রত্নগর্ভা নামে এক ধরনের সম্মাননা (!) দেয়া হয় কিছু সফল সন্তানের জননীদের। এটা একটা মহা ফালতু ব্যাপার। এবং মূলত এই সম্মাননার মাধ্যমে এই মা’দের এবং জগতের অন্যান্য জননীদের অপমান করা হয়।
নির্দিষ্ট কিছু মা’দের এই সম্মাননা দিয়ে আলাদা করার চেষ্টা করা হয়, যেন অন্য মা’রা তামা পিতল কাসা জন্ম দেন খালি।
সন্তান জন্মদানই একটা কষ্টসাধ্য বিরাট ব্যাপার। আলাদা রত্ন এইখানে লাগানোর কিছু নাই। কোন পুরস্কার বা সম্মাননা দিয়ে এই মা’দের সম্মানিত করা যাবে না। পৃথিবীর সব মা-ই সন্তান জন্ম দিয়ে নিজ থেকে সম্মানিত হয়ে আছেন। আলাদা কর্পোরেট অথবা এনজিওদের এই ফালতু সম্মাননা তাদের অপমান করারই নামান্তর।
আরেকটা ব্যাপার হল এই সন্তানদের মা রত্নগর্ভা হলে বাপ ও রত্নবীর্য বা এই টাইপ কিছু পুরস্কার পাওয়ার কথা। কারণ খালি গর্ভ হলেই তো সন্তান হয় না, স্পার্ম লাগে। কিন্তু বাপদের ক্ষেত্রে এই টাইপ কোন সম্মাননার প্রচলন নাই। মা রে সিলেক্ট করা হয়েছে কারণ সমাজের মা দের প্রতি একটা বুর্জোয়া নীতিযুক্ত সফট কর্নার আছে। এটাকেই ব্যবহার করছে কর্পোরেট এনজিওবাদি সংস্থারা বা যারা এইসব পুরস্কার দেয় তারা।
এবার আসা যাক গুণের কথায়। যদি বলা হয়, এই গুণী সন্তানেরা মায়ের কাছ থেকে গুণপনা পেয়েছেন তাই তাদের মা রত্নগর্ভা, তাও ফালতু। কারণ সন্তান বাপের কাছ থেকেও গুণপনা পায়। এবং সেইসব গুণ তাদের বাপ মায়ের শরীরে তাদের পূর্বপুরুষ থেকে আগত। সুতরাং এখানে কৃতিত্ব মানবসভ্যতার, মানুষের।
আমাদের দেশের সেই মা কখনো এইসব সম্মাননা পাবে না, যে বাড়িতে বাড়িতে ছুটা বুয়ার কাজ করে, স্বামীর ফেলে যাওয়া সন্তানদের খাইয়ে পরিয়ে মানুষ করে। কারণ তার সন্তানেরা পড়ালেখা করে, ডিগ্রি ফিগ্রি নিয়ে সমাজের কর্তাব্যক্তিদের শ্রেণীতে যেতে পারবে না। সুতরাং, তার এই কষ্ট, এই পরিশ্রম ও পবিত্র ঘামের বিনিময়ে বাঁচিয়ে রাখা সন্তানকে রত্ন বলবে না কেউ। তার এই জীবন যুদ্ধ, সন্তানের প্রতি মমতার কোন মূল্যই নেই যেন। যেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল কয়জনের মা সব কষ্ট করে ছেলেমেয়েদের বানিয়ে ফেলেছেন রত্ন বিশেষ।
আসলে এই পুঁজিবাদি রত্নগর্ভা সম্মাননা পৃথিবীর সব মা’কে অপমান করে। তাই রত্নগর্ভা সম্মাননা বর্জন এবং ঘৃণা করাই যুক্তিযুক্ত।
এপ্রিল ৩, ২০১৪