অনুবাদ
অনেকদিন আগে পৃথিবীতে কোন নদী ছিল না। খাল দীঘি পুকুর কিছুই ছিল না। তখন ছিল শুধু পূর্বদিকের একটা বিশাল সমুদ্র। সমুদ্রে থাকত চার ড্রাগন। তাদের নাম ছিল যথাক্রমে লম্বা ড্রাগন, কালো ড্রাগন,হলুদ ড্রাগন এবং পার্ল ড্রাগন।
একদিন সমুদ্র ছেড়ে তারা উঠে গেল সোজা উপরে। মেঘেদের কাছাকাছি । গিয়ে উড়াউড়ি করত লাগল মনের খুশিতে। তখনই প্রথম তাদের দৃষ্টি যায় নিচে।
কালো ড্রাগন দেখল, নিচে কিছু মানুষ দেখা যাচ্ছে। তারা এক জায়গায় জড়ো করেছে ফসল। কয়েকজন মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে প্রার্থনা করছে।
একজন শুভ্র চুলের লোক বিড়বিড় করে বলছে, “হে ঈশ্বর। স্বর্গের ঈশ্বর। আমাদের রক্ষা করো। বৃষ্টি দাও। আমাদের এবং আমাদের সন্তানদের বাচাঁও প্রভূ।”
কালো ড্রাগন বাকী তিন ড্রাগনকে ডেকে এনে দেখাল। তারা চারজনই সিদ্ধান্ত নিল এই মানুষগুলোকে বাচাঁতে হবে। তারা মেঘের সীমা অতিক্রম করে প্রধান দেবতার কাছে গিয়ে বলল, “প্রভূ, নিচের মানুষগুলো অনেক কষ্টে আছে। আপনি বৃষ্টি দিয়ে তাদের সাহায্য করুন।”
প্রধান দেবতা স্বর্গীয় গান শুনছিলেন। গান শোনার সময় বাঁধা পেলে তিনি বিরক্ত হন। ড্রাগনদের স্বর্গে আগমনের কারণে তিনি কিছুটা রুষ্ট হলেন। বললেন, “তোমরা নিজেদের সমুদ্র ছেড়ে এখানে এসেছে কি জন্য! বুরবাকের দল! যাও নিজের জায়গায়। আমি কালই ওদের বৃষ্টি পাঠিয়ে দেব।”
প্রধান দেবতার গালি শুনে একটু মন খারাপ করলেও মানুষেরা পানি পাবে একথা মনে করে হাসিমুখেই চলে গেল চার ড্রাগন।
দশদিন পর ড্রাগনেরা দেখল এখনো বৃষ্টি আসে নি পৃথিবীতে। এতদিন বৃষ্টি না থাকার ফলে মানুষের অবস্থা হয়েছে আরো শোচনীয়। অনেক মানুষ পানির অভাবে মারা যাচ্ছে।
হলুদ ড্রাগন বলল, “দেবতা এদের পানি দেবেন না। তিনি গান শোনায় ব্যস্ত। এদের পানির ব্যবস্থা আমাদেরই করতে হবে।”
অন্য ড্রাগনেরা কীভাবে জানতে চাইল, “ কীভাবে?”
হলুদ ড্রাগন জানাল, “আমরা সমুদ্র থেকে পানি মুখে করে নিয়ে যাব। তারপর স্প্রে করে ফেলব পৃথিবীতে।”
সেটাই ঠিক হল। চার ড্রাগন সম্মিলিতভাবে সমুদ্রের পানি মুখে করে নিয়ে পৃথিবীতে ফেলতে লাগল। মানুষ পানি পেয়ে হাঁফ ছেড়ে বাচঁল।
সমুদ্রের দেবতা দেখলেন ড্রাগনেরা পানি চুরি করে পৃথিবীতে পাঠাচ্ছে। তিনি নালিশ জানালেন প্রধান দেবতার কাছে।
প্রধান দেবতা রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে স্বর্গীয় সেনাবাহিনীকে আদেশ দিলেন চার ড্রাগনকে ধরে আনতে।
চার ড্রাগনকে ধরে আনা হল।
প্রধান দেবতা হুংকার দিলেন, “বদের দল! তোদের এত বড় সাহস! আমি তোদের পাহাড় দিয়ে চেপে রাখব।”
তিনি পাহাড় দেবতাকে নির্দেশ দিলেন এই চার ড্রাগনকে পাহাড় দিয়ে চেপে রাখতে। তারপর চলে গেলেন গান শুনতে।
পাহাড় দেবতা তার যাদুশক্তির সাহায্যে চার ড্রাগনকে চারটি নদী বানিয়ে দিলেন। চারটি পাহাড় দিয়ে চেপে রাখলেন এদের একদিক। আর অন্যদিককে নিয়ে ফেললেন সমুদ্রে।
আর এই চার ড্রাগনই চীনের চারটি বড় নদী হেইলংজিয়ান(কালো ড্রাগন) উত্তরে, হুয়াংহো ( হলুদ ড্রাগন) মধ্য চীনে, চ্যানজিন্যাং(লম্বা ড্রাগন বা লং রিভার) সর্ব দক্ষিণে, এবং জু জিয়াং(পার্ল ড্রাগন বা মুক্তার নদী) দক্ষিণে।