মুরাদুল ইসলাম » ব্লগ » ভবিষ্যত প্যানডেমিক থেকে বাঁচতে, পিটার সিংগার

ভবিষ্যত প্যানডেমিক থেকে বাঁচতে, পিটার সিংগার

এই স্বাক্ষাতকারে দার্শনিক পিটার সিংগার কথা বলেছেন করোনা ক্রাইসিস নিয়ে। এবং এ ধরণের প্যানডেমিক যাতে আর না হয় সেই প্রবাবিলিটি কীভাবে কমানো যায় তা নিয়ে।

এখন পর্যন্ত যা তথ্য আছে, সে অনুসারে এই ভাইরাসটি এসেছে চীনের উহান শহরের ওয়েট মার্কেট থেকে। ওয়েট মার্কেটে খাঁচায় প্রাণীরা থাকে। ভোক্তারা গিয়ে চাইলে সেটি জবাই করে তাকে দেয়া হয়। যেমন আমাদের এখানে মুরগীর বাজারে হয়।

চীনে বন্যপ্রাণীদের ওয়েট মার্কেটও আছে। যেসব প্রাণী চীনের অনেক মানুষ খান। সেরকমই একটা মার্কেটে প্যাঙ্গোলিনস নামের একটা প্রাণী এইভাবে জবাই করা হতো, ভোক্তারা কিনতেন। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য মতে, খুব সম্ভবত এই প্যাংঙ্গোলিন থেকেই এই সারস-কভ-২ বা কোভিড-১৯ মানুষের শরীরে ছড়িয়েছে।  (বা বাদুড় থেকে)।

পিটার সিংগার মনে করেন, এখন মানুষ প্যানিক পর্যায়ে আছে, এবং নিজেকে বাঁচানোর চিন্তাতেই আছে। আপাতভাবে এই ধাক্কা সামলে নিলে তিনি আশা করেন তারা ভাবতে বসবে যে, কেন এই সমস্যাটি শুরু হয়েছিল।

তখন তারা দেখতে পাবে ওয়েট মার্কেট এর জন্য দায়ী।

সিংগার ওয়েট মার্কেট বন্ধের দাবী জানান।

ওয়েট মার্কেটের পক্ষে যে যুক্তি আসবে, তা হলো এগুলি অনেক জায়গায় কালচার হতে পারে। এসব প্রাণী ধরা ও বিক্রির পেছনে অনেক মানুষের জীবিকা জড়িত। ফলে এটা বন্ধ করা এথক্যাল হয় কি?

সিংগার মনে করেন, এর ফলে যে ক্ষতি হয়, যেমন এই প্যানডেমিক ও ইকোনমিক ক্ষতি, এর তুলনায় ওয়েট মার্কেট বন্ধ করার ক্ষতি অনেক কম। জীবিকার জন্য খুব কম মানুষই এর সাথে জড়িত তিনি মনে করেন।

এরপরে ফ্যাক্টরি ফার্মিং এর কথা আসে। ফ্যাক্টরি ফার্মিং এ যেভাবে বিভিন্ন প্রাণীদের রাখা হয় তা বিভিন্ন ভাইরাস জনিত রোগের প্রাদুর্ভাবের জন্য সহায়ক। যেমন সোয়াইন ফ্লু হয়েছিল আমেরিকার একটা ফ্যাক্টরি ফার্ম থেকেই।

ফলে ফ্যাক্টরি ফার্মও বন্ধ করতে হবে। কারণ, ওয়েট মার্কেটের মতো এটিও বিপদজনক।

একইসাথে অন্যদিকে প্রাণীদের বেটার ট্রিটমেন্টের এথিক্যাল বিষয়টি তো রয়েছেই।

বাংলাদেশের দার্শনিক ফরহাদ মজহারের কোভিড-১৯ নিয়ে করা ভিডিওটির প্রথম পার্ট কাল দেখলাম। তিনিও মূলত এসব জিনিস ফোকাস করেছেন। ফ্যাক্টরি ফার্মিং এবং কর্পোরেশনের মূনাফালোভী মনোভাবের কারণে যেভাবে পোষা প্রাণীদের বৈচিত্র নষ্ট হচ্ছে, এবং নানাবিদ রোগের বিস্তারের সুযোগ তৈরি হচ্ছে।

এখানে, আমার মনে হয় যে, মানুষের অবস্থান জরুরী। কর্পোরেশনের দোষ দিলে, পুঁজিবাদের দোষ দিলে সেটা দিতে দিতেই একজন লোক ফার্মের মুরগি খাবে। যাতে কোন সমাধান হয় না, বা হবার সম্ভাবনাও থাকে না। কারণ সে নিজেই ফ্যাক্টরি ফার্মিং এ অংশ নিচ্ছে, ফার্মের মুরগি খেয়ে, যে মুরগী এই ফার্মিং না থাকলে বেশি দামে তাকে কিনতে হতো।

সিংগার তার কথাবার্তায় আশা প্রকাশ করেন যে অল্টারনেটিভ যে মাংসগুলা আসছে, এবং মানুষের সচেতনতা যে বাড়ছে (যেমন জরিপে দেখা গেছে আমেরিকার মানুষেরা বর্তমান ফ্যাক্টরি ফার্মিং এর কন্ডিশন পছন্দ করেন না) এর উপর ভিত্তি করেই ফ্যাক্টরি ফার্মিং এর সমস্যাটির সমাধান হবে।

এই জায়গায় জিজেকের সাথে সিংগার বা মজহারের অবস্থানের একটা পার্থক্য দেখতে পাই। স্ল্যাভো জিজেক তার নতুন বই প্যানডেমিকে যে আলোচনা করেছেন, তাতে তিনি ন্যাচারাল এমন ডিজাস্টারগুলিকে স্বাভাবিক বলেই বিবেচনা করতে চেয়েছেন।

স্ট্যাটিস্টিক্যালি এটা ঠিক হতে পারে আংশিক, আমার মতে কেবল ইফেক্টের ক্ষেত্রে। যেমন, এটি একটি  আউটলায়ার ফ্যাট টেইল বা ব্ল্যাক সোয়ান ইভেন্ট যে, একটা রেসপাইরেটরি ভাইরাস মহামারী তৈরি করতে শুরু করেছে। কিন্তু এমন জিনিস আগে প্রেডিক্ট করেছিলেন বিজ্ঞানীরা, এবং রেসপাইরেটরি ভাইরাসগুলার বিস্তার দ্রুত হবে এটাও প্রেডিক্টেবল। ফলে, এটি পুরো ব্ল্যাক সোয়ান ইভেন্ট নয়।

যেমন, ফ্যাকটরি ফার্মিং থেকে রোগের বিস্তার হতে পারে, যেমন সোয়াইন ফ্লু হয়েছিল। তাই যদি এখান থেকে একটা মহামারী হয়, তা পুরো ব্ল্যাক সোয়ান ইভেন্ট হয় না।

বা নটিলাসে দশক দশক ধরে জুনটিক স্পিলওভার নিয়ে সতর্ক করে আসা বিজ্ঞানী ডেনিস ক্যারল তার স্বাক্ষাতকারে এটাও বন জঙ্গল সাফ করে আফ্রিকায় বিজনেস বিপদের আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলছে,

What’s a telling example of our incursion?

In Africa, we see a lot of incursion driven by oil or mineral extraction in areas that typically had few human populations. The problem is not only moving workers and establishing camps in these domains, but building roads that allow for even more movement of populations. Roads also allow for the movement of wildlife animals, which may be part of a food trade, to make their way into urban settlements. All these dramatic changes increase the potential spread of infection.

জুনটিক স্পিল অভার বুঝতে এই স্বাক্ষাতকার পড়া দরকারী।

তাই এটি ন্যাচারাল ইভেন্ট এবং ন্যাচার এমনই, এই অবস্থান নিয়ে বসে থাকা উচিত নয়।

যেখানে আপনি জানতে পারছেন কোন কোন জিনিস এই ঘটনা বা এমন ঘটনা ঘটাতে পারে আরো।

চেষ্টা থাকা উচিত যে, ম্যাক্সিমাম ক্ষতি কমানোর জন্য কাজ করে যাওয়া। সেটাই মানবিক।

পিটার সিংগার এই ভিডিওতে আরো বলেন যে আমেরিকা ও ইউরোপের স্বচ্ছল শ্রেণী আক্রান্ত হয়েছেন এই ভাইরাসে। তারা নিরাপদ নন। তাই এত তীব্র প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। ইবোলা যখন আফ্রিকায় হয়েছিল তেমন কথাবার্তা হয় নি। কিন্তু আমেরিকায় কয়েকটা কেইস ধরা পড়তেই এ নিয়ে আলোচনা রিসার্চ বেড়ে গেলো।

আমার মনে হয়, এই স্বচ্ছল শ্রেণী যখন আঘাত পেয়েছে তাই কিছু জিনিসের পরিবর্তন আসবে স্বাস্থ্য সেবায়। এর সাথে সাথে ফ্যাকটরি ফার্মিং বা এই ধরণের সমস্যাগুলি নিয়েও মানুষ সচেতন হবে কারণ রেসপাইরেটরি ভাইরাসগুলা দ্রুত ছড়ায়, এবং যার থেকে কেউ নিরাপদ না কেউ গ্লোবাল ভিলেজের সময়ে।

জিজেক যেই জিনিসের আশা করেছেন, যেটা স্যান্ডার্সেরও কথা ছিল একসময় যে, গ্লোবাল একটা স্বাস্থ্য নেটওয়ার্কের,  তার চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ হলো, যেসব জিনিস এসব রোগ তৈরির উতসভূমি হিসাবে কাজ করছে সেগুলি বন্ধ করা।

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

×
গুরুত্বপূর্ণ
Scroll to Top
বই মডেলিং