শিল্পের ক্ষেত্রে একটা সমস্যা হলো যে এখানে নতুন কিছু দর্শকদের বা পাঠকদের কাছে ভালোভাবে গৃহীত না হবার সম্ভাবনা অনেক বেশী থাকে। ই এম গমব্রিচ তার শিল্প কাহিনীর শুরুতেই এই সমস্যাটির ব্যাপারে বলতে চেয়েছেন। চিত্রশিল্পের ক্ষেত্রে মানুষেরা চায় ছবিটি একেবারে বাস্তবের মত হোক। হুবহু মিলে যাক। হুবহু মিললেই তাদের কাছে তা সুন্দর লাগে, তারা শিল্পীকে মনে করে মহৎ শিল্পী। যদিও হুবহু আঁকা কঠিন, এবং এর জন্য প্রচুর মনযোগ ও ধৈর্য্যের দরকার, তথাপি কেবল হুবহু হলেই ভালো আর্ট এমন কোন ভাবেই নয়।
ছবিঃ ভিনসেন্ট ভ্যান গগের আঁকা তার বেডরুমের ছবি। অবশ্যই তা বাস্তবের মত নয়, এক্সপ্রেশনিস্ট আর্ট। সোর্সঃ ভিজিগ্যালারি।
শিল্পের ক্রিয়েটিভিটি হচ্ছে বিদ্যমান শিল্প ইতিহাসের উপর দাঁড়িয়ে নতুন কিছু তৈরী করা। কিছু একটা ব্যতিক্রম, কিছু একটা আলাদা তৈরী করা। কিন্তু এই কিছু একটা আলাদা করলে, উপস্থিত অবুঝ পাঠক বা দর্শক একে ধরে নেবে ভুল হয়েছে। কিন্তু শিল্পী বা লেখক ইচ্ছে করেই এটি আলাদা করেছেন, এবং এটাই তার আর্টিস্টিক ক্রিয়েটিভিটি। বাস্তবের সাথে হুবহু না মিললে যারা বাজে ছবি মনে করে তাদের যেমন বুঝানো যায় না বাস্তবের সাথে মেলাটাই মূখ্য নয়, তেমনি কোন আর্টিস্টিক ফর্মের ভেতর ব্যতিক্রম ও পরিবর্তন এনে নতুন কিছু সৃষ্টি যে আর্টিস্টিক ক্রিয়েটিভিটি তাও অবুঝ পাঠক বা দর্শকদের বুঝানো সম্ভব হয় না। তারা তাদের কম্ফোর্ট জোন, এবং রুচির মাপেই সব দেখে ও বিচার করে। এবং এই জন্যই জনরুচি তথা পাঠকরুচিতে নেমে যাওয়া লেখকের আর্টিস্টিক কাজের জন্য ক্ষতিকর, কারণ এতে পাঠকের রুচিতে তিনি নিজেকে বা নিজের কাজকে নির্মান করেন।
সুতরাং, যারা আর্টিস্টিক ক্রিয়েটিভিটিতে বিশ্বাসী ও নতুন কিছু করতে চান, তাদের উপস্থিত পাঠকদের এড়িয়ে, ভবিষ্যতের পাঠকদের জন্য বা নিজস্ব আর্টিস্টিক প্রেরণাতেই শিল্প সাহিত্য করে যেতে হবে।
ছবিঃ পাবলো পিকাসোর একটি সেরা শিল্পকর্ম।Les Demoiselles d’Avignon, 1907। এই ছবিতে তিনি ফিমেল বিউটির সব প্রচলিত ফর্ম উপেক্ষা করে জ্যামিতিক ফর্মে, একরকম বিকৃত রূপে ফিমেল বিউটি উপস্থাপন করেন, এবং কিউবিজমের সবচাইতে বিখ্যাত একটি কাজ এটি, এবং এর মধ্যে পিকাসোর আর্টিস্টিক ক্রিয়েটিভিটি ও প্যাশন স্বতঃস্ফূর্তভাবে উঠে এসেছে। সোর্সঃ পাবলোপিকাসো ওর্গ।