স্মার্ট তথা বুদ্ধিমান হইবার বাফেট নিয়ম

স্মার্ট হইবার ওয়ারেন বাফেট টিপস

 

স্মার্ট হওয়া বিষয়ে বিলিওনিয়ার, পৃথিবীর সবচেয়ে সফল ইনভেস্টর ওয়ারেন বাফেট কি মনে করেন? কীভাবে স্মার্ট হওয়া যায়?

আমাদের এখানে স্মার্ট অর্থ স্টাইলিশ বুঝায়। অক্সফোর্ড ডিকশনারীতে স্মার্ট এর ব্রিটিশ অর্থ এডজেকটিভ হিসেবে স্টাইলিশই প্রধান। এই ইংলিশ অনুসারে আমরা এর অর্থ বুঝে থাকি। আমেরিকান ইংলিশে স্মার্ট এডজেকটিভের প্রধান অর্থ হিসেবে আছে বুদ্ধিমত্তা বা ইন্টিলিজেন্স। কঠিন অবস্থায় চিন্তা করে দ্রুত চিন্তা করা এবং বুঝে নেবার ক্ষমতা। আমি যখন এই লেখায় (বা অন্যত্র) স্মার্ট ব্যবহার করছি দ্বিতীয় অর্থে। প্রথম স্মার্টনেসে আমার বিশেষ কোন আগ্রহ নেই। অন্তত এই মুহুর্তে।

ওয়ারেন বাফেটকে স্মার্ট হবার উপায় জিজ্ঞেস করলে তিনি একটা কথাই বলবেন, পড়ো। প্রচুর পড়তে হবে।

তিনি বলেন, “আমি আমার অফিসে বসে সারাদিনই পড়ি।”

তার অনুমান তিনি দিনের আশিভাগ সময় পড়ে এবং চিন্তা করে কাটান। একবার তাকে স্মার্ট হবার উপায় জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তিনি গাঁদা করে রাখা কাগজগুলো তুলে ধরে জানালেন, “প্রতিদিন এরকম পাঁচশ পেইজ করে পড়ো। এভাবেই জ্ঞান তৈরী হয়।”

এইরকম পাঁচশ পেইজ পড়ার উপদেশকে স্বস্তা ইত্যাদি বলে উড়িয়ে দিবেন অনেকে। কারণ পড়ায় হাতে হাতে লাভ নেই। এমন নয় প্রতিদিন পড়ার পর কেউ একজন এসে পাঁচ হাজার টাকা ধরিয়ে দিবে। হাতে হাতে লাভ চাওয়া লোকদের কাছে এরকম উপদেশ হাস্যকর বা ততোধিক খারাপ কিছু মনে হতে পারে।

আমাদের দেশে বিপুল জনসংখ্যার অনুপাতে বই বিক্রির পরিমাণ অনেক অনেক কম। অনেকে বলেন ফেইসবুক, বিনোদনের মাধ্যম বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে বই বিক্রি কমে গেছে। এখানে প্রশ্ন জাগে কোন কালে আমাদের এখানে জনসংখ্যার অনুপাতে সামঞ্জস্যপূর্ন বই বিক্রির হার ছিলো? কোনকালেই ছিল না। কোলকাতার দুই সপ্তাহের মেলায় আমাদের দেশের একমাসের মেলার চেয়ে বই বিক্রি বেশি হয়।

বই বিক্রির কম থাকার কারণ মানুষের ধারণা বই পড়ে “লাভ” নেই। এই লাভের চিন্তা বড় অদ্ভুত। লাভের হিশাবের কারণে বাড়ির বাগান থেকে ফুলের গাছ উঠে সবজির চাষ হয়। কারণ ফুলে সৌন্দর্য বৃদ্ধি ছাড়া অন্য কোন “লাভ” নেই।

বাংলাদেশের বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের স্বাক্ষাতকারে এই ফুল গাছ বা মানুষের এস্থেটিক সেন্স নিয়ে বক্তব্য পাওয়া যায়।
উল্লেখ করে নেই, লন্ডনে চিত্রকর্মের এক যৌথ প্রদর্শনীতে পিকাসো, দালি, কর্নেট, মাতিস, ডুফি ইত্যাদি কন্টেম্পোরারি আর্টের মাস্টারদের ছবির সাথে বাংলাদেশের বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান এর ছবিও ছিল। যা ছিল এশিয়া থেকে যাওয়া প্রথম কোন শিল্পীর ছবি।

যাইহোক, ১৯৫৩ সালে সুলতান দেশে ফিরে আসেন। তিনি বাচ্চাদের স্কুল নিয়ে নানা রকম পরিকল্পনা করেছিলেন। বাচ্চাদের এবং গ্রামের মানুষদের এস্থেটিক সেন্স ডেভলাপ করা ছিল তার একটা উদ্দেশ্য। তার কথায়-

“আমাদের সাধারণ মানুষকে ব্রিটিশ রুল করেছে, পাকিস্তান রুল করেছে, এখন বাংলাদেশের লোকেরা করছে কিন্তু ঐ মানুষগুলোর দিকে কেউ কখনো নজরই দেয় নি। হাই লিভিং করতে না পারুক, ডিসেন্ট লিভিং করতে শিখুক। থাইল্যান্ডে দেখেছি, ইন্দোনেশিয়াতেও দেখা যায় যত গরীবই হোক, বাড়িতে আর কিছু না থাকুক ফুল-বাগান আছে। এসব ব্যাপার আমাদের দেশে গড়ে ওঠেনি, তাদের এস্থেটিক বোধ যেমন দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, নষ্ট করে দেয়াও হচ্ছে।”

এস এম সুলতানের আঁকা ছবি
                                                                                  এস এম সুলতানের আঁকা ছবি

এস্থেটিক যে সেন্সের কথা সুলতান গ্রামের সাধারণ মানুষদের ভেতর জাগাতে চেয়েছিলেন তার অভাব এখন মধ্যবিত্তের মধ্যেও পরিলক্ষিত হয়। বোধহয় কোনকালে তেমন ছিলোও না। পুঁজিবাদের যে মার্কেটিং সিস্টেম সেখানে সাহিত্য বা শিল্পের চাইতে অন্যসব বস্তুগত জিনিসের দিকে মানুষকে ঝুকিয়ে দেয়া হয়। কারণ সেসব জিনিসের ব্যবসায় কর্পোরেট লাভ বেশি। সিলেট শহরে বর্তমানে নানা ধরনের অভিজাত খাবারের দোকান হওয়ার প্রতিযোগীতা হচ্ছে যেন, শহরের বাইরে বিভিন্ন জায়গায় বিনোদনের জন্য রিসোর্ট হচ্ছে। কিন্তু বইয়ের দোকানের সংখ্যা বা বই বিক্রির পরিমান বাড়ে নি সেই অনুপাতে। মধ্যবিত্তের এক শ্রেণীর হাতে টাকা আসছে, ভোগবাদের উন্মেষ হচ্ছে এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তে ঢুকছে অনেক মানুষ। বর্তমানে দেশের মধ্যবিত্তের ভাগ বিশ পার্সেন্ট হয়েছে বলে একে সাফল্য হিসেবেও দেখা হচ্ছে।

এই মধ্যবিত্তের তরুণ তরুণীদের মধ্যে পুঁজিবাদ একটি ইঁদুর দৌড় শুরু করিয়ে দিয়েছে এবং আরো দিবে। ভালো সরকারী চাকরী, সরাসরি লাভ এবং সর্বোপরি ভোগের চিন্তা।

এর থেকে বের হবার পথ সামগ্রিকভাবে করা সম্ভব রাষ্ট্রব্যবস্থায় পরিবর্তনের মাধ্যমে। কিন্তু সেসব চিন্তা করা বাতুলতা বা অলীক কল্পনার মত। ফলে সে চিন্তায় না গিয়েও ব্যক্তিকেন্দ্রিকভাবে একজন বের হতে পারবেন ক্যাপিটালিস্ট র‍্যাট রেইস থেকে।

মূলত এই ক্ষেত্রে তার কাছে যে প্রশ্নটি দেখা দিবে তা হলো জীবনের অর্থ কী? বা উদ্দেশ্য কী?

উত্তরে যদি কেউ বলেন প্রাচীন গ্রীসের দার্শনিক বা লোকদের মত এগোরায় গিয়ে জীবন, দর্শন, রাজনৈতিক চিন্তা, আধ্যাত্মিক বিষয়াবলী নিয়ে আলাপ আলোচনা করা। সাহিত্য শিল্প এবং চলচ্চিত্রের বহুমুখী সম্ভাবনা এবং গভীরতা নিয়ে আলাপে নিমজ্জ্বিত হওয়া। এই উত্তর আমার কাছে ভালো লাগবে।
যাইহোক, টড কম্ব নামে একজন লোক কিন্তু সত্যি সত্যি ওয়ারেন বাফেটের উপদেশ গ্রহণ করেছিলেন। তিনি প্রতিদিন হিসাব রাখতে শুরু করলেন কি পড়ছেন। বর্তমানে তিনি ওয়ারেন বাফেটের হয়ে কাজ করছেন।

পড়া একসময় তার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। প্রতিদিন পাঁচশ, ছয়শ এমনকী হাজার পেইজও পড়তেন। বাফেটের পড়া ফর্মূলা তার জন্য সরসরি কাজে এসেছে।

ওয়ারেন বাফেটের পার্টনার বিলিওনিয়ার চার্লি মুঙ্গার। ইনিও বাফেটের মতো পড়ুয়া। বাফেট বলেন যে, “মুঙ্গারের ছেলেমেয়েরা তো তাকে দুপেয়ে বই বলে ডাকে।”

চার্লি মাঙ্গারের দুটি দারুণ কথা আছে। একটি হল, “যত বুদ্ধিমান (স্মার্ট) হয়ে সকালে উঠেছিলে তার চেয়ে বুদ্ধিমান হয়ে রাতে ঘুমাতে যাও।”
“আরেকজন লোককে জানতে সাহায্য করাই একজন মানুষের করা আরেকজনের প্রতি সবচেয়ে বড় সাহায্য।”

 

“যত বুদ্ধিমান (স্মার্ট) হয়ে সকালে উঠেছিলে তার চেয়ে বুদ্ধিমান হয়ে রাতে ঘুমাতে যাও।” Share on X

এই দুই ভদ্রলোকের কাজ বিভিন্ন ফ্যাক্টস নিয়ে। যেহেতু তারা ইনভেস্ট করেন। ফলে তাদের পাঠে থাকে ফ্যাক্টগুলো জানা এবং তা নিয়ে চিন্তা করা। বাফেট বলেন, “মাঙ্গার কোন সমস্যার সামনে আসলে সমাধান সম্পর্কে চিন্তা না করে পাশ কাটিয়ে যায় না। তার ত্রিশ সেকেন্ডের এক অদ্ভুত ক্ষমতা আছে। আমি তাকে ফোন দেই, সে ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে একটা সমাধান বের করে ফেলে। সে খুব দ্রুত জিনিসগুলো দেখতে পায়।”

মাঙ্গারের এই অদ্ভুত ক্ষমতা কী ঐশ্বরিক বা কোন জাদু? অবশ্যই নয়। বাস্তবের পৃথিবীতে অলৌকিকতার স্থান নেই। মুঙ্গার বলেন, “আমি কিংবা ওয়ারেন এমন স্মার্ট (বুদ্ধিমান) নই যে চিন্তা ছাড়াই দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারব। আমরা খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নেই, কারণ আমরা অনেক দীর্ঘ সময় ধরে নিরব পঠন পাঠন এবং চিন্তার মাধ্যমে এর জন্য তৈরী হয়েছি।”

 

 

চার্লি মুঙ্গারের কার্টুন
                                                                                        চার্লি মাঙ্গার

 

                            বই পড়ার সময় বের করা

বই পড়ার সময় বের করা নিয়ে অনেকে সমস্যা ভুগেন। তারা পড়া শুরু করার আগেই এই সমস্যায় পড়ে যান। ফলে তাদের সময় বের করাটা দুরূহ হয়ে যায়। অনেক সময় সম্ভবপর হয় না। তাই বই পড়াও হয় না আর।

বই পড়ার সময় বের করা বিষয়টার আগে ঠিক করতে হবে বই আপনি পড়ছেন কী উদ্দেশ্যে? বিনোদনের উদ্দেশ্যে পড়লে তার সময় আপনি অবসর সময়ে বা যখন পারবেন তখন বের করবেন।

কিন্তু আপনার বই পড়া যদি হয় নিজেকে জানা, নিজের চারপাশ এবং অন্যদের বুঝা তথা মানজীবন এবং অস্তিত্বের সমস্যাবলীর সমাধান বুঝতে চেষ্টা করা তাহলে আপনার বই পড়া বিনোদনের সময় বা অবসর সময়ের জন্য বরাদ্দ করলে হবে না। আপনার এই বই পড়া হল আত্মউন্নতি, নিজেকে এক স্তর থেকে আরেক স্তরে নিয়ে যাওয়া, চারপাশের জীবন ও জগত সম্পর্কে ভিন্ন কিংবা নতুন চিন্তার দিকের সাথে পরিচিত হওয়ার প্রচেষ্টা। এই বই পড়া আপনার নিজের প্রতি নিজের ইনভেস্ট। বই কেনা থেকে শুরু করে পড়ার জন্য বরাদ্দ সময় – সবই। এই ইনভেস্ট আপনাকে বুঝতে সাহায্য করবে, কঠিন পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। বই পড়ার ক্ষেত্রে কীভাবে পড়া হচ্ছে সেটাও গুরুত্বপূর্ন।

ওয়ারেন বাফেটের কথা, “দ্য রিচ ইনভেস্ট ইন টাইম, দ্য পুওর ইনভেস্ট ইন মানি।”

বই কেনা এবং পড়ার সময় হলো নিজের প্রতি নিজের ইনভেস্ট। চার্লি মাঙ্গার যখন নতুন একজন আইনজীবি ছিলেন তখন তার বেতন ছিল ঘন্টায় বিশ ডলার প্রায়। তিনি নিজেকে জিজ্ঞেস করলেন, আমার সবচেয়ে দামী ক্লায়েন্ট কে? উত্তর খুঁজে পেলেন, তিনি নিজেই। তাই তিনি নিজের কাছে এক ঘন্টা সময় বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি সকালের এক ঘন্টা নিজের জন্য রাখতেন। বাফেটের মতে এরকম সবার করা উচিত। নিজের কাছেই নিজের কাজের একঘন্টা সময় বিক্রি।

এই এক ঘন্টায় আপনি পড়তে পারেন। নিজেকে বর্তমান স্তর থেকে উন্নত স্তরে নিয়ে যাবার সাধনা আপনাকে স্মার্ট (বুদ্ধিমান) করে তুলবে এবং একসময় এই নিজের প্রতি ইনভেস্টের সুফল আপনি পাবেন।

এখানে মাস্টার বডি বিল্ডার, অভিনেতা এবং রাজনীতিবিদ আর্নল্ড শোয়ার্জনেগারের একটা কথাও স্মরণে রাখা যায়। শোয়ার্জনেগার বডি বিল্ডিং নিয়ে বলেছিলেন, ইটস ইউ ভার্সাস ইউ। এটা তোমার সাথে তোমার যুদ্ধ। আপনার নিজের যে উন্নতির চেষ্টা এটা নিজেকে ছাড়িয়ে যাবার প্রচেষ্টা। এখানে লোক দেখানো কিংবা ছদ্ম একটা রূপের তৈরী মূলত নিজেকেই ধোঁকা দেয়া। হারুকি মুরাকামি একবার ম্যারাথন দৌড় এবং তার জীবন দর্শন, লেখালেখি ইত্যাদি নিয়ে একটি বই লিখেছেন। তাতে একটি চমৎকার কথা ছিল, যার বঙ্গানুবাদ-

“ম্যারাথন দৌড়ের মতো আমার পেশাও। উপন্যাস লেখার পেশায় আমার জানামতে জেতা বা হারার কিছু নেই। হতে পারে কত কপি বিক্রি হল, কি কি পুরস্কার জিতল, সমালোচকদের প্রশংসা ইত্যাদি সাহিত্যের ক্ষেত্রে বাইরের দিকের মান নির্ধারনী বস্তু হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু আসলে এর কোন কিছুতেই কিছু যায় আসে না। সবচেয়ে গুরত্বপূর্ন হল আপনি আপনার লেখার জন্য যে মান নির্ধারন করে রেখেছেন লেখাটি সেই মান উত্তীর্ন হতে পারল কি না। সেই মানে পৌছাতে না পারা এমন এক ব্যর্থতা যা আপনি সহজে ব্যাখ্যা করতে পারবেন না। অন্যদের আপনি হয়ত বিভিন্ন ধরনের যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিতে পারবেন, কিন্তু নিজেকে বোকা বানাতে পারবেন না।”

আপনি নিজেকে বোকা বানাতে পারবেন না – এই কথাটি সব কাজের ক্ষেত্রে সত্য। পড়া এবং জানা-বুঝার ক্ষেত্রে তো অবশ্যই।

 

মুরাকামি দৌড়াচ্ছেন, ২০০৮
মুরাকামি দৌড়াচ্ছেন, ২০০৮

              বাফেটের দৃষ্টিতে মানুষের সেরা তিন গুণ

ফরাসি অস্তিত্ববাদী দার্শনিক, নোবেল পুরস্কার প্রত্যাখানকারী দার্শনিক জাঁ পল সার্ত্রে বলেছিলেন, আমরা হচ্ছি আমাদের পছন্দ।

মাঝে মাঝে ছাত্রছাত্রীরা ওয়ারেন বাফেটের কাছে যায়। তিনি তখন তাদের সাথে এক মজার খেলা খেলে থাকেন। তিনি তাদের বলেন, একজন ক্লাসমেটকে যদি পছন্দ করতে বলা হয় যার সারাজীবনের উপার্জনের দশ ভাগ তুমি পাবে, তাহলে কাকে পছন্দ করবে? যার সবচেয়ে ভালো গ্রেড আছে তাকে? যার সবচেয়ে বেশি আইকিউ আছে তাকে? কোন কোন গুণের ভিত্তিতে তুমি পছন্দ করবে?

তারপর তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে কে সবচেয়ে অসফল হবে বলে তুমি মনে করো? কেন?

তিনি ছাত্রছাত্রীদের একটি কাগজ নিয়ে বামদিকে দোষ এবং ডানদিকে গুনগুলো লিখতে বলেন।

এভাবে পছন্দ করতে বললে মানুষেরা গ্রেড, আইকিউ এর ভিত্তিতে পছন্দ করে না। পছন্দ করে উদারতা, সহৃদয়তা এবং সততার উপর ভিত্তি করে।

বাফেট এরপর তাদের জিজ্ঞেস করেন, কোন গুণগুলো তুমি অর্জন করতে পারবে না এবং কোন দোষগুলো তুমি ছাড়তে পারবে না?

ওয়ারেন বাফেটের ক্ষেত্রে এই প্রশ্নের উত্তর হলো, না।

অর্থাৎ এমন কোন গুণ নেই তিনি অর্জন করতে পারবেন না এবং এমন কোন দোষ নেই তিনি ছাড়তে অপারগ।

তার মতে এই কোয়ালিটিগুলো মানুষের পছন্দ। সে নিজেই ঠিক করে বন্ধুবৎসল হবে কি না, উদার হবে কি না, ঈর্ষাকাতর হবে কি না।
তাই ব্যাপারটা সহজ, ডানদিকে লেখা গুণগুলোর চর্চা করে অর্জন করতে হবে। বামদিকের দোষ গুলো বাদ দিতে হবে। এগুলো ইচ্ছার উপরে, নিজের সিদ্ধান্তের উপরে।

বাফেট বলেন, “সাধারণ একজন লোকের কাছে আপনি তিনটি জিনিস খুঁজবেন, বুদ্ধিমত্তা, শক্তি এবং ন্যায়পরায়ণতা। তৃতীয়টি না থাকলে প্রথম দুটি নিয়ে আর ভাববেন না। সবারই শক্তি এবং বুদ্ধিমত্তা থাকে কিন্তু ন্যায়পরায়ণতা নিজের উপরে। আপনি নিজে সিদ্ধান্ত নেন আপনি সৎ হবেন কি না। আমরা এটি নিয়ে জন্ম নেই না, এটি আপনি স্কুলেও শিখতে পারবেন না।”

জাঁ পল সার্ত্রের কথার প্রতিধ্বনি যেন শোনা যায় ওয়ারেন বাফেটের কাছে। আপনি আপনার সিদ্ধান্ত বা পছন্দ। আপনি নিজে সিদ্ধান্ত নিবেন আপনি বই পড়বেন কি না, সৎ হবেন কি না, ক্রিটিক্যাল থিংকিং করবেন কি না, অসূয়াকাতর হবেন কি না। আপনি যেরকম সিদ্ধান্ত নিবেন দিনশেষে আপনি তাই হবেন।

 

-বই-

ওয়ার্কিং টুগেদারঃ হোয়াই গ্রেট পার্টনারশীপ সাকসিড – মাইকেল আইজনার।
স্নোবলঃ ওয়ারেন বাফেট এন্ড দ্য বিজনেস অফ লাইফ – এলিস স্ক্রয়েডার।
কথা পরম্পরা – শাহাদুজ্জামান।
হোয়াট আই টক এবাউট হোয়েন আই টক এবাউট রানিং – হারুকি মুরাকামি এবং শেন প্যারিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা।