শেষ প্রশ্নঃ ১০ টি গুরুত্বপূর্ন চিন্তা বারুদ

প্রশ্ন গুরুত্বপূর্ন, উত্তর নয় ততোটা। এজ ওআরজি ২০১৮ সালে বিজ্ঞানী, সিইও, অধ্যাপক সহ নানা ধরণের চিন্তকদের জিজ্ঞেস করেছিল তার কাছে “শেষ প্রশ্নটা কী”। গতবছর তারা একইভাবে জিজ্ঞেস করেছিল তারা মনে করেন কোন কোন বৈজ্ঞানিক আইডিয়া সবার জানা উচিত। সেখানে রিচার্ড থ্যালার প্রি-মর্টেম আইডিয়াটির কথা বলেছিলেম, যা নিয়ে এই ব্লগে লিখেছিলাম

এবারের প্রশ্নটি, অর্থাৎ শেষ প্রশ্ন কী আরো ইন্টারেস্টিং। প্রশ্নগুলি থেকে যেসব প্রশ্ন আমার ভালো লেগেছে সেগুলি এখানে বাংলায় ভাষান্তর করে দিলাম। সাথে অল্প ব্যাখ্যা যুক্ত করে দিলাম।

 

প্রশ্ন-এক

কেন আমরা প্রায়ই অপরিচিতদের সাথে দয়ামায়া দেখাই, যখন আমাদের কেউ লক্ষ্য করছে না, এবং তাদের কাছ থেকে আমাদের পাওয়ার কিছু থাকে না?

পল ব্লুম, ব্রুকস এন্ড সুজান র‍্যাগেন প্রফেসর অব সাইকোলজি, ইয়েল ইউনিভার্সিটি। তার বই এগেইন্সট এম্প্যাথি।

ব্যাখ্যাঃ এখানে আমাদের পিওর দয়ামায়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। যখন আমাদের স্বার্থ থাকে না, কাউকে দেখানোর দরকার থাকে না, তখন কেন যার সাথে সংযোগ নেই এমন একটা অপরিচিত লোকের প্রতি আমাদের দয়া মায়া জাগ্রত হয়?

 

প্রশ্ন-দুই

মানুষের পক্ষে কি সম্ভব অন্য স্বত্তা হতে কেমন লাগে তা সরাসরি জানতে পারা?

ইয়ান বোগোস্ট, আইভান কলেজ, ডিস্টিংগুইশড চেয়ার ইন মিডিয়া স্টাডিজ অব ইন্টারেক্টিভ কম্পুটিং, জর্জিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি, ফাউন্ডিং পার্টনার, পারসুয়েসিভ গেইমস এলএলসি, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, দ্য আটলান্টিক।

 

ব্যাখ্যাঃ অন্য স্বত্তা বা প্রাণী হয়ে জীবন যাপনে কেমন লাগে, সে অভিজ্ঞতা কি কখনো সরাসরি অর্জন করতে পারবে মানুষ? এর জন্য তাকে সরাসরি ঐ প্রাণী হতে হবে, যেমন গোল্ডেন এসের নায়ক হয়েছিল গাধা।

 

প্রশ্ন-তিন

কোন কোন প্রশ্নগুলি আমরা করবো না, এবং উত্তর দিতে চেষ্টা করবো না?

নিক বোস্ট্রম, অধ্যাপক, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ডিরেক্টর, ফিউচার অফ হিউমিনিটি ইন্সটিটিউত, তার বই সুপারইন্টিলিজেন্সঃ পাথজ, ডেঞ্জারস, স্ট্র্যাটেজিজ।

ব্যাখ্যাঃ কোন প্রশ্নগুলি করা আমাদের উচিত না, এবং উত্তর দেয়া উচিত না? কেন?

 

প্রশ্ন-৪

যেহেতু বিজ্ঞান প্রমাণ করে আমাদের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি নেই, তাহলে কীভাবে আমরা অন্যকে দোষী বলি, শাস্তি বা পুরস্কার দেই এবং নৈতিক দায়িত্বের প্রসঙ্গ আসে?

জেরী এ কয়েন, প্রফেসর এমিরেটস, ডিপার্টমেন্ট অব ইকোলজি এন্ড ইভ্যলুশন, ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো, বই, হোয়াই ইভ্যলুশন ইজ ট্রু, ফেইথ ভার্সাস ফ্যাক্টঃ হোয়াই সাইন্স এন্ড রিলিজিয়ন আরে ইনকম্প্যাটিবল।

ব্যাখ্যাঃ বৈজ্ঞানিক প্রমাণ মতে মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি নাই। যেহেতু তার স্বাধীন ইচ্ছা শক্তিই নাই তাহলে মোরাল বা নৈতিক ভাবে তাকে কেন দোষী বা গুণী বলা হবে? কেন শাস্তি দেয়া হবে বা পুরস্কার? এই প্রশ্ন বিদ্যমান মোরালিটি ও বিচারের ভিত্তিকে আঘাত করে।

 

প্রশ্ন-৫

কেন এই উদ্দেশ্যহীন পৃথিবীতে আমাদের “অর্থের” অনুভূতি হয়?

জেমস ক্রোয়াক, আর্টিস্ট

ব্যাখ্যাঃ অর্থ বলতে এখানে মিনিং। এই উদ্দেশ্যহীন পৃথিবীতে কেন আমাদের মনে হয় অর্থ আছে, কেন আমরা বেঁচে থাকার ও আমাদের কাজের মধ্যে অর্থ খুঁজে পাই?

 

প্রশ্ন-৬

কীভাবে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন দূরদৃষ্টিহীন, সেলফিশ কোষেদের এক সমষ্টি একসাথে কাজ করার অ-সচেতন ক্ষমতা আবিষ্কার করে ফেললো, এবং সেই গতিশীল স্তুপ এতে পরিবর্তীত হয়ে উঠলো একজন মানুষে, যে মানুষ ভালোবাসতে পারে, পর্যবেক্ষণ করতে পারে, কল্পনা করতে পারে এবং প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারে?

ড্যানিয়েল সি ড্যানেট, দার্শনিক, অস্টিন বি ফ্লেচার প্রফেসর অব ফিলোসফি, কো-ডিরেক্টর, সেন্টার অব কগনিটিভ স্টাডিজ, টাফটস ইউনিভার্সিটি, বই, ফ্রম ব্যাকটেরিয়া টু ব্যাখ এন্ড ব্যাক।

ব্যাখ্যাঃ এর কোন ব্যাখ্যা নেই, শুধু জিজ্ঞাসা যে কীভাবে হলো? কীভাবে!!

 

প্রশ্ন-৭

কেনো ভালো হবো?

অলিভার স্কট কারি, সিনিয়র রিসার্চার, ডিরেক্টর, দ্য অক্সফোর্ড মোরালস প্রোজেক্ট, ইন্সটিটিউট অফ কগনিটিভ এন্ড ইভ্যলুশনারি এন্থ্রোপোলজি, ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড।

ব্যাখ্যাঃ কেন ভালো হবো? কেন আমরা ভালো কাজ করবো? এগুলি ভালো কাজ করার বা ভালো হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন। আসলেই, কেন আমরা ভালো হবো?

 

প্রশ্ন-৮

আমাদের ব্রেইনের কি মৌলিকভাবেই বাইরের পৃথিবীকে বুঝার ক্ষমতা নেই?

স্টেইনল্যাস ডেহাইনে, নিউরোসাইন্টিস্ট, কলেজ দি ফ্রান্স, প্যারিস; বই, কনশাসনেস এন্ড দ্য ব্রেইন।

ব্যাখ্যাঃ আমাদের ব্রেইনের বুঝার ক্ষমতার সীমাবদ্বতা অপরিসীম। ব্রেইনের নানা সীমাবদ্বতা আবিষ্কার করছে নিউরোসাইন্স। এগুলি এই প্রশ্নের দিকে আমাদের ঠেলে দেয়। এই জটিল বহির্বিশ্ব, এর জন্য কি ঐ ব্রেইন তৈরী হয় নি? বা এটা বুঝার মতো ক্ষমতা কি অর্জন করেনি? অথবা বহির্বিশ্ব কি আমাদের বুঝার ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে? অথবা শুরু থেকেই বাইরে ছিল? এবং এক্সিডেন্টালী একটি প্রজাতি আমরা কিছুটা ব্রেইন ক্ষমতা অর্জন করেছি, এবং সমস্তটা নিয়ে এক তথৈবচ অবস্থায় পড়ে গেছি?

 

প্রশ্ন- ৯

গল্প কি আমাদের জন্য খারাপ?

জোনাথান গটসক্যাল, ডিস্টিংগুইশড রিসার্চ ফেলো, ইংলিশ ডিপার্টমেন্ট, ওয়াশিংটন এন্ড জেফারসন কলেজ, বই দ্য স্টোরিটেলিং এনিম্যাল।

ব্যাখ্যাঃ জোনাথান গটসক্যাল এই ব্লগের পাঠকদের কাছে পরিচিত নাম হবার কথা। তার স্টোরিটেলিং এনিমেল নিয়ে আমি লিখেছিলাম। গল্প আমাদের নানা ভাবে ম্যানিপুলেট করে। আমাদের বিশ্বাস তৈরী করে। সেই বিশ্বাসের জন্য যুদ্ধ হানাহানি হয়, রক্তও ঝরে। গল্প কি শেষপর্যন্ত আমাদের জন্য ভালো?

 

প্রশ্ন-১০

আমরা যখন পারফেক্ট রোবট লাভার বানাতে পারব তখন মনুষ্য লাভের কী হবে?

কুর্ট গ্রেই, এসোসিয়েট প্রফেসর অব সাইকোলজি, ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলিনা, চ্যাপ হিল, কো অথোর (ড্যানিয়েল ওয়াগনারের সাথে), দ্য মাইন্ড ক্লাব।

ব্যাখ্যাঃ বর্তমান প্রযুক্তিগত অগ্রগতি দেখে মনে হচ্ছে পারফেক্ট লাভার ডিজাইন করা দূরে নয়। তখন মানুষ কি ইম্পারফেক্ট মানুষের লাভে আকৃষ্ট হবে? দেরিদা যেমন লাভ নিয়ে বলতে গিয়ে বলেছিলেন কোন মানুষকে লাভ করার সময় আমরা ঐ মানুষটিকে লাভ করি না মানুষের মধ্যে থাকা কিছু কোয়ালিটিকে? যদি এই উত্তর কিছু কোয়ালিটি হয় (রূপ, প্রতিভা, কথা বলার ভঙ্গি, গলার স্বর ইত্যাদি) তাহলে বানানো রোবটে আমাদের প্রিয় সব কোয়ালিটি দিয়ে দিলেই তাকে কি আমাদের অধিক আকর্ষনীয় মনে হবে?

আরো অনেক প্রশ্ন ছিল এজের লাস্ট কোশ্চেনে। প্রশ্নগুলি পড়তে পড়তে আমার পাবলো নেরুদার দ্য বুক অব কোশ্চেন্সের কথা মনে হয়েছিল। নেরুদা বইটিতে অসাধারণ কাব্যিক কিছু প্রশ্ন করেছেন, খুবই গুরুত্বপূর্ন সব প্রশ্ন। এই বই আমার খুব পছন্দের। নেরুদা থেকে এক প্রশ্ন,

Where do the things in dreams go?

Do they pass to the dreams of others?