এই বাংলা অনুবাদটি গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের প্যারিস রিভিউতে প্রকাশ হওয়া সাক্ষাৎকারের অংশ। এখানে তিনি লেখকদের খ্যাতি ও তরুণ লেখকদের বিষয়ে কথা বলেছেন। এই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন পিটার এইচ স্টোন এবনফ আর্ট অব ফিকশন নং ৬৯ নামে আছে প্যারিস রিভিউয়ে।
একজন লেখকের কেরিয়ারের শুরুতেই খ্যাতি বা সফলতা আসাকে কি আপনি খারাপ মনে করেন?
– যেকোন সময়েই এটি খারাপ। আমাকে লোকে পছন্দ করবে হয়ত আমার বইয়ের জন্য মৃত্যুর পরে যাতে পরিচিত হতে পারি, অন্তত পুঁজিবাদী দেশগুলিতে, যেখানে আপনি একটা পণ্যে পরিণত হন।
আপনি কেন মনে করেন খ্যাতি লেখকের জন্য এত ক্ষতিকর?
– প্রাথমিকভাবে, কারণ এটি আপনার ব্যক্তিগত জীবনে প্রবেশ করে। আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে যে সময় দেন, কাজে যে সময় দেন; এগুলিতে ভাগ বসায়। বাস্তব পৃথিবী থেকে আপনাকে সরিয়ে নিতে চায়। একজন বিখ্যাত লেখক যদি লেখা চালিয়ে যেতে চান তাহলে তাকে সব সময় খ্যাতি থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে চলতে হবে। শুনতে ভালো শোনায় না, তাই আমি এটা বলতে পছন্দ করি না, কিন্তু আমার মরনোত্তর প্রকাশ হওয়া বইয়ের জন্য যদি আমাকে লোকে পছন্দ করত তাহলে তা ভালো হত, আমাকে এই খ্যাতি আর মহান লেখক হওয়ার ভিতর দিয়ে যেতে হত না। আমার ক্ষেত্রে খ্যাতিতে যে একমাত্র লাভটা হয়েছে তা হলো আমি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তা ব্যবহার করতে পারছি। অন্য ক্ষেত্রে এটি খুবই বিব্রতকর। সমস্যাটা হচ্ছে আপনি যদি ২৪ ঘন্টা বিখ্যাত থাকেন দিনে তাহলে বলতে পারবেন না “ঠিক আছে, কাল থেকে আমি আর বিখ্যাত না,” অথবা একটি বোতামে চাপ দিয়ে বলবেন, “”আমি এখানে বা এখন বিখ্যাত হব না।”
তরুণ লেখকদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে মার্কেজ বলেনঃ
দূর্ভাগ্যজনক ভাবে অনেক তরুণ লেখকেরা নিজেদের কাজের চাইতে খ্যাতি নিয়ে বেশী সচেতন। একটি ফ্রেঞ্চ বিশ্ববিদ্যাল, ইউনিভার্সিটি অব তউলুজে এ একজন অধ্যাপক আছে যিনি ল্যাটিন আমেরিকান সাহিত্য নিয়ে লিখে থাকেন। তাকে অনেক তরুণ লেখকেরা তাকে লিখে বলে আমার সম্পর্কে যাতে তিনি আর বেশী না লিখেন। কারণ আমার এগুলির দরকার নেই, অন্যদের দরকার আছে। কিন্তু তারা এটা বুঝে না যে আমি যখন তরুণ ছিলাম তখন ক্রিটিকেরা আমাকে নিয়ে লিখেন নি, তারা মিগুয়েল এঞ্জেল আস্টুরিয়াসকে নিয়ে লিখতেন। আমি যা বলতে চাচ্ছি তা হলো, এই তরুণ লেখকেরা নিজেদের লেখার সময় নষ্ট করে ক্রিটিকদের কাছে লিখে বেড়াচ্ছে। লিখিত হবার চাইতে নিজে লেখাটা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ন। আমার সাহিত্য কেরিয়ারে একটি জিনিস আমি খুব গুরুত্বপূর্ন মনে করি, সেটা হলো চল্লিশ বছরের আগ পর্যন্ত আমি এক সেন্টও রয়ালটি পাই নি, যদিও আমার পাঁচটি প্রকাশিত বই ছিল।
গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ জন্ম নেন ৬ মার্চ ১৯২৭ সালে এবং তিনি ১৭ এপ্রিল ২০১৪ সালে পরলোকগমন করেন। কলোম্বিয়ান এই লেখক ছিলেন ঔপন্যাসিক, ছোট গল্পকার, স্ক্রিনরাইটার এবং সাংবাদিক। সাহিত্যে অবদানের জন্য সালে তিনি নোবেল পুরস্কার লাভ করেন ১৯৮২ সালে। বিশ শতকের অন্যতম একজন শ্রেষ্ট সাহিত্যিক হিসেবে তাকে গন্য করা হয়। প্যারিস রিভিউ আর্ট অব ফিকশন ৬৯ এ তিনি আরো নানা গুরুত্বপূর্ন বিষয়ে কথা বলেছেন। তিনি কীভাবে লেখা শুরু করেছেল, তার লেখালেখির ক্ষেত্রে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, সাংবাদিকতা কীভাবে প্রভাব ফেলেছে ইত্যাদি। তার বিখ্যাত কাজগুলির মধ্যে রয়েছে হান্ড্রেড ইয়ারজ অব সলিচুট, দ্য অটাম অব দ্য প্যাত্রিয়াক, লাভ ইন দ্য টাইম ইন কলেরা। এছাড়া তার অনেক বিখ্যাত ছোট গল্প ও নন-ফিকশন কাজ রয়েছে। রাজনৈতিকভাবে গার্সিয়া মার্কেজ তার জীবদ্দশায় ছিলেন একজন বামপন্থী চিন্তার এবং সমাজতন্ত্রের প্রতি অনুরক্ত। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী এবং সমাজতান্ত্রিক মনোভাব সব সময় তিনি লালন করে গেছেন। বিশ্ব সাহিত্যের এই মায়েস্ত্রো যখন মারা যান, কলোম্বিয়ান প্রেসিডেন্ট হুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোজ বলেছিলেন, ‘তিনিই ছিলেন পৃথিবীতে জন্ম নেয়া সর্বশ্রেষ্ট কলোম্বিয়ান।’