লি কুয়ান ইউঃ দ্য গ্র্যান্ড মাস্টার’স ইনসাইট

                                                                             

                                                                                       ***

                                                                                 লি কুয়ান ইউ

 

“লি কুয়ান ইউ কে?” এই প্রশ্ন দিয়ে লেখাটা শুরু করা যায়। যেহেতু এই পোস্টের বিষয়বস্তু মূলত তিনি। লি কুয়ান ইউঃ দ্য গ্র্যান্ড মাস্টার’স ইনসাইট অন চায়না, দ্য ইউনাইটেড স্টেটস এন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড* তার নির্বাচিত স্বাক্ষাতকার নিয়া একটা বই। এইখানে তার পরিচয় দেয়া হইছে এইরকম, তিনি একজন স্ট্র্যাটেজিস্টের স্ট্র্যাটেজিস্ট, লিডারের লিডার আর মেন্টরের মেন্টর।

লি কুয়ান ইউ সিঙ্গাপুরের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। যখন তিনি সিঙ্গাপুরের ক্ষমতা নেন তখন সেদেশের মাথাপিছু আয় ছিল বছরে ৪০০ ডলার, এখন তা ৮৫,০০০ ডলারের উপরে।

দনিয়ার একজন স্মার্টেস্ট লোক, ওয়ারেন বাফেটের পার্টনার চার্লি মাঙ্গার সরাসরি বলেন, সিঙ্গাপুরের এই  সাফল্য লি কুয়ানের মত ট্যালেন্টেড লোকের কারণেই। তিনি লি কুয়ানকে মনে করেন সিঙ্গাপুরের ওয়ারেন বাফেট

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে ছোট দেশ সিঙ্গাপুর। পাশে ক্ষমতাবান প্রতিবেশী রাষ্ট্র। প্রাকৃতিক সম্পদও নাই। ফলে এমন ধারণা ছিল যে সিঙ্গাপুর হয়ত ব্যর্থ রাষ্ট্রই হবে। হেনরি কিসিঙ্গার লিখলেন, “লি কুয়ানের মাথায় ছিল তার দেশ শুধু টিকে থাকবে না, দক্ষতার মাধ্যমে জয়ী হবে। উচ্চতর বুদ্ধিমত্তা, নিয়মানুবর্তীতা, উদ্ভাবনী দক্ষতাকে তিনি করলেন প্রাকৃতিক সম্পদের বিকল্প।”

হেনরি কিসিঙ্গার গ্র্যান্ড মাস্টার’স ইনসাইটের ভূমিকায় লিখছেন গত অর্ধ শতকে অনেক বিশ্ব নেতার সাথে তার কথাবার্তা বলার সুযোগ হয়েছে, কিন্তু এদের কেউ লি কুয়ানের মত তারে শিখাতে পারেন নাই।

lee kuan yew 3
ছবিঃ লি কুয়ান ইউঃ দ্য গ্র্যান্ড মাস্টার

লি কুয়ানের উপদেশগুলা মনযোগ দিয়া যারা শুনেন তাদের মধ্যে অন্যতম হইলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট এবং রাষ্ট্রিয় বড়কর্তারা, যুক্তরাজ্যের প্রাইম মিনিস্টার, জার্মান চ্যান্সেলার এরা। এইজন্যই মনে হয় তারে লিডারদের লিডার বলা হয়।

ঈদের কালে (ঈদুল ফিতর-২০১৬) কিছু বই পড়া শুরু করছিলাম। এর মাঝে আছে, জন ডিকসন কারের একটা মিস্টিরি উপন্যাস, কীভাবে ইনসাইট কাজ করে এইটা নিয়া কগনিটিভ সাইকোলজিস্ট গ্যারী ক্লেইনের সিইং হোয়াট আদার’স ডোন্ট, ইতিহাসের অধ্যাপক লিন হোয়াইট মেডিভল টেকনোলজি এন্ড সোশ্যাল চেইঞ্জ, মুদ্রারাক্ষস নামে একটা সংস্কৃত নাটকের বাংলা অনুবাদ, এইটা চানক্য এবং মৌর্যদের উত্থান নিয়া লেখা, আনন্দবাজারে চানক্যরে নিয়া একটা লেখা পড়তে গিয়া এই নাটক পড়ার ইচ্ছা হইছিল। আনন্দবাজারের লেখাটায় বিষকন্যা নামে একটা টার্ম ছিল, এটা আমারে মুদ্রারাক্ষস পড়তে আগ্রহী কইরা তোলে।* এইসব আরো কিছু বই একসাথেই দেখছিলাম, এর মাঝে লি কুয়ানের বই খানা শুরু করি এবং বাকী সব গুলা রাইখা এইটারেই শেষ করতে হয়। এর থেকে বুঝা যাইতে পারে বইখানা পড়তে কীরকম লাগছে।

লি কুয়ানের চিন্তার সাথে পরিচিত হইতে হইতে বইয়ের পাতায় পাতায় যাত্রা হইতে থাকে খুব দ্রুতগতির। চীন, জাপান, আমেরিকা, ইন্ডিয়া, ইসলামের নামে এক্সট্রিমিজম, লিডারশীপ ইত্যাদি নানা বিষয়ে লি কুয়ানের মত জানতে জানতে বিষয়গুলা বুঝা যাইতে থাকে গভীর থেকে।

 

                                                                                           ***

                                                                           সিঙ্গাপুরের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

 

সিঙ্গাপুরে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ব্যবসা শুরু হয় ১৮১৯ সালে। এরপর তা ব্রিটিশ শাসনের অধীনে চলে যায়। ১৯৪২ পর্যন্ত থাকে। ১৯৪২ এ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানীরা সিঙ্গাপুরে ব্রিটিশদের পরাজিত করে এবং ১৯৪৫ পর্যন্ত জাপানীদের শাসন বজায় থাকে এখানে। এই সময়ে তারা গণহত্যা ও নির্যাতন চালায়।

লি কুয়ান জাপানীদের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন ভাগ্যগুণে। একবার জাপানী সৈন্য তাকে কিছু বিচ্ছিন্ন চাইনিজ লোকের দলের সাথে যাইতে বললো। লি কুয়ানের মনে হল হয়ত কোন ঝামেলা আছে। তিনি সৈন্যরে বললেন, আমি ঘর থেকে কাপড় নিয়া আসি। কোন কারনে জাপানী সৈন্য এতে রাজী হয়। লি কুয়ান চলে আসেন।  আর যান নাই।

এই চাইনিজ লোকের দলরে সেদিন নিয়া হত্যা করা হয়, যা সক চিং ম্যাসাকারের একটা অংশ।

জাপানীদের সিঙ্গাপুর অধিকার লি কুয়ানের চিন্তা চেতনারে নানাভাবে প্রভাবিত করেছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান হারলে সিঙ্গাপুর আবার ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণে চইলা যায়। কিন্তু সিঙ্গাপুরে বিভিন্ন জাতির লোকের বাস। ব্রিটিশদের উপর থেকে এদের সম্মান কমে গেছিল কারণ তারা জপানীদের হাত থেকে সিঙ্গাপুরকে বাঁচাইতে পারে নাই।

আর এইদিকে জাতীয়তাবাদের উত্থান হইল। তাও ১৯৪৫ থেকে ৫৯ পর্যন্ত সিঙ্গাপুর ব্রিটিশদের অধীনে থাকে।

১৯৫৫ সালে একটা নির্বাচন হয়। সিঙ্গাপুরের স্বাধীনতাকামী নেতা ডেভিড মার্শাল জিতেন। তিনি তার স্বাধীনতার দাবী লইয়া যান ব্রিটিশদের কাছে। ব্রিটিশেরা তার দাবী দাওয়ার প্রতি সন্তুষ্ট হয় নাই। তাই ডেভিড পদত্যাগ করেন। তার উত্তরসুরী হন লিম ইউ হক। তিনি দাবী লইয়া গেলে ব্রিটিশেরা তা লাইক করে এবং সিঙ্গাপুরকে সেলফ-গভর্নমেন্টের স্বাধীনতা দিয়া দেয়।

শেষপর্যন্ত ১৯৫৯ সালে সিঙ্গাপুর সেলফ-গভর্নমেন্টে যায়। পিপলস একশন পার্টি একচেটিয়া ভোট পাইয়া জিতে। লি কুয়ান ইউ হন প্রথম প্রধানমন্ত্রী। ১৯৬৩ পর্যন্ত তা ঠিকে।

এরপর মালয়শিয়ার সাথে একাত্ম হইয়া যায় সিঙ্গাপুর। সিঙ্গাপুর ছোট, প্রাকৃতিক সম্পদ নাই; ফলে একলা তার ঠিকে থাকা যুক্তিমতে প্রায় অসম্ভব ছিল। এছাড়া মালয়শিয়ার লগে তাদের ঐতিহাসিক ও জাতিগত অনেক মিল।

মালয়শিয়ার লগে একাত্মতা শেষ হয় ১৯৬৫ সালে। বিভিন্ন বিষয়ে তাদের দ্বিমত হইতেছিল। ফলে ১৯৬৫ এর ৬ আগস্টে মালয়শিয়ান পার্লামেন্ট সিঙ্গাপুরের ডেলিগেটদের অনুপস্থিতিতেই  ১২৬-০ ভোটের ব্যবধানে সিঙ্গাপুররে বাইর কইরা দেন।

আর সিঙ্গাপুর পইড়া যায় অথই জলে। এরপরে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে লি কুয়ান স্বাধীনতার ঘোষনা দেন ৯ আগস্টে।  স্বাধীনতার ঘোষনার কালে তার দুঃখী মুখ, কান্না এবং মালয়শিয়ার লগে থাকার স্বপ্ন ভঙ্গ, সর্বোপরি তার দেশের ভবিষ্যত চিন্তায় আচ্ছন্ন লি কুয়ানরে দেইখা মনে হইতে থাকে এক আবেগী বেদনার্ত লোকের প্রতিচ্ছবি।

স্বাধীনতার ঘোষনায় কথা বলতে পারতেছিলেন না লি কুয়ান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত উচ্চারণ করেছিলেন তেজস্বী স্বরে, সিঙ্গাপুর উইল সারভাইভ।*

এর ৩৬ বছর পর সিঙ্গাপুর হইয়া উঠে এশিয়ার এবং বিশ্বের এক শক্তিশালী অর্থনৈতিক শক্তি, সারা বিশ্বে এক প্রভাবশালী অস্তিত্ব।  এই পরিবর্তনের নায়ক লি কুয়ান ইউ, প্রতিকূল পরিস্থিতি যারে শক্ত, নিরাবেগী এবং প্রাজ্ঞ কইরা গইড়া তুলছে।

 

                                                                                          ***

                                                                         কৌতুহলী প্রশ্নেরা আমাদের

 

কিছু ইন্টারেস্টিং প্রশ্ন আছে যেইগুলা নিয়া চায়ের দোকানে বইসা সাধারন লোকে আলাপ করে। বা অন্য কোন আড্ডা দেওয়ার জায়গায়। এই বছর (২০১৬) শুরুর দিকে তিনমাস আমি জিমে ভর্তি হইছিলাম ওয়েট বাড়ানির খায়েশে। তিনমাস সেইখানে যাবতীয় কিছু শিখলাম। অনুপ্রেরণার জন্য আর্নল্ড সোয়ার্জনেগারের বই, স্বাক্ষাতকার ইত্যাদি নাইড়া দেখলাম। আমার ইচ্ছা ছিল সোয়ার্জনেগারের চিন্তা ভাবনা নিয়া একটা পোস্ট লেখা। কিন্তু তিনমাস পরে ব্যস্ত হইয়া পড়ায় জিম ছাইড়া দেই এবং সোয়ার্জনেগার নিয়া লেখার কথাও আর মনে থাকে না। আইজ আবার মনে পড়ল।

যাইহোক, জিমে যাইতাম গার্ডেন ক্লাবে। প্রতিদিন সন্ধ্যার পরে। ওইখানে গিয়া পুরা ভিন্ন ধরনের পরিবেশের লগে পরিচিত হইলাম। আমার ট্রেইনার শপথ ভাই একজন দিলখোলা মানুষ। তাই ওয়ার্ক আউটের সাথে সাথে সেইখানে আড্ডাও জমত প্রতিদিন।

প্রথমে আমি শুনতাম তারা সবাই বইসা গল্প করতেছেন, চীন কি পারবে আমেরিকার লগে? দুই পক্ষ হইয়া আলোচনা। কেউ বলতেছেন চীন আমেরিকারে যুদ্ধে হারাইয়া দিবে। চীন সুপারপাওয়ার হইয়া যাবে। অন্য পক্ষ এর বিরুদ্ধে অর্থাৎ আমেরিকার পক্ষে। এইভাবে প্রতিদিন আড্ডায় ইন্ডিয়া চীনের যুদ্ধ লাগত, চীন সুপারপাওয়ার হইত, আমেরিকারে হারাইয়া দিত রাশিয়া। কয়েকটা নিউক্লিয়ার ওয়ার একইদিনে যে ঘটানো হয় নাই এমন না। হইছে আড্ডায়।

এইগুলা শুনতে মজা লাগত। এইখান থেকেই আমার মনে হইতে থাকে বা চোখে পড়তে থাকে ইন্টারনেশন্যাল পলিটিক্স নিয়া মানুষের আগ্রহ। যার যার মত করে মানুষ বিচার কইরা ইন্টারনেশনাল পলিটিক্স বুঝতে চায়। বুঝতে চায় কে হবে সুপারপাওয়ার। সুপারপাওয়ার মানে ধরেন পৃথিবীর রাজা।

এইগুলা বেসিক কিছু আগ্রহ উদ্দীপক প্রশ্ন। যারা ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্স নিয়া পড়েন, খবরাখবর রাখেন, রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ইত্যাদির দিকে নজর রাখেন, এরাও এইগুলা নিয়া কথা বলেন; তবে একটু অন্যভাবে, অন্য টোনে। কিন্তু যেভাবেই বলা হোক, যে টোনই ব্যবহৃত হইতে থাকুক, বেসিক প্রশ্ন ঐখানেই থাইকা যায়, কে শক্তিশালী বা ক্ষমতাবান।

চীন কি পারবে আমেরিকারে সরাইয়া পৃথিবীর এক নাম্বার শক্তি হইতে? চীন আমেরিকার যুদ্ধ লাগলে কে জিতবে? যুদ্ধ লাগবে কি? ইন্ডিয়া কি সুপারপাওয়ার হইতে পারবে? ইরান পারমানবিক অস্ত্র পাইলে কি হবে? আমেরিকারে এক নাম্বার পাওয়ারে থাকতে হইলে কি করতে হবে?

গ্র্যান্ড মাস্টার লি কুয়ান এইসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। ফলে গ্র্যান্ড মাস্টার’স ইনসাইট বইখানা পড়া আগাইয়া যাইতে থাকে দ্রুত, লাফাইয়া যাইতে থাকা খরগোশের মত।

লি কুয়ান স্পষ্টভাবে বলছেন, আমেরিকার সুপার পাওয়ারের এক নাম্বারে থাকতে হইলে কি করতে হবে। তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্যাসিফিক কান্ট্রিগুলায় পাওয়ার প্রতিষ্ঠিত রাখতে হবে এবং ব্যবসা আরো বাড়াইতে হবে। সম্প্রতি (২ মে, ২০১৬) বারাক ওবামা ওয়াশিংটন পোস্টে একটি আর্টিকেল লিখছেন কীভাবে আমেরিকা ট্র্যান্স প্যাসিফিক পার্টনারশীপের মাধ্যমে গ্লোবাল ট্রেইডের নিয়ন্ত্রণে থাকবে এই নিয়া। এইখানে তিনি চীনের লগে ব্যবসা প্রতিযোগীতায় আগাইয়া থাকতে প্যাসিফিক অঞ্চলে প্রাধান্য এবং ব্যবসা বিস্তারে প্রাধান্য দিছেন।* এইখান থেকেই বুঝে নেওয়া যাক, লি কুয়ানের চিন্তা কতটা বাস্তব সম্মত।

 

                                                                                               ***

                                                          লি কুয়ানের রাজনৈতিক চিন্তা এবং তার প্রিয় নেতারা

 

লি কুয়ান মনে করেন মানুষ হইল ভিসিয়াস। ভিসিয়াস শব্দের ইংরাজি অর্থ ডেলিভারেটলী ক্রুয়েল, ভায়োলেন্ট বা অনৈতিক। এবং তারে এই অনৈতিকতা হইতে আটকাইয়া রাখতে হবে।

যারা ক্রিস্টোফার নোলানের ব্যাটমানঃ ডার্ক নাইট দেখছেন তারা লক্ষ কইরা থাকবেন, ব্যাটম্যান মনে করে মানুষ হইল ভালো। কিন্তু জোকার মনে করে মানুষ ভালো না, যখন চিপস আর ডাউন, তখন তারা যেকোন খারাপ কাজ করবে। জোকার ইনডাইরেক্টলী এইখানে নিয়ন্ত্রণের কথা বলে, অথরিটির প্রয়োজনীয়তা বুঝাইয়া দেয়।

লি কুয়ানের চিন্তাও এইরকম। তিনি বলেন, আমরা মহাশূন্য জয় করছি কিন্তু নিজেদের আদিম সহজাত প্রবৃত্তিগুলা জয় করতে পারি নাই। এই প্রবৃত্তিগুলা এবং আবেগ প্রস্তরযুগে আমাদের টিকে থাকার জন্য দরকার ছিল কিন্তু এই মহাশুন্যের যুগে এগুলার দরকার নাই।

তিনি মনে করেন মানুষ হইল পশুর মত, তার প্রাকৃতিক প্রবৃত্তি পরিবর্তন করা না গেলেও ট্রেইনিং দিয়া তারে অধিকতর দক্ষ এবং নিয়মানুবর্তী বানানি সম্ভব।

তার মতে, একটা সমাজের উন্নতির জন্য অন্তরায় হচ্ছে সবাইরে সমান কইরা দেয়া। সবাই একইরকম বেনিফিট পাইলে দক্ষদের প্রতিযোগীতার মনোভাব চলে যায়। দুইজন মানুষ জন্ম থেকেই একরকম না, তারা আলাদা। সবাইরে সমান কইরা দেয়ার চিন্তাই চীন ও রাশিয়ার সমাজতন্ত্রের পতনের কারণ বলে মনে করেন লি কুয়ান। সোশ্যালিজম এবং পশ্চিমের ওয়েলফেয়ার স্টেইটের বিরুদ্ধে তার অবস্থান স্পষ্ট। এক লোক এক ভোটের গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে তার অবস্থান আরো স্পষ্ট। তিনি বলেন, যে লোকের বয়স ফোর্টির উপরে তার পোলা মাইয়া আছে, সে জীবনের টানাপোড়েনের লগে যুক্ত হইয়া পড়ছে গভীরভাবে; সে ভোট দিবার আগে অনেক কিছু ভাইবা দিবে। কিন্তু যার বয়স আঠারো উনিশ সে কি ঐ লোকের মত বুইঝা ভোট দিবে? এর জন্য তিনি ফোর্টির উপরে লোকদের ভোটের মান দুই করতে চান। আর এর নিচের সবার এক। আবার ফোর্টি আপ লোক যদি সিক্সটি ফাইভের উপরে চলে যায় তখন সে আবার এক ভোটে ব্যাক করবে।

লি কুয়ান বলেন, এক লোক এক ভোটের গণতন্ত্রের নিয়ম এইটা আমরা প্র্যাক্টিস করি কারন এইটা ব্রিটিশ আমাদের উপরে চাপাইয়া দিছে। এইটারে আমরা চ্যালেঞ্জ করার প্রয়োজন বোধ করি না।

বাংলাদেশের গণতন্ত্রের দিকে দেখলেই আমরা গণতন্ত্র শুনতে যত ভালো হউক, কামে যে উলটা তা আমরা বুঝতে পারি। এইটা উন্নয়নের অন্তরায় হইয়া দাঁড়ায় এবং অনুন্নত দেশে গণতন্ত্র মূল শর্তাবলী মানে না। যেমন, নেতৃবৃন্দের সৎ হইতে হবে বা যারা ভোট দিবে এরা টাকা খাইয়া ভোট দিবে না ইত্যাদি।

বাংলাদেশের যে গণতন্ত্র এইটারে বিশেষজ্ঞরা নাম দিছেন ছদ্ম গণতন্ত্র।* গণতন্ত্রের কিছু পূর্ব শর্ত আছে। ইউরোপে গণতন্ত্রের বিকাশের আগে জতিগঠন, রাজনৈতিক সংস্কার, শিল্প বিপ্লব, বিজ্ঞান প্রযুক্তির বিকাশ ইত্যাদি হইতে হইতে পাঁচ শ বছর সময় গেছে। তারপরে তারা গণতন্ত্রের জন্য তৈরী হইছে। উপনিবেশের শাসন থেকে মুক্ত হইয়া যেসব দেশে গণতন্ত্র গেছিল এদের বেশিরভাগেই গণতন্ত্র হ্যান্ডেল করতে পারে নাই। বাংলাদেশও পারতেছে না। ইন্ডিয়ারে উদাহরণ দিয়া বলা যাইতে পারে বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ। কিন্তু ইন্ডিয়ার আর কোন উপায়ও নাই, যেহেতু সামরিক ক্ষমতা দখল ইন্ডিয়ায় অতি দুরুহ কারণ ঐ দেশে ভিন্ন ভাষাভাষী এবং ভিন্ন জাতের লোকের বাস। হিন্দি বললেও সবে বুঝবে না, ইংরাজি বললেও না। এইরকম একটা দেশে সামরিক ক্ষমতা দখল অত সহজ না। যেইভাবে ছোট, এক ভাষার বা কয়েকটা জাতওয়ালা দেশে সম্ভব।

লি কুয়ানের এইসব রাজনৈতিক চিন্তা আমাদের পছন্দ নাও হইতে পারে। বিশেষত যাদের চিন্তা খালি পশ্চিমের বড়ি খাইয়া মোটাতাজা হইছে।

লি কুয়ানরে পড়তে পড়তে মনে হইতে পারে ম্যাকায়াভেলীর কথা। মনে হইতে পারে আমি কি ম্যাকায়াভেলী যেমন রাষ্ট্রনেতা কল্পনা করছিলেন সেইরকম কাউরে জানতেছি। লি কুয়ান যে ম্যাকায়াভেলীরে মানেন সেইটা তার জনমত নিয়া ধারণা দেখলেই বুঝা যায়। তিনি জনমতরে পাত্তা দেন না। বলেন, আমি মনে করি ম্যাকায়াভেলী ঠিক ছিলেন, রাষ্ট্রনেতারে জনগন ভালোবাসবে না ভয় করবে; এইটার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রনেতার উচিত ভয় করানিটারেই চুজ করা। কারণ জনগনের ভালোবাসা চিরস্থায়ী নয়। এবং রাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি ভালোর জন্য কখনো কখনো রাষ্ট্রনেতারে এমন কোন সিদ্ধান্ত নিতে হইতে পারে যা জনগণ পছন্দ করবে না। ফলে জনপ্রিয়তা রাষ্ট্রনেতার উদ্দেশ্য হইবে না সব সময়, হইলে রাষ্ট্রের এবং রাষ্ট্রনেতার ক্ষতি হইবে দীর্ঘ যাত্রায়।

প্রতিপক্ষকে নির্যাতন, জেল জুলুম ইত্যাদির জন্য লি কুয়ান বিতর্কিত। কিন্তু তিনি বলেন, এগুলা করা ছাড়া তার কোন উপায় ছিল না। এইখানে তিনি ম্যাকায়াভেলী ল অব হায়ার গুড মতে কাজ করেন বলে মনে হয়। পশ্চিমারা তারে কীভাবে বিচার করবে তা নিয়ে তিনি ভাবিত নন, তার ভাবনার বিষয় তিনি যাদের শাসন করেছেন এরা কীভাবে তারে বিচার করবে; এমনই মত দেন তিনি। চীনের দেং জিইয়াওপিং চীনরে বাঁচাইছেন বলে তিনি মত দেন। ডেং এর প্রতি তাদের মুগ্ধতা আছে।

দেং তিয়ানানমেন স্কয়ারে* জড়ো হওয়া ছাত্রদের আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করতে বলেছিলেন, দুই লাখ ছাত্রও যদি মারতে হয় অবস্থা নিয়ন্ত্রন করতে, তাও মারো। লি কুয়ান বলেন, ডেং এর এই কথা আমি বুঝতে পারি। ডেং ছাড়া চীনে অতর্দ্বন্দ্ব এবং গৃহযুদ্ধে নাই হইয়া যাইত। লি কুয়ান মনে করেন, চীন লিবারেল ডেমোক্রেসিতে গেলে সেইটা চীনের ধ্বংস ডাইকা আনবে।

এই যে নৃশংস পন্থারে সমর্থন, আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে; এটা অমানবিক। কিন্তু লি কুয়ান এইটা ছাড়া আর কোন উপায় দেখেন না।

যখন ইউরোপে রেনেসান্স শুরু হইতেছিল তখন কেন চীনের প্রযুক্তিগত উন্নতি ধীর হইয়া গেল তার একটা কারণ উল্লেখ করেছেন লি কুয়ান। তখন ব্রিটিশ চর লর্ড ম্যাকার্টনি আইছিলেন চীনের সম্রাট কিয়ান লং এর কাছে। ১৭৭৩ সালে। তার সাথে আনছিলেন শিল্প বিপ্লবের বিস্ময়কর কাগজপত্র বা রূপরেখা। তিনি চীনের সম্রাট তা দেইখা আগ্রহ প্রকাশ করলেন না। তিনি ভদ্রলোকরে বললেন, “আমাদের এমন কিছু কম নাই বা আমরা এমন কিছু চাই না যা আপনার দেশ তৈরী করে।”

এই পশ্চিম থেকে গ্রহন না করার মানসিকতা, এবং অহংকারের জন্য চীনরে দুইশ বছর ভুগতে হইছে। এরপর ডেং জিয়াওপিং আইসা চীনরে বিশ্বের কাছে নিয়া যান(১৯৭৮ সালে)।

এই কারণেও লি কুয়ান ডেং জিয়াওপিং এর ভক্ত। আরো যেসব নেতারে তিনি পছন্দ করেন এরাই হইলেন ফ্রান্সের চার্লস দ্য গল, ব্রিটেনের উইন্সটন চার্চিল।

দ্য গলরে লাইক করার কারণ তার সাহস ছিল অত্যধিক। দ্য গল ওয়ান স্টার জেনারেল ছিলেন, তার দেশ দখল হইয়া গেল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে। পরে আমেরিকা এবং ব্রিটেন উত্তর আফ্রিকা পুনরায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিল। দ্য গল আলজেরিয়ার আলজিয়ার্সে গেলেন। গিয়া দেখলেন একজন ফোর স্টার ফ্রেঞ্চ জেনারেলরে পাহাড়া দিচ্ছে আমেরিকান সৈন্যরা। তিনি তারে গিয়া বললেন, জিরোড, তুমি একজন ফ্রেঞ্চ জেনারেল, তোমার পাহাড়ায় আমেরিকান সৈন্যরা কী করতেছে?

লি কুয়ান বলেন, তিনি আছিলেন একজন টাফ মাইন্ডেড ফেলা। তার যেমন সাহস ছিল, তেমন ছিল কান্ডজ্ঞান।

উইন্সটন চার্চিলের সম্পর্কে বলতে গিয়া লি কুয়ান তার একটা উক্তির কথা বলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে চার্চিল বলছিলেন, “আমরা বীচে ফাইট করব। মাঠে ফাইট করবো, রাস্তায় ফাইট করবো। কখনো আত্মসমর্পন করব না।”

যখন নিজেদের সৈন্যরা মাইর খাইতেছে তখন এইরকম কথা বলতে প্রচুর মানসিক শক্তি, অসাধারণ ইচ্ছাশক্তি এবং জার্মানির কাছে পরাজিত না হইবার অদম্য বাসনার প্রয়োজন হয়।

লি কুয়ান চতুর্থ আরেকজন লীডারে মুগ্ধ এবং তিনি তার কলিগ গোহ কেং সুই। ইনি সিঙ্গাপুরের সেকন্ড ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার ছিলেন। এনার পড়ালেখা, বিচার ক্ষমতা এবং যুক্তি লি কুয়ানরে মুগ্ধ করতো। লি কুয়ান গোহ কেংরে বলেন তার ট্রাবলশ্যুটার। গোহ কেং বই, আর্টিকেল এবং বিভিন্ন ধরনের লেখা দিয়া তারে সাহায্য করতেন সিদ্ধান্ত গ্রহনে, যুক্তি দিয়া অনেক সময় মত বদলাইতে বাধ্য করতেন তারে।

 

                                                                                             ***

                                                                            ক্ষমতা ও ক্ষমতার রাজনীতি

Lee Kuan Yew
ছবিঃ লি কুয়ান ইউঃ দ্য গ্র্যান্ড মাস্টার

 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কালে জাপান ব্রিটিশ কলোনি সিঙ্গাপুরে ব্রিটিশ সৈন্যদের পরাজিত কইরা সিঙ্গাপুর দখন কইরা নেয়। সাড়ে তিন বছর তারা সেইখানে ক্ষমতার দাপট দেখায় এবং নির্যাতীত হইতে থাকে সিঙ্গাপুরের মানুষ। লি কুয়ান নিজেও এই নির্যাতনের মুখে পড়ছেন। একজন সাধারণ আইনজীবি হওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন তিনি লাইফে। কিন্তু এই জাপানের আগ্রাসন তারে গুরুত্বপূর্ন রাজনৈতিক শিক্ষা দিয়া দিল। এইটারে তিনি তার জীবনের একমাত্র গুরুত্বপূর্ন রাজনৈতিক শিক্ষা জ্ঞান করেন। জাপানিদের কাছ থেকে লি কুয়ান বুঝতে পারলেন ক্ষমতা ক্যামনে ব্যবহার করতে হয়,কেমনে ক্ষমতা, ক্ষমতার রাজনীতি এবং সরকার পাশাপাশি যায় এবং ফাঁদে পড়া লোকেরা যেহেতু জীবন ধারন করতে হবে সেহেতু সব কীভাবে মাইনা নেয়। একসময় ব্রিটিশদের দেইখা তিনি শিখছিলেন কীভাবে শাসন করতে হয়। আর যে জাপানিরা খাটো বা টেড়া চোখওয়ালা ক্ষীণ দৃষ্টির এইসব নিয়া তারা হাসাহাসি করতেন সেই জাপানিরা তাদের উপর ক্ষমতার প্রয়োগ করলো যখন, তখন তিনি বুইঝা নিলেন, বন্দুকের নলই ক্ষমতার উৎস, মাওয়ের বলার আগেই।

 

 

                                                                                                ***

                                                      আগামীর এবং বর্তমান দুনিয়ায় ইন্টারনেট প্রযুক্তির গুরুত্ব

 

আরেকটা উল্লেখযোগ্য বিষয় হইল লি কুয়ান ইন্টারনেট টেকনোলজিরে গুরুত্ব দিছেন। বর্তমান দুনিয়া হইল ইন্টারনেট টেকনোলজির, আগামীর দুনিয়া হবে আরো ইন্টারনেট টেকনোলজি নির্ভর। আমেরিকা যেমনে ইন্টারনেট টেকনোলজিতে আগাইয়া গেছে তেমনে সিঙ্গাপুররে আগাইয়া নিতে হবে তিনি মনে করেন। অন্য যেসব দেশ উন্নত হইতে চায় তাদেরও এইটারে অনেক গুরুত্ব দিয়া দেখতে হবে। আরেকটা বিষয়রে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়া বিবেচনা করছেন লি কুয়ান সেইটা হইল উদ্যোক্তাবাজি বা অন্ট্রিপ্রেনিউরশীপ। আমেরিকার উন্নতির মূলে তাদের উদ্যোক্তা হইবার মনোভাব এবং এই কারণেই তারা বিভিন্ন সময় খারাপ অবস্থায় পইড়াও উইঠা গেছে। ভবিষ্যতেও এইভাবে খারাপ সময়রে মোকাবেলা করবে এই স্পিরিট দিয়া। ফলে তাদের হটাইয়া এক নাম্বার সুপারপাওয়ার হওয়া সম্ভব না।

বর্তমানে (২০১৬) এশিয়ার অনলাইন স্টার্ট আপ গুলা যদি দেখেন, দেখবেন সিঙ্গাপুরে বেশ তোড়জোর শুরু হইছে এই নিয়া। লি কুয়ান মনে করেন, যারা স্কলার আছেন, ভালো জ্ঞানী আছেন তাদের খালি ক্লাসিক সাহিত্য, দর্শন, ভালো ভালো বই পড়লে হবে না। নয়া জ্ঞান তৈরী করতে হবে, মার্কেটিং, ম্যানেজম্যান্ট নিয়া রিসার্চ করতে হবে। উদ্যোক্তা হতে হবে, ইনোভেটর হইতে হবে, ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট হইতে হবে।

 

                                                                                              ***

                                                                          লি কুয়ান যেভাবে কাজ করতেন

 

লি কুয়ান বলেন যে তিনি থিওরী মতে চলেন না। তিনি সক্রেটিস, প্লেটো বা এরিস্টটল দ্বারা চালিত নন। একটা থিওরী শুনতে ভালো এবং কাগজ পত্রে যৌক্তিক দেখালেও কার্যক্ষেত্রে তা অসম্ভব হইতে পারে। তাই তিনি কাজে বিশ্বাসী। তার মতে, এশিয়ার মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ থিওরী চায় না, একটা ভালো জীবন চায়। একটা নৈতিক এবং সাম্যের সমাজ চায়।

থিওরী দ্বারা চালিত না হয়ে কোন কাজ করার আগে লি কুয়ান নিজেরে প্রশ্ন করেন, এইটার জন্য কি করতে হবে?

তারপরে কিছু সমাধান পাওয়া গেলে তিনি সেরা সমাধানটা নেন। এরপর ভাবতে বসেন এই সেরা সমাধানের পিছনে কোন নীতি কাজ করেছে।

তার নির্বাচিত সমাধান কাজ না করলে অন্যগুলো থেকে তিনি আরেকটা নির্বাচন করেন যাতে সাফল্যের সম্ভাবনা বেশী। এইটাও ব্যর্থ হলে তার হাতে আরো অপশন থাকে। কখনোই এমন হ্য় না যে আর কোন অপশন নাই।

কী কাজ করে, এইটারে তিনি গুরুত্ব দেন। থিওরী কি বলে তা নিয়ে তার কোন মাথাব্যথা নাই।

 

                                                                                               ***

                                                     লি কুয়ানের মতে যেইভাবে ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হয়

 

ইতিহাসরে আমি গুরুত্বপূর্ন মনে করি। মানুষ হইল তার ইতিহাসের সমষ্টি। কোন জাতির ইতিহাস না জাইনা কেবল বর্তমান জাইনা তারে বুঝা যাবে না। ইতিহাসের ঘটনা একইভাবে পুনরাবৃত্তি হয় না, কিন্তু কিছু জিনিসের মিল থাকে। যেমন, যদি বাংলার মুসলমান শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসের দিকে তাকান দেখবেন উলামা বলে পরিচিত লোকেরা যারা ইসলামি রাষ্ট্র চাইতেন তাদের লগে মুসলিম শাসকদের বিরোধ ছিল। উলামারা চাইতেন বাংলায় ইসলামি রাষ্ট্র, হিন্দুদের উচ্চ পদ থেকে বিলোপ কিন্তু মুসলিম সুলতানেরা এইটা করতে পারতেন না। এইটা করলে হিন্দু অধ্যুষিত বাংলায় তাদের শাসন ঠিকানি যাইত না।

সুলতান গিয়াসুদ্দিন আযম শাহ উলেমাদের একজন নেতা নুর কুতুবের সাথে মিলে বাপ সিকন্দর শাহকে আকস্মিক আক্রমণে হত্যা কইরা ক্ষমতা দখল করেন। তার আমলে দেশে ইসলামিকরন শুরু হয়, হিন্দুরা বড় পদ থেকে বিতারিত হন। আবার উলামাদের এক অংশ নুর কুতুবের বিরোধী ছিলেন। বিদ্রোহ শুরু হয় গিয়াসের বিরুদ্ধে। প্রভাবশালী হিন্দুরাও এতে যোগ দেন। ফলে গিয়াস এবং তার উত্তরাধীকারীরা একে একে নিহত হন, ইলিয়াস শাহী বংশের শাসন শেষ হয় আর বাংলার মসনদে বসেন রাজা গণেশ।

একইরকম ঘটনা এখন আর ঘটবে না। এখন যেহেতু বাংলার সালতানাত নাই আর। কিন্তু এর কিছু উপাদান এখনো সমাজে বর্তমান। বাংলাদেশ দুই শাসকদল বিএনপি এবং আওয়ামিলীগের লগে দেশীয় উলামাদের নানা মত পার্থক্য দেখা যায় রাষ্ট্রীয় অনেক আইনের বিরুদ্ধে। এইসব জিনিস বুঝতে ঐ ইতিহাস দরকার হইয়া পড়ে।

ভবিষ্যতরে বুঝতে এবং ভবিষ্যত অনুমান করতে হইলে অতীতরে জানতে হবে। কিন্তু লি কুয়ানের মতে খালি কি ঘটছে তা দেখলেই চলবে না, দেখতে হবে কেন ওইভাবে ঘটনাটি ঘটল। এইটা মানুষের জন্য যেমন সত্য, তেমন সত্য একটা জাতির জন্য। একজন মানুষের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সে কি পছন্দ করে, অপছন্দ করবে কি স্বাগত জানাবে বা কি ভয় করবে তা নির্ধারিত হইয়া উঠে। তেমনিভাবে জাতির ক্ষেত্রেও। জাতির সমন্বিত স্মৃতি নয়া কোন ঘটনারে তার অতীতে ঘটা ঘটনা দ্বারা বিচার করে।

ভিয়েতনাম আক্রমণের সময় আমেরিকা বুঝতে পারছিল ভিয়েতনামের লোকদের ইতিহাস সম্পর্কে তাদের জানার গভীরতা কম। এইজন্য এর সাথে সাথেই তাদের বড় বিশ্ববিদ্যালয়, যেমন ইয়েল, স্ট্যানফোর্ড ইত্যাদি এবং রান্ড কর্পোরেশনের মত থিং ট্যাংক এই বিষয়ে একটা জানার ক্ষেত্র তৈরী করতে বড় বিশেষজ্ঞদের নিযুক্ত করে। শুরুতে যদি আমেরিকার ভিয়েতনামের লোকদের ইতিহাস নিয়া ভালো জ্ঞান থাকত তাইলে তারা ভিয়েতনামে আক্রমণ শুরু না কইরা কম্বোডিয়ায় আক্রমন করত।

 

 

                                                                                                 ***

                                                    জ্ঞানীর লগে আলাপ এবং পড়ারে জীবনের লগে মিলাইয়া বুঝা

 

লি কুয়ান বলেন তিনি বাইড়া উঠছেন তিন জেনারেশনের বড় পরিবারে। সেই বাইড়া উঠা তারে একজন সচেতন কনফুসিয়াসিস্ট বানাইছে। কনফুসিয়াসের কথা হচ্ছে একজন মানুষরে ভদ্রলোক হতে হবে, তার মা বাপের কাছে ভালো হতে হবে, বউয়ের কাছে সৎ হইতে হবে, সন্তানদের ঠিকমতো মানুষ করতে হবে, বন্ধুদের লগে ভালো ব্যবহার করতে হবে, রাজার একজন ভালো নাগরিক হইতে হবে, সে কারো ক্ষতি করবে না। এইটা আমেরিকান ব্যাক্তিস্বাতন্ত্র বা ব্যাক্তি অধিকারের উলটা, এইখানে ব্যাক্তিস্বাতন্ত্রের উপরে সমাজরে স্থান দিতে হয়। এইটা আমেরিকান চিন্তার লগে কনফুসিয়াসের চিন্তার তফাত।

লি কুয়ান যখন কোন নয়া জায়গায় ভ্রমন করেন তখন তাদের সমাজ কীভাবে কাজ করতেছে, প্রশাসন কীভাবে কাজ করতেছে সেই দিকে লক্ষ্য দেন। ভাবেন এইটা কেন ভালো? এইভাবে তিনি তার জানাশোনারে বাস্তবের লগে মিলাইয়া দেখেন। লি কুয়ানের মতে খালি পড়ায় কিছু হয় না। সেই পড়ারে জীবনের লগে মিলাইয়া বুঝতে হবে।

লি কুয়ান বলেন, জ্ঞানী ব্যক্তিদের লগে কথা কওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। এর মাধ্যমে অল্প সময়ে বুইঝা নেয়া যায় অনেক কিছু। যা পইড়া পাওয়া অত সহজ না। অনেক অনেক ডকুমেন্টস পড়ার চাইতে জ্ঞানীর লগে আলাপ অধিক কার্যকরী।

 

                                                                                                 ***

                                                                 আমাদের কৌতুহলী প্রশ্নের উত্তরে লি কুয়ান ইউ

 

আমাদের কৌতুহলী প্রশ্নদের একটা ছিল চীন কি পারবে আমেরিকারে হারাইয়া এক নাম্বার সুপার পাওয়ার হইতে। লি কুয়ানের মতে চীনের কিছু সীমাবদ্বতা আছে। এর একটা হইল তাদের ঐতিহ্যবাহী মান্দারিন ভাষা। এই ভাষা এবং সংস্কৃতিগত ভিন্নতার জন্য তারা বাইরের দেশের প্রতিভাবানদের নিজের দেশে আকৃষ্ট করতে পারতেছে না। তারা ইংরাজিরে প্রধান ভাষা করলে ভাষাজনিত এই জটিলতায় তাদের পড়তে হইত না। আমেরিকার মিলিটারী শক্তি চীনের চাইতে অনেক বেশী শক্তিশালী। তাই চীন আমেরিকার লগে যুদ্ধে জড়াবে না। চীন একটা শান্তিপূর্ন উত্থান চাইতেছে। শান্তিপূর্নভাবেই তারা বড় পাওয়ারে যাইতে চাইবে। আর আমেরিকারে এক নাম্বার অবস্থান থেকে হটানো যাবে না কারণ আমেরিকার সংস্কৃতি উদ্যোক্তা সংস্কৃতি এবং তারা বাইরের দেশ থেকে প্রতিভাবানদের নিজেদের দেশে আকৃষ্ট করতে পারে, গ্রহণ করতে পারে। চীন এবং আমেরিকার সম্পর্ক কোল্ড ওয়ারের সময়কার রাশিয়ান ইউনিয়ন আর আমেরিকার মত নয়। এইখানে আরো ত্রিশ বছর চীনের আমেরিকার বাজারে যাওয়ার দরকার, আমেরিকার প্রযুক্তি দরকার, আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াইয়া নিজেদের ছাত্রছাত্রীদের প্রশিক্ষিত করা দরকার। তাই তারা আমেরিকার শত্রু হইতে চাইবে না। তারা প্রতিযোগী হইলেও একে অন্যের শত্রু না।

ক্ষমতার ভারসাম্যের জন্য এশিয়া প্যাসিফিক এবং ইউরোপে আমেরিকার মিলিটারী উপস্থিতি দরকার বলে মনে করেন লি কুয়ান। তার মতে চীনের বিরাট সাইজের জন্য ত্রিশ বছরেও ভারত বা জাপানের তার সমকক্ষ হওয়া সম্ভব হবে না। ফলে আমেরিকাকে এখানে দরকার ভারসাম্য তৈরী করার জন্য। তিনি বলেন, পৃথিবীর উন্নতি হইছে কারণ আমেরিকা যে ভারসাম্য তৈরী করছিল এর জন্য। এই ভারসাম্য নষ্ট হইলে পরিস্থিতি ভিন্ন হয়ে যাবে।

ইন্ডিয়া কি চীনরে ছাড়াইয়া যাইতে পারবে এমন প্রশ্নে লি কুয়ান বিব্রত হন। তিনি এক নিঃশ্বাসে চীন আর ইন্ডিয়া দুই দেশরে উল্লেখ না করতে বলেন কারণ দুইটা ভিন্ন। একটা আপেল হইলে আরেকটা কমলালেবু। চীনরে ইন্ডিয়া ছাড়াইতে পারবে না তাদের জটিল আমলাতন্ত্রের জন্য। ভারত উন্নতির ধীর পথে হাটতেছে বলে তিনি মনে করেন। ইন্ডিয়ার সংবিধান এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থাই তার দ্রুত উন্নতির পথে অন্তরায়। তবে আসিয়ানের সব দেশের চাইতে চীনের বিরুদ্ধ শক্তি হিসাবে ভারতের অবস্থান হবে শক্তিশালী।

রাশিয়া সম্পর্কে লি কুয়ান হতাশা প্রকাশ করছেন। রাশিয়ার ভবিষ্যত তেমন উজ্জ্বল নয়, তাদের জনসংখ্যা কমতেছে। মানুষ সন্তান নিতেছে না। এইটা তাদের জাতিগত নিরাশাবাদী প্রবণতার বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করেন তিনি।

 

                                                                                                     ***

                                                                    গোল্ড এন্ড গ্লোরিঃ ব্যক্তিগত অর্জনের তুচ্ছতা

 

সেই ১৯৭৩ থেকে কি বুঝতে পারছেন তিনি তা নিয়া লি কুয়ান বলেন, তিনি বুঝতে পারছেন মানব সভ্যতা কতো ভঙ্গুর। মানুষের ব্যাক্তিগত অর্জনের তুচ্ছতা নিয়াও তার উপলব্ধি আসছে। ব্যক্তিগত অর্জন, খ্যাতি বা সম্পদ অথবা ইন্দ্রিয় সুখের ক্ষণস্থায়ী অস্তিত্বের ব্যাপারে তিনি সচেতন হইছেন। তিনি তার জীবনরে একটা বড় উদ্দেশ্যের জন্য ব্যয় করতে শুরু করেন। যেইখানে (রাজনীতিতে) তিনি আইসা পড়ছিলেন ঘটনাক্রমে। সেইখান থেকে তিনি তার দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য কাজ কইরা গেছেন বলে তিনি মনে করেন।

ব্যক্তিগত অর্জন মানুষরে শেষ পর্যন্ত যে সুখী করতে পারে না তা জ্যাঁক লাকাও বলেছেন এবং তার এক  উল্লেখ আছে ফিল্ম লাইফ অব ডেভিড গেইলে

Lee Kuan Yee2

লি কুয়ান প্র্যাক্টিক্যাল মানুষ। তিনি মনে করেন না যা তিনি করেছেন তার সব ঠিক। বিভিন্ন কারণে তিনি সমালোচিত। কিন্তু যেহেতু তিনি নিজে ঠিক কইরা দিতে পারবেন না কীভাবে তিনি স্মরিত হইবেন তাই তিনি তা ভবিষ্যতের উপরেই ছাইড়া দিতে চান। যে দেশের জন্য, যে মানুষদের জন্য তিনি কাজ করছেন, তাদের উপরেই তিনি দিয়া যান তারে এবং তার কর্মরে বিচারের ভার।

 

                                                                                                   ***

                                                                                বাংলাদেশের সম্ভাবনা কেমন?  

লি কুয়ানের এই স্বাক্ষাতকারমূলক বইয়ে বাংলাদেশ নিয়া কোন কথা নাই। কিন্তু তার বিভিন্ন কথার আলোকে বাংলাদেশ বিষয়ে কিছু ভাবা যাইতে পারে। সেই চেষ্টাই করা হইল এই অংশে।

গণতন্ত্র নয়, জনসংখ্যাই ২১ শতকে নিরাপত্তা এবং উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ন বিষয়। ফলে অধিক জনসংখ্যার দেশ হিসেবে বাংলাদেশের একটা সম্ভাবনা আছে বা ছিল বলা যায়। রাশিয়ার নিরাশাবাদী প্রবণতার প্রভাবে সন্তান না নেয়ারে বিবেচনা কইরা বলা যায়, বাংলাদেশের মানুষ কি আশাবাদী তাই সন্তান উৎপাদনে তাদের কোন ভয় ডর নাই? মুখ দ্যান যিনি, আহার দিবেন তিনি এইটাও এক ধরনের আশাবাদী মনোভাব।

সংবিধান এবং গণতন্ত্র উন্নতিরে ধীর কইরা দেয় বলে মনে করেন লি কুয়ান। তার মতে কোরিয়া, তাইওয়ান, হংকং এবং সিঙ্গাপুর কখনো উন্নতি করতে পারত না যদি তাদের ফিলিপাইনের মত আমেরিকান স্টাইলের সংবিধান থাকতো। বাংলাদেশের সংবিধান, গণতন্ত্র দুইটা আছে।

এইসব ঝামেলা না থাকলে, যদি কোন দেশে ক্রিয়েটিভ এবং সৎ নেতারা থাকেন, যারা অন্য বিভিন্ন জায়গার অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে আগ্রহী, খুব দ্রুত এবং কার্যকরীভাবে ভালো আইডিয়া প্রয়োগ করতে পারেন কার্যকরী পাবলিক সার্ভিসের মাধ্যমে, এবং মানুষদের বুঝাইতে পারেন কেন পরিবর্তন করলে ভালো হবে, তাহলেই একটা দেশ উন্নতি এবং উন্নয়নের দিকে যাইতে থাকে।

 

লি কুয়ানের মতে ডেভলপিং দেশ যেভাবে উন্নত হইতে পারেঃ

 

১। সামাজিক নিয়ম শৃঙ্খলা বজায় রাখা

২। লোকদের শিক্ষিত করা

৩। প্রতিবেশীদের সাথে সু সম্পর্ক বজায় রাখা

৪। ইনভেস্টরদের আত্মবিশ্বাস আনতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা

 

 একটা দেশের মানুষের জীবন যাত্রার মান যেসব মূল বিষয়ের উপর নির্ভর করেঃ

১। জনসংখ্যার অনুপাতে এর প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমাণ

২। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং শিল্পায়নের পরিমান

৩। শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের মান

৪। সংস্কৃতি, নিয়মানুবর্তীতা এবং লোকদের কাজ করার মানসিকতা

 

যেহেতু বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ কিছু আছে, মানুষও অনেক আছে; তাই এদিক থেকে বাংলাদেশের সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু ছদ্ম গণতন্ত্র, এবং সৎ ও যোগ্য নেতা নেত্রীর অভাব এইখানে বর্তমান। এছাড়া শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের মান একেবারে নিম্ন। নিয়মানুবর্তীতা এবং কাজ করার মানসিকতা বা উদ্যোক্তা সংস্কৃতি তৈরী করা হয় নাই। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন যা হয়েছে তা গ্লোবালাইজেশনের কারণে এবং যতটুকু হওয়া প্রয়োজন ছিল তা হয় নাই। শিল্পায়নের ব্যাপারেও একই কথা বলা যায়।

লি কুয়ান উদ্যোক্তাবাজি নিয়া যা বলছেন তার কিছু এইরকমঃ আমেরিকান অর্থনৈতিক শক্তির মূলে তার উদ্যোক্তা সংস্কৃতি। উদ্যোক্তা এবং ইনভেস্টররা ঝুঁকি গ্রহণ করেন। ব্যর্থতাকে প্রাকৃতিক এবং সাফল্যের জন্য প্রয়োজনীয় মনে করেন। তারা ব্যর্থ হইলে গা ঝাঁড়া দিয়া উঠেন এবং নতুনভাবে শুরু করেন। আমেরিকার সব সফল উদ্যোক্তাদের মধ্যে অনেকেই ব্যর্থ হয়েছেন এক বা একাধিকবার। অনেকে সফল হওয়ার আগ পর্যন্ত বার বার চেষ্টা কইরা গেছেন। এই স্পিরিট তৈরী করে ডাইনামিক অর্থনীতি। সম্পদ ছড়ায় উদ্যোক্তাবাজি তথা ঝুঁকি গ্রহনের মাধ্যমে।

জাতির জনশক্তি হচ্ছে তার দেশের প্রতিযোগীতামূলক মনোভাবের পিছনের একমাত্র জিনিস। দেশের লোকের সৃষ্টিশীলতা (নয়া কিছু তৈরী-ইনোভেটিভনেস), উদ্যোক্তা মনোভাব, দলে কাজ করার স্বক্ষমতা; এইগুলা দেশের প্রতিযোগী মনোভাব বাড়াইয়া দেয়।

আমেরিকার উদ্যোক্তা সংস্কৃতির পিছনে চাইরটা বিষয় আছেঃ

১। আত্মনির্ভরতা এবং আত্ম স্বাধীনতারে জাতীয়ভাবে জোর দেয়া

২। যারা নয়া বিজনেস শুরু করতেছে তাদের সম্মানের চোখে দেখা

৩। উদ্যোক্তাদের ব্যর্থতা এবং নয়া কিছু তৈরী করতে গিয়া ব্যর্থতারে স্বাভাবিক এবং সহজভাবে গ্রহণ করা

৪। আয়ের উচ্চ অসমতারে সহ্য করা

বাংলাদেশে আয়ের উচ্চ অসমতারে গ্রহণ করা হইতেছে। সাম্প্রতিককালে অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়তেছে এমন অনেক গবেষনা ফলাফল পত্রিকায় প্রায়ই দেখা যায়*। কিন্তু বাকী তিনটা বাংলাদেশের সমাজে অনুপস্থিত।

লি কুয়ানের চিন্তা অনুসারে উন্নতিরে দেখলে আপাতত যেভাবে বাংলাদেশ চলতেছে তাতে বাংলাদেশের দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নতির কোন সম্ভাবনা নাই।

 

                                                                                                      ***

                                                                                               লি কুয়ান ইউ 

rip-lee-kuan-yew

 

 

 

  • সংযুক্তিঃ
  • ছবি ক্রেডিট সংস্লিষ্ট ফটোগ্রাফারদের।
  • লি কুয়ান ইউঃ দ্য গ্র্যান্ড মাস্টার’স ইনসাইট প্রকাশ করেছে এম আই টি প্রেস।
  • সম্প্রতি বহিঃর্বিশ্বে আমাদের জন্য বৃহৎ অর্থনৈতিক সুযোগ রইছে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে। অই জায়গা এই গ্রহের এক বড় লাভজনক এবং জনবহুল মার্কেটে পরিণত হইতে যাইতেছে। এই অঞ্চলে ব্যবসা বৃদ্ধি আমেরিকার ব্যবসায়ী এবংকর্মজীবিদের জন্য হবে এক আশীর্বাদ। এইটা আমাদের অর্থনৈতিক প্রতদ্বন্ধীদের ( যার কথা বেশী শোনা যায় সেই চীন সহ) থেকে দ্রুত আগাইয়া যাইতে সহায়তা করবে। (বারাক ওবামা, ২ মে ২০১৬, ওয়াশিংটন পোস্ট)
  • টুংকু আব্দুর রহমানের সিঙ্গাপুররে মালয়শিয়া থেকে বাইর কিরা দেওয়র ঘোষনা এবং সিঙ্গাপুরের স্বাধীনতা ঘোষনা করতেছেন লি কুয়ান – ভিডিও-১, ভিডিও-২
  • বাংলাদেশে যে ধরনের গণতন্ত্র বিদ্যমান এঁকে যে গবেষকরা ছদ্ম বা মিথ্যা গণতন্ত্র বলে থাকেন তা পাওয়া যাবে বদরুল আলম খানের  বাংলাদেশঃ যেখানে গণতন্ত্রের রঙ ধূষর নামক গবেষণা প্রবন্ধে। প্রকাশিত হয়েছে প্রতিচিন্তা, এপ্রিল-জুন ২০১৫ সংখ্যায়।
  • এর পর একদিন চন্দ্রগুপ্তের কাছে খবর নিয়ে এলেন চাণক্যই। এক বিষকন্যার সংসর্গে প্রাণ হারিয়েছেনপ্রভতক। (চাণক্যশাস্ত্র, আনন্দবাজার, জুলাই ২, ২০১৬)
  • বেইজিং এর তিয়ানানমেন স্কয়ারে ১৯৮৯ সালে গণতন্ত্রের জন্য ছাত্ররা আন্দোলন করেছিল। এক সময় চাইনিজ সরকার সামরিক শক্তি ব্যবহার করে তা দমন করে যা তিয়ানমেন ম্যাসাকার নামে পরিচিত। বিখ্যাত ট্যাংক ম্যানের প্রতিবাদী ছবিটি এই আন্দোলনেরই। ট্যাংক ম্যান এখনো সাহসী এবং প্রতিবাদী মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে আছেন। সিএনএন এর করা ভিডিও
  • বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১৪ মতে বলা হইছে, দেশের এক-তৃতীয়াংশ সম্পদের মালিকানা মাত্র ১০ শতাংশ প্রভাবশালী মানুষের হাতে রইছে। দেশের ৩৬ শতাংশ সম্পদ ধনী ১০ শতাংশ মানুষের হাতে। গরীব ১০ ভাগের হাতে আছে মাত্র ২ শতাংশ। (ভোরের কাগজ; মে ৩১, ২০১৫)
  • ড. জাহিদ হোসেন এর স্বাক্ষাতকার থেকে প্রাপ্ত, অর্থনৈতিক বৈষম্যের জরিপগুলাতে ধনীদের আয় পরিস্থিতি ধরা পড়ে না কারণ তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা কঠিন। ফলে এইসব জরিপের ফলাফলের চাইতেও বৈষম্যের মাত্রা আরো বেশী। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ফল সবাই সমানভাবে পাছে না। আয় বৈষম্যের চাইতেও গুরুত্বপূর্ন হইয়া উঠছে অর্থনৈতিক সুযোগের বৈষম্য। (ড. জাহিদ হোসেন, প্রথম আলো, জুলাই ১২, ২০১৪)