেশ বিরক্ত হয়ে পড়েছিলেন। ছেলেটির কাজে মন নেই। শেষে একদিন তার এতই রাগ হল যে পুত্রকে নির্বাসন দিলেন নির্জন এক দ্বীপে। সে দ্বীপে না আছে মানুষ, না আছে কোন পরিচিত পশুপাখি। বেশিরভাগ অংশেই বিষাক্ত কিছু সাপ খোপ, ব্যাঙ আর আগাছায় পূর্ন এক ছোট দ্বীপ।

রাজার ছেলে আর কী করবে। সে মনক্ষুন্ন হয়ে দ্বীপে ঘর বানাল। একা একা দ্বীপে সামান্য ফলমূল যা পাওয়া যায় তাই খেয়ে কষ্ঠে জীবন ধারণ করতে লাগল।

এর মাঝে একদিন সে খুঁজে পেল অদ্ভুত সবুজ রঙের এক ফল। এত বড় ফল সে আগে দেখেনি। কেটে দেখল ভেতরটা রক্তের মত টকটকে লাল। লাল রঙ দেখেই হতভাগা রাজপুত্র ভয় পেয়ে গেল। সে ফলটা খেল না। তবে দুর্দিনে কাজে আসতে পারে ভেবে ঠান্ডা বালির নিচে রেখে দিল।

কিছুদিন পর শুরু হল প্রখর রৌদ্রের দিন। কাঠফাটা রোদে দ্বীপের সবকিছু প্রায় জ্বলে যাচ্ছিল। রাজপুত্রের খাদ্যাভাব দেখা দিল। রোদে অধিকাংশ গাছই মরে গেছে, সে ফল পাবে কোথায়? শেষে এমন অবস্থা হল যে তৃষ্ণায় বুকের ছাঁতি ফেটে যাবার উপক্রম। রাজপুত্রের তখন মনে হল সবুজ ফলটির কথা।

সে বাধ্য হয়েই ফলটি খেল এবং দেখল খেতে মিষ্টি। ফল খেয়ে তার তৃষ্ণা নিবারন হল। রাজপুত্র ফলটির বীজগুলো দ্বীপে রোপন করে দিল। ধীরে ধীরে দ্বীপ ছেয়ে গেল সবুজ ফলের গাছ এবং ফলে।

রাজপুত্র কিছু সবুজ ফলে তার নাম ও দ্বীপের নাম খোদাই করে সমুদ্রে ভাসিয়ে দিল। দুরগামী জাহাজের নাবিকেরা পেল সেসব ফল। তারা খেয়ে এর স্বাদে মুগ্ধ হল এবং এল রাজপুত্রের দ্বীপে। কেউ দ্বীপে বসতি স্থাপন করল আর কেউ কেউ ব্যবসার জন্য কিনে নিয়ে গেল ফল।

নির্জন দ্বীপটি মানুষের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠল। দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ল রাজপুত্র, দ্বীপ এবং আশ্চর্য সবুজ ফলের সুনাম। খবরটি রাজার কানেও গেল। নিজের পুত্রের এমন অসাধারন সাফল্যে গর্বিত হয়ে উঠলেন রাজা। তিনি সেনাপতিকে বললেন, “আমার পুত্রকে নিয়ে আস। তাকে দেখার জন্য আমার হৃদয় ব্যকুল।”

রাজপুত্রকে মহাসমারোহে নিয়ে আসা হল রাজধানীতে। রাজপুত্র রাজার জন্য সাথে নিয়ে এল সেই সবুজ ফল। রাজা সে ফল খেয়ে মুগ্ধ হয়ে ছেলেকে রাজমুকুট পড়িয়ে দিলেন। সেদিন থেকেই রাজপুত্র হল নতুন রাজা।

এই হল ভিয়েতনামের লোককথা মতে তরমুজের ইতিহাস। তরমুজকে তাই ধরা হয় সৌভাগ্যের প্রতীক। নববর্ষে একজন আরেকজনকে তরমুজ উপহার দেয়ার রীতি আছে।

 

mosquito

লোককথা-২

এক যুবকের স্ত্রী মারা গেল। যুবক তাকে ফিরিয়ে আনতে গেল মৃতের দেবতার কাছে। অনেক অনুরোধ করে দেবতাকে রাজী করাল এবং নিজের তিনফোঁটা রক্ত দিয়ে তাকে ফিরিয়ে আনল।

মেয়ে জীবিত হয়ে ফিরে আসল। এর কিছুদিন পর মেয়েটি এক বিত্তবান জাহাজের ক্যাপ্টেনের সাথে চলে যেতে চাইল।

হতাশ যুবক সব কিছু মেনে নিল। সে মেয়েটাকে বলল, “আমার তিনফোঁটা রক্ত দিয়ে যাও।”

বদ মেয়ে ভাবল, তিনফোঁটা রক্ত! এটা কোন ব্যাপার! সে বলল, “আনো ছুরি।”

ছুরি আনা হল। মেয়েটা আঙুলের অগ্রভাগ কেটে তিনফোঁটা রক্ত দিতে চাইল। কিন্তু কাটার পর আর রক্ত বন্ধ হয় না। অনবরত রক্ত ঝরতেই লাগল। এবং একসময় মারা গেল মেয়েটি।

তারপর সে হয়ে গেল পৃথিবীর প্রথম মশা। মশা হয়ে সে প্রাক্তন স্বামীর গাত্র থেকে তিনফোঁটা রক্ত নিতে হানা দেয়া শুরু করল।

ভিয়েতনামের এক লোককথা অনুযায়ী এটি মশাদের জন্মের কাহিনী।